(শিল্প ও সংস্কৃতি) ৬ষ্ঠ: বৃষ্টি ধারায় বর্ষা আসে – সমাধান

বৃষ্টি ধারায় বর্ষা আসে হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিল্প ও সংস্কৃতি বই এর ৭ম অধ্যায়। বৃষ্টি ধারায় বর্ষা আসে অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

বৃষ্টি ধারায় বর্ষা আসে

কাজ-১: ‘সবুজের স্বপ্ন পাখায়’ খেলাটিতে বন্ধুদের উপহার দেয়া চারা গাছটির সাথে একটি স্বপ্ন জুড়ে দাও, স্বপ্নটি ছোট-বড় যে কোন ধরনের হতে পারে।
কাজের ধরন:
একক কাজ।

নমুনা সমাধান
নিচে কয়েকটি নমুনা স্বপ্নের কথা দেয়া হলো-
i. “এই পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ স্বপ্ন দেখে। তাই আর দশজনের মতো আমিও একটি স্বপ্ন নিয়ে বড় হচ্ছি। আমার স্বপ্ন একদিন জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর হবো। প্যারিসের নামকরা গ্যালারিতে থাকবে আমার চিত্রকর্ম।”

ii. “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। কখনো কখনো স্বপ্নের চেয়েও বড়। আমি স্বপ্ন দেখি একদিন দেশসেরা না হয় জগৎ সেরা ফুটবলার হবো, পেলে-মেসি-রোনালদোদের পাশে থাকবে আমার নাম। দেশের লাল-সবুজ পতাকাকে করবো আরো উজ্জ্বল।”

CamScanner 06 24 2023 13.45 2 1

চিত্র: স্বপ্ন যখন ক্রিকেটার হওয়া।

iii. ‘মানুষ সারাটি জীবন পার করে তার স্বপ্নকে সত্যি করতে। আমারও রয়েছে এমন স্বপ্ন। আমার রঙিন স্বপ্ন আমার দেশ একদিন ক্রিকেট বিশ্বকাপ জিতবে এবং সোনালি শিরোপা জয় করে দেশের নাম করবে উজ্জ্বল।’
উপরের নমুনার ন্যায় অথবা নিজের মতো করে তুমি তোমার স্বপ্ন লিখতে পারো।

কাজ-২: পছন্দমতো একটি ফুল, ফল বা ঔষধি গাছের চারা জোগাড় করো। প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে অথবা বীজ থেকে চারা তৈরি করে পছন্দের গাছে কলম করে অথবা নার্সারি থেকে জোগাড় করতে পারো।
কাজের ধরন:
দলীয় কাজ।

নমুনা সমাধান
চারা গাছ বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব। যেমন—
ক. নার্সারি/প্রকৃতি থেকে,
খ. বীজ থেকে চারা তৈরি,
গ. গাছের ডাল কলম করে।

ক. নার্সারি/প্রকৃতি থেকে: পাশ্ববর্তী যে কোন নার্সারি থেকে কিনে অথবা কারো বাগান থাকলে বা প্রকৃতি থেকে আমরা চারা সংগ্রহ করতে পারি।

খ. বীজ থেকে চারা তৈরি: প্রয়োজনীয় উপকরণ— বীজ, বীজতলা, সার, পানি।

কাজের ধারা:
ধাপ-১: পানির উৎসের নিকট আলো-বাতাসপূর্ণ উঁচু উর্বর মাটিতে বীজতলা প্রস্তুত করতে হবে।

ধাপ-২: বীজতলার মাটিতে পরিমাণ মতো ইউরিয়া, পঁচা গোবর, ডিমের খোসা ইত্যাদি মেশাতে হবে।

ধাপ-৩: বীজতলার উপর নির্বাচিত বীজ (যেমন— টমেটো, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি) ছিটিয়ে ঝুরা মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে।

ধাপ-৪: বীজতলায় ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজতলা শুকিয়ে না যায়।

ধাপ-৫: ৪/৫ দিন পর বীজতলা থেকে চারা বের হবে। এখন এই চারাকে মাটিতে বুনলে গাছ পাওয়া যাবে।

বি.দ্র. বীজতলা থেকে চারা উৎপাদন করতে সঠিক পরিমাপ অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণস্বরূপ— ৩ মিটার × ১ মিটার বীজতলার জন্য জাতভেদে ১০-১২ গ্রাম বীজের সাথে কমপক্ষে ১০ গ্রাম ইউরিয়া ও অন্যান্য সার প্রয়োজন। নতুবা চারা সঠিকভাবে সংগ্রহ করা যাবে না।

গ. গাছের ডালে কলম করে: কলম করে তা থেকে চারা তৈরি করা সময় সাপেক্ষ এবং দক্ষতার বিষয়। নিম্নে কলম করার সাধারণ ধারণা দেয়া হলো। শিক্ষক/অভিভাবক কিংবা দক্ষ কারো সহায়তা নিয়ে তোমরা কলম করতে পারো।

গাছ কলম: কলমের বিভিন্ন ধরন এবং পদ্ধতি রয়েছে। গাছের বিভিন্ন অংশ যেমন— কাণ্ড, শিকড়, পাতা ইত্যাদির কাটা অংশকে কাজে লাগিয়ে শিকড় গজানোর মাধ্যমে নতুন গাছের উৎপাদনই হলো কলম করা।

CamScanner 06 24 2023 13.45 3 1

চিত্র: গাছ কলমের ধাপসমূহ।

ডালিম, আপেল, লেবু, জবা, গোলাপ, কুল ইত্যাদি গাছের কলম করা যায়। নিম্নে কলমের সহজ পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো-

ধাপ-১: নির্বাচিত সহজ ও সুস্থ ডালকে গিটের উপরের অংশ হতে কোনা বা আড়াআড়িভাবে কেটে নিতে হবে। সাধারণত পেন্সিল বা আঙ্গুলের মতো মোটা ডালের অংশের কলম করলে চারা ভালো হবে।

ধাপ-২: কাটা ডালের অংশটি বীজতলায় স্থাপন করতে হবে। একটি ডাল হলে তাকে একটি পুঁটলি ভর্তি বীজতলার মাটিতে গেঁথে দিতে হবে এবং প্রচুর পানি, ছায়া ও বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

ধাপ-৩: প্রায় এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে কলমকৃত ডাল থেকে কুঁড়ি ও শিকড় গজাবে। তখন এটিকে তুলে টবে বা মাটিতে রোপণ করা যাবে। অর্থাৎ ডালটি চারায় পরিণত হয়েছে।

কাজ-৩: মাটির হাঁড়ি, কাপ বাটি/প্লাস্টিকের বোতল/পাত্রসহ যেকোনো ফেলনা জিনিস দিয়ে টব তৈরি করো। টবের গায়ে পছন্দমতো নকশা করে সাজাও এবং চারা গাছটি লাগাও।
কাজের ধরন:
একক কাজ।

নমুনা সমাধান
টব তৈরির জন্য হাঁড়ি, কাপ/বাটি, প্লাস্টিকের বোতল/পাত্রসহ যে কোন ফেলনা জিনিস নির্বাচিত করে তাতে নকশা করবো।
প্রয়োজনীয় উপকরণ: রং, তুলি, শিরিষ কাগজ, মার্কার / পেন্সিল।

ধাপ-১: পাত্রটিকে প্রথমে ধুয়ে পরিষ্কার করি যাতে ধুলা বা ময়লা না থাকে।

ধাপ-২: পরিষ্কার পাত্রটিকে শিরিষ কাগজ দিয়ে হালকা করে ঘঁষে নেই এতে পাত্রের গায়ে রঙ বসতে সহজ হবে।

ধাপ-৩: পাত্রটির গায়ে প্রথমে সাদা রং দিয়ে এক প্রস্থ রং করে শুকাতে দেই।

ধাপ-৪: পাত্রটি ভালোভাবে শুকালে তাতে মার্কার বা পেনসিল দিয়ে নকশা করি।

ধাপ-৫: তুলির সাহায্যে পছন্দ মতো রং দিয়ে নকশাটি পূর্ণ করি।

ধাপ-৬: জরি বা চুমকি দিয়ে চাইলে নকশাটি আরো আকর্ষণীয় করা সম্ভব।

উপযোগী মাটি তৈরি: চারা গাছটিকে টবে রোপণ করার জন্য উপযুক্ত মাটি প্রয়োজন। এর জন্য ঘরেই আমরা সার প্রস্তুত করতে পারি। বেলে দোআঁশ মাটির সাথে ডিমের খোসা গুঁড়ো, গোবর, সার ইত্যাদি মিশিয়ে মাটি তৈরি করবো। টবের নিচে পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যেতে পারে।

কাজ-৪: কাপড় বা মোটা শক্ত কাগজ দিয়ে ব্যাগ বানাও, যার মধ্যে স্বপ্নবৃক্ষের চারাটি বহন করবে।
কাজের ধরন:
একক কাজ।

নমুনা সমাধান
মোটা কাগজ বা কাপড় দিয়ে ব্যাগ বানাতে হবে যেটাতে চারা গাছটি আমরা বহন করবো। এখানে কাগজের ব্যাগ তৈরির একটি নমুনা দেওয়া হলো-
প্রয়োজনীয় উপকরণ: মোটা কাগজ, কাঁচি, ফিতা / দড়ি, আঠা, রং।

ধাপ-১: মোটা কাগজ নিই এবং চিত্রে দেখানো উপায়ে ভাঁজগুলো দিই।

CamScanner 06 24 2023 13.45 4 2

চিত্র: কাগজের ব্যাগ তৈরির ধাপসমূহ।

ধাপ-২: এক টুকরো শক্ত কাগজকে আঠা দিয়ে নিচে এবং কিনারাগুলো জোড়া দিই।

ধাপ-৩: বহন করার জন্য ব্যাগের উপরে ছিদ্র করে তাতে ফিতা/চিকন দড়ি সংযোজন করি।

ধাপ-৪: রং দিয়ে ব্যাগটি নকশা করি বা টুকরো কাগজ দিয়ে সাজাই।

কাজ-৫: স্বপ্ন বৃক্ষের বেড়ে উঠা পর্যবেক্ষণ করো এবং বন্ধুখাতায় তার ধারাবাহিকতা এঁকে বা লিখে রাখো।
কাজের ধরন:
একক কাজ

নমুনা সমাধান
স্বপ্ন বৃক্ষের বেড়ে উঠা পর্যবেক্ষণ এবং তা বন্ধুখাতায় সংরক্ষণের নমুনা নিচে দেয়া হলো:

১. প্রতিদিন গাছে পানি দিবো, ফলে গাছটি শিকড় ছাড়তে শুরু করবে এবং গাছটির সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা রাখতে হবে।

২. কিছুদিন পর দেখতে পাই গাছটিতে নতুন পাতা গজানো শুরু হয়েছে। তারপর বেশ কিছুদিন পর দেখি ফুলের কলি আসতে শুরু করেছে।

৩. গাছে ফুল আসলে মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু আহরণের জন্য চলে আসে। এছাড়াও ফড়িং বা পাখিরা উড়ে এসে বসে।

৪. ফুলের সুবাস পেতে পাখিরাও কিচির মিচির করে অথবা সুর করে ডাকতে থাকে। হালকা বাতাসে গাছটি দুলে ওঠে।

৫. বেশ কিছু সময় পর গাছ অনেক বড় হয় এবং একসাথে অনেক ফুল ফুটে, যার সৌন্দর্য মোহিত করে সকলকে।

আরো পড়ো আত্মার আত্মীয়

কাজ-৬: ‘বৃষ্টি ধারায় বর্ষা আসে’ অধ্যায়ে ছবি আঁকা, গান, অভিনয় ও নাচের মধ্যে নিজের পছন্দের বিষয় যা জেনেছো লেখো।
কাজের ধরন:
একক কাজ।

নমুনা সমাধান
‘বৃষ্টি ধারায় বর্ষা আসে’ অধ্যায়ে ছবি আঁকা, গান, অভিনয় ও নাচের মধ্য হতে নিজের পছন্দের বিষয় হিসেবে আমি ছবি আঁকাকে নির্বাচিত করেছি। ছবি আঁকার মাধ্যমে খুব সহজেই মনের ইচ্ছা এবং সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করা যায়। ছবি আঁকার মূল উপাদানগুলোর মধ্যে একটি হলো রং করা। রঙের উৎস হলো আলো। আলো বস্তুর উপর প্রতিফলিত হলে আমাদের দৃষ্টিতে যে বর্ণ অনুভূতি তৈরি হয় তাই রং। ছবি আঁকার ক্ষেত্রে রং দু’রকমের- প্রাথমিক ও মিশ্র। লাল, নীল ও হলুদ হলো প্রাথমিক রং।

আর মিশ্র রং হলো দুই বা ততোধিক প্রাথমিক রং মিলে তৈরি। মনের ইচ্ছা বা সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করার জন্য যে ছবি আঁকি তা রং করার মাধ্যমে আরো নান্দনিক হয়ে উঠে। রঙবেরঙের আঁকা ছবি, আমাদের নজর কাড়ে আর শিল্পচর্চায় উৎসাহ দেয়। ছবি আঁকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পরিসর। আমরা যে তলের উপর ছবি আঁকি তাকে পরিসর বলে। যেমন: কাগজ, ক্যানভাস, বোর্ড ইত্যাদি। পরিসর আবার দুই রকমের হয়ে থাকে যথা— ধনাত্মক/ বাস্তবিক, ঋণাত্মক/ বিপরীত ধর্মী। এভাবেই বিভিন্ন রং ও পরিসর ব্যবহার করে আমরা ছবি আঁকতে পারি।

Leave a Comment