(বাংলা) ৮ম শ্রেণি: রুপাই কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

রুপাই হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর জসীমউদ্দিন এর কবিতা। রুপাই কবিতা থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

রুপাই কবিতার সৃজনশীল

১. গ্রামবাংলার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য কার না মন কাড়ে। ফুলে- ফলে-ফসলে এদেশের গ্রামগুলো সেজে থাকে বারো মাস। বৃক্ষ-অরণ্যের ছায়া, নরম ঘাসের সবুজ মায়া, দিঘির কালো জল, বিলে ফোটা পদ্ম আমাদের হৃদয়- মনে প্রশান্তির ছোঁয়া দেয়। গ্রামবাংলার কৃষকেরা সবুজ-কোমল প্রকৃতির নিত্যদিনের সঙ্গী। বছরের অধিকাংশ সময় কর্মব্যস্ত থাকলেও তারা অবসরের দিনগুলোতে নানারকম আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে।
ক. ‘পদ-রজ’ অর্থ কী?
খ. রুপাইকে ‘শাল-সুন্দি-বেত’-এর সাথে তুলনা করা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকটি রুপাই কবিতার কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘রুপাই’ কবিতার সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে না”- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘পদ-রজ’ শব্দের অর্থ পায়ের ধুলা।

খ. সকল কাজে সমান দক্ষ বলে রুপাইকে ‘শাল-সুন্দি-বেত’-এর সাথে তুলনা করা হয়েছে।

‘শাল-সুন্দি-বেত’ বিভিন্ন কাজের উপযোগী প্রয়োজনীয় উপকরণ। এ তিনটি যেমন বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়, তেমনি রুপাইও বিভিন্ন কাজে লাগে। সে আখড়াতে বাঁশের লাঠি চালনায় যেমন দক্ষ তেমনি খেলাধুলাও পারদর্শী। জারির গানে রুপাই সবার সেরা। এক কথায় রুপাই সকল কাজের কাজি। অর্থাৎ সে সকল কাজের জন্য উপযুক্ত। তাই তাকে শাল-সুন্দি-বেত-এর সাথে তুলনা করা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকটি রুপাই কবিতার গ্রামীণ প্রকৃতির রূপ ও কৃষকের বিনোদনের দিকটিকে ইঙ্গিত করে।

বাংলাদেশ প্রকৃতির বিচিত্র রূপে রূপময়। গ্রামবাংলার কৃষকেরা এদেশের প্রাণ। প্রকৃতির সান্নিধ্যে বাস করে তারা কৃষিকাজসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে। তবু মাঝে মাঝে তারা নানারকম বিনোদনের আয়োজনও করে থাকে।

উদ্দীপকে গ্রামবাংলার প্রকৃতির রূপ-সুষমা ও কৃষকের জীবনের চিত্র। ফুটে উঠেছে। তাতে বলা হয়েছে, এদেশের গ্রামগুলো ফুলে-ফলে ফসলে বারো মাস সেজে থাকে। প্রকৃতির নানা আয়োজন আমাদের হৃদয়-মনে প্রশান্তির ছোঁয়া দেয়। কৃষকেরা হলো গ্রামবাংলার সবুজ- কোমল প্রকৃতির নিত্য সহচর। তারা সারা বছর কর্মব্যস্ত থাকলেও অবসরে আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে। উদ্দীপকের এরূপ বর্ণনায় ‘রুপাই’ কবিতার গ্রামীণ প্রকৃতি ও কৃষকদের আনন্দ-বিনোদনের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। উক্ত কবিতায় গ্রামবাংলার প্রকৃতির রূপ, কৃষকের দৈহিক সৌন্দর্য, কর্মোদ্যোগ ও বিনোদনের উল্লেখ রয়েছে। গ্রামবাংলায় কালো ভ্রমর, রঙিন ফুল, কাঁচা ধানের পাতা, লাউয়ের ডগা, তমাল তরু ও কচিমুখের মায়াবী কৃষককে প্রায়ই দেখা যায়। তারা মাঝে মাঝে লাঠি খেলাসহ নানারকম খেলাধুলার আয়োজন করে। বিনোদনের জন্য তারা জারির গানের আসরও বসায়। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকটি ‘রুপাই’ কবিতার গ্রামবাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্য ও কৃষকের বিভিন্ন বিনোদনের দিকটিকে ইঙ্গিত করে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘রুপাই’ কবিতার সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে না। কেননা, তাতে গ্রামীণ প্রকৃতির পটভূমিতে কোনো নির্দিষ্ট চরিত্রের আলোকে কৃষকের রূপ-গুণ ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়নি।

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। এদেশের গ্রামীণ প্রকৃতির সবুজ-শ্যামল আঙিনায় কৃষকদের নিত্য বসবাস। তাই তাদের দেহ-মনে ও আচরণে গ্রামীণ প্রকৃতির প্রভাব থাকা খুবই স্বাভাবিক।

উদ্দীপকে গ্রামবাংলার রূপময় প্রকৃতি ও কৃষকের জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এদেশের গ্রামগুলো ফুলে- ফলে-ফসলে সারা বছর সেজে থাকে। গাছের ছায়া, নরম ঘাসের সবুজ মায়া, দিঘির কালো জল, বিলে ফোটা পদ্ম আমাদের মনে প্রশান্তির ছোঁয়া দেয়। প্রকৃতির সবুজ-কোমল আঙিনায় বাস করে কর্মব্যস্ত কৃষক। তবে অবসরে তারা উৎসব আনন্দেও মেতে ওঠে। উদ্দীপকে বর্ণিত এ বিষয়টি ‘রুপাই’ কবিতায়ও রয়েছে। তবে উক্ত কবিতায় আরও ফুটে ওঠেছে গ্রামীণ প্রকৃতির পটভূমিতে কৃষকের কর্মোদ্যোগসহ দেহ-মনের শৈল্পিক সৌন্দর্য। আর তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রুপাই নামের এক নবীন কৃষককে কেন্দ্র করে। কপাই-এর দেহসৌষ্ঠবে রয়েছে কালো ভ্রমর, নবীন তৃণ, কচি ধানের পাতা, কচি লাউয়ের ডগা, তমাল তরু প্রভৃতির প্রভাব। এছাড়া উক্ত কবিতায় কালো রং-এর বিচিত্র মহিমা তুলে ধরা হয়েছে- যার কোনো প্রতিফলন উদ্দীপকে দেখা যায় না।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ‘উদ্দীকপটি ‘রুপাই’ কবিতার সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে না’ মন্তব্যটি যথার্থ।

২. ধানের আগায় ধানের ছড়া, তাহার ‘পরে টিয়া,
নমুর মেয়ের গায়ের ঝলক সেই না রঙ নিয়া।
দূর্বাবনে রাখলে তারে দূর্বাতে যায় মিশে,
মেঘের খাটে শুইয়ে দিলে খুঁজে না পাই দিশে।
লাউয়ের ডগায় লাউয়ের পাতা, রৌদ্রে উনে যায়,
সেই লতারি সোহাগ যেন মাখা তারি গায়।
যে পথ দিয়ে যায় চলে সে যে পথ দিয়ে আসে,
সে পথ দিয়ে মেঘ চলে যায়, বিজলি বরণ হাসে।
ক. ‘পদ-রজ’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. ‘কালো মুখেই কালো ভ্রমর’- কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে ‘রুপাই’ কবিতার যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘রুপাই’ কবিতার সমগ্রভাব ধারণ করে না”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘পদ-রজ’ শব্দটির অর্থ পায়ের ধুলা।

খ. ‘কালো মুখেই কালো ভ্রমর’- কথাটি দ্বারা চাষার ছেলে রুপাইর কালো মুখের স্নিগ্ধতা বোঝানো হয়েছে।

গাঁয়ের এক চাষার ছেলে রুপাই। তার দেহের রং কালো। ভ্রমরকালো তার স্নিগ্ধ-কোমল মায়াবী মুখ। রঙিন ফুলের সৌন্দর্য তার কালো মুখের সৌন্দর্যের কাছে হার মানে। কবি কৃষকের ছেলে রুপাইর মায়াময় মুখের স্নিগ্ধ-কোমলতা বোঝাতে কালো ভ্রমরের উপমা ব্যবহার করেছেন। কেননা, ভ্রমর কালো হলেও এর কালো বর্ণে স্নিগ্ধতা রয়েছে।

গ. উদ্দীপকে ‘রুপাই’ কবিতার গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির রূপের সাদৃশ্যে কৃষকের রূপের বর্ণনার দিকটি ফুটে উঠেছে।

গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির পরিমণ্ডলে বাস করে এদেশের কৃষক। তাদের দেহের বর্ণে রয়েছে রূপময় প্রকৃতির ছাপ। মনে হয় তারা যেন প্রকৃতিরই সন্তান। তারা প্রকৃতির মতো সহজ-সরল ও সুন্দর।

উদ্দীপকে গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির রূপের আদলে নমুর মেয়ের স্নিগ্ধ- কোমল রূপের বর্ণনা উপস্থাপিত হয়েছে। ধানের ছড়ায় টিয়া বসে থাকলে যেমন সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়, সেই সৌন্দর্যের ঝলক লেগে আছে নমুর মেয়ের গায়ে। তাঁর অঙ্গে মিশে আছে দূর্বার শ্যামলিমা, মেঘের স্নিগ্ধতা, লাউডগার কোমলতা। তার চলার পথে মেঘেরা যেন বিজলি হাসি হাসে। ‘রুপাই’ কবিতায়ও কবি গাঁয়ের চাষার ছেলে রুপাইর রূপ বর্ণনায় গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গের সাদৃশ্য তুলে ধরেছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে কালো ভ্রমর, রঙিন ফুল, কচি ধানের পাতা, নবীন তৃণ, জালি লাউয়ের ডগা, তমাল তরু প্রভৃতি। এ থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকে ‘রুপাই’ কবিতার গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ রূপের বর্ণনা ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘রুপাই’ কবিতার সমগ্রভাব ধারণ করে না, কেননা তাতে উক্ত কবিতার রূপের বর্ণনার দিকটি প্রতিফলিত হলেও কালো রূপের মাহাত্ম্য ও কৃষকের ছেলের কর্মোদ্যোগের প্রতিফলন নেই।

গ্রাম-বাংলার প্রকৃতির রূপ-সুষমা, কৃষকের দেহ-সৌষ্ঠব এবং তাদের কর্মোদ্যোগ চিরকালীন এক মেলবন্ধন। রোদে পুড়ে কৃষকের দেহের রং কালো হয়ে যায়। আর এই কালো কৃষকের শ্রমেই সৃষ্টি হয় সভ্যতার ইতিহাস।

উদ্দীপকে পল্লিপ্রকৃতির নানা অনুষঙ্গে নমুর মেয়ের রূপ-লাবণ্য তুলে ধরা হয়েছে। ধানের ছড়ায় টিয়া বসলে যে সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, নমুর মেয়ের গায়ের ঝলক সেরকম। তার অঙ্গে মিশে আছে দূর্বাঘাসের শ্যামলিমা, লাউ-ডগার কোমলতা এবং মাথায় রয়েছে মেঘবরণ কেশ। তার চলার পথে মেঘেরা যেন বিজলি হাসি হাসে। ‘রুপাই’ কবিতায় চাষার ছেলে রুপাইর রূপ বর্ণনায়ও কবি অনুরূপ প্রকৃতির নানা উপাদানের সাদৃশ্য তুলে ধরেছেন। তবে উক্ত কবিতায় রুপাইর কালো রূপের বর্ণনার পাশাপাশি কালোর মাহাত্ম্য এবং রুপাইর কর্মোদ্যোগের বর্ণনা উপস্থাপিত হয়েছে। চোখের তারা কালো, কোরান-কিতাব লেখার কালি কালো, জনম কালো, মরণ কালো এবং এই কালোর আকর্ষণেই সারা বৃন্দাবন কৃষ্ণের পায়ে লুটায়। চাষার কালো ছেলে রুপাইও তার কর্মোদ্যোগের ফলে একসময় তার গ্রামকে বিখ্যাত করবে। কারণ, রুপাই যেন গাঁয়ের শাল-সুন্দি-বেত, সব কাজেই লাগে। উদ্দীপকে ‘রুপাই’ কবিতার এসব দিক প্রতিফলিত হয়নি।

তাই উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, “উদ্দীপকটি ‘রুপাই’ কবিতায় সমগ্রভাব ধারণ করে না”- মন্তব্যটি যথার্থ।

৩. গ্রামবাংলার এক ডানপিটে ছেলে আনোয়ার হোসেন। ভালো চাষাবাদে তার সুনাম সাত গ্রামে। বন্যা-খরা, ঝড়-বৃষ্টি তথা গ্রামের শত বিপদে-আপদে তাকে সবাই কাছে পায়। লাঠি খেলায়ও সে ওস্তাদ। তার মতো সোনার ছেলে দশ গ্রামে পাওয়া ভার।

ক. ‘রুপাই’ কবিতাটি কোন কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে?
খ. সেই কালোতে সিনান করি উজল তাহার গাও- চরণটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকটিতে ‘রুপাই’ কবিতার কোন দিক ফুটে উঠেছে? -ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘রুপাই’ কবিতার আংশিক ভাব ধারণ করেছে- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘রুপাই’ কবিতাটি জসীমউদ্‌দীনের ‘নকশি কাঁথার মাঠ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।

খ. এখানে রুপাই-এর দেহ সৌন্দর্যের কথা বলা হয়েছে।

রুপাইয়ের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বর্ণনা এখানে দেওয়া হয়েছে। রুপাইয়ের মাথার চুল লম্বা, মুখ-ভ্রমরের মতো কালো, কচি মুখও ধানের পাতার মতো মায়াময়। তার বাহু দুখানি জালি লাউয়ের ডগার মতো, গা শাওন মাসের তমাল তরুর মতো, মুখ তার হাসিতে ভরা, চোখের তারা কালো, তার কালো শরীর সিনান বা গোসল করার কারণে আরো উজ্জ্বল হয়েছে।

গ. উদ্দীপকটিতে ‘রুপাই’ কবিতার রুপাইয়ের কর্ম-কুশলাদীর দিকটি ফুটে উঠেছে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, আনোয়ার গ্রামের ডানপিটে ছেলে। সে একজন ভালো চাষি। চাষাবাদে তার মতো সাত গ্রামে কেউ নেই। শুধু তাই নয়, লাঠি খেলায় সে ওস্তাদ। তার মতো ভালো ছেলে দশ গ্রামে পাওয়া ভার।

‘রুপাই’ কবিতায় দেখা যায়, কবি রুপাইয়ের রূপ ও গুণ দুয়েরই বর্ণনা দিয়েছেন। তার মাথার চুল লম্বা, মুখ ভ্রমরের মতো কালো, কচি পাতার ধানের মতো মুর্খ মায়াময়, বাহু দুখানি জালি লাউয়ের ডগার মতো, শরীর তমাল গাছের মতো ইত্যাদি। আবার লাঠি খেলায় সে সবার সেরা। তাই গাঁয়ে তার অনেক মান-সম্মান। এই দিকটি উদ্দীপক ও কবিতায় ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘রুপাই’ কবিতার আংশিক ভাব ধারণ করেছে- মন্তব্যটি যথার্থ।

উদ্দীপকে দেখা যায়, গ্রাম-বাংলার এক দুরন্ত ডানপিটে ছেলে আনোয়ার। সে একজন ভালো চাষি। তার মতো ভালো চাষি সাত গেরামে নেই। সে মানুষের বিপদে-আপদে সবসময় অগ্রগামী থাকে। বন্যা, খরা, ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদি শত বিপদে তাকে ডাকলে কাছে পাওয়া যায়। এছাড়া সে লাঠি খেলায়ও ওস্তাদ। তার মতো সোনার ছেলে দশ গ্রামে পাওয়া ভার।

‘রুপাই’ কবিতায় দেখা যায়, কবি রুপাইয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তার শক্তিসামর্থ্যের দিকটি তুলে ধরেছেন। রুপাইয়ের মাথার চুল লম্বা, কচি ধানের পাতার মতো তার মায়াময় মুখ, জালি লাউয়ের ডগার মতো বাহু, তমাল তরুর মতো তার শরীর, চোখ তার কালো, লাঠি খেলায় সে গাঁয়ের সেরা।

উদ্দীপকে আনোয়ারের যেমন ভালো চাষি হিসেবে নাম-ডাক আছে, তেমনি সে পরোপকারী হিসেবেও দশ গ্রামে পরিচিত। সে লাঠি খেলায়ও পারদর্শী। এগুলো কবিতায়ও বিদ্যমান। তারপরও রুপাইয়ের নানাবিধ গুণের কথা বলা হয়েছে যা উদ্দীপকে নেই। এদিক থেকে বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘রুপাই’ কবিতার আংশিক ভাব ধারণ করেছে- মন্তব্যটি যথার্থ।

৪. সুমনকে নিয়ে সকলের গর্ব। হালকা-পাতলা গড়নের হলেও তার মায়াবী চেহারার জন্য সকলে তাকে পছন্দ করে। তুখোর বিতার্কিক, ভালো আবৃত্তিকার এবং ভালো খেলোয়াড়। ক্লাসের সবাইকে সে পড়াশোনায় সহযোগিতা করে। এজন্য ক্লাসে সবাই তার পাশে বসতে চায়, খেলায় তাকে দলে পেতে চায়।

ক. ‘রুপাই’ কবিতাটি পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
খ. ‘চাষিদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়’- চরণটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সুমনের সাথে রুপাইয়ের চেহারার সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. ‘সুমন যেন রুপাইয়েরই প্রতিচ্ছবি।’- তোমার মতামত দাও।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘রুপাই’ কবিতাটি পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।

খ. ‘চাষিদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়’- চরণটির মাধ্যমে কবি কর্মগুণ ও কর্মোদ্যোগের মাধ্যমে যে সবার মন জয় করা যায় তা বোঝাতে চেয়েছেন।

চাষার ছেলে রুপাই। রুপাইয়ের গায়ের রং কালো। কালো হলেও সে-ই হচ্ছে তার গ্রামের আলো। তার কাজকর্মে গ্রামের সব মানুষের মন ভরে যায়। রুপাই গ্রাম্য খেলায় সবার সেরা বলেই সবাই তাকে দলে পেতে চায়। লাঠি খেলায় সে পারদর্শী। তাই তার লাঠিকে সবাই ভয় পায় এবং সম্মান করে। গ্রাম্য গার্নে তার কণ্ঠই সবার চেয়ে উচ্চ ও মধুর। সে সব কাজের কাজি। শাল, সুন্দি, বেত যেমন সব কাজে লাগে, তেমনি রুপাই গ্রামের সবার কাজে লাগে। সে তার কাজ দিয়ে গ্রামের সবার মন জয় করেছে।

গ. উদ্দীপকের সুমনের সাথে রুপাইয়ের চেহারার সৌন্দর্যগত সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

গ্রামের এক সহজ-সরল চাষির ছেলে রুপাই। মায়াবী চেহারা আর গুণের কারণে সে সবার মন জয় করেছে। তপ্ত রোদে মাঠে কাজ করতে হয় বলে তার গায়ের রং কালো কিন্তু মুখখানি মায়ায় ভরা। রুপাই দারুণ কর্মদ্যোগী, ঘরে সে মোটেও বসে থাকে না, সারাদিন মাঠে কাজ করে। খেলাধুলায়ও তার সমান দক্ষতা, তাই খেলার সময় তাকে নিয়ে সবার মধ্যে টানাটানি শুরু হয়।

উদ্দীপকে সুমনকে নিয়ে সবাই গর্ব করে। সুমনের রয়েছে হালকা-পাতলা গড়নের মায়াবী চেহারা। তাছাড়া সে তুখোর বিতার্কিক, ভালো আবৃত্তিকার, পড়াশোনা এবং খেলাধুলায়ও বেশ ভালো বলে সবাই তাকে পছন্দ করে। ‘রুপাই’ কবিতায়ও আমরা লক্ষ করি যে, গ্রামের সহজ-সরল একজন কৃষকের ছেলে রুপাই। তার কর্মগুণ ও কর্মোদ্যোগ দিয়েই সবার মন জয় করেছে সে। গায়ের রঙ ফর্সা না হলেও তার চেহারায় কাঁচা ধানের মতো কচি মায়া লেগেই থাকে, যা দেখে মনে হয় কেউ যেন নবীন তৃণের ছায়া মেখে দিয়েছে। রুপাইয়ের দুটি বাহুও দেখতে জালি লাওয়ের ডগার মতো সরু। তার গায়ের দিকে তাকালে মনে হয় এ যেন তমাল বৃক্ষ। লাঠি খেলায়ও রুপাই বেশ পারদর্শী, এজন্য সেখানেও তাকে নিয়ে টানাটানি লেগেই থাকত।
তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের সুমনের সাথে রুপাইয়ের চেহারার সৌন্দর্যগত সাদৃশ্যই লক্ষণীয়।

ঘ. ‘সুমন যেন রূপাইয়ের প্রতিচ্ছবি’। উক্তিটি রুপাই ও সুমনের গুণ ও সৌন্দর্যের দিক থেকে যথার্থ।

পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীন ‘রুপাই’ কবিতায় গ্রাম্য কিশোর রুপাইয়ের রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে পল্লি-বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন। চাষির ছেলে রুপাই মাটির মমতারসে সিক্ত। রুপাই কালো, কিন্তু কালো রুপাই সারা গ্রামকে আলো করে রেখেছে। সে রুপা না হলেও রুপার চেয়ে দামি। তার লাঠির শক্তি, কৃষিকাজের দক্ষতা, বাঁশিতে সুর তোলার ক্ষমতা, বিভিন্ন খেলার পারঙ্গমতা এসব কারণে সে গ্রামের সবার প্রিয়।

উদ্দীপকে সুমন সকলের গর্ব। আবার দেহের গড়নে হালকা-পাতলা ও মায়াবী চেহারা হওয়ায় সবাই তাকে পছন্দ করে। সে যেমন তুখোর বিতার্কিক ও ভালো আবৃত্তিকার তেমনি ভালো খেলোয়াড়ও। পাশাপাশি পড়াশোনায়ও সে ভালো। ক্লাসের সবাইকে পড়াশোনায় সহযোগিতা করে। যে কারণে ক্লাসে এবং খেলার দলে সবাই তাকে চায়। ‘রুপাই’ কবিতায় রুপাই একজন গ্রামীণ কৃষক-ছেলে। রুপাইয়ের চেহারা কালো হলেও সে কর্মগুণেই সবার মন জয় করেছে। দেহ গড়নে নবীন তৃণের ছায়ামাখা মুখ, জালি লাওয়ের ডগার মতো বাহু দুটি ক্ষীণ হলেও লাঠি খেলায় রয়েছে তার নিপুণ দক্ষতা। জারিগানে পারদর্শী হওয়ায় সবার আগে তার গলা ওঠে, যে কারণে তাকে নিয়ে সবখানে টানাটানি চলে।

তাই উদ্দীপক ও ‘রুপাই’ কবিতার আলোকে বলা যায় যে, গুণ ও সৌন্দর্যগত দিক থেকে “সুমন যেন রুপাইয়ের প্রতিচ্ছবি” উক্তিটি যথার্থ।

আরো পড়োনারী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়োবাবুরের মহত্ত্ব কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৫. গাঁয়ের এক দরিদ্র কৃষকের ছেলে সোহেল। বাবা মারা যাওয়ার পর সে স্কুলের লেখাপড়া ছেড়ে পরিবারের হাল ধরেছে। গাঁয়ে তার অনেক সুনাম। কার কখন অসুখ হলো, কে কখন কোন বিপদে পড়ল, সব স্থানেই সোহেলের উপস্থিতি। হা-ডু-ডু, ফুটবল খেলায়ও সে পারদর্শী। সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু তাদের অভাব-অনটন প্রায় সারা বছর লেগেই আছে। মা ও ভাই-বোনদের মুখের দিকে চেয়ে একদিন সোহেল সবার অগোচরে শহরে চলে যায়। সেখানে গিয়ে সে রিকশা চালায়। এখন অবস্থ আগের চেয়ে ভালো। সে আর গাঁয়ে ফিরে আসে না।

ক. ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ কবি জসীমউদ্‌দীনের কোন ধরনের রচনা?
খ. ‘শাল-সুন্দি-বেত’ যেন ও, সকল কাজেই লাগে- চরণটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপক ও ‘রুপাই’ কবিতার আলোকে সোহেল ও রুপাইয়ের স্বভাব-প্রকৃতির সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. ‘সোহেল তার গ্রাম ও গ্রামের মানুষকে ভালোবাসলেও জীবনের কঠোর বাস্তবতায় একসময় গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায়- সোহেল ও রুপাইয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে মতামত প্রদান কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ কবি জসীমউদ্‌দীনের একটি কাহিনি কাব্য।

খ. ‘শাল-সুন্দি-বেত’ যেন ও, সকল কাজেই লাগে- চরণটির দ্বারা কবি রুপাইয়ের বিভিন্ন গুণের কথা বলতে চেয়েছেন।

গাঁয়ের চাষার ছেলে রুপাইয়ের মধ্যে অনেক গুণের সমাবেশ দেখে কবি বলেছেন, শালগাছ, শ্বেতপদ্ম ও বেত যেমন একত্রে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়, তেমনি রুপাইয়ের মধ্যেও অনেক গুণের সমাবেশ রয়েছে বলে তাকেও গ্রামের মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারে। গানের আসরে, লাঠি খেলায়, বাঁশিতে সুর তোলা সবকিছুতেই সে পারদর্শী। শাল-সুন্দি ও বেতের সম্মিলিত ব্যবহারে মানুষ যেমন উপকৃত হয়, রুপাইয়ের বিবিধ গুণের কারণে গাঁয়ের মানুষও তার দ্বারা তেমনিভাবে উপকৃত।

গ. কবিতার রুপাই ও উদ্দীপকের সোহেলের মধ্যে যেমন কিছু সাদৃশ্য রয়েছে তেমনি কিছু ক্ষেত্রে আবার বৈসাদৃশ্যও রয়েছে।

‘রুপাই’ কবিতার রুপাই তার গাঁয়ের এক চাষার ছেলে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ও রূপগুণকে ধারণ করেই সে বেড়ে উঠেছে। রুপাই খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পারদর্শী। লাঠি খেলা, জারি গান, বাঁশিতে সুর তোলা- এসব কাজে পারদর্শী বলে গাঁয়ে তার ডাকনাম। তার মতো বুকের পাটা কারও নেই।

উদ্দীপকের সোহেলের মধ্যে আমরা মানবিক গুণাবলির পরিচয় বেশি পাই। সে রুপাইয়ের মতোই খেলাধুলায় পারদর্শী। গাঁয়ের মানুষের অসুখ-বিসুখ বা অন্য কোনো বিপদেও সে এগিয়ে যায়। রুপাইয়ের এসব মানবিক গুণ না থাকলেও সে তার গাঁয়ে থেকে যায় এবং শাল-সুন্দি-বেতের মতোই মানুষের নানা কাজে লাগে। কিন্তু সোহেল তার পরিবারের স্বার্থে শহরে গিয়ে জীবিকা অর্জনের পথ বেছে নেয়। এখানেই রুপাই ও সোহেলের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

ঘ. সোহেল তার গ্রাম ও গ্রামের মানুষকে ভালোবাসলেও একসময় গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। জীবনের কঠোর বাস্তবতায় তার এ পদক্ষেপ যথার্থ।

‘রূপাই’ কবিতার রুপাই প্রকৃতির কোলেই শৈশব থেকে বেড়ে ওঠে। গাঁয়ের আর দশটি কিশোরের চেয়ে ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয় সে। যে কারণে জারিগান, খেলাধুলাসহ নানা কাজে শাল-সুন্দি-বেত-এর মতো সকলের আগে তার ডাক পড়ে। সেও তার গাঁয়ের মানুষকে ভালোবেসে আপন করে নেয়।

উদ্দীপকের সোহেল রুপাইয়ের মতোই খেলাধুলায় পারদর্শী। মানুষের অসুখ-বিসুখসহ নানা বিপদ-আপদে সে সবার আগে হাত বাড়িয়ে দেয়। এসব কারণে গাঁয়ের মানুষের কাছে সে খুব প্রিয়। কিন্তু দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান সে। পিতার আকস্মিক মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে একদিন সে সকলের অগোচরে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। যদিও গ্রাম ও গ্রামের মানুষ তার খুব প্রিয়, কিন্তু তার চেয়ে বেশি প্রিয় মা ও ভাইবোন। তাই সে শহরে গিয়ে রিকশা চালিয়ে অসহায় পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়।

রুপাই ও সোহেলের চরিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, রুপাইয়ের অনেক গুণ সোহেলের মধ্যেও বিদ্যমান। উপরন্তু সোহেলের মধ্যে বেশকিছু মানবিক গুণ রয়েছে। যেমন- গাঁয়ের মানুষের অসুস্থতায় সেবাপ্রদানসহ বিভিন্ন বিপদ-আপদে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সে তার গ্রাম ও গ্রামের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসে। কিন্তু মা ও ভাইবোনদের অন্নকষ্টের কথা ভেবে সে একদিন সবার অগোচরে শহরে চলে যায় এবং কঠোর পরিশ্রম করে পরিবারের সুদিন ফিরিয়ে আনে। সোহেলের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাকে অনেক বেশি মানবিক করে তুলেছে, যা রুপাই চরিত্রে লক্ষ করা যায় না।

Leave a Comment