(বাংলা) SSC: শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব হচ্ছে মাধ্যমিক অর্থাৎ নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বই এর মোতাহের হোসেন চৌধুরীর অন্যতম গ্রন্থ ‘সংস্কৃত কথা’র ‘মনুষ্যত্ব’ শীর্ষক প্রবন্ধের অংশবিশেষ। শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধ থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব প্রবন্ধের সৃজনশীল

১. তামিম ও শামীম একটি অফিসের কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। তামিম মনে করেন, জনসাধারণের সেবা করাই তার ব্রত। এ কারণেই তিনি কাজের প্রতি খুবই দায়িত্বশীল ও সচেতন। অপরদিকে শামীম তার পদকে ব্যবহার করে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ। দুর্নীতি দমন কমিশন তার দুর্নীতির সত্যতা পেলে তাকে আইনে সোপর্দ করে।
ক. মুক্তির জন্য কয়টি উপায় অবলম্বন করতে হয়?
খ. অপ্রয়োজনের শিক্ষাকে লেখক শ্রেষ্ঠ বলেছেন কেন?
গ. তামিম সাহেবের মাঝে শিক্ষার যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব‘ প্রবন্ধের আলোকে লেখ
ঘ. শামীম সাহেবের মতো ব্যক্তিরা শিক্ষিত হলেও প্রকৃত শিক্ষিত নয়— উক্তিটি ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মানবজীবনে মুক্তির জন্য দুটি উপায় অবলম্বন করতে হয়।

খ. লেখক শিক্ষার অপ্রয়োজনের দিকটিকে শ্রেষ্ঠ দিক বলেছেন। কারণ এ দিকটি মানুষের মনকে বিকশিত করে, মনুষ্যত্ব অর্জনে সহায়তা করে।
শিক্ষার দুটি দিক— একটি প্রয়োজনের, অপরটি অপ্রয়োজনের । দ্বিতীয় দিকটি মানুষের মনের দুয়ার উন্মোচিত করে তাকে শেখায় কীভাবে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমেই মানুষ অনুভূতি ও কল্পনার রস আস্বাদন করতে পারে। তার সুপ্ত মন শিক্ষার স্পর্শ পেয়ে আর দশজন সাধারণের থেকে পৃথক হয়ে ওঠে। এসব কারণে শিক্ষার অপ্রয়োজনের দিকটিকে লেখক শ্রেষ্ঠ দিক বলেছেন।

গ. উদ্দীপকের তামিম সাহেবের মাঝে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ব অর্জনের দিক তথা মানবসত্তার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
মনুষ্যত্বই মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন। মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন মানুষ দ্বারা সুন্দর ও সুশৃঙ্খল মানবসমাজ গড়ে ওঠে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সংকীর্ণতার গণ্ডি অতিক্রম করে বৃহতের দিকে যাত্রা করে।
উদ্দীপকে এক অফিসের দুই কর্মকর্তার মানসিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করা হয়েছে। তারা একই অফিসে চাকরি করেও ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতা পোষণ করে। এদের একজন তামিম সাহেব। তিনি জনসাধারণের সেবা করার ব্রত নিয়ে কাজ করেন। তিনি তার কাজের প্রতি দায়িত্বশীল ও সচেতন। নির্লোভ তামিম সাহেবের এই মানসিক বৈশিষ্ট্য ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ব অর্জনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রবন্ধে লেখক জীবসত্তা ও মানসত্তার যে কথা বলেছেন তার মধ্যে মানবসত্তার অধিকারী হচ্ছেন তামিম সাহেব। মানবসত্তা মানুষকে ক্ষুধা নিবারণের আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্তি দিয়ে মনুষ্যত্বলোকের সন্ধান দেয়। সেই দিকটি উদ্দীপকের তামিম চরিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। তার কর্মকাণ্ডে শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের পদক্ষেপ দেখা যায়।

ঘ. শামীম সাহেবের মতো ব্যক্তিরা শিক্ষিত হলেও প্রকৃত শিক্ষিত নয়— মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনকেই প্রকৃত শিক্ষা বলা যায় না। শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ব অর্জিত না হলে সেই শিক্ষার কোনো মূল্য থাকে না । মানুষ যখন জীবনের জন্য অধিক অর্থচিন্তায় ব্যস্ত থাকে তখন সে প্রকৃত শিক্ষা অর্জনে ব্যর্থ হয় এবং মনুষ্যত্বহীন হয়ে পড়ে।
‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মানবজীবনকে একটি দোতলা ঘরের সঙ্গে তুলনা করেছেন, এগুলোর একটি জীবসত্তা এবং অন্যটি মানবসত্তা। জীবসত্তা মানুষকে সবসময় অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি করে রাখে। অর্থের লোভ ব্যক্তিকে লোভী করে তোলে। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব সে অনুধাবন করতে পারে না। প্রবন্ধের এ দিকটির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে উদ্দীপকের শামীম সাহেবের বৈশিষ্ট্য সাদৃশ্যপূর্ণ। তিনিও অর্থচিন্তায় নিগড়ে বন্দি। এ কারণেই তিনি তার পদকে ব্যবহার করে দুর্নীতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন এবং অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তার মধ্যে যে লোভী মানসিকতার পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাতে তার সেই শিক্ষাকে প্রকৃত শিক্ষা বলা যায় না। কারণ তিনি আত্মস্বার্থে অন্যায় পথে পা বাড়িয়ে অপরাধী হয়ে উঠেছেন।
‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের লেখকের মতে শিক্ষার অপ্রয়োজনীয় দিক হচ্ছে মানবসত্তা, যা মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করে।
মনুষ্যত্ব জাগ্রত হলে মানুষ জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারে। মনুষ্যত্ব মানুষকে মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করতে সাহায্য করে। উদ্দীপকের শামীম সাহেবের মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটেনি। তিনি অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি হয়ে লোভী হয়ে উঠেছেন। তার ভেতরে যে শিক্ষা আছে তা মানবসেবায় বা মানবকল্যাণে নিয়োজিত নয়। তাতে তার আত্মারও মুক্তি ঘটে না। এসব দিক বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

২. ১ জুলাই, ২০১৬ ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজেন বেকারি এস্ত রেস্টুরেন্টে একদল শিক্ষিত বিপথগামী যুবক নৃশংস হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশিসহ ২২ জন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এটি এ দেশের ইতিহাসে একটি জঘন্যতম হত্যার ঘটনা।
ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর পৈতৃক নিবাস কোন গ্রামে।
খ. মানবজীবনে শিক্ষা সোনা ফলাতে পারে না কেন? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত যুবকদের মধ্যে শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে বর্ণিত শিক্ষার কোন দিকটি অনুপস্থিত? বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনা ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধ লেখকের প্রত্যাশার বিপরীত।”- মূল্যায়ন কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে।

খ. মানবজীবনে শিক্ষা সোনা ফলাতে না পারার কারণ মানুষ অর্থসাধনাকেই জীবনসাধনা মনে করে।
সাধারণভাবে অধিকাংশ মানুষই শিক্ষাকে জীবনধারণের উপায় মনে করে। তারা মনে করে, অর্থসাধনাই জীবনসাধনা। কিন্তু অর্থসাধনাই যে, জীবনের সবটুকু নয় এ বিষয়টি মানুষকে বোঝানো যায় না। তাই শিক্ষা তাদের জীবনে সোনা ফলাতে পারে না। কিছুসংখ্যক মানুষ শিক্ষার সুফল বুঝতে পারলেও অধিকাংশ মানুষই শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে পারে না। তারা যে তিমিরে আছে, সেই তিমিরেই থেকে যায়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত যুবকদের মধ্যে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে বর্ণিত শিক্ষার অপ্রয়োজনের দিকটি অনুপস্থিত।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনকেই প্রকৃত শিক্ষা বলা যায় না। শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ব অর্জিত না হলে সে শিক্ষার কোনো মূল্য থাকে না। তাই শিক্ষা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে মনুষ্যত্ব অর্জনের দিকটিতেও গুরুত্ব দিতে হবে।
‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন যে, শিক্ষার আসল কাজ হলো মূল্যবোধ সৃষ্টি, জ্ঞান দান নয়। অথচ প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ শিক্ষা অর্জন করলেও তার ভেতরে মূল্যবোধ সৃষ্টি হচ্ছে না। কেবল অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি হয়ে পড়ছে, ফলে শিক্ষার অপ্রয়োজনের দিকটি অর্জিত হচ্ছে না। উদ্দীপকের যুবকরাও মনুষ্যত্ববোধ অর্জন করেনি। তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও সেই শিক্ষা তাদের মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করতে পারছে না। ফলে তারা নৃশংস হামলা চালিয়ে মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করতেও পিছপা হয় না। এভাবে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের শিক্ষার মনুষ্যত্ব অর্জনের দিকটি আলোচা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।

ঘ. “উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনা শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখকের প্রত্যাশার বিপরীত।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
জীবসত্তা থেকে মানবসত্তায় উত্তরণের মাধ্যম বা পথ হলো শিক্ষা। শিক্ষার আলোয় হৃদয় আলোকিত হয়, মানুষ অর্জন করে মনুষ্যত্ব। প্রকৃত শিক্ষার অভাবে মনুষ্যত্ব অর্জনের কাজটি অসমাপ্তই থেকে যায়। ফলে শিক্ষিত হয়েও মানুষ অন্ধকারেই থেকে যায়।
উদ্দীপকের যুবকরা শিক্ষিত হয়েও মনুষ্যত্ব বিবর্জিত। এ কারণে নৃশংস হত্যাকান্তে তাদের হাত কাপেনি। তাদের জন্য ‘শিক্ষা মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের প্রত্যাশিত প্রকৃত শিক্ষাই কাম্য ছিল যে শিক্ষা তাদের ভেতরে মনুষ্যত্ববোধকে জাগিয়ে তুলতে পারত। এ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন, মানুষের জীবন হলো একটি দোতলা হলো সেই ঘরের নিচতলা আর মানবসত্ত্বা বা মনুষ্যত্ব হলো সেই ঘরে ওপরের তলা। এই জীবসত্তা থেকে মানবসত্তার ঘরে পৌঁছানোর ২৪ হলো শিক্ষা। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মূল্যবোধ সৃষ্টি, উদ্দীপকের যুবকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়নি।
‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ প্রত্যাশ করেছেন। প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ মনুষ্যত্ব অর্জন করতে পারে। উদ্দীপকের যুবকরা শিক্ষিত হলেও তারা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত নয়। তাই তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটেনি। ফলে তারা এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

৩. ফিরোজ মিয়া একজন আদর্শ শিক্ষক। তার দুই সন্তান সুশিক্ষিত। সন্তানদের মধ্যে মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটানোই ছিল তার উদ্দেশ্য। তবে তার ছেলেমেয়েরা শুধু মনুষ্যত্ববোধের অধিকারীই নয়, সমাজেও তা সুপ্রতিষ্ঠিত।
ক. কোন চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারলে শিক্ষা মানবজীবনে সোনা ফলাবে?
খ. শিক্ষার অপ্রয়োজনীয় দিকই শ্রেষ্ঠ দিক কেন?
গ. শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে উদ্দীপকের ফিরোজ মিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির তুলনা কর।
ঘ. শিক্ষা শুধু মানবসত্তার ঘরে নিয়ে যায় না, জীবসত্তার ঘরেও সে কাজ করে। শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধ ও উদ্দীপকের আলোকে মন্তব্যটির বিচার কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. অর্থসাধনাই জীবনসাধনা নয়- এ উপলব্ধির মাধ্যমে অর্থচিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারলে শিক্ষা মানবজীবনে সোনা ফলাবে।

খ. শিক্ষার অপ্রয়োজনের দিক শ্রেষ্ঠ দিক। কারণ এই দিকটি মানুষের মনকে বিকশিত করে।
শিক্ষার দুটি দিক— একটি প্রয়োজনের, অপরটি অপ্রয়োজনের। দ্বিতীয় দিকটি মানুষের মনের দুয়ার উন্মোচিত করে তাকে শেখায় কীভাবে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। শুধু তাই নয়, এটির মাধ্যমেই মানুষ অনুভূতি ও কল্পনার রস আস্বাদন করতে পারে। তার সুপ্ত মন শিক্ষার স্পর্শ পেয়ে আর দশজন সাধারণের থেকে পৃথক হয়ে ওঠে। এই কারণে শিক্ষার অপ্রয়োজনের দিকটিই শ্রেষ্ঠ।

গ. ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে উদ্দীপকের ফিরোজ মিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সাদৃশ্য রয়েছে।
কিছু মানুষ কেবল অর্থের পেছনে ছোটে। কিন্তু অর্থচিন্তাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়- এ বিষয়টি সবাই অনুধাবন করতে পারে না। অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি থাকার ফলে তারা মনুষ্যত্বলোকের সন্ধান পায় না।
উদ্দীপকের ফিরোজ মিয়া একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি দুই ছেলেকে আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন। তাদের মাঝে ঘটাতে চেয়েছেন মনুষ্যত্বের জাগরণ। তিনি সারা জীবন যে আদর্শ লালন করেছেন, যে স্বপ্ন দেখেছেন— নিজের সন্তানদের মাঝে তার প্রতিফলন প্রত্যাশা করেছেন। বাবার ইচ্ছা পূরণ করে তারা দুজন আজ সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধেও প্রাবন্ধিক অভিন্ন চেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। প্রাবন্ধিক অর্থসাধানকে সর্বশেষ কথা হিসেবে মেনে যথার্থ মনুষ্যত্বলোকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আবশ্যকতার দিকটি তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে শিক্ষা লাভের মাধ্যমে মনুষ্যত্বলোকের বিকাশ ঘটে। অন্নচিন্তার চেয়ে মূর্তিকে তিনি বড় হিসেবে দেখেছেন। প্রাবন্ধিকের এই চেতনার সঙ্গে উদ্দীপকের ফিরোজ মিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সাদৃশ্য স্পষ্ট হয়।

ঘ. শিক্ষা শুধু মানবসত্তার ঘরে নিয়ে যায় না, জীবসত্তার ঘরেও সে কাজ করে। “শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধ ও উদ্দীপকের আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ।
মানুষের জীবনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত মনুষ্যত্ব অর্জন করা। কিন্তু সমাজ-সংসারে টিকে থাকতে হলে অন্নচিন্তার বিষয়টিও এড়িয়ে থাকা যায় না। তাই প্রকৃত শিক্ষা লাভ করতে পারলে মনুষ্যত্ব লাভের পাশাপাশি অন্নচিন্তাও দূর হয়।
উদ্দীপকের ফিরোজ মিয়ার দুই সন্তান আজ সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। ফিরোজ মিয়া তাদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন মনুষ্যত্বলোকের সঙ্গে। তাই আজ তারা সব ক্ষেত্রেই জয়ী। 1 তারা মনুষ্যত্ববোধ অর্জনের পাশাপাশি সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক একই কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন শিক্ষার প্রয়োজনের দিকের পাশাপাশি অপ্রয়োজনের দিকও আছে। অন্নচিন্তা থেকে মুক্তি না পেলে শিক্ষা জীবনে সোনা ফলাতে পারবে না। তাই আত্মার অমৃত লাভ করতে হলে অন্ন-বস্ত্রের সমস্যার সমাধান করতে হবে।
উদ্দীপকের ফিরোজ মিয়ার দুই সন্তান বাবার নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। কারণ তারা শিক্ষার যথার্থ উপযোগিতা লাভ করেছে। শিক্ষা তাদের শুধু মানবসত্তার ঘরেই নিয়ে যায়নি, জীবসত্তার ঘরেও কাজ করেছে। তারা মনুষ্যত্ববোধের অধিকারী হওয়ার পাশাপাশি তাদের অন্নবস্ত্রের চিন্তাও দূর হয়েছে। এ দিকটিই “শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের লেখক তুলে ধরেছেন। তাই আমরা বলতে পারি, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

আরো পড়ো → মানুষ মুহম্মদ (স.) প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়ো → নিমগাছ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৪. বাগদাদের আলী কোজাই সারা জীবনের সঞ্চয় সোনার মোহর কলসিতে ভরে বন্ধু নাজিমের কাছে গচ্ছিত রেখে হজব্রত পালনে গেল। দুই বছর পর ফিরে এসে বন্ধুর কাছ থেকে কলসি ফেরত নিয়ে দেখে তাতে কোনো সোনার মোহর নেই। নাজিম সব আত্মসাৎ করেছে। আলী কোজাই নাজিমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, মোহরের ব্যাপারে সে কিছুই জানে না.
ক. শিক্ষা মানুষের কোন দিকটি জাগ্রত করে?
খ. “লেফাফাদুরস্তি আর শিক্ষা এক কথা নয়” – বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকের নাজিমের আচরণে শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের কোন দিক লক্ষণীয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের নাজিমের মতো মানুষদের মানসিকতা পরিবর্তনই ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মূল শিক্ষা।” ― যৌক্তিক মতামত দাও।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. শিক্ষা মানুষের সচেতনতা ও মূল্যবোধের দিকটি জাগ্রত করে।

খ. “লেফাফাদুরস্তি আর শিক্ষা এক কথা নয়।”- কথাটি দ্বারা শিক্ষা যে কেবল বাইরের চাকচিক্য নয় তা বোঝানো হয়েছে।
‘লেফাফাদুরস্তি’ হচ্ছে বাইরের দিক থেকে ত্রুটিহীনতা কিন্তু ভিতরে প্রতারণা। তাই মানুষ উপলব্ধি করতে পারে না ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। অর্থাৎ ছোট জিনিসের লোভে যে বড় জিনিস হারাতে কুণ্ঠিত নয়, সে শিক্ষিত নয়। কারণ শিক্ষার আসল কাজ হলো মূল্যবোধ সৃষ্টি করা, জ্ঞান পরিবেশন করা নয়। শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ব লাভ করে।
মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে। শিক্ষা মানুষকে মনুষ্যত্বলোকের সঙ্গে পরিচয় করায়। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ সংকীর্ণতার গণ্ডি ছেড়ে বৃহতের দিকে যাত্রা করে। মনকে আলোকিত করে, ভিতরকে জাগিয়ে তোলে। অন্যদিকে লেফাফাদুরস্তি মানুষের মধ্যে কতকগুলো বাহ্যিক বিষয় সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয়। মানুষ সেখানে মনুষ্যত্বলোকের সন্ধান পায় না। এসব কারণেই লেখক লেফাফাদুরস্তি আর শিক্ষা এক কথা নয় বলে মন্তব্য করেছেন।

গ. উদ্দীপকের নাজিমের আচরণে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মনুষ্যত্বহীনতার দিকটি লক্ষণীয়, যা লেফাফাদুরস্তি হিসেবেও উল্লেখ করা যেতে পারে।
‘লেফাফাদুরস্তি’ হলো বাইরের দিক থেকে ত্রুটিহীনতা কিন্তু ভিতরে প্রতারণা। লেফাফাদুরস্ত মানুষের মধ্যে কতকগুলো বাহ্যিক বিষয় সম্পর্কে কিছু ধারণা প্রদান করে। এদের মধ্যে মনুষ্যত্বের অভাব থাকে। এদের বিশ্বাস করলে ক্ষতি অবধারিত। শিক্ষা মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জনে সহায়তা করে। কিন্তু লেফাফাদুরস্ত শ্রেণির লোক শিক্ষাহীন হওয়ার কারণে এমন হীন ও প্রতারণামূলক কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না।
উদ্দীপকের আলী কোজাই নিজ জীবনের সঞ্চিত সোনার মোহর তার বন্ধুর কাছে গচ্ছিত রেখে হজব্রত পালনে গেলে তার বন্ধু নাজিম লোভের বশবর্তী হয়ে আলীর মোহর আত্মসাৎ করে। নাজিমকে বিশ্বাস করে; কিন্তু নাজিম বিশ্বাসের মূল্য দিতে ব্যর্থ হয়। কারণ নাজিমের শিক্ষা ও মনুষ্যত্বের অভাব ছিল। অপরদিকে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব” প্রবন্ধে লেফাফাদুরস্তি তথা প্রতারণার বিষয়টির অবতারণা করা আছে। শিক্ষার ফলে মানুষ বুঝতে পারে ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। যাদের শিক্ষার অভাব তারা মনুষ্যত্ব অর্জনে ব্যর্থ। শিক্ষা থাকলে মানুষ লোভের ফাঁদে ধরা দিতে ভয় পায়। কিন্তু শিক্ষাহীন মানুষ মোহে পড়ে মনুষ্যত্ব বা বড় কোনো জিনিস হারাতেও দুঃখ বোধ করে না। উদ্দীপকের নাজিমও তার মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিতে দ্বিধান্বিত হয়নি। অতএব বলা যায় যে, নাজিমের আচরণে ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মনুষ্যত্বহীনতার বা লেফাফাদুরস্তি দিকটি লক্ষণীয়।

ঘ. “উদ্দীপকের নাজিমের মতো মানুষদের মানসিকতা পরিবর্তনই “শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মূল শিক্ষা।”— উক্তিটি যথার্থ।
শিক্ষা মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব বা মূল্যবোধ সৃষ্টি করে। মানুষকে অন্ধকার পথ থেকে মুক্তি দেয় এবং আলোর পথে নিয়ে আসে। মানুষের সৃজনশীল মানবসত্তার বিকাশ ঘটায়। মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তি নীচতা, ক্ষুদ্রতা পরিহার করে বৃহত্তর লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়। শিক্ষা মানুষকে সার্বিকভাবে বিকাশের উপযোগী করে তোলে।
‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক জীবসত্তা ও মানবসত্তার সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। লেখকের মতে শিক্ষার ফলে মনুষ্যত্বের স্বাদ পেলে মানুষের অন্ন-বস্ত্রের সমস্যার সমাধান সহজ হয়। সঠিকভাবে শিক্ষা দ্বারা অর্থচিন্তায় ব্যস্ত মানুষ মনুষ্যত্ব অর্জনে সক্ষম হয়। লেফাফাদুরস্তির মতো শিক্ষা নয়; সঠিক শিক্ষা প্রয়োজন । উদ্দীপকের নাজিমের মধ্যে শিক্ষার এসব দিক অনুপস্থিত। ফলে তার মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে প্রকৃত শিক্ষার অভাব থাকার কারণেই লোভের বশবর্তী হয়ে বন্ধুর সোনার মোহর আত্মসাৎ করেছিল। প্রকৃতপক্ষে নাজিম একজন লোভী ও প্রতারক, যে অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি।
‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্য হলো শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ববোধ সৃষ্টি করা বা মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটানো। মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হয়নি বলেই নাজিম তার বন্ধুর রেখে যাওয়া আমানত আত্মসাৎ করেছিল। প্রবন্ধের মূল বক্তব্য শিক্ষার মাধ্যমে মূল্যবোধ সৃষ্টি করে মানুষকে মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন করা, যা নাজিমের মানসিকতা পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। কারণ মূল্যবোধ সৃষ্টি হলেই তার মানসিকতার পরিবর্তন হবে। এসব দিক বিবেচনায় আলোচ্য উক্তিটি যথার্থ।

৫. নেহাল সাহেব বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম হলেও তাদের প্রতিটি সদস্যের চাহিদার শেষ নেই। তাদের সবার মুখে কেবলই ধ্বনিত হয়— চাই, চাই, আরও চাই। অনন্ত এই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে নেহাল সাহেব দুর্নীতির সাথে যাচ্ছেন।
ক. জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার ঘরে উঠবার মই কোনটি?
খ. অর্থসাধনাই জীবনসাধনা নয়’- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের নেহাল সাহেবের চরিত্রে শিক্ষার কোন দিকটি অনুপস্থিত? ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তাদের সংসারে কেবল ধ্বনিত হয় চাই, চাই, আরও চাই।’ উক্তিটি ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্তার ঘরে উঠবার মই হচ্ছে-শিক্ষা।

খ. অর্ধসাধনাই জীবনসাধনা নয়। কারণ বেঁচে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজন থাকলেও শুধু অর্থের পেছনে দৌড়ানো মানবজীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। মানুষকে মনুষ্যত্বও অর্জন করতে হয়।
জীবনধারণের জন্য অর্থ উপার্জন অপরিহার্য। তবে শুধু অর্থ উপার্জনের পেছনে ছুটলে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য আড়ালেই থেকে যায়। কারণ যারা কেবল অর্থচিন্তা দ্বারা তাড়িত তারা মনুষ্যত্বলোকের স্বাদ অনুভব করতে পারে না। জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য অনুধাবন করতে হলে অর্থচিন্তার নিগড় থেকে মুক্ত হয়ে মনুষ্যত্বলোকে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে । নইলে শিক্ষা মানবজীবনে সোনা ফলাতে পারবে না। ফলে শিক্ষার সুফল সামষ্টিক না হয়ে তা হবে একান্তই ব্যক্তিগত।

গ. উদ্দীপকের নেহাল সাহেবের চরিত্রে শিক্ষার অপ্রয়োজনের দিকটি অনুপস্থিত।
প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনকেই প্রকৃত শিক্ষা বলা যায় না। শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ব অর্জিত না হলে সেই শিক্ষার কোনো মূল্য থাকে না। তাই কেবল জীবসত্তার ঘরে পড়ে থাকলে চলে না, মানুষকে প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মানবসত্তার ঘরে পৌঁছতে হয়।
উদ্দীপকের নেহাল সাহেবের মধ্যে জীবসত্তার প্রকাশ ঘটেছে। পরিবারের সদস্যদের চাহিদা পূরণে সারাক্ষণ তাকে অর্থচিন্তা ও অন্ন- বস্ত্রের চিন্তায় মগ্ন থাকতে হয়। মাত্রাতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন তাকে আরও লোভী করে তুলেছে। কারণ জীবসত্তা সব সময় মানুষকে অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি করে রাখে। ফলে তারা শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে না। উদ্দীপকের নেহাল সাহেবও তা পারেননি। কারণ, তার মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টি হয়নি। অর্থসাধনাকেই নেহাল সাহেব জীবনসাধনা মনে করেছেন। তার ভেতর মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটেনি। ফলে শিক্ষার শ্রেষ্ঠ দিক তথা অপ্রয়োজনের দিকটি তার মধ্যে প্রতিফলিত হয়নি। ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের লেখকের মতে, শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটলেই মানুষ মানবসত্তা বা মনুষ্যত্বলোকের সন্ধান লাভ করে। শিক্ষার অপ্রয়োজনীয় দিক মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ জাগায়, যা উদ্দীপকের নেহাল সাহেবের চরিত্রে প্রকাশ পায়নি। এভাবে তার চরিত্রে শিক্ষার অপ্রয়োজনের তথা মানবসত্তার দিকটি অনুপস্থিত।

ঘ. ‘তাদের সংসারে কেবল ধ্বনিত হয়- চাই, চাই, আরও চাই উক্তিটি ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন করা যায়।
মানুষের জীবনে যেমন অন্ন-বস্ত্রের প্রয়োজন আছে তেমনই মনুষ্যত্ব অর্জনেরও প্রয়োজন রয়েছে। মানুষ যখন জীবনের জন্য অধিক অর্থ উপার্জনের চিন্তায় ব্যস্ত থাকে তখন সে প্রকৃত শিক্ষা অর্জনে ব্যর্থ হয় এবং মনুষ্যত্বহীন হয়ে পড়ে।
‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে লেখক মানবজীবনকে একটি দোতলা ঘরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। জীবসত্তা হলো সেই ঘরের নিচের তলা এবং মানবসত্তা হলো সেই ঘরের উপরের তলা। আর এই নিচতলা থেকে উপরের তলায় ওঠার মই হলো শিক্ষা। যারা শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্ব অর্জন করেন তারা জীবসত্তা থেকে মানবসত্তায় উত্তীর্ণ হতে পারেন। আর যারা অর্থচিন্তার নিগড়ে বন্দি হয়ে পড়ে তারা জীবসত্তা থেকে মানবসত্তায় উত্তীর্ণ হতে পারে না। যেমন উদ্দীপকের নেহাল সাহেব পারেননি। তার পরিবারের চাহিদা পূরণে তিনি অর্থলোভী হয়ে উঠেছেন। তার ভেতর শিক্ষার প্রয়োজনের দিকটি প্রকট হয়েছে, মানবসত্তার দিকটি গুরুত্ব হারিয়েছে। তার মধ্যে মূল্যবোধের বিকাশ ঘটেনি বলে তিনি অর্থচিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েছেন। এই কারণেই তার সংসারে চাই, চাই প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধের মূল কথা হলো জীবসত্তার প্রয়োজনে অন্ন-বস্ত্রের চিন্তা থেকে মুক্তি এবং শিক্ষালাভের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানো। অসীম চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ যেকোনো কাজ করতে রাজি থাকে, যা মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে দেয় না। সমাজে এই ধরনের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে, যা মনুষ্যত্ব অর্জনের অন্তরায়। কারণ মানুষ যখন অন্যায় ও অসৎভাবে অবৈধ অর্থ উপার্জন ও সম্পাদ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে তখন সে মনুষ্যত্ব থেকে দূরে সরে যায়। প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে এবং জীবসত্তা তথা অর্থচিন্তার নিগড় থেকে মানুষ মুক্তি পায়।

Leave a Comment