(স্বাস্থ্য সুরক্ষা) ৬ষ্ঠ: আমার কৈশোরের যত্ন – সমাধান

আমার কৈশোরের যত্ন হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বই এর শিখন অভিজ্ঞতা। আমার কৈশোরের যত্ন অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

আমার কৈশোরের যত্ন

প্রথম সেশন
কাজ-১: কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমার ধারণা
প্রয়োজনীয় সামগ্রী: শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা বই

কাজের ধারা

  • প্রথমে বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন বিষয়টি ধারনা পেতে পাঠ সহায়ক বিষয়বস্তুর প্রস্তুতি অংশের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন অংশটি পড়ি।
  • এরপর নিজেদের জীবনের সাথে কোনো মিল খুজে পাচ্ছি কিনা তা পাশে বসা সহপাঠীর সাথে কয়েক মিনিট আলোচনা করি।
  • এরপর নিজের মতো করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেই এবং নিচে দেওয়া নমুনা উত্তরের সাথে মিলিয়ে দেখি।

নমুনা উত্তর:

  • বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমি কী জানি?
    উত্তর : প্রত্যেক মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় হলো বয়ঃসন্ধিকাল। এই সময় বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলো ছেলেদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে দেখা যায়।
  • আমার শরীরে কী ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করছি?
    উত্তর :আমার জীবনে আমি এখন বয়ঃসন্ধিকালের বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ করছি। এগুলো হলো-
    i. আমার উচ্চতা দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে।
    ii. শরীর দৃঢ় হয়ে যাচ্ছে।
    iii. শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লোম গজাতে শুরু করেছে।
    iv. কন্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়েছে।
    v. মুখমণ্ডলে ব্রণ উঠছে।
  • আমার মনে নতুন কী ভাবনা আসে?
    উত্তর : আমার মনের মধ্যে নানা ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও অস্থিরতা কাজ করে। নিকটজনের যত্ন ও ভালোবাসা পাওয়ার ইচ্ছা দিনদিন তীব্র হচ্ছে। মনের মধ্যে কিশোরীদের বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। আমার শারীরিক একটি পরিবর্তন সম্পর্কে কাউকে জিজ্ঞেস করতে আমি সংকোচবোধ করি। মনে মনে ভাবতে থাকি আমি হয়তো বড় কোনো রোগের সম্মুখীন হয়েছি।
  • এসব পরিবর্তনের কারণে আমার দৈনন্দিন জীবনে অভ্যাস বা আচরণের কী পরির্তন হয়েছে?
    উত্তর : এসব পরিবর্তনের কারণে আমার দৈনন্দিন জীবনে অভ্যাস বা আচরণের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আামি মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে উঠি। এই অস্থিরতার কারণ কাউকে খুলে বলতে পারি না। আমি এখন হঠাৎ করেই রেগে যাই। নিয়মিত স্কুলে যাই না এবং কিছুদিন থেকে খেলাধুলাও করি না, কাউকে কোনো বিষয়ে কিছু বলতে গেলে সংকোচ বা লজ্জাবোধ করি।

দ্বিতীয় সেশন
কাজ-২: কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমার ধারণা
প্রয়োজনীয় সামগ্রী: পোস্টার পেপার, বড় কাগজ, মার্কার, সাইনপেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বই।

কেস-১

কাজের ধারা

  • বইয়ের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিই এবং নিচে দেওয়া নমুনা উত্তরের সাথে মিলিয়ে দেখি।

নমুনা উত্তর:
ক. দীপা বাড়িতে অবস্থান করার কারণ কী?
উত্তর : দীপা ঋতুস্রাব বা মাসিকের কারণে বাড়িতে অবস্থান করে। মেয়েদের ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে মাসিক শুরু হয়। প্রায় ২৮ দিন পরপর ব্য মাসে একবার এই মাসিক প্রক্রিয়া চলে এবং এই প্রক্রিয়া সাধারণত ২ – ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। দীপা তার মাসিক চলাকালীন সময় স্কুলে না গিয়ে বাড়িতে অবস্থান করে।

খ. ঐ সময় বাড়িতে থাকতে দীপার কেমন লাগত?
উত্তর : দীপা মাসের নির্দিষ্ট যে সময়গুলোতে বাড়িতে থাকতো সে সময় দীপা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে থাকতো। কারণ তখন ২ দিনেরও বেশি সময় ধরে তার রক্তস্রাব চলতে থাকতো। মাসিক বা ঋতুস্রাব তার কাছে একটি নতুন বিষয় হওয়ায় সংকোচের কারণে তার মা-বাবা, বোন বা বড়দের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে পারতো না। এছাড়া দিনে কয়েকবার স্যানিটারি ন্যাপকিন বা কাপড় ব্যবহার করা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলো তার কাছে বিরক্তিকর লাগতো। এমন শারীরিক পরিবর্তনের কারণে তার মনে ভয় কাজ করতো এবং একা একা বা লোকজন এড়িয়ে থাকতে ভালো লাগতো।

গ. দীপার মনের ভিতর কী চলছিল?
উত্তর : এ সময় দীপার মনে বিভিন্ন প্রশ্ন, দ্বিধা, কৌতূহল ও অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিলো। বিশেষ করে মাসিক সম্পর্কে তার পরিপূর্ণ ধারণা না থাকায় এটাকে অস্বাভাবিক ব্যাপার মনে করেছিল। মাসিকের ব্যাপারে বড়দের সাথে কথা বলতে লজ্জাবোধ করায় এ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণাও লাভ করতে পারছিল না। ফলে অহেতুক ভয় এবং দুশ্চিন্তা তার মনের ভিতর চলছিল।

ঘ. কী করলে দীপা নিজের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হবে না বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর : দীপার বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলোর সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এ পরিবর্তনগুলো যে স্বাভাবিক এ বিষয়টি খুব স্পষ্ট করে তাকে বোঝাতে হবে। এটা বোঝাতে পারলে তার অদ্বন্তি বা ভয় কমে যাবে। মাসিকের বিষয় নিয়ে দীপা তার মা, বড় বোন বা দাদীর সাথে আলোচনা করলে অনেক কিছু জানতে পারবে এবং সংকোচ কেটে যাবে। এসময় পরিষ্কার কাপড়, তুলা বা স্যানিটারি ন্যাপকিন, কাগজে মুড়ে স্কুল ব্যাগে করে স্কুলে নিয়ে যেতে পারে। স্কুলে থাকাকালীন সময়ে প্রয়োজন হলে টয়লেটে গিয়ে সেগুলো পরিবর্তন করতে পারবে। ফলে তাকে স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে হবে না এবং পড়াশোনার ক্ষতিও হবে না। এসব বিষয় মেনে চললে দীপা নিজের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হবে না বলে আমি মনে করি।

কেস-২
কাজ-৩: কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমার ধারণা
প্রয়োজনীয় সামগ্রী: পোস্টার পেপার, বড় কাগজ, মার্কার, সাইনপেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বই।

কাজের ধারা

  • বই থেকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেই এবং নিচে দেওয়া নমুনা উত্তরের সাথে মিলিয়ে দেখি।

নমুনা উত্তর:
ক. কেনো সবাই রানাকে এত পছন্দ করে?
উত্তর : রানা নিয়মিত স্কুলে যায়, শিক্ষকের কথা মেনে চলে, বন্ধুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে না। সে বড়দের সম্মান করে এবং ছোটদের স্নেহ করে। তাই তার প্রতিবেশী ও পরিবারের সবার কাছেই সে স্নেহের পাত্র এবং বন্ধুরাও তাকে ভালোবাসে। এসব কারণে সবাই রানাকে এত পছন্দ করে।

খ. কিছুদিন ধরে রানার মাঝে কী কী পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে?
উত্তর : কিছুদিন ধরে রানার মাঝে অনেক মানসিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সে অস্থিরতাবোধ করছে, তার মনের মধ্যে নানা ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে, একা থাকার প্রবণতা বাড়ছে, স্কুলে যাওয়ার অনীহা তৈরি হচ্ছে, হঠাৎ রেগে যাওয়া এবং লজ্জাবোধ করছে। এছাড়া তার কাপড়- চোপড় কেউ ধরলে সে বিরক্তবোধ করছে।

গ. রানার কিছু একটা বলতে সংকোচবোধ করার কারণ কী হতে পারে?
উত্তর : রানা কিছু বলতে গেলে অনেকসময় সংকোচ বা লজ্জাবোধ করে। যেহেতু রানা বয়ঃসন্ধিকাল পার করছে, সেহেতু তাকে বেশ কিছু পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে হয়। তার মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন হলো বীর্যপাত। বীর্যপাতের এ ঘটনাটি তার প্রায়ই ঘটতে পারে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও তার এ সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না থাকায় বীর্যপাতকে লজ্জাজনক একটি ব্যাপার মনে করে। এ বিষয়টি বলতে সে সংকোচবোধ করে।

ঘ. কী করলে রানা নিজের অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত হবে না বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর : রানা যে সময়টি পার করছে এ সম্পর্কিত তার সঠিক তথ্য জানা দরকার। এ সময় কিশোর-কিশোরীদের তীব্র আবেগ ও অনুভূতি হয়। এটি যে একটি স্বাভাবিক ব্যাপার সেটা তার জানতে হবে। এ তথ্যটি তার অহেতুক ভয় এবং দুশ্চিন্তা দূর করবে। এছাড়া বীর্যপাত যে একটি স্বাভাবিক ঘটনা, এর ওপর তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এ বিষয়টি তার জানতে হবে। বিশেষ করে রানার মনে যেসব প্রশ্নের উদ্ভব হয় সেগুলোর উত্তর পেলে সে নিজের অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত হবে না।

চতুর্থ সেশন
কাজ-৫: কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমার ধারণা- ফিরে দেখি
প্রয়োজনীয় সামগ্রী: পোস্টার পেপার, বড় কাগজ, মার্কার, সাইনপেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বই।

কাজের ধারা

  • পাঠ সহায়ক বিষয়বস্তুর প্রস্তুতির বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তনের টপিকটি পড়ি। এরপর ছকটি নিজে পূরণ করি এবং নিচে দেওয়া নমুনা উত্তরের সাথে মিলিয়ে দেখি।

নমুনা উত্তর:

  • বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে আমি কী জানি?
    উত্তর : মানুষ শিশু থেকে ধাপে ধাপে বৃদ্ধ অবস্থায় চলে আসে। জীবনকালের এই পরিবর্তনের একটি ধাপ হলো বয়ঃসন্ধিকাল। বয়ঃসন্ধিকাল আমাদের শরীর ও মনের পরিবর্তনের একটি পর্যায়। মেয়েদের ৮-১৩ বছর বয়সের মধ্যে এবং ছেলেদের ১০-১৫ বছরের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন দেখা যায়। এ সময় শরীর ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন হতে শুরু করে। শরীরের পরিবর্তনগুলোকে শারীরিক পরিবর্তন ও মনের পরিবর্তনকে বলা হয় মানসিক পরিবর্তন।
  • আমার শরীরের পরিবর্তন সম্পর্কে এখন যা জানি
    উত্তর : বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের যে পরিবর্তন ঘটে, তাই শারীরিক পরিবর্তন। এ সময় আমার শরীরে নিচের পরিবর্তনগুলো ঘটতে পারে- • দ্রুত উচ্চতা ও ওজন বাড়া। শরীরের গঠন দৃঢ় ও প্রাপ্তবয়স্কদের মতো হওয়া। শরীরের নানা জায়গায় লোম গজানো। কন্ঠস্বরের পরিবর্তন। মুখমণ্ডলে ব্রণ হওয়া। ত্বক ও চুলে পরিবর্তন আসা।
  • আমার মনের নতুন ভাবনাগুলো সম্পর্কে এখন যা জানি (ছেলে ও মেয়ে উভয়ের দেওয়া হলো)
    উত্তর : বয়ঃসন্ধিকালে মনে নতুন নতুন ভাবনা চলে আসে। এ সময় ছেলে-মেয়েদের কাছে সবচেয়ে কঠিন ভাবনাই হলো বীর্যপাত ও মাসিক সম্পর্কিত। এ সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণা থাকলেও এখন সঠিকভাবে জানি।

মাসিক সম্পর্কে ভাবনা
এটা শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এসময় স্বাভাবিক কাজকর্ম ও খেলাধুলা করাতে কোনো সমস্যা নেই। বাড়ির বাইরে যেতেও কোনো অসুবিধা নেই। এ সময় নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, গোসল করা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আবশ্যক।

বীর্যপাত সম্পর্কে ভাবনা
বীর্ঘপাত শারীরবৃত্তীয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বয়ঃসন্ধিকালে সকল কিশোরদের বীর্যপাত হয়। এটি কোনো রোগ নয় বরং এ সময় ধীর্ঘপাত না হলেই সমস্যা। এছাড়া শারীরিক দুর্বলতার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

পঞ্চম সেশন
কাজ-৬: গল্পে গল্পে কৈশোরের যত্নে আমার পরিকল্পনা
প্রয়োজনীয় সামগ্রী: পোস্টার পেপার, বড় কাগজ, মার্কার, সাইনপেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বই

কাজের ধারা

  • ইতোমধ্যে আমরা বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন সম্পর্কে জেনেছি। এখন এ পরিবর্তনে ভীত বা লজ্জিত না হয়ে কীভাবে ভালো থাকা যায় তা নিয়ে চিন্তা করি।।
  • প্রয়োজনে শিক্ষক বা বাড়ির বড় কারো সহযোগিতা নেই এবং গল্পের মাধ্যমে পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরি এবং নিচে দেওয়া নমুনা উত্তরের সাথে মিলিয়ে দেখি।

নমুনা উত্তর:
রাকিব আমার খুব ভালো বন্ধু। আমাদের বয়স ১২ বছর। আমরা দুজনেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। একদিন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে পাঠদান করেন এবং পরবর্তী দিনে কৈশোরের যত্নে নিজ নিজ পরিকল্পনাগুলো লিপিবদ্ধ করে আনতে বলেন। এছাড়াও পরিকল্পনার জন্য আমাদের একে অপরের সাথে আলোচনা করার পরামর্শ দিলেন। এ বিষয়ে আমি ও রাকিব পরিকল্পনা শুরু করি এবং পরস্পরের সাথে আলোচনা করি। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক বিভিন্ন পরিবর্তন হওয়ায় শরীরের সুস্থতা ও স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য আমি প্রথমেই পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যের তালিকা করা, বেশি বেশি পানি পান করা এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা করি।

এছাড়াও মাসিকের সময় পরিষ্কার ন্যাপকিন ব্যবহার করা এবং ব্যবহৃত ন্যাপকিন দিনে ৩-৫ বার পরিবর্তন করা এবং ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা এবং নিয়মিত গোসল ও সবসময় পরিষ্কার কাপড় পরিধান করারও পরিকল্পনা করেছি। আমার পরিকল্পনা জানার পরে রাকিব বলে, “তোমার মতো আমিও শারীরিক দিক বিবেচনা করে সঠিক খাদ্যাভাস এবং নিয়মিত পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়াও বেশি পরিমাণে পানি পান ও প্রতিদিন ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলবো। নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল, দাঁত ব্রাশ এবং হাত-পায়ের নখ পরিষ্কার ও ছোট রাখবো। বাইরে থেকে বাসায় ফিরেই হাত, পা ও মুখ ধুয়ে ফেলবো। সবসময় পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করবো।”

মনের যত্নে উভয়েই নিয়মিত স্বাস্থ্যকর বিনোদন, শখের কাজ, ও খেলাধুলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আমি রাকিবকে পরামর্শ দেই যে, হঠাৎ রেগে গেলে সে যেন ধীরে ধীরে শ্বাস নেয় ও ছেড়ে দেয় এবং যে স্থানে রাগ হচ্ছে সে স্থান পরিবর্তন করে। কোনো বিষয় নিয়ে অহেতুক ভয় ও দুশ্চিন্তা না করে উভয়েই একে অপরের সাথে মনের কথা খুলে বলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এভাবেই আমি ও রাকিব কৈশোরের যত্নে আমাদের পরিকল্পনা করি।

আরো পড়োসুস্থ থাকি, আনন্দে থাকি, নিরাপদ থাকি

ষষ্ঠ সেশন
কাজ-৭: ডায়েরি/জার্নালে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লিপিবদ্ধকরণ
প্রয়োজনীয় সামগ্রী: স্বাস্থ্য সুরক্ষা বই

১. গত এক/দুইমাসে মাসে পরিকল্পনা অনুযায়ী কোন কাজগুলো করেছি?
২. কাজগুলো করতে কেমন লেগেছে?
৩. এই কাজগুলো আমাকে ভালো থাকতে কীভাবে সাহায্য করছে? (সুস্থ, পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ, উৎফুল্ল ও স্বতঃস্ফূর্ত বোধ করছি কি?)
৪. কাজগুলো করতে গিয়ে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি কি? হয়ে থাকলে কীভাবে তা মোকাবেলা করেছি?
৫. শিক্ষক বা পরিবারের কাছে কি আমার কোনো সাহায্য দরকার? সেগুলো কী?

কাজের ধারা

  • প্রশ্নগুলো লক্ষ করি এবার সে অনুযায়ী আমার ডায়েরিতে এর উত্তরগুলো লিপিবদ্ধ করি এবং নিচে দেওয়া নমুনা উত্তরের সাথে মিলিয়ে দেখি।

নমুনা উত্তর:
০২-০২-২০২৩

  • সুস্বাস্থ্যের চর্চা করার জন্য গত মাসে আমি বেশ কিছু পরিকল্পনা করেছিলাম। যেমন- সময়মতো খাবার খাওয়া, বেশি বেশি পানি পান করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, বিকেলে নিয়মিত খেলাধুলা করা। তবে আমি গত একমাসে নিয়মিত বেশি বেশি পানি পান করেছি, প্রতিদিন গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থেকেছি, সময়মতো খাবার খেয়েছি। কিন্তু প্রতিদিন খেলাধুলা করতে পারিনি।
  • পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো করতে গিয়ে আমি অনেক উপভোগ করেছি।
  • সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করার কারণে অন্যান্য কাজের মাঝে কখনো ক্লান্তি বোধ হয়নি। তাই কাজগুলো অনেক স্বতঃস্ফূর্ততা ও দক্ষতার সাথে শেষ করতে পেরেছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকায় মনের ভেতর সব সময় এক ধরনের উৎফুল্ল ভাব বজায় থাকতো। এই এক মাস আমার অনেক আনন্দে কেটেছে।
  • তবে কাজগুলো করতে গিয়ে আমি কিছু অসুবিধারও সম্মুখীন হয়েছি। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে অনেক সময় খেলাধুলা করে ঘাম শরীরেই গোসল দিয়েছি অথবা বিদ্যালয় থেকে ফিরেই ঘাম না। শুকিয়ে গোসল দিয়েছি। এ কারণে একদিন হালকা সর্দি লেগে গিয়েছিলো। তবে পরিবারের সহায়তায় আমি মাত্র দুই দিনেই সুদ্ধ হয়ে উঠতে পেরেছিলাম।
  • এই কাজে আমার মা আমাকে অনেক সহায়তা করেছে। আমার জামা-কাপড়গুলো সে প্রতিদিন ধুয়ে দিয়েছে যাতে আমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারি। আরেকটি কথা যেটি না বললেই নয়, মা সবসময় চেষ্টা করেছেন, আমাকে সময়মতো স্বাস্থ্যকর খাবার রান্না করে দেওয়ার। এছাড়াও আমার শ্রেণিশিক্ষক আমার পরিকল্পনা শুনে আমাকে দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন সেগুলো সঠিকভাবে পালন করার।