কর্মমুখী শিক্ষা

রচনা: কর্মমুখী শিক্ষা বা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা (সহজ ভাষায়)

কর্মমুখী শিক্ষা
অথবা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা

উপস্থাপনা : যে-কোনো জাতির উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো শিক্ষা। এ শিক্ষা সাধারণত দুই প্রকার- সাধারণ শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা। সভ্য মানুষ হিসেবে সমাজে বাস করতে হলে প্রত্যেক মানুষকেই কতকগুলো মৌলিক বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে হয়। যেমন- সাধারণ মানবীয় গুণ, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য, স্বাস্থ্যরক্ষাবিধি প্রভৃতি- এগুলোকে সাধারণ শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা যায়। বৃত্তিমূলক শিক্ষা বলতে যে শিক্ষা দ্বারা মানুষ জীবিকার্জনে কোনো বিশেষ বৃত্তি বা পেশা সম্বন্ধে হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করে, তাই বোঝায়। যেমন- ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, শিল্প, ব্যবসায় বাণিজ্য প্রভৃতি।

সাধারণ শিক্ষার সীমাবদ্ধতা : অতীতে বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর দেশে। কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ক্ষুদ্র শিল্পের অবলুপ্তির ফলে ঘরে ঘরে তখন চরম দারিদ্র্য। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর ভিড়। এতে শিক্ষার সঙ্গে জীবিকার ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে চলছে। পাঠ করা সাধারণ শিক্ষার প্রয়োগ সীমিত, ফলে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এভাবে সাধারণ শিক্ষা জাতির জীবনে সুফল বয়ে আনতে পারে না। বিশেষত বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে।

কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : কর্মমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যতীত কোনো জাতিই বৈষয়িক উন্নতি লাভ করতে পারে না। পাশ্চাত্য দেশগুলোর উন্নতির মূল কারণ সেসব দেশে পরিচালিত বৃত্তিমূলক শিক্ষা। আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেও শিক্ষিত সম্প্রদায় জীবিকা অর্জন করতে পারছে না। ক্রমেই ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ফলে আমাদের সমাজজীবনে দিন দিন দারুণ হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রচলন দরকার। বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রযুক্তি, কৃষি, শিল্প সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য এনে দিতে পারে।

আরো পড়ো→শ্রমের মর্যাদা
আরো পড়ো→পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা

কর্মমুখী শিক্ষার প্রকারভেদ : কর্মমুখী শিক্ষাকে আবার দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যাঁরা ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে চান, তাঁরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালোভাবে পাস না করলে উক্ত বিষয়সমূহে শিক্ষা লাভ করতে পারে না। অপরটি হচ্ছে সাধারণ বৃত্তিমূলক শিক্ষা। এর জন্য বড় কোনো ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করলেই যে কেউ বৃত্তিমূলক শিক্ষা লাভ করতে পারে। শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানার কারিগর, মোটর চালক, ঘড়ি, সাইকেল প্রভৃতি মেরামত করার জন্য উচ্চ শিক্ষা লাভ করার প্রয়োজন হয় না। এ সকল কারিগরি বিষয়ে কেবল হাতে কলমে শিক্ষা লাভ করলেই শিক্ষার্থী জীবিকার্জনে সমর্থ হয়।

কর্মমুখী শিক্ষার উপকারিতা : জাতিকে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও নির্জীবতা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই প্রয়োজন বৃত্তিমূলক শিক্ষা। কেননা এখানে আছে মানুষের প্রয়োজনভিত্তিক শিক্ষার অঙ্গীকা শিক্ষা প্রচলনের মধ্য দিয়েই দেশের অর্থনীতির পুনর্গঠন বর্তমানে আমাদের ঘরে ঘরে যে হতাশা আর দুঃখ দারিদ্রোর চিত্র যায়, তারও অবসান সম্ভর বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে। বৃত্তিমূলক শিক্ষা শেষ করে প্রতিটি কর্মক্ষম লোক তার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্ম বেছে নিতে পারে। অথচ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে একজন ছাত্রের যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়, এ শিক্ষায় সে পরিমাণ অর্থও ব্যয় হয় না। বরং কম খরচে অধিক উপার্জনের নিশ্চয়তা বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমেই পাওয়া যায়।

কর্মমুখী শিক্ষা প্রসারের উপায় : আমাদের দেশে যেসব মেধাবী ও উৎসাহী কৃষক কারিগরি শিক্ষা লাভে আগ্রহী, সরকারি- বেসরকারি সহযোগিতায় তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাদের দ্বারা দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে কারিগরি শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা করা যেতে পারে। এ উপায় অবলম্বনে কারিগরি ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষা লাভের ব্যাপারে একদিকে যেমন বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে, অপরদিকে প্রতিবছর বহু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারিগর শিল্প কলকারখানায় নিয়োজিত হয়ে শিল্প প্রসারে সহায়তা করবে। দেশি শিল্প কারখানায় বিদেশি কারিগর নিয়োগ দ্বারাও এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। বিদেশি কারিগররা যদি শিল্প কারখানা পরিচালনার সাথে সাথে দেশি কারিগরদের হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, তবে অল্পকালের মধ্যেই দেশে কারিগরি শিক্ষা প্রসার লাভ করবে।

উপসংহার : বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান আহরণের জন্য পুথিগত বিদ্যার প্রয়োজন আছে। তবে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা একান্ত অপরিহার্য। বর্তমানে যদিও কিছু কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ ব্যাপারে শীঘ্রই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *