রচনা: শ্রমের মর্যাদা (সহজ ভাষায়)

শ্রমের মর্যাদা
অথবা, শ্রমের মূল্য

উপস্থাপনা : Industry is the mother of good luck. অর্থাৎ, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। মানবজীবনের উন্নতি-অগ্রগতি, সভ্যতা-সংস্কৃতি, এমনকি অস্তিত্বও শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। ক্ষুদ্র পিপীলিকা থেকে শুরু করে মানব-মহামানব পর্যন্ত সকলকেই পরিশ্রম করতে হয়। আমাদের প্রিয়নবি (স.)-এর জীবনে রয়েছে শ্রমের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত।

শ্রম সম্পর্কে ধারণা : শ্রম দুই প্রকার। শারীরিক শ্রম ও মানসিক শ্রম। আমরা অনেকেই শারীরিক শ্রমকে অমর্যাদাকর ও অসম্মানজনক মনে করি। আমাদের অনেকের ধারণা শ্রমজীবী মানুষ; যেমন- চাষী, মজুর, কুলি, শ্রমিক- এরা ছোট জাতের মানুষ, কিন্তু তা ঠিক নয়। জাতীয় উন্নয়নে এদের অবদান অনেক বেশি।

শ্রমের আবশ্যকতা : পার্থিব জীবনে মানুষ হিসেবে মর্যাদা নিয়ে সাফল্যজনকভাবে বাঁচতে হলে প্রয়োজন কঠোর শ্রমসাধনা। মানবজীবন কুসুমাঙ্কীর্ণ নয়; এজন্য বেঁচে থাকার তাগিদে পরিশ্রম করতেই হবে। পরিশ্রম সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আমি কারো ভাগ্য পরিবর্তন করি না; যদি না সে নিজেই নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করে।”

আরো পড়ো → বাংলাদেশের ষড়ঋতু বা রূপসী বাংলাদেশ
আরো পড়ো →১৬ই ডিসেম্বর

ব্যক্তিগত শ্রম ও জাতীয় উন্নয়ন : ব্যক্তির উন্নয়নের ওপর পরিবার ও জাতীয় উন্নয়ন নির্ভরশীল। আবার ব্যক্তির উন্নয়ন পরিশ্রমের ওপর নির্ভরশীল। শ্রমবিমুখ ব্যক্তি জাতির বোঝা। অলস ব্যক্তি নিজে যেমন সমস্যায় জর্জরিত থাকে, তেমনি জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই ব্যক্তি, পরিবার, জাতি ও শ্রম একই সূত্রে গাঁথা।

শ্রম ও সভ্যতা : পরিশ্রম শুধু সৌভাগ্যের নিয়ন্ত্রক নয়; বরং সভ্যতা বিকাশেও সহায়ক। মানবসভ্যতার উন্নতি ও অগ্রগতিতে শ্রমের অবদান অনস্বীকার্য। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি সভ্য। সভ্যতার উন্নতির জন্য প্রয়োজন শারীরিক ও মানসিক শ্রমের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস।

শ্রম ও সুখ : চার্লস সামনার বলেন, “শ্রম ব্যতীত স্থায়ী ও সত্যিকারের যশ পাওয়া যায় না এবং যশই মনুষ্য সমাজকে সত্যিকার সুখের দিকে নিয়ে যায়।” আসলে শ্রম এবং সুখ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ যেখানে শ্রম সেখানেই সুখ।

মানসিক উন্নতিতে শ্রম : কথায় বলে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” পরিশ্রমী মানুষ সর্বদা নিজের কাজের চিন্তায় থাকে। ফলে তার মাথা নানা রকম কুচিন্তা থেকে মুক্ত থাকে। তাছাড়া পরিশ্রমের ফলে শরীর ভালো থাকে। আর শরীর ভালো থাকলে মনও ভালো থাকে। এ কারণেই মানসিক ক্রমবিকাশে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলাদেশে শ্রমের মর্যাদা : আমাদের দেশের দরিদ্রতার অন্যতম কারণ শ্রমকে অমর্যাদা করা। এখানে কায়িক শ্রমকে ঘৃণা করা হয়। শ্রমিককে তার প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করা হয়। রবি ঠাকুর বলেন-
“বাঙালি মোরা ভদ্র অতি পোষ-মানা এ প্রাণ,
বোতাম আঁটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান।”

উন্নত দেশে শ্রমের মর্যাদা : পৃথিবীর উন্নত জাতিগুলো শ্রমের মর্যাদা ও মূল্যায়নের ফলে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে। তারা কোনো কাজকেই ছোট বা ঘৃণ্য মনে করে না। আমেরিকা, কানাডা, জাপান, জার্মান, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশ শ্রমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

মহানবির দৃষ্টিতে শ্রম : শ্রম সম্পর্কে মহানবি (স.) বলেছেন, নিজ হাতে কাজ করার মতো পবিত্র জিনিস আর কিছুই নেই।” তিনি নিজের কাজ নিজেই করতেন। ভিক্ষা না করে পরিশ্রম করতে বলতেন। জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, আইনস্টাইন প্রমুখ ব্যক্তি শ্রমের ক্ষেত্রে সাফল্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ইসলামে শ্রমের মর্যাদা : ইসলামে শ্রমের মর্যাদা স্বীকৃত। আল্লাহ বলেছেন, “আর নামাজ শেষ হলে তোমরা জীবিকা অন্বেষণে জমিনে বেরিয়ে পড়।” মহানবি (স) বলেছেন, “স্বহস্তে উপার্জিত রুজিই সর্বোত্তম।” এছাড়া সাহাবি, তাবেয়ি ও ইসলামের অন্যান্য মনীষী ও রাজা বাদশাহদের জীবনে আমরা শ্রমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখতে পাই।

উপসংহার : উন্নতির জন্য শ্রমের বিকল্প নেই। শ্রমকে যথাযথ মর্যাদা, দানের মাধ্যমে আমরা উন্নতি লাভ করতে পারি। বিশ্বের দরবারে সভ্য জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। তাই আমাদেরকে শ্রমের প্রতি মর্যাদাশীল হতে হবে।

1 thought on “রচনা: শ্রমের মর্যাদা (সহজ ভাষায়)”

  1. শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। ঘুরেফিরে বারবার SSC ও HSC পরীক্ষায় শ্রমের মর্যাদা রচনাটি আসে। শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট সহ নিম্নে তুলে ধরা হলো। আশাকরি আমাদের লেখা শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট সবার ভালো লাগবে।

    আপনারা অনেকেই শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট রচনাটির জন্য সার্চ করেছিলে। তাই বিভিন্ন বই থেকে পয়েন্ট সংগ্রহ করে রচনাটি তোমাদের মাঝে উপস্থাপন করলাম। আশা করি তোমাদের উপকারে আসবে এবং রচনাটি মানবজীবনে শ্রমের গুরুত্ব এইভাবেও লেখা যেতে পারে।

    পড়ুন: https://www.sohobangla.com/2023/02/Dignity-of-Labor-Bangla-Essay.html

    Reply

Leave a Comment