রচনা: ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য (সহজ ভাষায়)

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
অথবা, ছাত্রজীবন

উপস্থাপনা : ছাত্রজীবন মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। মানুষ জীবনের যে সময়টুকুতে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মক্তব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য নাগরিক ও জ্ঞানী করে তোলার কাজে ব্যাপৃত রাখে, তা-ই ছাত্রজীবন। অন্যভাবে বলা যায়, মানবজীবন পুরোটাই ছাত্রজীবন। কেননা সারা জীবনই মানুষ মানুষের কাছে, প্রকৃতির কাছে, প্রাণিজগতের কাছে কিছু না কিছু শিক্ষালাভ করে থাকে। এজন্যই কবি বলেছেন-
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র
নানাভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র।

নবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। মানুষ জীবনের যে সময়টুকুতে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মক্তব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য নাগরিক ও জ্ঞানী করে তোলার কাজে ব্যাপৃত রাখে, তা-ই ছাত্রজীবন। অন্যভাবে বলা যায়, মানবজীবন পুরোটাই ছাত্রজীবন। কেননা সারা জীবনই মানুষ মানুষের কাছে, প্রকৃতির কাছে, প্রাণিজগতের কাছে কিছু না কিছু শিক্ষালাভ করে থাকে। এজন্যই কবি বলেছেন-
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র
নানাভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র।

ছাত্র কথাটির তাৎপর্য : ‘ছাত্র’ শব্দের ইংরেজি হলো Student. এ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- বর্ণটি দিয়ে Study বা লেখাপড়া, T দিয়ে Truthfulness বা সত্যবাদিতা, U দিয়ে Unity বা একতা, D দিয়ে Discipline বা নিয়মানুবর্তিতা, E দিয়ে Economy বা মিতব্যয়িতা, N দ্বারা Nationality বা জাতীয়তা এবং T বর্ণ দ্বারা Training বা হাতেকলমে শিক্ষাগ্রহণ করা বোঝায়। এসব বৈশিষ্ট্য অর্জনের ভিত্তিতে একজন ছাত্র তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেতনতা লাভ করতে পারে।

ছাত্রজীবনের মূল্য : ছাত্রজীবনের মূল্য অপরিসীম। ছাত্রজীবন মানবজীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়। ছাত্রজীবনকে বীজ বপনের সময়ও বলা হয়। এ সময় যে যেমন যত্নের সাথে বীজ বপন করে, পরবর্তী বাস্তব কর্মজীবনে সে তেমন ফললাভ করে। জীবনের এ মূল্যবান সময় অপব্যয় করলে বাকি জীবন দুঃখময় হতে পারে; হতে পারে ব্যর্থতায় পর্যবসিত।

আরো পড়ো → বাংলাদেশের কৃষক
আরো পড়ো → বাংলা নববর্ষ

দায়িত্ব ও কর্তব্য : Study is the principal duty of a student. শুধু পরীক্ষায় পাসের জন্য পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নে সীমাবদ্ধ না থেকে পাঠ্যবিষয়ের সাথে সাথে বহির্জগতের জ্ঞানভান্ডার থেকে জ্ঞানলাভের চেষ্টা করতে হবে। আহার্য বন্ধু হজমের জন্য যেমন হাওয়ার প্রয়োজন, তেমনি প্রকৃত জ্ঞানার্জনে পাঠ্যপুস্তকের সাথে সাথে অন্যান্য জ্ঞান ও বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ পাঠ করাও কর্তব্য। মিথ্যা পরিহার করে নকল প্রবণতাকে ঘৃণার চোখে দেখা, অনাড়ম্বর জীবনযাপন ও সদাচরণ ছাত্রদের অলংকার। জীবনের সব ক্লান্তি, হতাশা, অবিশ্বাস দূর করে দৃঢ় প্রত্যয় ও সৎ সাহস নিয়ে ছাত্রদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সবরকম লোভ-লালসা ত্যাগ করে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা ছাত্রদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য।

চরিত্রগঠন : আদর্শ চরিত্র গঠনের মুখ্য সময় হলো ছাত্রজীবন। আর চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার। চরিত্রহীন মানুষ পশুর সমান। যার চরিত্র নেই, তার কিছুই নেই। যেমন বলা হয়- When character is lost everything is lost. তাই সবরকম কুপ্রবৃত্তি পরিহার করে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রদের আদর্শ চরিত্রে চরিত্রবান হতে হবে।

স্বাস্থ্যগঠন : স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। শরীর ভালো না থাকলে মনও ভালো থাকে না। আর মন ভালো না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না। তাই সুস্বাস্থ্য গঠনের ব্যাপারে ছাত্রদের সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে জীবনকে অর্থহীন মনে হবে। তাই প্রত্যেক ছাত্রকে স্বাস্থ্যগঠনের নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।

শিক্ষক ও মাতাপিতার প্রতি শ্রদ্ধা : শিক্ষক ও মাতাপিতার প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ছাত্রদের আর একটি প্রধান কর্তব্য। মাতাপিতাই আমাদের এ পৃথিবীতে আগমনের মাধ্যম। তাঁরাই আমাদেরকে উত্তমরূপে লালনপালন করেন এবং জীবনের সবরকম প্রতিকূল অবস্থায় আমাদের পাশে অবস্থান করেন। মাতাপিতার পরেই শিক্ষকদের স্থান। শিক্ষকরা আমাদেরকে পরম মমতা ও কড়া শাসনে পাঠদান করেন। এরই ফলে আমরা সৎ, সুন্দর ও আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হই। তাই শিক্ষক ও মাতাপিতার প্রতি ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাহীন।

সমাজের প্রতি কর্তব্য : ছাত্ররা যেহেতু সমাজেরই মানুষ, সেহেতু সমাজের হিতসাধন ও উন্নয়ন করা তাদের একান্ত কর্তব্য। সমাজের অজ্ঞতা দূর করে শিক্ষার প্রসার করা দুঃখী-দরিদ্রদের বিপদে সাহায্য করা, সমাজের সার্বিক কল্যাণে সচেষ্ট হওয়া আত্মসচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

দেশাত্মবোধ : দেশ ও জাতি তথা সমাজের কল্যাণ সাধনই ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ছাত্রসমাজকে দেশাত্মবোধে অবশ্যই উদ্বুদ্ধ হতে হবে। তাদেরকে দেশপ্রেম, জনগণের প্রতি ভালোবাসা, কর্তব্যপরায়ণতা, স্বাবলম্বন, অধ্যবসায়, উদারতা, নিয়মানুবর্তিতা, ধৈর্যশীলতা, সাহসিকতা প্রভৃতি গুণের অধিকারী হতে হবে। ছাত্রজীবনে জনসেবার বীজ উপ্ত হলে তবেই ভাবী জীবনের জন্য তা ফলপ্রসু হবে। ছাত্রজীবনে স্বার্থত্যাগ, জনসেবা ও দেশপ্রেমের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হলে তা দেশ ও জাতির জন্য হবে কল্যাণকর।

উপসংহার : ছাত্ররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। দেশের সামগ্রিক উন্নতি নির্ভর করে ছাত্রদের ওপর। কারণ আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের সমাজকর্মী ও দেশনেতা। ভবিষ্যতে তারাই দেশ পরিচালনা করবে। তাই প্রত্যেক ছাত্রকে তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে নিজেকে একজন যোগ্য ও আদর্শ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

Leave a Comment