রচনা: বাংলা নববর্ষ (সহজ ভাষায়)

বাংলা নববর্ষ

ভূমিকা : বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিই হলো পয়লা বৈশাখ। পুরো একটি বছরের দুঃখ বেদনা, ক্লান্তি নৈরাশ্য পেছনে ফেলে দিয়ে বছরের নতুন এ দিনটি যখন আমাদের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়, তখন আমরা আনন্দে মেতে উঠি, উৎসবে মুখর হই। এদিনে গ্রামে গ্রামে মেলা বসে। লাঠি খেলা, গরুর লড়াই, বলী খেলা কত-না আনন্দের প্লাবন নিয়ে আসে।

বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস : পৃথিবীর প্রায় সব জাতিই তাদের নিজ নিজ বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নেয়। প্রাচীনকাল থেকে এরূপ বর্ষবরণের প্রথা চলে আসছে। পৃথিবীর এক এক জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে এ নববর্ষ বা বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নেওয়ার ইতিহাস জড়িয়ে আছে। প্রাচীন সভ্যতার অধিকারী মিসরীয়, ফিনিশীয় ও ইরানিরা যেমন বহুকাল আগে থেকে তাদের নববর্ষ পালন করে আসছে তেমনি তাদেরও আগে গ্রিক ও রোমকরা যীশুখ্রিস্টের জন্মের পঞ্চম শতাব্দী আগে থেকে এরূপ উৎসব পালন করতো বলে জানা যায়। প্রাচীন আরবীয়রা ‘ওকাজ’ মেলা, ইরানীয়রা ‘নওরোজ’ উৎসব ও প্রাচীন ভারতীয়রা ‘দোল’ পূর্ণিমার দিনে নববর্ষ উদযাপন করতো।

নববর্ষ পালনের তাৎপর্য : পৃথিবীর নানা দেশের নানা জাতির মধ্যে নববর্ষ উদযাপনের সময়ের বিভিন্নতা ও রকমফের যতই থাকুক না কেন এ বিশেষ দিনটি যে আনন্দের সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। পুরাতনকে ধুয়ে মুছে মানুষ যে চিরকাল নতুনের স্বপ্ন রচনা করে চলছে এ তাৎপর্যটি নববর্ষ উদ্‌যাপনের মধ্যে লুকিয়ে আছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাই নববর্ষের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন-

এসো হে বৈশাখ
এসো, এসো,

নববর্ষ উদযাপনের রীতি : বাংলা নববর্ষের প্রবর্তন হয় ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট আকবরের সময়। তখন বাংলাদেশ ছিল মোগল সম্রাটের করদ (খাজনা দাতা) রাজ্য। খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বছরের এ ত মৌসুমের প্রথম দিনটিতে অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের দিনে জমিদাররা খাজনা আদায় করতো। জমিদারদের সভাঘরে বসত ‘পুণ্যাহ’।

পড়ুন → বৈশাখী মেলা (অনুচ্ছেদ)
পড়ুন → বাংলাদেশের ষড়ঋতু (রচনা)
পড়ুন → আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (অনুচ্ছেদ)

হালখাতা : ব্যবসায় বাণিজ্যের এক বছরের লেনদেনের লাভ ক্ষতির হিসাব মিটিয়ে বছরের নতুন দিনে হালখাতা খোলার রীতি এখন নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

বৈশাখী মেলা : পয়লা বৈশাখের দিনটিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোর থেকেই মেলা বসে। এ মেলায় মাটির, কাঠের, লোহার নানাবিধ আকর্ষণীয় খেলনা, সরঞ্জাম, তৈজসপত্র বিক্রয়ের জন্য আনা হয়। মুড়ি মুড়কি, খইয়ের তৈরি নানা রকমের খাদ্যদ্রব্য, ফল ফলাদি বৈশাখী মেলাকে করে তোলে বৈচিত্র্যময়। গত কয়েক বছর থেকে আমাদের দেশে বৈশাখী লোক উৎসবও উদ্‌যাপন করা হচ্ছে।

বইমেলা : রাজধানী শহর ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখের মেলায় বইমেলা বসে। এ বইমেলা পয়লা বৈশাখের একটি প্রধান আকর্ষণ।

আঞ্চলিক উৎসব : অঞ্চলভেদে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। যেমন- চট্টগ্রাম শহরে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত ‘বলী খেলা’ (কুন্তি প্রতিযোগিতা)। আবদুল জব্বারের ‘বলী খেলা’ নামে খ্যাত এ খেলা অত্যন্ত প্রসিদ্ধ।

উপসংহার : বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ উদযাপন এদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্য। নতুনকে গ্রহণ করার, পুরাতনকে মুছে ফেলার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষাও আমরা গ্রহণ করে থাকি নববর্ধ উদযাপনের মাধ্যমে।

8 thoughts on “রচনা: বাংলা নববর্ষ (সহজ ভাষায়)”

Leave a Comment