প্রাচীন বাংলার জনপদ হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণী অর্থাৎ এসএসসি’র বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বই এর ৩য় অধ্যায়। প্রাচীন বাংলার জনপদ অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
প্রাচীন বাংলার জনপদ অধ্যায়ের সৃজনশীল
১. আশরাফ বাবার সাথে সিলেটের জাফলং বেড়াতে যায়। প্রতি বছর বহু পর্যটক সিলেটের এ পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে আসে। আশরাফ শুধু সিলেটের জাফলং নয়, সে পরবর্তীতে বগুড়ার মহাস্থানগড়ও ঘুরে আসে।
ক. চন্দ্রদ্বীপের বর্তমান নাম কী?
খ. ‘বঙ্গ’ নামের উৎপত্তি হয় কীভাবে?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আশরাফ প্রথমে যেখানে বেড়াতে যায় তা প্রাচীন কোন জনপদের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘আশরাফ পরবর্তীতে যেখানে ঘুরতে যায় তা ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ’ বিশ্লেষণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. চন্দ্রদ্বীপের বর্তমান নাম বরিশাল।
খ. ‘বঙ্গ’ একটি অতিপ্রাচীন জনপদ। বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গ জনপদ নামে একটি অঞ্চল গড়ে উঠেছিল । অনুমান করা হয়, এখানে ‘বঙ্গ’ বলে একটি জাতি বসবাস করত। এই জাতির নাম অনুসারে উক্ত জনপদটি ‘বঙ্গ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
গ. আশরাফ তার বাবার সাথে সিলেটের জাফলং ভ্রমণে যায়, প্রতিবছর এই পর্যটন কেন্দ্রে বহু পর্যটকের আগমন ঘটে। উদ্দীপকে উল্লিখিত আশরাফ তার বাবার সঙ্গে যে স্থানটিতে ভ্রমণে যায় তা প্রাচীন বাংলার হরিকেল জনপদের অন্তর্ভুক্ত।
কেন্দ্রীয় শাসন শুরু হওয়ার আগে বাংলা ছোট ছোট অনেকগুলো অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। স্থানীয়ভাবে শাসিত এই ছোট ছোট অঞ্চলগুলোকেই বলা হয় জনপদ। হরিকেল ছিল প্রাচীন পূর্ববঙ্গের একটি জনপদ। খ্রিষ্টীয় সাত শতকের প্রাচীন ভারতীয় লেখকগণ হরিকেলকে একটি জনপদ ‘ বলে উল্লেখ করেন। এ জনপদের অবস্থান ছিল বাংলার পূর্বপ্রান্তে। মনে করা হয়, আধুনিক সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এই জনপদের বিস্তৃতি ছিল। প্রাচীন বঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যসমূহের মধ্যে হরিকেল সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিল। তথাপি এর রয়েছে সবচেয়ে কম প্রমাণপত্রাদি। উদ্দীপকের পর্যটন কেন্দ্রটি সিলেটের জাফলংয়ে হওয়ায় এটি প্রাচীন বাংলার হরিকেল জনপদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত।
ঘ. আশরাফ পরবর্তীতে মহাস্থানগড়ে শিক্ষা সফরে যায়। মহাস্থানগড়কে প্রাচীন পুণ্ড্র নগরীর ধ্বংসাবশেষ বলে পণ্ডিতরা মনে করেন । আর এই পুণ্ড্র নগর ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ। পুণ্ড্র বলে পরিচিত একটি জাতি এ জনপদ গড়ে তুলেছিল। বাংলার সর্বপ্রাচীন এই জনপদটি বর্তমান বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চল নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল। পুণ্ড্রদের রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল পুণ্ড্রনগর। পরবর্তীকালে এর নাম হয় মহাস্থানগড়। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনের দিক দিয়ে পুণ্ড্রই ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ । পাথরের চাকতিতে খোদাই করা লিপি এখানে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত এটিই প্রাচীনতম শিলালিপি। মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে পুত্র তার স্বাধীন সত্তা হারা পরবর্তীকালে সমৃদ্ধি বাড়লে এই পুত্র পুণ্ড্রবর্ধনে রূপান্তরিত হয়। এটি তখন রাজমহল ও গঙ্গা-ভাগীরথী থেকে শুরু করে করতোয়া পর্যন্ত মোটামুটি সমস্ত উত্তরবঙ্গ জুড়েই বিস্তৃত ছিল।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটি প্রতীয়মান হয় যে, পূজ তথা মহাস্থানগড় ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ।
২. আনোয়ার কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র পাঠ করে বাংলার একটি প্রাচীন জনপদ সম্পর্কে জানতে পারে। সে আরও জানতে পারে হর্ষবর্ধনের শিলালিপি হতে প্রমাণিত হয় যে, বঙ্গে উক্ত জনপদের অস্তিত্ব ছিল।
ক. কুমিল্লার প্রাচীন নাম কী ছিল?
খ. জনপদ কীভাবে গঠিত হয়?
গ. আনোয়ার কোন জনপদ সম্পর্কে জানতে পারে? বর্ণনা কর।
ঘ. উক্ত জনপদ থেকে প্রাচীন বাংলার কোনো তথ্য পাওয়া যায় কি?
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. কুমিল্লার প্রাচীন নাম ছিল সমতট।
খ. ছোট ছোট অঞ্চল নিয়ে জনপদ গঠিত হয়। প্রাচীন যুগে বাংলা এখনকার মতো কোনো একক ও অখন্ড রাষ্ট্র বা রাজ্য ছিল না বাংলার বিভিন্ন অংশ তখন অনেক ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। এসব প্রতিটি অঞ্চলের শাসক যার যার মতো শাসন করতেন। বাংলার সেসব অঞ্চলগুলোকে তখন একেকটা জনপদ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এভাবেই প্রাচীন বাংলার জনপদগুলো ছোট ছোট বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠে।
গ. উদ্দীপকের আনোয়ার প্রাচীন বাংলার গৌড় জনপদ সম্পর্কে জানতে পারে।
আনোয়ার কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে প্রাচীন বাংলার যে জনপদ সম্পর্কে জানতে পারে, তা আবার হর্ষবর্ধনের শিলালিপি থেকে সুনিশ্চিত হয়; তাই সে জনপদ হলো গৌড়। কেননা কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বঙ্গ, পুন্ড্র ও কামরূপের সাথে গৌড়ের উল্লেখ ছিল। আবার, হর্ষর্ধনের শিলালিপি থেকেও গৌড় রাজ্যের কথা জানা যায়।
‘গৌড়’ নামটি সুপরিচিত হলেও প্রাচীনকালে ঠিক কোথায় পৌঁড় জনপদটি গড়ে উঠেছিল তা জানা যায়নি। তবে ষষ্ঠ শতকে পূর্ব বাংলার উত্তর অংশে গৌড় রাজ্য বলে একটি স্বাধীন রাজ্যের কথা জানা যায়। সপ্তম শতকে শশাঙ্ককে গৌড়রাজ বলা হতো। এ সময় গৌড়ের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলায় ছিল এর অবস্থান। মুসলমানদের বাংলায় বিজয়ের কিছু আগে মালদহ জেলার লক্ষণাবতীকেও গৌড় বলা হতো।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে আনোয়ার গৌড় জনপদ সম্পর্কে জানতে পারে।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত গৌড় জনপদ থেকে প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে সামান্য তথ্য পাওয়া যায়। ষষ্ঠ শতকে পূর্ব বাংলার উত্তর অংশে পৌড় রাজ্য বলে একটি স্বাধীন রাজ্যের কথা জানা যায়।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ষষ্ঠ শতকে ‘পরবর্তী গুপ্ত বংশ’ বলে পরিচিতি গুপ্ত উপাধিকারী রাজাগণ উত্তর বাংলা, পশ্চিম বাংলার উত্তরাংশ ও মগধে ক্ষমতা বিস্তার করেছিলেন। ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এ অঞ্চলই গৌড় জনপদ নামে পরিচিত লাভ করে।
মৌখরি ও পরবর্তী গুপ্তবংশীয় রাজাদের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ বছর পুরুষানুক্রমিক সংঘর্ষ এবং উত্তর থেকে তিব্বতীয় ও দাক্ষিণাত্য থেকে চালুক্যরাজগণের ক্রমাগত আক্রমণের ফলে বাংলায় গুপ্তবংশীয় রাজাগণ দুর্বল হয়ে পড়েন। এ অবস্থার পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে সামন্তরাজা শশাঙ্ক ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে গৌড় অঞ্চলে ক্ষমতা দখল করে স্বাধীন গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
শশাঙ্কের পরিচয়, তার উত্থান ও জীবন-কাহিনি আজও পণ্ডিতদের নিকট পরিষ্কার নয়। গুপ্ত রাজাদের অধীনে বড় কোনো অঞ্চলের শাসককে বলা হতো ‘মহাসামন্ত’। ধারণা করা হয় শশাঙ্ক ছিলেন গুপ্ত রাজা মহাসেনগুপ্তের একজন ‘মহাসামন্ত’ এবং তার পুত্র অথবা ভ্রাতুষ্পুত্র।
শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। তিনি পৌঁড়ে অধিকার স্থাপন করে প্রতিবেশী অঞ্চলে রাজ্য বিস্তার শুরু করেন। তিনি দণ্ডভুক্তি (মেদিনীপুর), উড়িষ্যার উৎকল (উত্তর উড়িষ্যা) ও কম্পোদ (দক্ষিণ উড়িষ্যা) এবং বিহারের মগধ রাজ্য জয় করে তার রাজ্য সীমা বৃদ্ধি করেন। তার রাজ্য পশ্চিমে বারানসী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে আনোয়ারের জানা গৌড় জনপদ থেকে প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
৩. শরীফ জামান কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র পাঠ করে বাংলার একটি প্রাচীন জনপদ সম্পর্কে জানতে পারে। সে আরও জানতে পারে, হর্ষবর্ধনের শিলালিপি হতে প্রমাণিত হয় যে বঙ্গে উক্ত জনপদের অস্তিত্ব ছিল।
ক. চন্দ্রদ্বীপের বর্তমান নাম কী?
খ. জনপদ বলতে কী বোঝায়?
গ. শরীফ জামান কোন প্রাচীন জনপদ সম্পর্কে জানতে পারে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উক্ত জনপদ থেকে প্রাচীন বাংলার কোন তথ্য পাওয়া যায় কি? ব্যাখ্যা কর।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. চন্দ্রদ্বীপের বর্তমান নাম হলো বরিশাল।
খ. প্রাচীন যুগে বাংলা এখনকার বাংলাদেশের মতো কোনো একক ও অখণ্ড রাষ্ট্র বা রাজ্য ছিল না। বাংলার বিভিন্ন অংশ তখন ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। আর প্রতিটি অঞ্চলের শাসক যার যার মতো শাসন করতেন। বাংলার এ অঞ্চলগুলোকে তখন সমষ্টিগতভাবে নাম দেওয়া হয় ‘জনপদ’।
গ. উদ্দীপকের শরীফ জামান প্রাচীন বাংলার গৌড় জনপদ সম্পর্কে জানতে পারে।
শরীফ জামান কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে প্রাচীন বাংলার যে জনপদ সম্পর্কে জানতে পারে, তা আবার হর্ষবর্ধনের শিলালিপি থেকে সুনিশ্চিত হয়; তাই সে জনপদ হলো গৌড়। কেননা কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বল, পুত্র ও কামরূপের সাথে গৌড়ের উল্লেখ ছিল।
আবার, হর্ষধনের শিলালিপি থেকেও গৌড় রাজ্যের কথা জানা যায়। ‘গৌড়’ নামটি সুপরিচিত হলেও প্রাচীনকালে ঠিক কোথায় গৌড় জনপদটি গড়ে উঠেছিল তা জানা যায়নি। তবে ষষ্ঠ শতকে পূর্ব বাংলার উত্তর অংশে গৌড় রাজ্য বলে একটি স্বাধীন রাজ্যের কথা জানা যায়। সপ্তম শতকে শশাঙ্ককে গৌড়রাজ বলা হতো। এ সময় গৌড়ের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলায় ছিল এর অবস্থান। মুসলমানদের বাংলায় বিজয়ের কিছু আগে মালদহ জেলার লক্ষণাবতীকেও গৌড় বলা হতো। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে শরীফ জামান গৌড় জনপদ সম্পর্কে জানতে পারে।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত গৌড় জনপদ থেকে প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে সামান্য তথ্য পাওয়া যায়।
ষষ্ঠ শতকে পূর্ব বাংলার উত্তর অংশে গৌড় রাজ্য বলে একটি স্বাধীন রাজ্যের কথা জানা যায়। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ষষ্ঠ শতকে ‘পরবর্তী গুপ্ত বংশ’ বলে পরিচিতি গুপ্ত উপাধিকারী রাজাগণ উত্তর বাংলা, পশ্চিম বাংলার উত্তরাংশ ও মগধে ক্ষমতা বিস্তার করেছিলেন। ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এ অঞ্চলই পৌড় জনপদ নামে পরিচিত লাভ করে। মৌখরি ও পরবর্তী গুপ্তবংশীয় রাজাদের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ বছর পুরুষানুক্রমিক সংঘর্ষ এবং উত্তর থেকে তিব্বতীয় ও দাক্ষিণাত্য থেকে চালুক্যরাজাদের ক্রমাগত আক্রমণের ফলে বাংলায় গুপ্তবংশীয় রাজাগণ দুর্বল হয়ে পড়েন। এ অবস্থার পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে সামন্ত রাজা শশাঙ্ক ৫৯৪ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে গৌড় অঞ্চলে ক্ষমতা দখল করে স্বাধীন গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
শশাঙ্কের পরিচয়, তার উত্থান ও জীবন-কাহিনি আজও পণ্ডিতদের নিকট পরিষ্কার নয়। গুপ্ত রাজাদের অধীনে বড় কোনো অঞ্চলের শাসককে বলা হতো ‘মহাসামন্ত’। ধারণা করা হয় শশাঙ্ক ছিলেন গুপ্ত রাজা মহাসেনগুপ্তের একজন মহাসামন্ত’ এবং তার পুত্র অথবা ভ্রাতুষ্পুত্র।
শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। তিনি গৌড়ে অধিকার স্থাপন করে প্রতিবেশী অঞ্চলে রাজ্য বিস্তার শুরু করেন। তিনি দণ্ডভুক্তি (মেদিনীপুর), উড়িষ্যার উৎকল (উত্তর উড়িষ্যা) ও কঙ্গোদ (দক্ষিণ উড়িষ্যা) এবং বিহারের মগধ রাজ্য জয় করে তার রাজ্য সীমা বৃদ্ধি করেন। তার রাজ্য পশ্চিমে বারানসী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে শরীফ জামানের জানা গৌড় জনপদ থেকে প্রাচীন বাংলা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
৪. জাপান থেকে একটি পর্যটক দল বাংলাদেশে এসে প্রাচীন বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ দেখার জন্য বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা ঘুরে দেখে।
ক. শশাঙ্কের রাজধানী কোথায় ছিল?
খ. প্রাচীন বাংলায় কি কি জনপদ ছিল?
গ. জাপানের কোন পর্যটকদল কোন প্রাচীন জনপদ পরিদর্শনে গিয়েছিল— ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের পর্যটক দল কী কী তথ্য সংগ্রহ করেছিল বলে তুমি মনে কর পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ।
খ. প্রাচীনকালে সমগ্র বাংলায় একক কোনো শাসক ছিল না। সমগ্র বাংলা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিভিক্ত ছিল। এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চল জনপদ নামে পরিচিত ছিল। প্রাচীন বাংলায় মোট কতটি জনপদ ছিল তা সঠিকভাবে জনা যায় না। তবে গুরুত্বপূর্ণ জনপদগুলোর মধ্যে ছিল- গৌড়, বঙ্গ, পুণ্ড্র, হরিকেল, সমতট, বরেন্দ্র, তাম্রলিপ্ত, চন্দ্রদ্বীপ, উত্তর রাঢ়, দক্ষিণ রাঢ়, দণ্ডভুক্তি প্রভৃতি।
গ. জাপানি পর্যটক দল গুপ্ত জনপদ পরিদর্শনে গিয়েছিল।
প্রাচীনকালে পুণ্ড্র জনপদ বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা নিয়ে গঠিত ছিল। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো পুণ্ড্র। বলা হয় যে, ‘পুণ্ড্র’ বলে এক জাতি এ জনপদ গড়ে তুলেছিল। বৈদিক সাহিত্য ও মহাভারতে এ জাতির উল্লেখ আছে। পুণ্ড্রদের রাজ্যের রাজধানীর নাম পুণ্ড্রনগর। পরবর্তীকালে এর নাম হয় মহাস্থানগড়। সম্ভবত মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (২৭৩- ২৩২ অব্দ) প্রাচীন পুণ্ড্র রাজ্য স্বাধীন সত্তা হারায়। সমৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চ-ষষ্ঠ শতকে তা পুণ্ড্রবর্ধনে রূপান্তরিত হয়েছে। সে সময়কার পুণ্ড্রবর্ধন অন্তত বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। রাজমহল ও গঙ্গা-ভাগীরথী হতে আরম্ভ করে করতোয়া পর্যন্ত মোটামুটি সমস্ত উত্তর বঙ্গই বোধহয় সে সময় পুণ্ড্রবর্ধনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেন আমলে পুণ্ড্রবর্ধনের দক্ষিণতম সীমা পদ্মা পেরিয়ে একেবারে খাড়ি বিষয় (বর্তমান চব্বিশ পরগনার খাড়ি পরগনা) ও ঢাকা-বরিশালের সমুদ্র তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
সুতরাং বলা যায়, জাপানের পর্যটক দল বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ পঙ্গুতেই পরিদর্শনে গিয়েছিল।
ঘ. উদ্দীপকে জাপানি পর্যটক দল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ পুণ্ড্র পরিদর্শনে গিয়েছিল। পর্যটক দল পুণ্ড্রবর্ধন থেকে যে যে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে বলে আমি মনে করি তা ক্রমানুসারে নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো পুণ্ড্র।
২. ‘পুণ্ড্র’ বলে এক জাতি এ জনপদ গড়ে তুলেছিল।
৩. বৈদিক সাহিত্য ও মহাভারতে পুণ্ড্র জাতির উল্লেখ আছে।
৪. পুণ্ড্রদের রাজ্যের রাজধানীর নাম পুণ্ড্রনগর।
৫. পরবর্তীকালে এর নাম হয় মহাস্থানগড়।
৬. মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (২৭৩-২৩২ অব্দ) প্রাচীন পুণ্ড্র রাজ্য স্বাধীন সত্তা হারায়।
৭. সমৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চ-ষষ্ঠ শতকে পুণ্ড্রবর্ধনে রূপান্তরিত হয়েছে।
৮. এ জনপদ সে সময়কার পুণ্ড্রবর্ধন অন্তত বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলা জুড়ে বিস্তৃত ছিল।
৯. রাজমহল ও গঙ্গা-ভাগীরথী হতে আরম্ভ করে করতোয়া পর্যন্ত মোটামুটি সমস্ত উত্তরবঙ্গই বোধহয় সে সময় পুণ্ড্রবর্ধনের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
১০. সেন আমলে পুণ্ড্রবর্ধনের দক্ষিণতম সীমা পদ্মা পেরিয়ে একেবারে খাড়ি বিষয় (বর্তমান চব্বিশ পরগনার খাড়ি পরগনা) ও ঢাকা-বরিশালের সমুদ্র তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
১১. বগুড়া হতে সাত মাইল দূরে মহাস্থানগড় প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর ধ্বংসাবশেষ বলে অনুমান করা হয়।
১২. প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনের দিক দিয়ে পুণ্ডই ছিল প্রাচীন। বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ।
আরো পড়ো → ইতিহাস পরিচিতি অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়ো → বিশ্বসভ্যতা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
৫. আনোয়ার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ছেলে। পরীক্ষা শেষে সে তার বন্ধু রাহাতের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপনা দেখতে আসে। প্রথমে সে উত্তরবঙ্গের একটি মৌর্য যুগের স্থাপনা দেখে মুগ্ধ হয় এখানে ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ। বিক্রমপুর দেখে বরিশাল হয়ে দেশে ফিরে যায় আনোয়ার।
ক. জনপদ বলতে কী বোঝ?
খ. ইতিহাসে যুগবিভাজন বলতে কী বোঝায়?
গ. আনোয়ারের নিজ জেলা যে জনপদের অংশ ছিল তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, আনোয়ার প্রথমে যে জনপদে ভ্রমণ করেছে তা প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ ছিল
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রাচীন বাংলা ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত ছিল ও স্থানীয়ভাবে শাসিত হতো। বাংলার এ অঞ্চলগুলোকে সমষ্টিগতভাবে বলা হয় জনপদ।
খ. সময়ের বিবর্তনের নিরিখে ইতিহাসের পরিসরকে বিভক্তকরণ প্রক্রিয়াকে ইতিহাসের যুগবিভাজন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ইতিহাসে যুগবিভাজনের ফলে সৃষ্টি হয় প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের। তবে তা সকল দেশে একই দিন-তারিখে নির্ণীত হয় না। ইতিহাসের গতিশীলতার কারণে যুগবিভাজন বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। ইতিহাসের কাল বিভাজন সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত। যথা- (১) প্রাগৈতিহাসিক কাল, (২) ঐতিহাসিক কাল ও (৩) আধুনিক কাল।
গ. আনোয়ারের নিজ জেলা গৌড় জনপদের অংশ ছিল।
উদ্দীপকের আনোয়ার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ছেলে। মুর্শিদাবাদ প্রাচীন বাংলার গৌড় জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে আমরা ইতিহাস পাঠে জানতে পারি। গৌড় প্রাচীন বাংলার একটি সুপরিচিত জনপদ। পাল রাজাদের সময়ে গৌড় বিখ্যাত একটি জনপদ ছিল। উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তখন গৌড়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল হওয়ায় তার প্রতাপ ছিল অপ্রতিহত। পরবর্তীকালে পাল সাম্রাজ্যের ভাগ্য পরিবর্তনের সাথে সাথে গৌড়ের ভাগ্যও পরিবর্তিত হয়ে যায়। গৌড়ের পরিসীমা তখন সীমাবদ্ধ হয়ে আসে। আধুনিক মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমানের কিছু অংশ গৌড়ের সীমানা বলে মনে করা হয়। সপ্তম শতকে গৌড়রাজ শশাঙ্কের রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণ। পরে গৌড় বলতে সমগ্র বাংলাকে বোঝাত।
পরিশেষে বলা যায়, আনোয়ারের জেলা মুর্শিদাবাদই ছিল প্রাচীন বাংলার গৌড় জনপদের অন্তর্ভুক্ত।
ঘ. হ্যাঁ, আনোয়ার প্রথমে যে জনপদে ভ্রমণ করেছে অর্থাৎ পুণ্ড্র জনপদ প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ ছিল।
উদ্দীপকের আনোয়ার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ছেলে। পরীক্ষা শেষে বন্ধু রাহাতের আমন্ত্রণে সে বাংলাদেশে আসে প্রাচীন স্থাপনা দেখতে। প্রথমে সে উত্তরবঙ্গের মৌর্য যুগের একটি স্থাপনা দেখে মুগ্ধ হয়। উদ্দীপকে বলা হয়েছে, এটিই ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ। আমিও মনে করি, আনোয়ারের প্রথম ভ্রমণকৃত জনপদটি ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ। উত্তরবঙ্গের মৌর্য যুগের প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে বর্তমান বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে। উদ্দীপকের আনোয়ার এই স্থানটিই ভ্রমণ করেছিল। পণ্ডিতেরা অনুমান করেন, বগুড়া হতে সাত মাইল দূরে মহাস্থানগড় প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর ধ্বংসাবশেষ। এটি প্রাচীন বাংলার একটি সমৃদ্ধশালী জনপদ ছিল। বৈদিক সাহিত্য ও মহাভারতেও এ জাতির উল্লেখ রয়েছে। পুন্ড্রদের রাজধানীর নাম ছিল পুণ্ড্রনগর। পরবর্তীকালে এটি মহাস্থানগড় হিসেবে পরিচিতি পায়। সম্ভবত মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৩–২৩২ অব্দ) প্রাচীন পুণ্ড্ররাজ্য স্বাধীন সত্তা হারায়। সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পেয়ে ৫ম-৬ষ্ঠ শতকে তা পুণ্ড্রবর্ধনে রূপান্তরিত হয়। সে সময়কার পুণ্ড্রবর্ধন অন্তত বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলাজুড়ে বিস্তৃত ছিল। রাজমহল-গঙ্গা-ভাগীরথী হতে আরম্ভ করে করতোয়া পর্যন্ত সমস্ত উত্তরবঙ্গই সেসময় পুণ্ড্রবর্ধনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেন আমলে পুণ্ড্রবর্ধনের দক্ষিণসীমা পদ্মা পেরিয়ে একেবারে খাড়ি বিষয় (বর্তমান চব্বিশ পরগনার খাড়ি পরগনা) ও ঢাকা-বরিশালের সমুদ্রতীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনের দিক দিয়ে পুণ্ড্ৰই ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ— একথা ইতিহাস স্বীকৃত। খ্রিষ্টীয় সাত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এতদঞ্চলে আগমনকারী পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর বিবরণও এ অঞ্চলের সমৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। করতোয়া মাহাত্মা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বারো শতক পর্যন্ত পুণ্ড্রনগর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিদ্যমান ছিল।
সুতরাং আমি মনে করি, আনোয়ার প্রথমে যে প্রাচীন পুণ্ড্র জনপদের অংশে ভ্রমণ করেছে, তা প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ ছিল।