(ইতিহাস) SSC: বিশ্বসভ্যতা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

বিশ্বসভ্যতা (মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রোম) হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণী অর্থাৎ এসএসসি’র বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বই এর ২য় অধ্যায়। বিশ্বসভ্যতা (মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রোম) অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

বিশ্বসভ্যতা অধ্যায়ের সৃজনশীল

১. বাংলাদেশে ছোট-বড় সাতশত নদী রয়েছে। নদীগুলো শুধু মাছ ধরাই নয়, বরং নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখে জমি চাষাবাদও করা হয়। তাছাড়া বন্যার পর পানি নেমে যে পলি মাটি জমা হয় তাতে অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়। অবশ্যই এই পদ্ধতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে এসেছে বলে ইতিহাসে প্রমাণ পাওয়া যায়।
ক. হায়ারোগ্লিফিক শব্দের অর্থ কী?
খ. পিরামিড বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের বিষয়ের সাথে প্রাচীনকালের কোন সভ্যতার মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সভ্যতার বিভিন্ন অবদান নিরুপণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. হায়ারোগ্লিফিক শব্দের অর্থ পবিত্র লিপি।

খ. প্রাচীন মিশরীয় শাসক বা ফারাও রাজাদের মৃতদেহ মমি বা সংরক্ষণের জন্য তৈরি করা হতো। মিশরীয়রা মনে করত, মৃত ব্যক্তি আবার এক দিন বেঁচে উঠবে। সে কারণে দেহকে তাজা রাখার জন্য মমি করত। ফারাওরা প্রাচীন মিশরে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে দেশ শাসন করত। তাদের মৃতদেহ মমি বানিয়ে সেই মমি রক্ষা করার জন্য প্রাচীন মিশরীয়রা পিরামিড তৈরি করত।

গ. উদ্দীপকের বিষয়ের সাথে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাতশত নদী রয়েছে। এগুলোতে মাছ চাষ হয়। পাশাপাশি নদীতে বাঁধ দিয়ে পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে স্থানীয় কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়। অনুরূপ ঘটনা মিশরীয় সভ্যতার ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। সেখানে নীলনদকে কেন্দ্র করে মিশরীয় সভ্যতার বিকাশ সূচিত হয়। নীলনদে প্রতিবছর বন্যা হতো। যার ফলে মিশরের শতমাইল নিম্নভূমি পানিতে নিমজ্জিত হতো। নীলনদের দু’পাশ প্লাবিত হয়ে কোনো কোনো এলাকায় ৬ মিটার পর্যন পলি পড়ত। যার ফলে নীলনদকে কেন্দ্র করে কৃষির ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। কৃষির প্রয়োজনে নীলনদে বাঁধ দিয়ে নদী শাসন করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে ওঠে শিল্পকারখানা, প্রতিষ্ঠিত হয় শহর। মিশরীয় সভ্যতা নীলনদের প্রভাবে কৃষি কাজের উৎপাদনের সাথে শহর ও আশপাশের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন ঘটে। অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির ফলে তারা জ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প ও স্থাপত্যে অনবদ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়। গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস মিশরীয় সভ্যতার ওপর নীলনদের প্রভাব লক্ষ করে মিশরকে নীলনদের দান হিসেবে অভিহিত করেছেন।
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয়, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়ের সাথে মিশরের নীলনদ ও তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা মিশরীয় সভ্যতা সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত মিশরীয় সভ্যতার অবদান অপরিসীম।
নীলনদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মিশরীয় সভ্যতা শিল্প, সাহিত্য, লিখনপদ্ধতি, স্থাপত্য ও চিত্রশিল্পে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। তারা বর্ণভিত্তিক চিত্রলিপির উদ্ভাবন করে। যা ইতিহাসে হায়ারোগ্লিফিক নামে পরিচিত। মিশরীয়রা তাদের বর্ণমালা লিপিবদ্ধ করার জন্য প্যাপিরাস নামক এক প্রকার গাছের পাতা ও নরম কাণ্ডকে কাগজ হিসেবে ব্যবহার করত। মিশরীয় সভ্যতার সাহিত্যচর্চার নিদর্শনগুলোর মধ্যে মেমফাইট ড্রামা, টেল অব দ্য টু ব্রাদার্স, মৃতদের পুস্তক ও আতেনের হিম অন্যতম। বিজ্ঞানের উন্নতিতে মিশরীয়দের অবদান অসামান্য। তারা কাগজ, কাচ, ধাতব তৈজসপত্র, সেচ ব্যবস্থার পাশাপাশি জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্র ও চিকিৎসাশাস্ত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করে। তারাই প্রথম বছরকে ১২ মাসে এবং মাসকে ৩০ দিনে বিভক্ত করে। যদিও তাদের মাসে দিনের সংখ্যা ছিল সাড়ে ঊনত্রিশ। মিশরীয়রা ভূমির আয়তন, কোণ, ত্রিকোণ, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বহুভুজ, সিলিন্ডার, পিরামিডের ঘনফল ইত্যাদি পরিমাপের মাধ্যমে গণিতশাস্ত্রের ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করে। তাছাড়া চক্ষুরোগ, দাঁতের রোগ, পেটের পীড়া, শল্যবিদ্যা, হৃৎপিণ্ড ও নাড়ির তাৎপর্য এবং রেচক ওষুধ তৈরিতে মিশরীয়রা পারদর্শী ছিল। মিশরীয়রা তাদের স্থাপত্য ও চিত্রশিল্পে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিল। স্মৃতিসৌধ, প্রাসাদ, মন্দির ও পিরামিড তৈরিতে তারা অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। তাদের তৈরি মমিগুলো আজও আধুনিক বিজ্ঞানের জন্য চ্যালেঞ্জস্বরূপ। তাদের তৈরি ত্রিকোণ আকৃতির পিরামিডগুলো বিজ্ঞানের কাছে বিস্ময়। তাদের তৈরি ভাস্কর্য স্ফিংকস বিরাটত্ব ও সৌকর্যের দিক থেকে বিখ্যাত ভাস্কর্য।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে মিশরীয়রাই সর্বাধিক কৃতিত্বের দাবিদার। তারা স্থাপত্য, চিকিৎসা, গণিত, ভাস্কর্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে অবিনশ্বর অবদান রাখতে সক্ষম হয়।

২. নীতু তার ইতিহাস বইয়ে একটি সভ্যতা সম্পর্কে পড়ছিল। সে জানতে পারল এই সভ্যতায় অক্ষর বা লিপি আবিষ্কৃত হয়। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে তারা ২৪টি অক্ষর আবিষ্কার করে। ছবি এঁকে তারা মনের ভাব প্রকাশ করত।
ক. মিশরীয় সভ্যতা কত বছর স্থায়ী ছিল?
খ. হেরোডোটাস কেন মিশরকে নীলনদের দান’ বলেছেন? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে নীতুর পড়া সেই সভ্যতার পরিচয় দাও।
ঘ. উক্ত সভ্যতার অন্যতম আবিষ্কার ছিল লিখন পদ্ধতি’ উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মিশরীয় সভ্যতা ২৫০০ বছরের বেশি সময় স্থায়ী ছিল।

খ. নীলনদ লেক ভিক্টোরিয়া থেকে নানা দেশ হয়ে মিশরের মধ্য দিয়ে। ভূমধ্যসাগরে এসে পড়েছে। নীলনদ না থাকলে মিশর মরুভূমিতে পরিণত হতো। প্রাচীনকালে প্রতিবছর নীলনদে বন্যা হতো। বন্যার পর পানি সরে গেলে দুই তীরে পলিমাটি পড়ে জমি উর্বর হতো। জমে থাকা পলিমাটিতে নানা ধরনের ফসল জন্মাত। তাই ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস যথার্থই বলেছেন, ‘মিশর নীলনদের দান’।

গ. উদ্দীপকে নীতুর বইতে পাঠকৃত সভ্যতা হলো মিশরীয় সভ্যতা।
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ও অবদান ছিল লিপি বা অক্ষর আবিষ্কার। নগর সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মিশরীয় লিখন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটে। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে তারা সর্বপ্রথম ২৪টি ব্যঞ্জনবর্ণের বর্ণমালা আবিষ্কার করে। প্রথমদিকে ছবি এঁকে তারা মনের ভাব প্রকাশ করত। সেই লিখন পদ্ধতির নাম ছিল চিত্রলিপি। উদ্দীপকে নীড় তার ইতিহাস বইয়ে মিশরীয় সভ্যতার এই বর্ণমালা আবিষ্কারের বিষয় পাঠ করেছেন। আফ্রিকার মহাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশে গড়ে ওঠা মিশরীয় সভ্যতা শিল্প, ভাস্কর্য, লিখন পদ্ধতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা দ্বারা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
অতএব বলা যায়, উদ্দীপকে নীতুর পড়া সভ্যতা মূলত মিশরীয় সভ্যতা।

ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত মিশরীয় সভ্যতার বিভিন্ন আবিষ্কারের মধ্যে লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার ছিল অন্যতম।
মিশরীয় সভ্যতা জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার মাধ্যমে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। তারা লিখন পদ্ধতি আবিষ্কারের সাথে সাথে লেখার জন্য কাগজও উদ্ভাবন করে।
মিশরীয়রা নলখাগড়া জাতীয় গাছের কাণ্ড থেকে এই কাগজ তৈরি করে। গ্রিকরা এই কাগজের নাম দেয় ‘প্যাপিরাস’। মিশরীয়রা অঙ্কশাস্ত্রের দুটি শাখা জ্যামিতি এবং পাটিগণিতেরও প্রচলন করে। তারা প্রথম সৌর পঞ্জিকা আবিষ্কার করে। ৩৬৫ দিনে বছর এ হিসাবের আবিষ্কারকও তারা। প্রাচীন মিশরের অধিবাসীরা সময় নির্ধারণের জন্য সূর্য ঘড়ি, ছায়াঘড়ি, জলঘড়ি আবিষ্কার করে। মৃতদেহ পচন থেকে রক্ষা করার ‘মমি’ পদ্ধতির আবিষ্কারও তারা। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করার বিদ্যাও তাদের দখলে ছিল। সভ্যতায় মিশরীয়দের অবদান বিবেচনায় তাই বলা যায়, মিশরীয়দের আবিষ্কার বা উদ্ভাবনের ফিরিস্তি দীর্ঘ। যার অন্যতম একটি হলো লিখন পদ্ধতি।

৩. নাফিস প্রাচীন বিশ্বসভ্যতা সম্পৰ্কীয় বই পড়তে গিয়ে রহমতপুর অঞ্চলের জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়। আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে রহমতপুর অঞ্চল কৃষিতেই শুধু উন্নত ছিল না। তারা বর্ণমালা আবিষ্কার করেন এবং লেখার জন্য বিশেষ গাছ থেকে কাগজ তৈরি করেন। ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রেও তারা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
ক. গণতন্ত্রের সূচনা হয় কোথায়?
খ. সিন্ধু সভ্যতাকে কেন নগর সভ্যতা বলা হয়? ব্যাখ্যা কর।
গ. নাফিসের বইয়ে পড়া রহমতপুর অঞ্চলের সভ্যতার সাথে প্রাচীন কোন সভ্যতার সাথে প্রাচীন কোন সভ্যতার মিল পাওয়া যায়- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত প্রাচীন সভ্যতাটি “ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছিল।” উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. গণতন্ত্রের সূচনা হয় এথেন্সে।

খ. সভ্যতার ইতিহাসে সিন্ধু সভ্যতা একটি পরিকল্পিত নগরীর ধারণা দিয়েছে। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো শহর দুটো প্রায় একই পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মিত হয়েছিল। এ সভ্যতার বেশিরভাগ কেন্দ্রই নগর। আধুনিক নগর পরিকল্পনা, উন্নত নাগরিক জীবনযাত্রা ও সাংস্কৃতিক চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে সিন্ধু সভ্যতাকে নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা বলে অভিহিত করা হয়।

গ. নাফিস বিশ্বসভ্যতা সম্পর্কীয় বইয়ে পড়া রহমতপুর অঞ্চলের সভ্যতার সাথে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার মিল পাওয়া যায়।
উদ্দীপকে বর্ণিত নাফিস প্রাচীন বিশ্বসভ্যতা সম্পর্কীয় বই পড়তে গিয়ে রহমতপুর অঞ্চল সম্পর্কে অবগত হয়। এ অঞ্চলের লোকেরা শুধু . কৃষিতেই উন্নত ছিল না, এর পাশাপাশি বর্ণমালা আবিষ্কার এবং লেখার জন্য বিশেষ গাছ থেকে কাগজ তৈরিও করেছিল। ভাষ্কর্য ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রেও তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিল। আর এ বিষয়গুলো মিশরীয় সভ্যতার কথা মনে করিয়ে দেয়। মিশরীয়রাও কৃষিক্ষেত্রে বেশ এগিয়েছিল। তারা গম, যব, তুলা, পিয়াজ প্রভৃতি উৎপাদন করত। তাদের উৎপাদিত গম, লিনেন কাপড় ও মাটির পাত্র ক্রিট দ্বীপ, ফিনিশিয়া, ফিলিস্তিন ও সিরিয়ায় রপ্তানি হতো। মিশরীয় সভ্যতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল লিপি বা অক্ষর আবিষ্কার। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে তারা সর্বপ্রথম ২৪টি ব্যঞ্জনবর্ণের বর্ণমালা আবিষ্কার করে। মিশরীয়রা নলখাগড়াজাতীয় গাছের খন্ড থেকে কাগজ বানাতে শেখে। আবার ব্যাপকতা, বৈচিত্র্য এবং ধর্মীয় ভাবধারায় প্রভাবিত বিশাল আকারের পাথরের মূর্তিগুলো ভাস্কর্য শিল্পে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাস্কর্য হচ্ছে গিজার অতুলনীয় স্ফিংক্স।
উপরের আলোচনা দ্বারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়, মিশরীয় সভ্যতার সাথে নাফিসের বইয়ে পড়া সভ্যতার পুরাপুরি মিল রয়েছে।

ঘ. “উদ্দীপকে বর্ণিত প্রাচীন সভ্যতাটি অর্থাৎ মিশরীয় সভ্যতাটি ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছিল।” উক্তিটি যথার্থ।
মিশরীয়দের বলা হয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা। পাথর কেটে প্রকাণ্ড সৌধ বানাতে তারা ছিল খুব দক্ষ। প্রাচীন মিশরের বেশিরভাগ সৌধ দাঁড়িয়ে আছে কায়রো শহরের কাছাকাছি মরুভূমি অঞ্চলে। জ্যামিতির ত্রিভুজের মতো দেখতে প্রকাণ্ড এসব সৌধই হচ্ছে মিশরের বিখ্যাত পিরামিড। মিশরীয়রা মৃত্যুর পর আরেকটি জীবনের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসী ছিল। সে জীবনে রাজা হবেন ফারাও। তাই ফারাওয়ের মৃতদেহ সংরক্ষণের প্রয়োজনে তৈরি হয়েছে পিরামিড। অন্যদিকে, ধনী পুরোহিত শ্রেণি তৈরি করেছে ধর্মমন্দির। মিশরের সবচেয়ে বড় পিরামিডটি হচ্ছে ফারাও খুফুর পিরামিড। এ ফারাও খ্রিষ্টপূর্ব ২,৭০০ থেকে ২,৬৭০ অব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। তাকে ‘কিওপস’ও বলা হতো। খুফুর পিরামিড গড়ে উঠেছিল ১৩ একর জায়গাজুড়ে। এর উচ্চতা ছিল প্রায় সাড়ে ৪০০ ফুট। মিশরীয় সভ্যতার মধ্য ও শেষ ভাগে তৈরি হয়েছে ধর্মমন্দির। এগুলোর মধ্যে কর্নাক ও লাকজোরের মন্দির বিখ্যাত। পিরামিড গড়ার পাশাপাশি ভাস্কর্য শিল্পের বিকাশ ঘটে মিশরে। ভাস্কর্যের অধিকাংশ নিদর্শন দেখা যায় সমাধি, সৌধ ও মন্দিরের প্রবেশপথে। মন্দিরের ভেতরের দেয়াল সাজানো হতো মূর্তি খোদাই করে। মিশরীয় ভাস্করদের সবচেয়ে বড় গৌরব স্ফিংস’ তৈরিতে। স্ফিংসের দেহ সিংহের আকৃতির, আর মাথা ছিল ফারাওয়ের। এতে বোঝা যায়, ফারাও সিংহের মতোই বলবান ছিলেন। ভাস্করগণ নরম পাথরে মানুষের অবিকল মূর্তিও পড়তেন। ফারাও ইখনাটন ও রানি নেফ্রেদিতির মূর্তি এর উচ্ছ্বল উদাহরণ।

৪. বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এখানে প্রায় প্রতিবছরই কন্যায় নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যার পানি নেমে গেলে তীরবর্তী এলাকার পলি জমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ঐ অঞ্চলে চাষাবাদ করে কৃষকরা প্রচুর ফসল উৎপাদন করে এবং সমৃদ্ধি লাভ করে।
ক. কোন রাজা রোম নগরী প্রতিষ্ঠাা করেন?
খ. রোমে তিনজনের শাসন টেকেনি কেন? বর্ণনা কর।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত অবস্থার সাথে কোন সভ্যতার কোন অববাহিকার মিল পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সভ্যতার বিকাশে উদ্দীপকে বর্ণিত অবস্থার তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. লাতিন রাজা রো-মিউলাস (Romeelus) রোম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন।

খ. ৭১ খ্রিস্টপূর্ব অব্দে স্পার্টাকাস নিহত হলে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ছাড়াও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে রোম। ফলে উচ্চাকাঙ্ক্ষী সামরিক নেতারা ক্ষমতায় আসতে থাকে এবং রোমে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষমতার দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে সমঝোতার ভিত্তিতে বিশাল রোম সাম্রাজ্যকে তিন ভাগে ভাগ করে শাসনের দায়িত্ব নেন অক্টোভিয়াস সিজার, মার্ক এন্টনি ও নেপিডাস। তবে তিন জনের শাসন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ প্রত্যেকেরই আকাঙ্ক্ষা ছিল রোমের একচ্ছত্র অধিপতি হওয়া। ফলে খুব শীঘ্রই আবার ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়ে গেলে রোম থেকে তিন জনের শাসনের অবসান ঘটে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত অবস্থার সাথে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা নীলনদের অববাহিকার মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় প্রায় প্রতিবছরই বন্যায় নদী-তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যার পানি নেমে গেলে নদী-তীরবর্তী এলাকায় পলি জমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। এটি প্রচুর ফসল উৎপাদন এবং সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আর এ ঘটনার সাথে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। মিশরের নীলনদের উৎপত্তি আফ্রিকার লেক ভিক্টোরিয়া থেকে। সেখান থেকে নদটি নানা দেশ হয়ে মিশরের মধ্য দিয়ে ভূমধ্যসাগরে এসে পড়েছে। ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস। যথার্থই বলেছেন, ‘মিশর নীলনদের দান’। নীলনদ না থাকলে মিশর মরুভূমিতে পরিণত হতো। প্রাচীনকালে প্রতিবছর নীলনদে বন্যা হতো। বন্যার পর পানি সরে গেলে দুই তীরে পলিমাটি পড়ে জমি উর্বর হয়ে যেত। জমে থাকা পলিমাটিতে জন্মাত নানা ধরনের ফসল।

ঘ. সভ্যতার বিকাশে উদ্দীপকে বর্ণিত অবস্থা অর্থাৎ নদী অববাহিকা অঞ্চলে গড়ে ওঠা কৃষিনির্ভর অর্থনীতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতাগুলোর বিকাশ ও সমৃদ্ধি অর্জনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি সভ্যতাই নদী-তীরবর্তী অববাহিকা অঞ্চলে গড়ে ওঠা কৃষির ওপর ভিত্তি করে বিকাশ লাভ করেছে। এক্ষেত্রে মিশরীয় ও সিন্ধু সভ্যতার কথা বলা যায়। মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল নীলনদের অববাহিকা অঞ্চলে। প্রতিবছর অববাহিকা অঞ্চলে বন্যার পানি সরে গেলে দুই তীরে পলিমাটি পড়ে জমি উর্বর হয়ে যেত। স্বাভাবিকভাবেই এ উর্বর জমিতে প্রচুর ফসল জন্মাত। ফসণের এ প্রাচুর্য মিশরকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তুলে। আমরা জানি, অর্থনৈতিক শক্তিই সভ্যতার বিকাশে মূল ভূমিকা পালন করে। মিশরীয় সভ্যতার মতোই সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সিন্ধুনদের অববাহিকা অঞ্চলে। আধুনিক প্রত্নতত্ত্ববিদরা এ বিষয়ে একমত যে, সিন্ধু সভ্যতার অগ্রগতির পিছনে মূল ভূমিকা রেখেছিল। সিন্ধুনদ বিধৌত অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি এবং মিশরীয় সভ্যতার অগ্রগতির পিছনেও মূল ভূমিকা রেখেছিল নীলনদ বিধৌত অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। আর এসব সভ্যতার মতো উদ্দীপকে বর্ণিত বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, অঞ্চলটির সমৃদ্ধির পিছনে নদীবিধৌত অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।
তাই বলা যায়, সভ্যতার বিকাশে নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

আরো পড়ো ইতিহাস পরিচিতি অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৫. দৃশ্যকল্প-১ : ইতিহাস পাঠদানে শিক্ষক মহোদয় বললেন, আফ্রিকা মহাদেশের এমন একটি দেশের মানুষ প্রথম পৃথিবীতে জ্যামিতি ও পাটিগণিতের প্রচলন ঘটান। ইতিহাসে তারা ভাস্কর্য শিল্পেও শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে।
দৃশ্যকল্প-২ : সাহিবা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে জানতে পারে প্রাচীনকালে এমন একটি সভ্যতা ছিল যাদের সমাজ শ্রেণিভেদ, বাসস্থান ভিন্নতা, মাতৃপূজা, পুরুষদের অলংকার ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে।
ক. নবোপলীয় যুগ কাকে বলে?
খ. সাহিত্যের ক্ষেত্রে গ্রিকদের অবদান লেখ।
গ. দৃশ্যকল্প-১ এর প্রাচীন কোন সভ্যতার বর্ণনা করা হয়; এতে বিজ্ঞানের অবদান ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ : এ প্রাচীন যে সভ্যতার বিবরণ দেয়া হয়েছে; তার সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থা তুলে ধর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. পুরানো পাথরের যুগ শেষে কৃষিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে নতুন যুগের সূচনা হয়ে তা নবোপলীয় যুগ নামে পরিচিত।

খ. সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রিসের সৃষ্টি আজও মানবসমাজে মূল্যবান সম্পদ। হোমারের ইলিয়ড’ ও ‘ওডিসি’ মহাকাব্য তার অপূর্ব নিদর্শন। সাহিত্য ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল নাটক রচনায়। গ্রিসের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ছিলেন সোফোক্লিস। তিনি ১০০টির বেশি নাটক রচনা করেন।

গ.উদ্দীপকে দৃশ্যপট-১-এ বর্ণিত দেশটি হচ্ছে মিশর। প্রাচীনকালে গড়ে ওঠা মিশরীয় সভ্যতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান অনস্বীকার্য।
আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত দেশটির নাম ইজিপট বা মিশর। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ থেকে ৩২০০ অব্দ পর্যন্ত নীলনদের অববাহিকায় মিশরীয় সভ্যতা গড়ে ওঠে। ইতিহাস ক্লাসে শিক্ষক মহোদয়ের উল্লিখিত আফ্রিকান দেশটি হলো মিশর। কেননা মিশরীয় সভ্যতার শ্রেষ্ঠ অবদানগুলোর মধ্যে অঙ্কশাস্ত্রের দুটি শাখা তথা জ্যামিতি এবং পাটিগণিতের প্রচলন ছিল স্মরণীয়। বিজ্ঞান শাস্ত্রে মিশরীয় সভ্যতার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। কৃষিনির্ভর সভ্যতা হওয়ায় নীলনদের প্লাবন, নাব্যতা, পানিপ্রবাহের মাপ, জোয়ার-ভাটা ইত্যাদি ছাড়াও জমির মাপ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এসবের সঙ্গে জ্যোতিষশাস্ত্র ও অঙ্কশাস্ত্রের গভীর যোগাযোগ ছিল। ফলে এ দুটি বিদ্যা তারা আয়ত্ত করেছিল প্রয়োজনের তাগিদে। মিশরীয় সভ্যতার মানুষ যোগ, বিয়োগ ও ভাগের ব্যবহার জানত। তারা প্রথম সৌর পঞ্জিকা আবিষ্কার করে। ৩৬৫ দিনে বছর এ হিসাবের আবিষ্কারও তাদের। সময় নির্ধারণে সূর্যঘড়ি, ছায়াঘড়ি, জলঘড়ি আবিষ্কারও তাদের কৃতিত্ব। এছাড়াও মমি তৈরি, হাড় জোড়া লাগনো, চোখ-দাঁত- পেটের রোগ নির্ণয়, হৃৎপিণ্ডের গতি এবং নাড়ির স্পন্দন নির্ণয় করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
পরিশেষে বলা যায়, বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষতায় মিশরীয় সভ্যতার অবদান অনস্বীকার্য।

ঘ. দৃশ্যকল্প-২ : এ প্রাচীন যে সভ্যতার বিবরণ দেয়া হয়েছে তা সিন্ধু সভ্যতা। সাহিবা অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সিন্ধু সভ্যতার সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থা জানতে পারে।
সিন্ধু সভ্যতার যুগে মানুষ সমাজবদ্ধ পরিবেশে বসবাস করত। সেখানে একক পরিবার পদ্ধতি চালু ছিল। সিন্ধু সভ্যতার যুগে সমাজে শ্রেণিবিভাগ ছিল। সব লোক সমান সুযোগ-সুবিধা পেত না। সমাজ ধনী ও দরিদ্র দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। কৃষকেরা গ্রামে বসবাস করত। শহরে ধনী এবং শ্রমিকদের জন্য আলাদা আলাদা বাসস্থানের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
সিন্ধুসভ্যতার ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না পাওয়া গেলেও অসংখ্য পোড়ামাটির নারীমূর্তি থেকে বোঝা যায় যে, তারা মাতৃপূজায় অভ্যস্ত ছিল। তাছাড়া তারা দেব-দেবী মনে করে বৃক্ষ, পাথর, সাপ এবং পশুপাখির উপাসনাও করত। সিন্ধুবাসী পরলোকে বিশ্বাস করত। সে কারণে তারা কবরে মৃতের ব্যবহার করা জিনিসপত্র ও অলংকার রেখে দিত। সিন্ধুসভ্যতার সমাজব্যবস্থা ছিল মাতৃতান্ত্রিক । নারীরা খুবই শৌখিন ছিল। তাদের প্রিয় অলংকারের মধ্যে ছিল হার, আংটি, দুল, বিছা, বাজুবন্ধ, চুড়ি, বালা, পায়ের মল ইত্যাদি। তারা নকশা করা দীর্ঘ পোশাক পরত। পুরুষরাও অলংকার ব্যবহার করত।

Leave a Comment