দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

রচনা: দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান বা, মানবকল্যাণে বিজ্ঞান (সহজ ভাষায়)

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
অথবা, দৈনন্দিন জীবন ও বিজ্ঞান
অথবা, মানবকল্যাণে বিজ্ঞান

উপস্থাপনা : বিজ্ঞান বা Science শব্দটির উৎপত্তি leaon থেকে। leaon অর্থ জানা বা শিক্ষা করা। শাব্দিক অর্থে বিশেষ জ্ঞানই হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের দর্শনে পার্থিব জগতের নানা বিষয় নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘বিজ্ঞানজগৎ‍। মানুষ ও তার জীবনদানকারী সভ্যতাকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে এসেছে এ বিজ্ঞান। দৈনন্দিন জীবনে মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান যে কত ব্যাপক, তা প্রতিদিনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করা যায়। বিজ্ঞান আজ মানবজীবনের নিত্যসঙ্গী। আদিম যুগ থেকে আরম্ভ করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত মানবসভ্যতার যে বিকাশ ঘটছে, তার মূলে রয়েছে বিজ্ঞান।

মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক অবদান : সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মানুষের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিজ্ঞান জড়িত। মানবজীবন আর বিজ্ঞান একই সূত্রে গ্রথিত। যাতায়াত, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশলসহ জীবনের হাজারো ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। নিচে এর কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো-

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান : জীবনযাত্রার সকল দিকের স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে বিজ্ঞান আজ নিয়োজিত। ব্যক্তি জীবনে প্রভাতি চা-পান থেকে অফিসে গমনাগমন এবং নিদ্রার পূর্বমুহূর্তে সকল বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্য এনেছে বিজ্ঞান। বিজলি বাতি, পাখা, মোটরগাড়ি, উড়োজাহাজ, হিটার, চুল্লি ইত্যাদি সবকিছুই সহজলভ্য হয়েছে বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে।

নাগরিক সভ্যতায় বিজ্ঞান : নাগরিক সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানের দান। বিজলি বাতিতে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি সবকিছু ঝলমল করে। কয়েকটি বৈদ্যুতিক সুইচে অঙ্গুলি চালনার ফলে প্রত্যহ রান্না, পাখা চালনা ইত্যাদি সবকিছুই সম্ভব হচ্ছে।

পরিবহন ও যোগাযোগে বিজ্ঞান : যাত্রী নিয়ে আজ উড়োজাহাজ আকাশে উড়ে, জলযান সমুদ্র পাড়ি দেয়, শত সহস্র মাইল দূর থেকে মানুষের সংবাদ আদানপ্রদান করে টেলিগ্রাফ, টেলিপ্রিন্টার ও টেলিফোন। মোবাইল, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ইন্টারনেট এসই বিজ্ঞানের আশীর্বাদ।

চিকিৎসা জগতে বিজ্ঞান : চিকিৎসা জগতে বিজ্ঞান আজ যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। দুরারোগ্য ব্যাধিতে মৃত্যুর সংখ্যা আজ হ্রাস পেয়েছে। স্প্রেপটোমাইসিন, পেনিসিলিন, এক্স-রে প্রভৃতি আজ মৃত্যুপথযাত্রীকে দান করেছে নিশ্চিত বিশ্বাস ও আশা। কর্নিয়া (অক্ষিগোলকের স্বচ্ছ আবরণ) বৃক্ক, অস্থিমজ্জা, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস এবং যকৃতের মতো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক সাফল্য অভাবনীয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে ফাইবার অপটিকস (আলোক তন্তু বিদ্যা) ব্যবহারের ফলে মানবদেহের অভ্যন্তরস্থ ফুসফু পাকস্থলী, বৃহদন্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত্র, উদর, অস্থিগ্রন্থি, শিরা, ধমনি ইত্যাদির অবস্থা যন্ত্রের সাহায্যে অবলোকন করে নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়। শুধু তা-ই নয়, অপটিক ফাইবার (আলোক তন্তু) সংবলিত বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা যায়। অতিকম্পনশীল শব্দ ও লেজারকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান চিকিৎসাক্ষেত্রে বিপ্লব সাধন করেছে। এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন দেখা সম্ভব হচ্ছে তেমনি মূত্রথলি ও পিত্তকোষের পাথর চূর্ণ করার কাজেও এর সফল ব্যবহার হচ্ছে। কম্পিউটার প্রযুক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে নিয়ে এসেছে সর্বাধুনিক পর্যায়ে।

শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞান : শিল্পকারখানায় পূর্বে সমস্ত কাজই হাতে করা হতো।
বিজ্ঞানের বলে আজ সেসব কাজ যন্ত্র দ্বারা করানো হচ্ছে। ফলে খরচ কম পড়ছে, সময় কম লাগছে এবং অধিক উৎপাদন হচ্ছে।

আরো পড়ো → আমার ছেলেবেলা
আরো পড়ো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞান : জনসংখ্যা বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিজ্ঞানেরই আবিষ্কার। মানুষ এ বিজ্ঞানের বলেই জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সরঞ্জামাদি আবিষ্কার করেছে এবং নব নব পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছে।

মহাশূন্যের রহস্য উদ্ঘাটনে বিজ্ঞান : মানুষের কৌতূহলী মন আজ বিজ্ঞানের বলে মহাশূন্যের রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যাপৃত হয়েছে। মানুষ চাঁদে, মঙ্গল গ্রহে অভিযান চালিয়েছে এবং বিভিন্ন গ্রহ সম্পর্কে জ্ঞান আহরণের জন্য মহাশূন্যে অভিযান পরিচালনা করছে। মহাকাশে পাঠিয়েছে উপগ্রহ যান, রোবট ও অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম।

শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে বিজ্ঞান : মুদ্রণ যন্ত্র, ক্যালকুলেটর, কাগজ, জ্ঞান আহরণের জন্য সংবাদপত্র ও পুস্তকাদি সবকিছুই বিজ্ঞানের দান। চলচ্চিত্র, বেতার যন্ত্র, টেলিভিশন প্রভৃতি যেমন মানুষকে অফুরন্ত আনন্দ দিচ্ছে, তেমনি শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রেও বিপ্লব এনেছে। কম্পিউটার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করেছে এক নতুন শিক্ষা পদ্ধতি। বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা এখন কম্পিউটারেই শিখতে পারছে অসংখ্য জিনিস। তা ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন বিখ্যাত লাইব্রেরির বই, বিখ্যাত শহর, বন্দর, বাণিজ্য, দেশ ইত্যাদি সম্পর্কে মুহূর্তেই সংগ্রহ করতে পারছে বিভিন্ন উপাত্ত।

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান : আধুনিক বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রেও অশেষ কল্যাণ সাধন। করে আসছে। প্রাচীন ভোতা লাঙলের পরিবর্তে আজ ব্যবহৃত হচ্ছে চরত কলের লাঙল ও ট্রাক্টর, পচা আবর্জনা ও গোবরের সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক রাসায়নিক সার। গবেষণার মাধ্যমে উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। উন্নতমানের উদ্ভিদ উৎপাদন করা হচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রেও বিজ্ঞান মহাবিপ্লব এনেছে।

আবহাওয়ায় বিজ্ঞান : বিজ্ঞানীরা মহাকাশে প্রেরণ করেছে কৃত্রিম উপগ্রহ। যার ফলে আবহাওয়ার খবরাখবর মুহূর্তেই নির্ভুলভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে খনিজ সম্পদ, তেল ও গ্যাসের উৎস, মাটির উপাদান ও জলজ সম্পদ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।

বিজ্ঞানের অপকারিতা : বিজ্ঞান কেবল আশীর্বাদই বহন করে আনে না, অভিশাপও বহন করে থাকে। এটম বোমা, হাইড্রোজেন বোমা, ডিনামাইট, বোমারু বিমান, ট্যাংক ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে মানবজীবনে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা কর্তৃক হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত বোমা ও তার ধ্বংসলীলা এর জ্বলন্ত প্রমাণ।

উপসংহার : অনেকে বিজ্ঞানের বিভীষিকা সৃষ্টির শক্তি ও ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার পরিচয় পেয়ে বিজ্ঞানকে দোষারোপ করছেন। কিন্তু বিজ্ঞানই মানুষকে পর্যায়ক্রমে শান্তি ও সমৃদ্ধি দিয়েছে। মানুষের সভ্যতাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছে বিজ্ঞান। মানুষ যদি তার শক্তির অপব্যবহার না করে শুভবুদ্ধির দ্বারা চালিত হয় এবং বিজ্ঞানকে সভ্যতার বিকাশে কাজে লাগায়, তবে বিজ্ঞান অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদই হবে।

3 Comments

  1. সভ্যতার অগ্রগতির পাশাপাশি বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহার মানব সভ্যতাকে করেছে সহজতর ও উন্নত। আজকাল, এমনকি একটি দিন, এমনকি একটি মুহূর্তও বিজ্ঞান ছাড়া অবাস্তব নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হোক বা প্রাণঘাতী রোগ, বিজ্ঞান মানবজাতির কল্যাণে পাশে দাঁড়ায়। তাই আমাদের আজকের বিষয় দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা ২০ পয়েন্ট লেখা। এছাড়া দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা হিসাবে আমাদের লেখাটি পড়তে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *