(বাংলা) SSC: সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সুভা হচ্ছে মাধ্যমিক অর্থাৎ নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বই এর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প। সুভা গল্প থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সুভা গল্পের সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : পারমিতা জন্মান্ধ। খেলার সাথি না জুটলেও সে নিঃসঙ্গ নয়। বিকেল বেলায় সে বাড়ির দিঘির শান বাঁধানো ঘাটে গিয়ে বসে। স্নিগ্ধ শীতল জলের সঙ্গে তার দরদভরা আলাপ চলে। এ সবের মাঝে সে মুক্তির আনন্দ খুঁজে পায়। পরবর্তীতে পারমিতাকে পাত্রস্থ করার জন্য তার পিতামাতাকে বেশি ভাবতে হয়নি। প্রতিবেশী আলম সাহেব পারমিতাকে তার পুত্রবধূ হিসেবে বরণ করে নেন ।
ক. প্রতাপের প্রধান শখ কী?
খ. সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে গেল কেন? বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকের পারমিতার মুক্তির আনন্দের সাথে সুভা চরিত্রের যে দিকের মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের পারমিতার জীবনের পরিণতির বিপরীত চিত্র সুভার জীবনে মর্মবেদনার কারণ”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. প্রতাপের প্রধান শখ ছিল ছিপ ফেলে মাছ ধরা।

খ. বিদেশযাত্রার উদ্যোগ শুরু হলে সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে গেল।
সুভা বাকপ্রতিবন্ধী। শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। মেয়ের বিয়ে নিয়ে বাবা শঙ্কিত। একদিন সপরিবারে তারা কলকাতা যাবার আয়োজন করে। বিদেশযাত্রার এ উদ্যোগ সুভার মনে অজানা আশঙ্কার সৃষ্টি করে। এ আশঙ্কা থেকেই তার হৃদয় অনুবাষ্পে ভরে গিয়েছিল।

গ. উদ্দীপকের পারমিতা আর গল্পের সুভা দুজনেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে মুক্তি খুঁজে পায়, যা তাদের মধ্যে মিল তৈরি করেছে।
“সুভা” গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভা বাকপ্রতিবন্ধী। সুভার মা তাকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করেন। বাবা স্নেহ করলেও সুভার ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি শাঙ্কিত। সমবয়সি ছেলেমেয়েরা সুভাকে ভয় করত। তার সাথে মিশত না। আর তাই সুভা প্রকৃতিতে আশ্রয় খুঁজে নেয়। গোয়ালের দুটি গাভি তার বন্ধু। এছাড়া প্রকৃতি যেন তার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়।
উদ্দীপকের পারমিতা সুভার মতোই শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে অন্য কারো সাথে না মিশে সুভার ন্যায় প্রকৃতির আশ্রয় নেয়। দিঘির শান বাঁধানো ঘাটে স্নিগ্ধ শীতল জলের সাথে সে কথা বলে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে সে খুঁজে পায় মুক্তির আনন্দ। ‘সুভা’ গল্পের সুভা আর উদ্দীপকের পারমিতা প্রকৃতিকন্যা। তারা উভয়ই প্রকৃতির কাছে মুক্তির আনন্দ পায় আর এখানেই পারমিতার সাথে সুভা চরিত্রের মিল।

ঘ. পারমিতা এবং সুভা দুজনেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও পারমিতার মতো ইতিবাচক পরিণতির অভাবই সুভার জীবনে মর্মবেদনার উৎস হয়ে উঠেছে।
‘সুভা’ গল্পের সুভা হতভাগ্য কিশোরী। জন্ম থেকে বাকপ্রতিবন্ধী সুভাকে তার বাবা-মা বোঝা মনে করতেন। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় থাকতেন। অন্যদের কথায় তাঁদের এ দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে বোঝামুক্ত হওয়ার জন্য সুভার বাবা-মা তাকে কলকাতা নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে তার নির্বিবাস বিয়ে হয়েছে তা যেমন আমাদের জানা নেই তেমনি প্রতিবেশী প্রতাপের সঙ্গেও তার বিয়ে হলো না।
উদ্দীপকে আমরা দেখি পারমিতা জন্মান্ধ। একাকী শান্ত দিঘির জলের পাশে বসে সে মুক্তির আনন্দ পায়। পারমিতা বড়ো হলে তার মাকে পারমিতার বিয়ের জন্য সুশ্চিন্তা করতে হয়নি। প্রতিবেশী আলম সাহেব তাকে পুত্রবধূ হিসেবে বরণ করে নেন।। সুভা ও পারমিতার জীবন সমান্তরালে চলছিল। দুজনেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সমাজের দৃষ্টি দুজনের প্রতি দুরকম। জন্মাদ পারমিতা সুতার মতো সমাজের অবহেঙ্গার পাত্রী হয়নি। প্রতিবেশী আলম সাহেব পারমিতাকে পুত্রবধূ হিসেবে বরণ করেছেন। কিন্তু সুতার জীবনে পারমিতার মতো কোনো পাত্র জোটেনি। পাত্রের সন্ধানে তাকে চির পরিচিত গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমাতে হয়েছে। আর এটাই সুভার জীবনে মর্মপীড়ার কারণ। ফলে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : মানুষের তাকানোর শক্তি, তাকিয়ে থাকা মানুষের অভিব্যক্তি বোঝার শক্তি নিয়ে ভাবলে অবাক হতে হয়। কোনো কথা না বলেও কোনো শব্দ উচ্চারণ না করেও শুধু তাকিয়ে থাকার নানান ভঙ্গিতে প্রকাশিত হতে পারে অজস্র কথা। মানুষ যে প্রকৃতই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তার জন্য চিৎকার করবার প্রয়োজন নেই। কোনো কোনো নির্বাক মানুষের বাকশক্তি কোনো কোনো অন্ধ মানুষের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক বাকশক্তি ও দৃষ্টিশক্তিকে হার মানায়। এই যেমন— মহাকবি হোমার চক্ষুহীন হয়েও রচনা করেছেন ‘ইলিয়াড’ ও ‘এডেসির’ মতো কালজয়ী মহাকাব্য।

ক. “গোরা” কোন শ্রেণির রচনা?
খ. “মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’- বাক্যটির মানে কী?
গ. ‘কিন্তু কালো চোখকে কিছুই তর্জমা করতে হয় না’ সুভা গল্পের এই উক্তির সঙ্গে অনুচ্ছেদের সম্পর্ক নির্ণয় করো।
ঘ. “সব মানুষই শ্রেষ্ঠ। কথাটি সর্বক্ষেত্রে সত্য নয়।” মন্তব্যটি উদ্দীপক ও ‘সুভা’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘গোরা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি উপন্যাস।

খ. ‘মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’ বাক্যটির মাধ্যমে প্রাবন্ধিক মাছ ধরার সময় নীরব সঙ্গের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপ তেমন কোনো কাজ করত না। শখের বশে ছিপ দিয়ে মাছ ধরেই সময় কাটাত সে। এ উপলক্ষে নদীর সুভার সঙ্গে তার দেখা হতো। প্রতিদিন বিকেলে মাছ ধরার সময় সঙ্গী হিসেবে সুভাকে পাওয়াটা তার জন্য ছিল বিশেষ প্রাপ্তি। কেননা, সুভা নির্বাক হওয়ার মাছ ধরার ক্ষেত্রে যেমন বিঘ্ন ঘটত না, পাশাপাশি সময়ও ভালো কাটত। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।

গ. অভিব্যক্তি প্রকাশে ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা প্রকাশের সূত্রে ‘সুতা’ গল্পের প্রশ্নোক্ত উক্তিটির সঙ্গে আলোচ্য উদ্দীপকের মিল পরিলক্ষিত হয়।
“সুভা” গল্পের সুভা চরিত্রের মধ্য দিয়ে গল্পকার এক বাকপ্রতিবন্ধীর ভাব প্রকাশের অসাধারণ ক্ষমতা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। এ গল্পে সুভা নির্বাক হওয়া সত্ত্বেও আকারে-প্রকারে-ভঙ্গিমায় সে তার মনের ভাব প্রকাশ করে। গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখলে তার সে মনোভাব সহজেই বোঝা যায়।
উদ্দীপকে মানুষের অভিব্যক্তি প্রকাশের ক্ষেত্রে চোখের ভাষার অসাধারণ ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। লেখক লক্ষ করেছেন, মৌখিক ভাষা ব্যবহার না করেও কেবল চোখের ইশারায় অনেক কথাই সহজে বলে দেওয়া যায়। মুখের ভাষায় হয়তো সবকিছু প্রকাশ করা যায় না, কিন্তু ভাব-ভঙ্গিতে তা সহজেই প্রকাশিত হয়। আলোচ্য গল্পের সূভা একজন বাকপ্রতিবন্ধী। চোখের ইশারা বা অঙ্গভঙ্গিই তার ভাব প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম। কাছের মানুষরা সহজেই সে ভাষা বুঝতে পারে। অর্থাৎ আলোচ্য উদ্দীপক এবং ‘সুভা’ গল্পে প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে একইভাবে ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে ভাব প্রকাশের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। এদিক থেকে ‘সুভা’ গল্পের আলোচ্য উক্তিটির সঙ্গে উদ্দীপকটি সম্পর্কযুক্ত।

ঘ. “সুভার সম্পর্কে প্রতিবেশীদের মনোভাব বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থই বলা যায়।
‘সুভা’ গল্পে গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুভাকে কেন্দ্র করে বাকপ্রতিবন্ধীদের মনোযাতনাকে তুলে ধরেছেন। নির্বাক হওয়ায় সুভার বিয়ে হচ্ছিল না বলে তার বাবা-মাকে প্রতিবেশীদের নিন্দা সহ্য করতে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এ অজুহাতে সুভার পরিবারকে তারা একঘরে করতে চেয়েছে।
উদ্দীপকে মনোতার প্রকাশের ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয় ক্ষমতার বিশেষ প্রয়োগ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে ইন্দ্রিয় ক্ষমতা, বিশেষ করে চোখের ভাষার অসাধারণ বোধগম্যতার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের দিকটিও উপস্থাপন করা হয়েছে। লেখক মনে করেন, স্বাভাবিক সৃষ্টিশক্তি নয়, বরং মহাকবি হোমারের মতো গভীর অন্তদৃষ্টিই মানুষকে শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করে।
“সুভা” গল্পের মূল চরিত্র বাকপ্রতিবন্ধী সুভা। নির্বাক হওয়ার কারণে অনেকে তার সমব্যথী হলেও কিছু লোক তাকে অবহেলার দৃষ্টিতেই দেখত। শুধু তা-ই নয়, বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে বলে তারা সুভার বাবাকে সুভার বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এমনকি তাদের গ্রামছাড়া করার পায়তারা করে। মূলত তাদের এমন কর্মকাণ্ডের কারণেই সুভা বাবার সঙ্গে। কলকাতায় পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়। এক্ষেত্রে সুভা এবং তার পরিবারের অন্তর্ঘাতনাকে উপলব্ধি করলে তারা এমনটি করতে পারত না। একইভাবে, আলোচ্য উদ্দীপকেও গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও বিবেচনাবোধকেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের নির্ণায়ক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যা আলোচ্য গল্পের সুভার পরিবারের সমালোচকদের মাঝে অনুপস্থিত। সে বিবেচনায়, প্রশ্নোপ্ত মন্তব্যটি যথাযথ অর্থবহ।

> পড়ুন >> (HSC) সাহিত্যপাঠ

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : জন্মের কিছু পর গফুর সাহেব বুঝতে পারেন তার সদ্যোজাত মেয়েটি চোখে দেখতে পায় না। এমনিতেই তার প্রত্যাশা ছিল ছেলে সন্তানের। অথচ জন্মালো মেয়ে, তাও আবার অন্য। তাই স্ত্রীর প্রতি তার দারুণ ক্ষোভ, সন্তানের প্রতিও তার সীমাহীন অবহেলা।
ক. প্রতাপ সুভাকে কী বলে ডাকত?
খ. ‘আমাকে সবাই ভুলিলে বাঁচি’ সুভার এমন মনোভাবের কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের সদ্যোজাত মেয়েটির সাথে ‘সুভা’ গল্পের সুভার সম্পর্ক নির্ণয় করো।
ঘ. ‘গল্পের সুভা উদ্দীপকের সদ্যোজাত মেয়েটির চেয়ে বেশি সহানুভূতি পেয়েছে’- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. প্রতাপ সুভাকে ‘সু’ বলে ডাকত।

খ. বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে সুভা প্রশ্নোক্ত মনোভাব পোষণ করত।
বাবা-মায়ের ছোটো মেয়ে সুভা জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না। নিজের এমন দুর্বলতায় সুভা নিজেকে অসহায় মনে করত। সে সাধারণের দৃষ্টিপথ হাতে নিজেকে সর্বদা গোপন করে রাখত। বাক্প্রতিবন্ধী হওয়াটাকে সে অভিশাপ মনে করত। তাকে সবাই ভুলে গেলেই সে যেন স্বস্তি পেত।

গ. প্রতিবন্ধিতার দিক থেকে উদ্দীপকের সদ্যোজাত অন্ধ মেয়েটির সাথে ‘সুভা’ গল্পের বাকপ্রতিবন্ধী সুভার সম্পর্ক রয়েছে।
“সুভা” গল্পে সুভা পরিবারের ছোটো মেয়ে। কিন্তু সে কথা বলতে পারে না। জন্ম থেকে মেয়ের এমন অবস্থায় সুভার মা চরম বিরক্ত। তিনি মেয়ের বোবা হওয়াকে নিজের অসম্পূর্ণতা মনে করেন।
উদ্দীপকের সদ্যোজাত মেয়েটির বাবার প্রত্যাশা ছিল ছেলে সন্তানের। কিন্তু ছেলের পরিবর্তে মেয়ে হওয়ায় তিনি স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট। উপরন্তু মেয়েটি হয়েছে জন্মান্ধ। তাই স্ত্রীর প্রতি তার সীমাহীন ক্ষোভ এবং সদ্যোজাত মেয়েটির প্রতিও তার দারুণ অবহেলা। উদ্দীপকের সদ্যোজাত এই মেয়েটি যেন ‘সুভা’ গল্পের সুভারই অন্যরূপ। সুভাও জন্ম থেকে কথা বলতে পারে না। তাকে নিয়ে পরিবারের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। এদিক থেকে উদ্দীপকের সদ্যোজাত মেয়েটি ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকের সদ্যোজাত মেয়েটির প্রতি বাবার অবহেলা ও ‘সুভা’ গল্পের সুভার প্রতি পিতার সহানুভূতির সাহচর্য উক্তিটিকে যথার্থ করেছে।
“সুভা” গল্পে সুভা পরিবারের ছোটো মেয়ে। সে বোবা হওয়ায় মা তার প্রতি বিরক্ত হলেও বাবা তাকে ভালোবাসেন। এছাড়াও প্রতাপ ও প্রকৃতির নিবিড় সাহচর্যও সে দারুণভাবে উপভোগ করে।
উদ্দীপকের সালোলিত মেয়েটি অন্ধ হওয়ায় বাবা তাকে অবহেলা করেন। মেয়েটির বাবার প্রত্যাশা ছিল ছেলে সন্তানের। কিন্তু ছেলেতো হলোই না বরং যে মেয়েটি জন্ম নিয়েছে সেও অন্ধ। তাই দেয়েটির প্রতি তার বাবার সীমাহীন অবহেলা পরিলক্ষিত হয়। সে কোনো সহানুভূতি পায় না।
‘সুভা’ গল্পের সুভা জন্ম থেকে বোবা। কথা বলতে না পারলেও প্রকৃতির সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক। নদীর ধারে বসে বসে সে নির্জন প্রকৃতিতে নিজেকে খুঁজে পায়। মনে হয় প্রকৃতির ভাষা সে বোঝে, প্রকৃতিও তার ভাষা বোঝে। তবে সুভার বাকপ্রতিবন্ধী হওয়াকে তার মা নিজের গর্ভের কলঙ্ক মনে করে। তাই তিনি সুভার প্রতি বিরক্তি ও অবহেলা প্রদর্শন করেন। কিন্তু সুভার বাবা সুভাকে অনেক ভালোবাসেন। গোঁসাইয়ের ছোটো ছেলে প্রতাপের সাহচর্যও সুভার নিঃসঙ্গতাকে লাঘব করে। সুভার প্রতি এমন সহানুভূতি থাকলেও উদ্দীপকের মেয়েটি তা থেকে বঞ্চিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোন মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : দুই পা আছে কিন্তু উঠে দাঁড়াবার শক্তি নেই। তাতে কী? আত্মবিশ্বাস তো আছে। তাইতো জীবনযুদ্ধে দমে যাননি আলমগীর হোসেন। ছোটোবেলার টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি। তারপর থেকে হাঁটা-চলা ও কাজকর্ম করার কথা কখনো চিন্তা করতে পারেনি আলমগীর। কিন্তু শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও জীবিকার তাগিদে রিকশাকে বেছে নিয়েছেন হাতিয়ার হিসেবে।
ক. সুভা জলকুমারী হলে কী করত?
খ. “তাহার মর্ম তাহার ভাষার অপেক্ষা সহজে বুঝিত ” কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের আলমগীর হোসেনের সাথে ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের আলমগীর হোসেনের পরিস্থিতি ও পরিণতি সুভার পরিণতি থেকে ভিন্ন।” মতামত দাও।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. সুভা জলকুমারী হলে একটা সাপের মাথার মণি ঘাটে রেখে দিত।

খ. প্রশ্নোক্ত উত্তিটি দ্বারা গোয়ালের দুটি গাড়ির সঙ্গে সুভার ভাষাহীন যোগাযোগের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে।
সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল দুটি গাভি। এই পাতি দুটির জন্য দুটি নামও সে ঠিক করেছে। সর্বশী ও পাঙ্গুলি। গাভি দুটি সুভার পদশব্দ শুনেই তার উপস্থিতি টের পেত এবং কথা না বললেও তার হৃদয়ের অনুভূতি সহজেই উপলব্ধ করত। সুভার কথাহীন সুর যেন বোবা প্রাণী দুটো নিজেদের মধ্যে অনুভব করত, যা ভাষাবোধসম্পন্ন প্রাণীদের পক্ষে সম্ভবপর হতো না।

গ. প্রতিবন্ধী হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের আলমগীর হোসেনের সাথে ‘সুভা’ গল্পের সুভা চরিত্র সাদৃশ্যপূর্ণ।
আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা প্রতিবন্ধী। সামাজিক অবহেলার কারণে তারা মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধা হয়। প্রতিবন্ধী বলে তারা সমাজের মানুষের সহানুভূতি এবং সামাজিক সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত হয়। শুধু তা-ই নয়, পরিবারের যথার্থ ভালোবাসা ও মনোযোগ তারা অনেক ক্ষেত্রে পায় না। আলোচ্য গল্পে ‘সুভা’ চরিত্রটিও বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে সমাজ থেকে কোনো সহানুভূতি পায়নি।
উদ্দীপকের আলমগীর শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুটি পা থাকা সত্ত্বেও তিনি উঠে দাঁড়াতে পারেন না, হাঁটতে পারেন না। কিন্তু তাঁর আত্মবিশ্বাস ছিল প্রবল। এই আত্মবিশ্বাসের বলেই আলমগীর জীবিকার প্রয়োজনে রিকশাকে বেছে নিয়েছেন অনুষঙ্গ হিসেবে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কতটুকু বিড়ম্বনা সৃষ্টি করতে পারে, তা উদ্দীপকের আলমগীরের মাঝে দৃশ্যমান। আর এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার দিক থেকেই উদ্দীপকের আলমগীর আর ‘সুভা’ গল্পের সুভা চরিত্র সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকের আলমগীরের মধ্যে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার দিকটি ফুটে উঠলেও ‘সুভা’ গল্পের বাকপ্রতিবন্ধী সুভার প্রতি পরিবার ও সমাজের অসহযোগিতার দিকটি ফুটে উঠেছে।
‘সুভা’ গল্পে সুভা বাকপ্রতিবন্দী এক কিশোরী। প্রতিবন্ধী হওয়ায় পরিবার এবং সমাজ তার প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এমনকি সুভার মাও তাকে গর্ভের কলঙ্ক হিসেবে দেখেন। এসব কারণে সুভা নিজেকে সবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
উদ্দীপকের আলমগীর শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুটি পা আছে কিন্তু উঠে দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু আলমগীরের মাঝে রয়েছে প্রবল আত্মবিশ্বাস ও ইচ্ছাশক্তি। এই আত্মবিশ্বাস আর ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করেই সে জীবিকার প্রয়োজনে রিকশাকে বেছে নেয়। এক্ষেত্রে দেখা যায় পারিবারিক কিংবা সামাজিক কোনো প্রতিবন্ধকতা আলমগীরের পথ রোধ করতে পারেনি।
“সুভা” গল্পের সুভা এবং উদ্দীপকের আলমগীর দুজনেই প্রতিবন্ধী। উদ্দীপকের আলমগীরের চেয়ে সুভার জীবন অনেকাংশেই ভিন্ন। আলমগীর প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে নেই এবং পারিবারিক প্রতিবন্ধকতারও শিকার হয়নি। অন্যদিকে সুভা বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে কোনো সুবিধা পায়নি বরং সকলক্ষেত্রেই অবহেলিত হয়েছে। সমাজ ও পরিবারের এমন অসহযোগিতা সুভাকে করে তুলেছে দুর্বল ও একা। ফলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার দিক থেকে উদ্দীপকের আলমগীর ও সুভার সাদৃশ্য থাকলেও সামগ্রিক বিচারে সুভার জীবন নিয়ন্ত্রিত হয়েছে প্রতিকূল পারিবারিক ও সামাজিক বিধি-ব্যবস্থায়। তাই উদ্দীপকের আলমগীর হোসেনের পরিস্থিতি ও পরিণতি সুভার পরিণতি হতে ভিন্ন।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : সানোয়ার অতি সাধারণ পরিবারের এক কিশোর। সে কথা বলতে পারে না। কিন্তু তাতে কী-ই বা আসে যায়। লেখাপড়ায় তার খুবই আগ্রহ। বই দেখলে সে আঁ আঁ আঁ আওয়াজ করে পড়তে চায়। ফুল সংগ্রহ করে শহিদ মিনারে যায় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। কথা বলতে না পারলেও তার মুখ দিয়ে বিভিন্ন ধ্বনির মাধ্যমে বেরিয়ে আসে বাঙালির অতি চেনা পর্বের উচ্চারণ।
ক. সুভা মনে মনে কী হতে চাইত?
খ. ‘সে ভাষাবিশিষ্ট জীব’ -কার সম্পর্কে, কোন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সানোয়ার “সুভা” গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ.উদ্দীপকে ‘সুভা’ গল্পের একটি চরিত্রকে প্রতীকায়িত করেছে মাত্র, গল্পের সম্পূর্ণতার ধারণ করতে পারেনি। – মূল্যায়ন করো।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. সুভা মনে মনে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হতে চাইত।

খ. প্রশ্নোক্ত কথাটি প্রতাপ সম্পর্কে, তার কথা বলার যোগ্যতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।
‘সুভা’ গল্পে বা প্রতিবন্ধী সুভা কল্পনায় অন্যদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। পশু, পাখি তথা অবলা প্রাণীদের সাথেই তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এর বাইরে শুধু প্রতাপের সাথে তার ভালোলাগার সম্পর্ক আছে। কিন্তু প্রতাপ সুভার অন্য সঙ্গীদের চাইতে আলাদা। কেননা, সে কথা বলতে পারে। প্রতাপের এই বিশেষ দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করেই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।

গ. বাক্ প্রতিবন্ধিকতার দিক থেকে উদ্দীপকের সানোয়ার ‘সুভা’ গল্পের সুভা চরিত্রের প্রতিচ্ছবি।
‘সুভা’ গল্পটি বাক্‌প্রতিবন্ধী জীবনের একটি বাস্তব উপাখ্যান। বাক্প্রতিবন্ধী হয়ে সুভা পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে। ফলে বাড়ির সবাই তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করত। সুভা কথা বলতে না পারলেও তার একটা নিজস্ব জগৎ ছিল। সে জগতে সুভা নিজের মনের ভাবকে প্রকাশ করত নানা উপায়ে, যা মানুষ বুঝতে না পারলেও সুভার সঙ্গী প্রকৃতি ও পশুপাখি অনেকটাই বুঝতে পারতো।
উদ্দীপকের সানোয়ার একজন বাক্প্রতিবন্ধী কিশোর। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি তার খুব আগ্রহ। বই দেখলে সে আঁ আঁ আঁ আওয়াজ করে পড়তে চায়। এমনকি শহিদ দিবসে ফুল নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যায় শহিদ মিনারে। মানুষ তার ভাষা বুঝতে না পারলেও নানারকম শব্দ ও ইঙ্গিতের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করে সে। বাক্‌প্রতিবন্ধকতার এই দিকটিই সাদৃশ্য তৈরি করেছে উদ্দীপকের সানোয়ার এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভা চরিত্রের মাঝে। এ দিক থেকে উদ্দীপকের সানোয়ার যেন ‘সুভা’ গল্পের সুভা চরিত্রেরই প্রতিচ্ছবি।

ঘ. উদ্দীপকে ‘সুভা’ গল্পের সুভার চরিত্রকে প্রতিকায়িত করা হলেও ‘সুভা’ গল্পের বিষয়বস্তু আরও ব্যাপক ও বেদনাদায়ক।
“সুভা” গল্পের সুভা চরিত্র রবীন্দ্রনাথের এক অমর সৃষ্টি। লেখক বাক্প্রতিবন্ধী সুভা চরিত্রের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতিবন্ধী মানুষের সম্পর্কটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। বাকপ্রতিবন্ধী সুভা কথা বলতে না পারার কারণে প্রতিবেশী তো দূরের কথা নিজ পরিবারের কাছেও বোঝা হয়ে দাঁড়ায় । পরিবারের সবাই তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করে। কথা বলতে না পারলেও তার যে অনুভব শক্তি আছে তা কেউ ভাবতো না। এ কারণে তার মনের মধ্যে এক ধরনের হীনম্মন্যতা তৈরি হয়েছিল। তাই সে নিজেকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে রাখার চেষ্টা করত।
উদ্দীপকের সানোয়ার বাকপ্রতিবন্ধী হলেও তার মাঝে কোনো হীনম্মন্যতা লক্ষ করা যায় না। বরং সে বই দেখলে আঁ আঁ আঁ শব্দ করে পড়তে চেষ্টা করে। ফুল সংগ্রহ করে শহিদ মিনারে যায় ফুল দিতে। কিন্তু ‘সুভা’ গল্পের সুভা ভাব প্রকাশ করতে চাইলে কেউ তা বুঝতে চেষ্টা করত না। ফলে সে মানসিকভাবে নিজেকে ছোটো মনে করত এবং সকলের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতো।
উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, ‘সুভা’ গল্পে সুভাকে ঘিরে যে পারিবারিক এবং সামাজিক চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কথা বলতে না পারা মানুষেরও যে ভাবশক্তি, অনুভূতি, ইচ্ছা থাকতে পারে, তা তার পরিবার কিংবা সমাজের কেউই বুঝতে চায় না । ফলে সুভার সঙ্গী হয় প্রকৃতি ও পশুপাখি। এসব ঘটনা পাঠক হৃদয়ে বেদনার সঞ্চার করে, যা উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে অনুপস্থিত। তাই বলা যায় উদ্দীপকটি ‘সুভা’ গল্পের একটি চরিত্রকে প্রতীকায়িত করেছে মাত্র, গল্পের সম্পূর্ণভাব ধারণ করতে পারেনি।’- মন্তব্যটি যথার্থ।

2 thoughts on “(বাংলা) SSC: সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর”

Leave a Comment