স্বদেশপ্রেম

রচনা: স্বদেশপ্রেম বা দেশপ্রেম (সহজ ভাষায়)

Posted on

স্বদেশপ্রেম
অথবা, দেশপ্রেম

উপস্থাপনা : আমাদের মহানবি (স) বলেছেন, ‘স্বদেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ।’ দেশের প্রতি ভালোবাসা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। দেশকে ভালোবাসে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। যে মানুষের মধ্যে স্বদেশপ্রেম নেই, সে প্রকৃত মানুষ নয়। এ জন্যই নেপোলিয়ান বলেছিলেন- “My country is country, right or wrong.”

স্বদেশপ্রেমের সংজ্ঞা : মহান প্রভু যাকে যে দেশ বা যে অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছেন, সেটিই তার স্বদেশ। দেশের প্রতি গভীর অনুরাগ, নিবিড় ভালোবাসা ও যথার্থ আনুগত্যকে দেশপ্রেম বলা হয়। মাতৃভূমির সত্যিকার উন্নতিকল্পে সর্বস্ব ত্যাগের সাধনাই স্বদেশপ্রেম।

স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ : স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ হলো, দেশের প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি বস্তু এবং দেশীয় সংস্কৃতিকে মনেপ্রাণে ভালোবাসা। মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আপসহীন মনোবৃত্তি লালন করতে হবে। কবির ভাষায়-
কাহাকেও তুমি ভাবিও না পর হিন্দু মুসলিম,
ব্রহ্ম বৌদ্ধ যে-ই হোক সে যে স্বদেশেরই সন্তান।

ধর্মীয় দৃষ্টিতে স্বদেশপ্রেম : প্রত্যেক ধর্মেই স্বদেশপ্রেমের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের মহানবি (স) স্বদেশপ্রেমকে ইমানের অংশ বলেছেন। হিন্দু ধর্ম মতে, “স্বদেশ স্বর্গের চেয়েও পবিত্র।” এভাবে স্বদেশপ্রেম ধর্মীয় দৃষ্টিতেও স্বীকৃত।

আরো পড়ো →শ্রমের মর্যাদা
আরো পড়ো →পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা

স্বদেশপ্রেমের ভিন্নরূপ : স্বদেশপ্রেম আপসহীন হতে হবে। তবে অবশ্যই তা অন্ধ বা সংকীর্ণ হতে পারবে না, কারণ তা অন্য দেশকে ঘৃণা করতে শেখায়। অন্ধ ও উগ্র দেশপ্রেম দেশের জন্য ক্ষতিকর। মূলত স্বদেশপ্রেম নামক পরশ পাথরেই মানুষ পৃথিবীতে স্মরণীয় হতে পারে। বাঙালি জাতির স্বদেশপ্রেম বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে।
কবির ভাষায়,
সাবাস বাংলাদেশ
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে-পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।

দেশপ্রেমিকের আদর্শ : দেশপ্রেমিক হবে দেশের গৌরব ও মর্যাদার নমুনা। তার চরিত্র ও আদর্শ দিয়েই প্রমাণ দিতে হবে, সে কোন দেশের নাগরিক এবং সেই দেশের প্রতি তার মমত্ববোধের দৃষ্টান্ত। স্বদেশপ্রেমের মূল্য। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বলেছেন-
মিছা মণিমুক্তা হেম স্বদেশের প্রিয় প্রেম
তার চেয়ে রত্ন নাই আর।
সুধাকরে কতসুধা, দূর করে তৃষ্ণা ক্ষুধা
স্বদেশের শুভ সমাচার।
স্বদেশপ্রেমের মূল্য তুলনাহীন। পার্থিব কোনো মূল্যবান বন্ধু দিয়ে স্বদেশপ্রেমকে মূল্যায়ন করা যায় না। মানুষের শ্রদ্ধাই এর প্রকৃত মূল্য।

স্বদেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত : প্রত্যেক দেশই তার মাটিতে কিছু শ্রেষ্ঠ সন্তান জন্ম দেয়। যারা তাদের কর্মের জন্য অমরত্ব লাভ করে। আমাদের দেশে দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রেখেছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা, মীর কাসিম, সৈয়দ আহমদ, তিতুমীর, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ বীর সেনানী।

দেশপ্রেমের মহিমা : দেশপ্রেমের ফলে মানুষের মন উদার ও মহৎ হয়, অপরের কল্যাণবোধ জাগ্রত হয় এবং দেশপ্রেমিকের খ্যাতি বিশ্বজনীন রূপলাভ করে। সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের বন্দনা করতে গিয়ে কবি বলেছেন-
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।

উপসংহার : দেশপ্রেম মানবধর্ম। যার মধ্যে এ গুণ নেই, সে অমানুষ। সে বেঁচে থেকেও মৃতের সমতুল্য। স্বদেশপ্রীতির চরম লক্ষ্য হওয়া উচিত মানবপ্রীতি ও বিশ্বপ্রীতি। সুতরাং আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে – Patriotism is a great virtue.

Gravatar Image
StudyOurs: Your Gateway to Collaborative Learning and Growth.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *