অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে

ভাব-সম্প্রসারণ: অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে,
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।

Posted on

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।

ভাব-সম্প্রসারণ : অন্যায়কারী এবং অন্যায়কে নতশিরে সহ্যকারী উভয়েই সমান অপরাধী। এ সমাজে কেউ নিজে অন্যায় না করলেই তার কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। আপ্রাণ চেষ্টা দ্বারা অন্যায়কে প্রতিহত করাই সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

প্রত্যেক মানুষেরই অন্তরে ন্যায়বোধের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তার বিবেকের শুভ্র বেদীতে ন্যায়ের আসন পাতা। জগতের সকল কাজেই তার বিবেক থেকে আসে অমোঘ নির্দেশ। মানুষকে সেই নির্দেশ পালন করতে হয়। কিন্তু ভীতি ও দুর্বলতার কারণে অনেক সময় মানুষ ন্যায়ের সেই অমোঘ নির্দেশ পালনে পশ্চাৎপদ হয়, সেই পবিত্র দায়িত্ব পালনে কুণ্ঠিত হয়। তাই মুষ্টিমেয় মানুষের অপরাধের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রয়েছে অন্যায়কে মানিয়ে চলার মানসিকতা। এ মানসিকতায় কতখানি ক্ষমাশীলতা আর কতখানি ভীরুতা, কতখানি সহনশক্তি আর কতখানি পলায়নপরতা বিদ্যমান তা পরিমাপ করা দুঃসাধ্য। বস্তুত মানুষ শুধু তিতিক্ষা ও করুণাবশতই অন্যায়কারীকে ক্ষমা করে না; তার এ মানসিকতার পেছনে রয়েছে এক আত্ম পলায়নী মনোভাব। নিজেকে অপরাধীর সংস্রব থেকে দূরে সরিয়ে রাখাকেই সে নিরাপদ বলে মনে করে। ন্যায়ের নির্দেশ পালনে এ অক্ষমতার অর্থ অন্যায়কে প্রশ্রয় দান। তেমনই অন্যায়কে ক্ষমা করা বা উপেক্ষা করাও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া। এর ফলে অন্যায়কারীরা আরও অন্যায় করার সাহস পায় এবং তাতে পৃথিবী থেকে ন্যায়বোধ ধীরে ধীরে লোপ পায়। কাজেই অন্যায়কারী এবং যে অন্যায় সহ্য করে, তারা উভয়েই দোষী, উভয়েই শাস্তির যোগ্য। অন্যায় আচরণে কেউ কেউ নীরব উদাসীন দর্শকের ভূমিকা পালন করে থাকে। তাতে প্রশ্রয় পেয়ে অন্যায়কারী হয়ে ওঠে দুর্বিনীত ও শক্তিশালী। কিন্তু ন্যায়ের রক্ষাকারী বিধাতা বেশিদিন তা সহ্য করেন না। তাঁর রুদ্রতেজে একদিন না একদিন অন্যায়কারী এবং অন্যায়ের প্রশ্রয়দাতা উভয়কে ভোগ করতে হয় কঠিন শাস্তি।

সৃষ্টিকর্তা অন্যায়কারীকে যেমন ঘৃণা করেন, তেমনই অন্যায় সহ্যকারীকেও ঘৃণা করেন। তাই আমাদের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

Gravatar Image
StudyOurs: Your Gateway to Collaborative Learning and Growth.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *