(বাংলা)পঞ্চম: ফেব্রুয়ারির গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর

ফেব্রুয়ারির গান হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই এর লুৎফর রহমান রিটন এর কবিতা। ফেব্রুয়ারির গান কবিতার অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

ফেব্রুয়ারির গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর

Screenshot 2023 02 17 10 32 41 02

কবি পরিচিতি জেনে নিই :
নাম – লুৎফর রহমান রিটন।
জন্ম পরিচয় :
জন্ম তারিখ – ১ এপ্রিল, ১৯৬১
জন্মস্থান – ঢাকা।
পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় :
পিতার নাম – তোফাজ্জল হোসেন।
মাতার নাম – আফিয়া আখতার।
শিক্ষাজীবন :
মাধ্যমিক – এসএসসি (১৯৭৯), নবাবপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা।
উচ্চ মাধ্যমিক – এইচএসসি (১৯৮১), ঢাকা কলেজ।
উচ্চতর – স্নাতক (১৯৮৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পেশা/কর্মজীবন :
পেশা – সাংবাদিকতা। সম্পাদক – ছোটদের কাগজ (অধুনালুপ্ত)। ফার্স্ট সেক্রেটারি – বাংলাদেশ দূতাবাস, জাপান। টেলিভিশনের উপস্থাপক হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান।
সাহিত্যকর্ম :
শিশুতোষ গ্রন্থ – ধুত্তুরি, ঢাকা আমার ঢাকা, হিজিবিজি, ছড়া ও ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ, ভূতের বিয়ের নিমন্ত্রণে, বাচ্চা হাতির কাণ্ডকারখানা, শেয়ালের পাঠশালা, নাই মামা কানা মামা, পান্তাবুড়ি ইত্যাদি।
ছোটগল্প – নিখোঁজ সংবাদ, ঝন্টুপন্টুদের গোয়েন্দাগিরি, ফুটবল।
উপন্যাস – অন্ধকারে, ভূতের ডিমের ওমলেট, টোকাই আমিন, টোকাই বিড়াল।
জীবনী – আহসান হাবীবের ছেলেবেলা, জাহানারা ইমাম।
পুরস্কার ও সম্মাননা – বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার প্রভৃতি।

এক নজরে ফেব্রুয়ারির গান কবিতার মূলকথাটি জেনে নিই—
দোয়েল কোয়েল ময়না কোকিল সব পাখির কণ্ঠেই সুর আছে, আছে গান। যা শুনে সবার প্রাণ মুগ্ধ হয়। আবার সাগর নদীর ঊর্মিমালার মন ভোলানো সুর যেমন রয়েছে, তেমনই পাহাড়ের আছে সুরের বাহার ঝরনা-প্রকৃতিতে। গাছের গানে লতাপাতা মুগ্ধ হয়, ছন্দ-সুরে প্রজাপতি ফুলের সাথে কথা কয় । কিন্তু আমরা ফুল পাখি নই, পাহাড় কিংবা ঝরনা-সাগর নই, তাই মায়ের মুখের মধুর ভাষায় মনের সমস্ত কথা বলি কেননা এই বাংলা আমার মায়ের ভাষা, যা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে অনেক শহিদের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সতর্কতার সাথে নিচের শব্দগুলোর সঠিক বানান জেনে নিই—
ফেব্রুয়ারি, মুগ্ধ, ঊর্মিমালা, স্রোতস্বিনী, সমুদ্দুর, ঝরনা, প্রকৃতি, প্রতিধ্বনি, গ্রীষ্ম, বর্ষা, স্বর্ণলতা, ছন্দ, প্রজাপতি, নইকো, শহিদ, রক্ত।

অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর

১. কবিতাটির মূলভাব জেনে নিই।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জীবনে একটি স্মরণীয় দিন। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্রসমাজ এই দিনে আন্দোলন শুরু করে। ছাত্রদের মিছিলে পাকিস্তানি সরকার গুলি চালায়। সালাম, বরকত, শফিক, জব্বার ও আরও অনেকে (যাদের নাম জানা যায় নি) শহিদ হন। ঐ ঘটনা অবলম্বন করে কবি লুৎফর রহমান রিটন ‘ফেব্রুয়ারির গান’ কবিতাটি লিখেছেন। বাংলা ভাষার প্রতি মমতা আর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে এই কবিতায়।

২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
মুগ্ধ, ঊর্মি, ঊর্মিমালা, স্রোতম্বিনী, সমুদ্দুর, বাহার, স্বর্ণলতা, প্রতিধ্বনি।
উত্তর :
মুগ্ধ – বিমোহিত।
ঊর্মি – নদী বা সাগরের ঢেউ।
ঊর্মিমালা – ঢেউসমূহ।
স্রোতস্বিনী – নদী।
সমুদ্দুর – সমুদ্র, সাগর।
বাহার – সৌন্দর্য।
স্বর্ণলতা – সোনালি রঙের বুনো লতা। অনেক সময় পথের ধারের গাছগাছালিকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এই লতা আপনা-আপনি জন্মায়।
প্রতিধ্বনি – বাতাসের ধাক্কায় ধ্বনির পুনরায় ফিরে আসাকে প্রতিধ্বনি বলে।

৩. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
সমুদ্দুর, মুগ্ধ, বাহার, প্রতিধ্বনি, মন ভোলানো, স্রোতস্বিনীতে
ক. বাংলার সৌন্দর্য দেখে আমি…..।
খ. গ্রীষ্মকালে ফলের…..দেখা যায়।
গ. সাত…..তের নদী পার হওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার না।
ঘ……ভেসে চলেছে পাল তোলা নৌকা।
ঙ. রংধনুর…..রং এ আকাশ রঙিন হয়েছে।
চ. সকল মানুষের কণ্ঠে একই…..।
উত্তর :
ক. বাংলার সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ।
খ. গ্রীষ্মকালে ফলের বাহার দেখা যায়
গ. সাত সমুদ্দুর তের নদী পার হওয়া চাট্টিখানি ব্যাপার না।
ঘ. স্রোতস্বিনীতে ভেসে চলেছে পাল তোলা নৌকা।
ঙ. রংধনুর মন ভোলানো রং এ আকাশ রঙিন হয়েছে।
চ. সকল মানুষের কণ্ঠে একই প্রতিধ্বনি।

৪. প্রশ্নগুলোর উত্তর জেনে নিই ও লিখি।
প্রশ্ন ক. কবি এই কবিতায় কত ধরনের সুরের কথা বলেছেন?
উত্তর :
‘ফেব্রুয়ারির গান’ কবিতায় কবি লুৎফর রহমান রিটন চার ধরনের সুরের কথা বলেছেন। সেগুলো হলো :
i. পাখির সুর,
ii. নদী-সাগরের ঢেউয়ের সুর,
iii. ঝরনা প্রকৃতিতে পাহাড়ের সুর ও
iv. ফুল ও প্রজাপতির সুর।

প্রশ্ন খ. পাতা আর স্বর্ণলতা কিসে মুগ্ধ হচ্ছে?
উত্তর :
গাছ প্রকৃতির অন্যতম অংশ। গাছের অসংখ্য পাতা ও শাখা-প্রশাখা বাতাসে দোলা দিয়ে ওঠে। সেখানে গাছের গানে গাছের পাতা আর গাছের শরীরে জড়িয়ে থাকা স্বর্ণলতা মুগ্ধ হয়।

প্রশ্ন গ. প্রজাপতি ফুলের সাথে কীভাবে কথা বলে?
উত্তর :
ফুল ও ফসলের সঙ্গে প্রজাপতির সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। প্রজাপতি ফুলের পাপড়িতে উড়ে বেড়ায়। সেখানে ছন্দ-সুরে ফুলের সাথে প্রজাপতি কথা বলে।

প্রশ্ন ঘ. আমরা কোন ভাষাতে আমাদের মনের কথা বলি?
উত্তর :
প্রতিটি শিশুই প্রথমে মায়ের মুখের ভাষা শোনে। মায়ের মুখের এই মধুর ভাষাতেই আমরা মনের কথা বলি। অর্থাৎ আমরা বাংলা ভাষায় আমাদের মনের কথা বলি।

প্রশ্ন ঙ. ‘শহিদ ছেলের দান’ হিসেবে আমরা কী পেয়েছি?
উত্তর :
তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকরা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে চায়নি। এ কারণে এদেশের বীর সন্তানেরা প্রতিবাদ করেন। সেই সন্তানদের ওপর ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি গুলি চালায় পাকিস্তানি সেনারা। শহিদ হন বাঙালির বীর সন্তানেরা। অবশেষে বাংলা ভাষা তার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়। এ কারণেই ‘শহিদ ছেলের দান’ হিসেবে আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি।

পড়ুন → ফুটবল খেলোয়াড় কবিতার প্রশ্ন উত্তর
পড়ুন → বীরের রক্তে স্বাধীন এ দেশ গল্পের প্রশ্ন উত্তর

৫. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. মনের কথা কীভাবে বলব?
√ ১. মায়ের ভাষায়
২. বাবার ভাষায়
৩. দাদার ভাষায়
৪. মামার ভাষায়

খ. পাখির গানে সবার প্রাণ কেমন হয়?
১. বিরক্ত
√ ২. মুগ্ধ
৩. রাগ
৪. খুশি

গ. নদীর অপর নাম কী?
√ ১. স্রোতম্বিনী
২. পুকুর
৩. সমুদ্র
৪. খাল

ঘ. ফুলের সাথে কে কথা বলে?
√ ১. প্রজাপতি
২. হরিণ
৩. মানুষ
৪. পাখি

ঙ. ফেব্রুয়ারির গান কাদের রক্তে লেখা?
√ ১. ভাইয়ের
২. মামার
৩. বাবার
৪. মানুষের

৬. কর্ম-অনুশীলন।
একুশে ফেব্রুয়ারি সম্বন্ধে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করি।

একুশে ফেব্রুয়ারি

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের আবার দুটি অংশ; একটি পশ্চিম পাকিস্তান, অন্যটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। অথচ পাকিস্তানি শাসকরা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেয়। ফলে বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা ‘মানি না’ ‘মানব না’ বলে প্রতিবাদ করেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের একুশ তারিখে এদেশের ছাত্র-শ্রমিক-কৃষকসহ হাজারো মানুষ সেই প্রতিবাদে রাজপথে নেমে পড়েন। তখন পাকিস্তানি সৈন্যরা নির্মমভাবে গুলি চালায় সেই মিছিলের ওপর। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ অনেকেই সেদিন শহিদ হন। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি শাসকরা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিনটিকে স্মরণ করে আমরা প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ মহান শহিদ দিবস পালন করি। কেননা সেদিনের শহিদ ছেলেদের দান হিসেবেই মাতৃভাষা বাংলা তার আপন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়।

Leave a Comment