(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: আমাদের লোকশিল্প গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

আমাদের লোকশিল্প হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বই এর কামরুল হাসান এর গল্প। আমাদের লোকশিল্প গল্প থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

লেখক-পরিচিতি (Biography)
নাম : কামরুল হাসান
জন্ম : দোসরা ডিসেম্বর, ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ, কলকাতা।
শিক্ষা-
প্রাথমিক শিক্ষা : কলকাতা মডেল স্কুল ও কলকাতা মাদরাসা।
স্নাতক : কলকাতা চারুকলা গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট (১৯৪৭)।
কর্মজীবন/পেশা : অধ্যাপক : ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট;
প্রধান নকশাবিদ : বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ডিজাইন সেন্টার।
সাহিত্যসাধনা : ছবি আঁকার বিচিত্র কলাকৌশল এবং লোকশিল্পের নানা দিক সম্পর্কে তাঁর অসংখ্য লেখা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ‘বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও আমার কথা’ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ।
পুরস্কার ও সম্মাননা : পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, কুমিল্লা ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক, স্বাধীনতা পদক, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা, মাহবুবুল্লাহ ট্রাস্ট স্বর্ণপদক ইত্যাদি।
মৃত্যু : দোসরা ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ, ঢাকা।

পাঠ-পরিচিতি (Summary)
আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধটি ‘আমাদের লোককৃষ্টি’ গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে। লেখক এ প্রবন্ধে বাংলাদেশের লোকশিল্প ও লোক-ঐতিহ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। এ বর্ণনায় লোকশিল্পের প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধের পরিচয় রয়েছে। আমাদের নিত্যব্যবহার্য অধিকাংশ জিনিসই এ কুটিরশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। শিল্পগুণ বিচারে এ ধরনের শিল্পকে লোকশিল্পের মধ্যে গণ্য করা যেতে পারে।
পূর্বে আমাদের দেশে যে সমস্ত লোকশিল্পের দ্রব্য তৈরি হতো তার অনেকগুলোই অত্যন্ত উচ্চমানের ছিল। ঢাকাই মসলিন তার অন্যতম। ঢাকাই মসলিন অধুনা বিলুপ্ত হলেও ঢাকাই জামদানি শাড়ি অনেকাংশে সে স্থান অধিকার করেছে। বর্তমানে জামদানি শাড়ি দেশে-বিদেশে পরিচিত এবং আমাদের গর্বের বস্তু। নকশি কাঁথা আমাদের একটি গ্রামীণ লোকশিল্প। এ শিল্প আজ লুপ্তপ্রায় হলেও এর কিছু কিছু নমুনা পাওয়া যায়। আপন পরিবেশ থেকেই মেয়েরা তাদের মনের মতো করে কাঁথা সেলাইয়ের অনুপ্রেরণা পেতেন। কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক একটি পরিবারের কাহিনি, তাদের পরিবেশ, তাদের জীবনগার্খা ! আমাদের দেশের কুমোরপাড়ার শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ছাড়াও পোড়ামাটি দিয়ে নানা প্রকার শৌখিন দ্রব্য তৈরি করে থাকে। নানা প্রকার পুতুল, মূর্তি ও আধুনিক রুচির ফুলদানি, ছাইদানি, চায়ের সেট ইত্যাদি তারা গড়ে থাকে। খুলনার মাদুর ও সিলেটের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত। আমাদের দেশের এই যে লোকশিল্প তা সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সকলের লোকশিল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারি।

আমাদের লোকশিল্প গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

১. জোহরা বেগম গত কয়েক মাস ধরে একটি কাঁথা সেলাই করছেন। প্রায় প্রতিদিন বিকেলের অবসরে তিনি কাঁথাটি সেলাই করতে বসেন। এসময় পড়শি মহিলারা এসে তার সাথে নানারকম গল্পে মেতে ওঠে। তিনি তাদের সাথে গল্প করেন আর নানা রঙের সুতা দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে কাঁথার গায়ে বিচিত্র নকশা তোলেন।

ক. কোন জেলার কাঠের নৌকা বিখ্যাত।
খ. জামদানি শাড়িকে গর্বের বস্তু বলা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকটি আমাদের লোকশিল্পবপ্রবন্ধের কোনটিকে ইঙ্গিত করে? বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. “উক্ত ইঙ্গিতপূর্ণ দিকটিই আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের একমাত্র দিক নয়”- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বরিশাল জেলার কাঠের নৌকা বিখ্যাত।

খ. লোকশিল্পের প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখার কারণে জামদানি শাড়িকে গর্বের বস্তু বলা হয়েছে।
আমাদের দেশের প্রাচীন লোকশিল্পের অন্তর্গত ঢাকাই মসলিন একসময় দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। বর্তমানে মসলিন বিলুপ্ত হলেও এর ঐতিহ্য ধরে রেখেছে জামদানি শাড়ি। মসলিন যারা বুনত, তাদের বংশধররা জামদানি শাড়িতে মসলিনের শিল্পধারা বহন করে চলেছে। বর্তমান যুগে জামদানি শাড়ি দেশে-বিদেশে পরিচিত। তাই দেশীয় ঐতিহ্যের ধারক জামদানি শাড়িকে গর্বের বস্তু বলা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকটি ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বর্ণিত গ্রামীণ লোকশিল্পের অন্তর্গত নকশিকাঁথাকে ইঙ্গিত করে।
আমাদের গ্রামীণ লোকশিল্পের অন্যতম নকশিকাঁথা। আপন পরিবেশ থেকেই মেয়েরা তাদের মনের মতো করে এ ধরনের কাঁথা সেলাই করার অনুপ্রেরণা পেতেন। এ শিল্পটি আজ লুপ্তপ্রায় হলেও এর কিছু কিছু নমুনা পাওয়া যায়।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, জোহরা বেগম কয়েক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিন বিকেলের অবসরে একটি কাঁথা সেলাই করেন। এ সময় পড়শি মহিলারা এসে তার সাথে নানারকম গল্পে মেতে ওঠে। জোহরা বেগম তাদের সাথে গল্প করেন আর নানা রঙের সুতা দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে কাঁথার গায়ে বিচিত্র নকশা তোলেন। ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে এ ধরনের কাঁথার উল্লেখ রয়েছে, যাকে বলা হয়েছে নকশিকাঁথা। উক্ত প্রবন্ধের বর্ণনা অনুসারে এক একটি নকশিকাঁথা সেলাই করতে কমপক্ষে ছয় মাস লাগত। মেয়েরা সংসারের কাজ শেষ করে এ কাঁথা সেলাই করতে বসতেন। এসময় পড়শিরাও সুযোগ পেলে গল্প করতে আসত। এতে বোঝা যায়, উদ্দীপকটি ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বর্ণিত নকশিকাঁথাকে ইঙ্গিত করে।

ঘ. ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে নকশিকাঁথার বর্ণনা ছাড়াও লোকশিল্পের অন্তর্গত অন্যান্য শিল্পকর্ম সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।
নকশিকাঁথা আমাদের দেশের একটি গ্রামীণ লোকশিল্প। এ শিল্পটি আজ লুপ্তপ্রায় হলেও এর কিছু কিছু নমুনা পাওয়া যায়। ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে লেখক নকশিকাঁথাসহ আবহমান বাংলার বিভিন্ন লোকশিল্পের বর্ণনা তুলে ধরেছেন।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, জোহরা বেগম কয়েক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিন বিকেলের অবসরে একটি কাঁথা সেলাই করতে বসেন। এ সময় পড়শি মহিলারা এসে গল্পে মেতে ওঠে। জোহরা বেগম তাদের সাথে গল্প করেন আর বিভিন্ন রঙের সুতা দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে কাঁথার গায়ে বিচিত্র নকশা তোলেন। ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের বর্ণনা অনুসারে তাঁর কাঁথাটি একটি নকশিকাঁথা। তবে উক্ত প্রবন্ধে নকশিকাঁথার বর্ণনা ছাড়াও মসলিন, জামদানি শাড়ি, খদ্দর, বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ময়েদের তৈরি বস্ত্র, কাঁসা-পিতলের বাসনপত্র, পোড়া মাটির সামগ্রী, কাঠের কাজ, গ্রামের ঘরে তৈরি শিকা, মাদুর ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বস্তুত, ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে আবহমান বাংলার বিভিন্ন লোকশিল্প সম্বন্ধে একটি সামগ্রিক বর্ণনা পাওয়া।
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে লোকশিল্পের যে দিকটির ইঙ্গিত ফুটে উঠেছে, ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের এটিই একমাত্র দিক নয়।

২. রুমানা হক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. পাস করে নিজ গ্রামে একটি হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি হস্তশিল্পের কাজ করেন। এলাকার কিছু মেয়েকে কাজে লাগিয়ে সুচ, সুতা, পুঁতি, পাটের আঁশ ইত্যাদি দিয়ে তিনি তৈরি করান নানা রঙের আকর্ষণীয় জিনিসপত্র।

ক. ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
খ. কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক একটা পরিবারের কাহিনি, তাদের পরিবেশ, তাদের জীবন গাথা- এ কথার দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের রুমানা হকের কাজ ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বর্ণিত যে বিবরণটিকে তুলে ধরে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের রুমানা হক ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের লেখকের প্রত্যাশার ধারক।” —উক্তিটি মূল্যায়ন কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধটি নেওয়া হয়েছে ‘আমাদের লোককৃষ্টি’ গ্রন্থ থেকে।

খ. প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে, কাঁথার নকশায় শিল্পীদের আবেগ তথা সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার চিত্র ফুটিয়ে তোলা। বর্ষাকালে যখন চারদিকে পানি থৈ থৈ করে, ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া যায় না, তখন গ্রামের মেয়েরা কাজকর্ম সেরে পাটি বিছিয়ে নকশি কাঁথায় মনের মাধুরী মিশিয়ে বিচিত্র রকমের নকশা তুলত। এমনিভাবে এক একটি নকশি কাঁথা শেষ হতো কত গল্প, কত হাসি, কত কান্নার মধ্য দিয়ে। কাঁথার নকশাতেও তার ছোঁয়া থাকত। প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের রুমানা হকের কাজে ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বর্ণিত কুটির শিল্পের প্রতি আগ্রহের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে।
আমাদের কুটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য। খাদ্যশস্যের পরেই বাঙালির জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে এই কুটির শিল্প। অতীতে গৃহস্থালির নিত্য ব্যবহার্য পণ্য প্রায়ই এদেশের গ্রাম-বাংলার কুটিরে তৈরি হতো।
উদ্দীপকের রুমানা হক শিক্ষকতার পাশাপাশি সুচ, নানা রঙের সুতা ও পাটের আঁশ দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন। তিনি এলাকার কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে সুচ, সুতা, পুঁতি, পাটের আঁশ প্রভৃতি দিয়ে নানা শখের জিনিস তৈরি করেন। একসময় এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা ছিল। গ্রাম-বাংলার নারীরা কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে হাতের তৈরি এসব সামগ্রী তৈরি করত। এতে অর্থের সংস্থানও হতো। উদ্দীপকের রুমানা হকের কুটির শিল্পের প্রতি – আগ্রহের সাথে এটি সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. “উদ্দীপকের রুমানা হক আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের লেখকের প্রত্যাশার ধারক।”- মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকের রুমানা হকের কুটির শিল্পের প্রতি অপরিসীম আগ্রহ। রয়েছে। তিনি তাই শিক্ষকতার পাশাপাশি গ্রামের মেয়েদের নিয়ে কুটির শিল্পের কাজ করেন। তিনি সুচ, নানান রঙের সুতা, পাটের আঁশ প্রভৃতি মিলিয়ে নানা জিনিস তৈরি করেন।
আমাদের কুটির শিল্পের নানা পণ্য সামগ্রী নিয়ে লেখক আলোচনা করেছেন। যার অনেকগুলোই এখন বিলুপ্ত প্রায়। আমাদের দেশে গ্রাম-গঞ্জে, শহরে-নগরে হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতি আছে। তারা ইচ্ছে করলেই এসব কুটির শিল্পজাত সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এতে আমাদের ঐতিহ্য যেমন রক্ষা পায়, তেমনি মানুষ দারিদ্র্যও বিমোচন করতে পারে।
উদ্দীপকের রুমানা হক কুটির শিল্পের প্রতি অসীম ভালোবাসা নিয়েই গ্রামের আর পাঁচজন মেয়েকে নিয়ে হস্তশিল্পজাত সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করতে পারেন। আর আমাদের লোকশিল্প তার ঐতিহ্য নিয়ে টিকে থাকতে পারে। আলোচ্য প্রবন্ধে লেখকের প্রত্যাশাও তাই।

পড়ুন → এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
পড়ুন → পড়ে পাওয়া গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৩. রুনি গরিব ঘরের মেয়ে হলেও শৈল্পিক মনের অধিকারী। ছোট বেলা থেকেই সে বাঁশ ও বেত দিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করে বিক্রি করত। রুনি এনজিও কর্মীর সহযোগিতায় সংসারের জিনিস ছাড়াও নকশি কাঁথা, হাতের কাজের চাদর, রুমাল ইত্যাদি তৈরি করে মেলায় প্রদর্শন করে। তার নিপুণ হাতের কারুকাজ দেখে দেশি ও বিদেশি দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয়। সে এগুলো বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ পায়।

ক. কুটির শিল্প কী?
খ. ‘নকশি কাঁথা’ তৈরির উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল কেন?
গ. উদ্দীপকে রুনির হস্তশিল্পের সাথে আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বর্ণিত কোন দিকটির মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “আমাদের লোকশিল্প” প্রবন্ধে বর্ণিত বিলুপ্তপ্রায় শিল্পটির জীবন সৌন্দর্য উদ্দীপকে বর্ণিত হস্তশিল্পের অনুরূপ- বিশ্লেষণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে যে জিনিসটি অতি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে তা হলো এখানকার কুটিরশিল্প।

খ. বর্ষাকাল নকশিকাঁথা তৈরির উপযুক্ত সময়। কারণ এ সময় কখনো কখনো সারাদিন বৃষ্টি হয় বলে মেয়েরা এ কাজের জন্য অবসর পায়।
আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধে লেখক বাংলাদেশের লোকশিল্প ও লোক ঐতিহ্য বর্ণনা করেছেন। এখানে এদেশের অন্যতম লোকশিল্প নকশিকাঁথার কথাও বলা হয়েছে। সাধারণত গ্রামবাংলার মেয়েরা এ কাঁথা সেলাই করে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে যখন সারাদিন বৃষ্টি থাকে, চারদিকে পানি থৈ থৈ করে, ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া যায় না তখন মেয়েরা দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে পাটি বিছিয়ে পানের বাটা নিয়ে বসে এ নকশিকাঁথা সেলাই করে।

গ. উদ্দীপকে রুনির হস্তশিল্পের সাথে ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বর্ণিত কুটির শিল্পের মিল রয়েছে; যা শিল্পগুণ বিচারে গ্রামীণ লোকশিল্পের অন্তর্গত।
এদেশের সমৃদ্ধ লোকশিল্প এক সময় গ্রামীণ অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি ছিল। কিন্তু বর্তমানে তার কদর অনেকটাই কমে গেছে। দেশের লোক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে লোকশিল্প সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ তাই অতীব জরুরি।
উদ্দীপকের রুনি শৈল্পিক মনের অধিকারী। সে এনজিও কর্মীর সহযোগিতায় নকশিকাঁথা, হাতের কাজের চাদর, রুমাল ইত্যাদি তৈরি করে মেলায় প্রদর্শন করে। এগুলো কুটির শিল্পের মাধ্যমে তৈরি হলেও তার যথেষ্ট শিল্পগুণ রয়েছে। যে কারণে দেশি- বিদেশি দর্শনার্থীরা সেগুলো দেখে মুগ্ধ হয়। ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধ থেকে আমরা জানতে পারি, আবহমানকাল থেকে এদেশের মানুষের নিত্যব্যবহার্য অধিকাংশ সামগ্রী গ্রামের কুটিরেই তৈরি হতো। এসবের কোনো কোনোটি সেসময় দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছিল। শিল্পীদের কারিগরি দক্ষতার সঙ্গে তাদের শিল্পীমনের ছোঁয়ায় এসব শিল্প অনবদ্য হয়ে উঠেছিল। এসব লোকশিল্পের মধ্যে তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, নকশিকাঁথা, কাঠের কাজ, কাঁসা ও পিতলের তৈজসপত্র, পাট, বাঁশ ও বেতের কাজ উল্লেখযোগ্য। যার সাথে উদ্দীপকের রুনির হস্তশিল্পের মিল লক্ষণীয়।

ঘ. আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধে বর্ণিত বিলুপ্তপ্রায় শিল্পটির জীবন সৌন্দর্য উদ্দীপকে বর্ণিত গ্রামীণ হস্তশিল্পের অনুরূপ। লোকশিল্পে এদেশের শিল্পীদের শিল্পসত্তার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। নানা ধরনের শিল্প-সামগ্রী সৌন্দর্য-বোধ প্রকাশের পাশাপাশি শিল্পীদের দারিদ্র্য ঘোচাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
উদ্দীপকে গ্রামীণ লোকশিল্প-সামগ্রীর পরিচয় বিধৃত হয়েছে। একসময় ঘর-গৃহস্তের নিত্যব্যবহার্য প্রায় সব সামগ্রীই এদেশের কুটিরে তৈরি হতো। আজও অনেক কিছুই হয়। এগুলো হলো নকশিকাঁথা, চাদর, রুমাল ইত্যাদি। এসব কুটির শিল্পের মাধ্যমে তৈরি হলেও শিল্পগুণ বিচারে এ ধরনের সামগ্রী লোকশিল্পের মধ্যে গণ্য। কারণ এগুলোর কারুকাজ দেখে দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয় এবং বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ পায়।
আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক এদেশের সমৃদ্ধ লোকশিল্পের কথা বলতে গিয়ে এর বিভিন্ন দিকের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে একসময় লোকশিল্পের ব্যাপক প্রচলন ছিল। সেসময় গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীর অধিকাংশই এদেশের গ্রামবাংলার কুটিরে তৈরি হতো। গ্রামীণ লোকশিল্প তাই বাঙালির জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। আর এসবের মধ্যে তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, নকশিকাঁথা, কাঠের কাজ, কাঁসা ও পিতলের তৈজসপত্র, পাট, বাঁশ ও বেতের কাজ ছিল অন্যতম। সুতরাং প্রবন্ধে বর্ণিত বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ শিল্পটির জীবন সৌন্দর্য উদ্দীপকে বর্ণিত হস্তশিল্পের অনুরূপ।

৪. তাঁত শিল্পের একসময় খুবই কদর ছিল। বর্তমানে নামিদামি গার্মেন্টস হওয়ায় তাঁত শিল্পের গুরুত্ব কমে গেছে। কিন্তু একসময় দেশ-বিদেশেও জামদানি শাড়ি শুধু পরিচিতই নয়, গর্বের বস্তু ছিল। জামদানির সুনাম ধরে রাখার জন্য নতুনভাবে আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে।

ক. সিলেট জেলায় কী পাওয়া যায়?
খ. বর্ষাকাল নকশি কাঁথা তৈরির উপযুক্ত সময় কেন?
গ. তাঁত শিল্পের গুরুত্ব কমে যাওয়ার কারণ উদ্দীপক ও ‘আমাদের লোকশিল্প’ রচনাটির আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আমাদের লোকশিল্পের সুনাম ফিরিয়ে আনার জন্য কী করা উচিত? ‘আমাদের লোকশিল্প ও উদ্দীপকের আলোকে মতামত দাও।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. সিলেট জেলায় শীতলপাটি পাওয়া যায়।

খ. বর্ষাকালে যখন চারদিকে পানি থৈ থৈ করে এমন সময় গ্রামের মেয়েদের সংসারে কাজকর্ম কম থাকে বলে তা নকশি কাঁথা তৈরির উপযুক্ত সময়।
নকশি কাঁথা আমাদের একটি গ্রামীণ লোকশিল্প। একসময় আমাদের গ্রামীণ সমাজে সর্বত্র নকশি কাঁথার প্রচলন ছিল। বর্ষাকালে যখন চারদিকে পানি থৈ থৈ করে, ঘর থেকে বের হওয়া যায় না, এমন সময় গ্রামের মেয়েরা শৌখিন কাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত থাকত। একটি সাধারণ মানের নকশি কাঁথা সেলাই করতে কমপক্ষে তাদের ছয় মাস লাগত। এ নকশি কাঁথার মধ্য দিয়ে গ্রাম্য মেয়েরা গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করত। বর্ষাকাল আসলেই বর্ষণমুখর দিনের অবসরে গ্রামের ঘরে ঘরে নকশি কাঁথা তৈরির উৎসব চলত।

গ. আমাদের তাঁতশিল্পের গুরুত্ব কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো যন্ত্র সভ্যতার উন্নতি। বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্পের প্রসার ঘটায় আমাদের তাঁত শিল্প তথা কুটির শিল্পের নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
উদ্দীপকে আমাদের তাঁত শিল্পের অতীত গৌরবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের তাঁত শিল্প একসময় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইংল্যান্ড, আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ঢাকাই মসলিন সারা দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের প্রিয় সামগ্রী ছিল। মসলিন কাপড় মোগল বাদশাহদের বিলাসিতার বস্তু ছিল। মসলিন কাপড় এত সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে বোনা হতো যে, ছোট একটি আংটির ভেতর দিয়ে অনায়াসে কয়েকশ গজ মসলিন কাপড় প্রবেশ করানো যেত। মসলিন কাপড়ের এ গৌরব এখন আর নেই। নামিদামি গার্মেন্টস হওয়ায় এ শিল্পের গুরুত্ব কমে গেছে। তবে জামদানি শাড়ির কদর এখনো বর্তমান।
আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধে লেখক আমাদের লোকশিল্পের অতীত গৌরবের কথা তুলে ধরেছেন। একসময় ঘর-গৃহস্থালির নিত্য ব্যবহারের প্রায় সব পণ্যই আমাদের কুটিরে তৈরি হতো। শাড়ি, লুঙ্গি, চাদর, বিছানার চাদর, নকশি কাঁথা, কাঁথা, লেপ, তোষক, বিছানা পত্র, মাটির তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, থালা, বাসন, শীতল পাটি, মাটির তৈরি পুতুল, নানা রকম খেলনা, পাটের তৈরি শিকা, দড়ি, তামা-পিতলের ঘড়া, থালা, ফুলদানি, পোড়া মাটির কলস, সানকি, দইয়ের ভাঁড়, রসের ভাও প্রভৃতি সবই এদেশের কুটিরে তৈরি হতো। যন্ত্র সভ্যতার করালগ্রাসে এগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। এগুলোর মধ্যে জামদানি শাড়ির কদর এখনো বিদ্যমান আছে। উপসংহারে আমরা বলতে পারি, যন্ত্রশিল্পের উন্নতির ফলে আমাদের তাঁত শিল্প তথা কুটির শিল্পের গুরুত্ব কমে গেছে।

ঘ. আমাদের লোকশিল্পের সুনাম ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে।
একসময় বাংলাদেশের লোকশিল্পের জগৎজোড়া সুনাম ছিল। ঘর- গৃহস্থালির নিত্য ব্যবহারের প্রায় সব পণ্যই গ্রামের কুটিরে প্রস্তুত হতো। ঢাকাই মসলিন কাপড় মোগল বাদশাহদের বিলাসের বস্তু ছিল। এগুলোর শিল্পমান খুবই উন্নত ছিল। তাই বিশ্বজোড়া খ্যাতি ছিল। নিপুণ হাতের সূক্ষ্ম কারুকাজ করা ঢাকাই মসলিন এখন না থাকলেও যারা বুনত তাদের বংশধররা এখনো জামদানি শাড়ি তৈরি করছে, যারা দেশে-বিদেশে এখনো বর্তমান। এ শাড়ি আমাদের গর্বের বস্তু।
যান্ত্রিক সভ্যতার কারণে আমাদের কুটির শিল্পের নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য আমাদের দেশের কুটির শিল্পের কারিগররা দিন দিন গরিব হচ্ছে। তাদের হাতের তৈরি জিনিসপত্র এখন আর তেমন বিক্রি হয় না। তাছাড়া জিনিসপত্রের অত্যধিক দাম বেড়ে যাওয়ায় কারিগররা কুটির শিল্প পণ্য তৈরি করতে পারছে না। এজন্য সরকারের উচিত এদের আর্থিক অনুদান দেওয়া। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে উন্নত পণ্য তৈরি করতে হবে। দামের দিকটি বিবেচনায় রাখতে হবে। ক্রেতারা চায় ভালো জিনিস কম দামে কিনতে। তাই ভালো জিনিস তৈরি করতে হবে। সুপরিকল্পিত উপায়ে এবং সুরুচিসম্পন্ন দ্রব্য-সামগ্রী তৈরি করতে হবে। সূক্ষ্ম, সুন্দর ও সুনিপুণ কারুকাজ দ্বারা লোকশিল্পকে সাজাতে হবে, তৈরি করতে হবে। তা হলে আমাদের লোকশিল্পের বাজার সৃষ্টি হবে এবং অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
একসময় বাংলাদেশের লোকশিল্পের দুনিয়াজোড়া খ্যাতি ছিল। তখন কুটির শিল্পের কারিগররা কারিগরি দক্ষতায় অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। তারা মনের মাধুরী মিশিয়ে নানা রকম কুটির শিল্প তৈরি করতেন। ঘর-গৃহস্থালির প্রায় যাবতীয় পণ্য তারা তৈরি করতেন। মসলিন কাপড় এর মধ্যে অন্যতম। মসলিন কাপড় এত সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে বোনা হতো যে, একটি ছোট আংটির মধ্য দিয়ে অনায়াসে কয়েকশ গঞ্জ মসলিন কাপড় ঢুকিয়ে দেওয়া যেত। এছাড়া নকশি কাঁথা, পোড়া মাটির তৈরি কলস, হাঁড়ি, পাতিল, বাসন-কোসন, ফুলদানি, মিষ্টির ভাণ্ড, খেলনা কত কিছুই না কুটিরে তৈরি হতো। এগুলোকে নতুন করে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে হবে। এগুলোর সংরক্ষণ ও প্রসারে সরকারসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে আবার আমরা লোকশিল্পের গৌরব ফিরে পাবো।

৫. কাদেরের বিয়ের দিন তার বোন ফাইজা একটি সোনালি রঙের চকচকে কলস উপহার দেয়। যার গায়ে কাদেরের নাম ও পলাশ ফুলের ছবি অঙ্কিত ছিল। আগত অতিথিরা এই উপহার দেখে মুচকি হাসাহাসি করে। কিন্তু ফাইজার মনে কোনো হীনমন্যতা নেই। বরং এই উপহার নিয়ে সে গর্ববোধ করে। ফাইজা বিশ্বাস করে, তার দেখাদেখি অনেকেই আমাদের এই ঐতিহ্য বহনকারী শিল্পটি ব্যবহার করতে শিখবে।

ক. কুমিল্লার কোন লোকশিল্পটি সকলের কাছে পরিচিত?
খ. বর্তমানে বড় বড় কাপড়ের কারখানাগুলো শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে উঠেছে কেন?
গ. আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বর্ণিত কোন শিল্পের বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ফাইজার মানসিকতা আমাদের লোকশিল্পের ঐতিহ্য সংরক্ষণে লেখকের মানসিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিশ্লেষণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. কুমিল্লায় প্রস্তুত খাদি ও খদ্দর সকলের কাছে পরিচিত।

খ. শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী আবহাওয়া কাপড় তৈরির জন্য বিশেষ উপযোগী বলেই বর্তমানে বড় বড় কাপড়ের কারখানাগুলো এ নদীর তীরে গড়ে উঠেছে।
প্রাচীনকাল থেকেই এদেশের কাপড়শিল্পের একটা বড় অংশ শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছে। কারণ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে যে, শীতলক্ষ্যা নদীর পানির বাষ্প থেকে যে আর্দ্রতার সৃষ্টি হয় তা কাপড় তৈরির জন্য বিশেষ উপযোগী। আর এজন্যই বর্তমানে বড় অনেক কাপড়ের কল এ নদীর তীরে গড়ে উঠেছে।

গ. উদ্দীপকটি ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে বর্ণিত দুর্লভ লোকশিল্পের ঐতিহ্যকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশের লোকশিল্প সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই সমৃদ্ধ। এদেশের মানুষ প্রয়োজনে ও শখের বশে নানা হস্তজাত পণ্য তৈরি করে আসছে। যার অন্যতম হচ্ছে মাটির কলস, হাঁড়ি, পাতিল ইত্যাদি বর্তমানে এসব জিনিসের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে আসছে। উদ্দীপকে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
মাটি ও পিতলের তৈরি জিনিসের মূল্যায়ন ও জনপ্রিয়তা দিন দিন কমে আসছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষ এখন মেলামাইন কিংবা প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করছে। কিন্তু উদ্দীপকে ফাইজা বিয়ের উপহার হিসেবে সোনালি রঙ্গের চকচকে কলস উপহার হিসেবে দেন। এতে আমাদের লোকশিল্পের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। একই সঙ্গে তার এ উদ্যোগ আমাদের বিলুপ্ত প্রায় লোকশিল্পকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করেছে।

ঘ. ফাইজার মানসিকতা আমাদের লোকশিল্পের ঐতিহ্য সংরক্ষণে লেখকের মানসিকতার সঙ্গে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক লোকশিল্পের নানা দিকের পরিচয় তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি এই লোকশিল্পের সংরক্ষণ ও প্রসারের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, যা উদ্দীপকের ফাইজার মানসিকতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
লোকশিল্প আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রাণের সম্পদ। লোকশিল্পের বর্তমান অবস্থা বেশ নাজুক ও সময়ের পরিবর্তনে এটি বিলুপ্তপ্রায়। যেমন পিতলের তৈরি জিনিসপত্র এখন গৃহস্থালি কাজে তেমন একটা ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু বিশ্বের দরবারে ঐতিহ্যের পরিচিতি হতে পারে এসব লোকশিল্প।
উদ্দীপকের ফাইজা উপস্থিত সকলের উপহাসকে উপেক্ষা করেও পিতলের কলস উপহার দিয়ে লোকশিল্পের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করেছে। লোক ঐতিহ্য সংরক্ষণে এমন উদ্যোগের কথাই লেখক বলেছেন ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে। উদ্দীপকের ফাইজার মানসিকতা ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধের লেখকের মানসিকতার সাথে পুরাপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

Leave a Comment