(বাংলা) SSC: একাত্তরের দিনগুলি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

একাত্তরের দিনগুলি হচ্ছে মাধ্যমিক অর্থাৎ নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বই এর জাহানারা ইমামের স্মৃতিচারণমূলক রচনা। একাত্তরের দিনগুলি গল্প থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

একাত্তরের দিনগুলি গল্পের সৃজনশীল

১. স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশি।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শাণিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।

ক. ‘বিরান’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. রুমীর আদর্শের অপমান’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার একটি বিশেষ দিককে প্রতিফলিত করলেও সম্পূর্ণ ভাবের ধারক হয়ে উঠতে পারেনি।” বিশ্লেষণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘বিরান’ শব্দটির অর্থ জনমানবহীন, পরিত্যক্ত, ফাঁকা।

খ. ‘রুমীর আদর্শের অপমান’ বলতে যাদের বিরুদ্ধে রুমীর আন্দোলন তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া মানে রুমীর আদর্শকে অপমান করাকে বোঝানো হয়েছে।

রুমী এক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। দেশকে ভালোবেসে সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে সে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বন্দি হয়েছে। তখন তাকে ছাড়িয়ে আনতে তার পিতা-মাতাকে সবাই ‘মার্সি পিটিশন’ করতে বলে। তখন তার পিতা মনে করেন খুনি পাকিস্তানি সরকারের কাছে রুমীর প্রাণভিক্ষা চাওয়া মানে রুমীর আদর্শকে অপমান করা।

গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় বর্ণিত স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণের দিকটি ফুটে উঠেছে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির ওপর নির্মম: হত্যাযজ্ঞ চালায়। মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট সবকিছুতে তারা আগুন লাগিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করে।

উদ্দীপকে স্বাধীনতার স্বরূপ আলোচিত হয়েছে। মঞ্জুর যুবার দক্ষ বাহু, মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক, মেধাবী শিক্ষার্থীর সতেজ ভাষণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে কবি স্বাধীনতার স্বরূপ খুঁজতে চেয়েছেন। উদ্দীপকের ভাবার্থে স্বাধীনতার জন্য সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের বিষয়টিও প্রতিফলিত হয়েছে। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায়ও মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত একাত্মতার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনে মুক্তিবাহিনীর স্বপ্ন চিত্রিত হয়েছে। বল যায়, সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততার দিকটি ‘একাত্তরের দিনগুলি!! রচনার পাশাপাশি উদ্দীপকেও ফুটে উঠেছে।

ঘ. না, উদ্দীপকটি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার সমগ্র ভাব ধারণ করে না।

পরাধীনতার শেকল থেকে বাংলার মানুষ এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে মধ্য দিয়ে মুক্তি পেয়েছে। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির গর্ব।

‘একাত্তরের দিনগুলি’ দিনপঞ্জির আকারে রচিত মুক্তিযুদ্ধেনা স্মৃতিচারণমূলক রচনা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার চিত্র মানুষের আর্তনাদ, মৃত্যু, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি এ রচনায় বর্ণিত হয়েছে সেই সময়ে স্কুল-কলেজের অবস্থা, লেখিকার আত্মত্যাগ মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ-বেদনা, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা ইত্যাদি আলোচ্য স্মৃতিচারণমূলক রচনায় উপস্থাপিত হয়েছে। উদ্দীপকের চরণগুলোতে স্বাধীনতার স্বরূপ বিশ্লেষিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। স্বাধীনতার স্বাপ্নে বাঙালির মহত্ত্বের চিত্র প্রতীকায়িত হয়েছে।

উদ্দীপকে স্বাধীনতার স্বরূপ উপস্থাপিত হয়েছে, যা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে উদ্দীপকের এ বিষয়টি ছাডড়াও ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন অবস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ, শত্রুকে পরাজিত করা, আত্মদান ইত্যাদি বিষয়ও প্রসঙ্গ উপস্থাপিত হয়েছে। এদিক বিচারে তাই বল যায়, উদ্দীপকটি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার সমগ্র ভাব ধারণ করে না।

২. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন সাংকেতিক অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো। যেগুলোর মধ্যে থাকত গণসংগীত, কথিকা, নাটক ইত্যাদি। কখন কোথায় কোন অভিয চলবে তার নির্দেশনা থাকত এসব অনুষ্ঠানের ভেতরেই। তবে শিল্পী প্রায়ই ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।

ক. গোয়েবলস্ কেন আলোচিত?
খ. ভয়টা আসলে মনে। ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘একাত্তরের দিনগুলি‘ রচনার মিল কোথায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মুক্তিযুদ্ধ শুধু অস্ত্রে নয়, কলমেও হয়েছে।’ এই মত কতটুকু সমর্থনযোগ্য? উদ্দীপক ও ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. রাজনীতিতে প্রতিহিংসা ও মিথ্যা রটনার জন্যে গোয়েবলস্ আলোচিত।

খ. আলোচ্য উক্তিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষের মনের আতঙ্কেরী দিকটি বোঝানো হয়েছে।

‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় মুক্তিযুদ্ধে বিভীষিকাময় দিনগুলোয় কথা ফুটে উঠেছে। সেই সময় মানুষের মনে আতঙ্ক প্রচণ্ডভাগে ছড়িয়ে পড়েছিল। মানুষ যে স্থান ছেড়ে নিরাপত্তার জন্য অন্য কোথাও যাচ্ছে, সেই একই স্থানে আবার অন্য জায়গা থেকে মানুষ চলে আসছে নিরাপত্তার জন্য। এক স্থানের মানুষ অন্য স্থানকে নিরাপদ মনে করছে, আবার সেই স্থানের মানুষ নিরাপত্তার জন্য ছুটে চলেছে অন্যত্র। আসলে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের বর্বরতা এদেশে। মানুষের মনে একধরনের তীব্র ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। এনা প্রেক্ষাপটেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার এদেশের শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের অবদানের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে।

শিল্প ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে একটি দেশের জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে জড়িত ব্যক্তিরা অন্যকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শেখান। তাছাড়া জাতীয় স্বার্থে মানুষদেশী ঐক্যবদ্ধ করতেও তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

উদ্দীপকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীদের অবদান তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ধরনের সাংকেতিক অনুষ্ঠান প্রচার করা হতো। সেসব অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল গণসংগীত, কথিকা, নাটক প্রভৃতি। মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় কোন অভিযান চলবে তার নির্দেশনাও থাকত ঐসব অনুষ্ঠানের ভেতরেই। শিল্পীদের গান মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্ত ক্লান্তি মুছে দিয়ে নতুন উদ্যমে যুদ্ধ করতে অনুপ্রাণিত করত।

অন্যদিকে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় দেখা যায়, লেখিকার চেনা মুখগুলো ছদ্মনামে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সংবাদ, গান, নাটিকাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতে চরমপত্র প্রচার করছে। হানাদার বাহিনী এদেশের বুদ্ধিজীবীদের স্বাধীনতার বিপক্ষে বিবৃতি দেওয়ার জন্য জোর করেছে। এভাবে উদ্দীপকে ও ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের অবদানের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে।

ঘ. মুক্তিযুদ্ধ শুধু অস্ত্রে নয়, কলমেও হয়েছে। উদ্দীপক ও ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার আলোকে উক্তিটি যথার্থ।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। মানুষের ঘর-বাড়ি, দোকানপাট সবকিছুতে তারা আগুন লাগিয়ে দেয়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পর তারা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় রেডিয়োশিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের অবদানের কথা বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা লেখিকা তাঁর রচনার মধ্য দিয়ে উপস্থাপন করেছেন। লেখিকা ও তাঁর পরিবারের সবাই স্বাধীন বাংলা বেতারে পঠিত সংবাদ নিয়মিত শুনতেন এবং তাঁরা এই সংবাদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ও মুক্তিফৌজদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারতেন। শুধু তাই নয়, কথিকা বা চরমপত্রের মধ্য দিয়ে পাঠকগণ বাংলার মানুষদের উদ্বুদ্ধ করতেন। উদ্দীপকেও আমরা দেখি, মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। যেসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কখন কোথায় কোন অভিযান চালানো হবে তার নির্দেশনাও দেওয়া হতো।

উদ্দীপক ও আলোচ্য রচনা উভয় জায়গায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং শিল্পীদের অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। মূলত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করার পাশাপাশি এদেশের শিল্পী-সাহিত্যিকরাও তাদের কাজের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

৩. স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশি।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শাণিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।

ক. ‘মার্সি পিটিশন’ অর্থ কী?
খ. লেখিকা অবরুদ্ধ নিষ্ক্রিয়তা বলতে কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে তা উপস্থাপন কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার সমগ্র ভাবকে ধারণ করেছে কি? এ সম্বন্ধে তোমার মতামত ব্যক্ত কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘মার্সি পিটিশন’ অর্থ হলো শান্তি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন।

খ. লেখিকা অবরুদ্ধ নিষ্ক্রিয়তা বলতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শ্বাসরুদ্ধকর সময়কে বুঝিয়েছেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এদেশের মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার চালায়। তাদের নির্যাতনে অচল হয়ে পড়ে দেশ। এদেশের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত খোলা থাকলেও বাইরে বের পরিস্থিতি ছিল না। লেখিকার ছোট ছেলে জামীর স্কুল থাকলেও এসময় স্কুলে যাওয়া ঠিক হবে না বলে জামীকে স্কুলে পাঠানো হয় না। চারপাশের অবরুদ্ধ পরিবেশে জামী ও তার ব হাঁপিয়ে উঠেছিল। ঘরে অববৃদ্ধ অবস্থায় বসে কাটানোকেই লেডি অবরুদ্ধ নিষ্ক্রিয়তা বলেছেন।

গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় বা স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের দিকটি ফুটে উঠেছে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট সবকিছুতে আম আগুন লাগিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তারা নতি স্বীকার করে।

উদ্দীপকে স্বাধীনতার স্বরূপ উল্লেখ করা হয়েছে। মঞ্জুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহু, মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক, মেধাবী শিক্ষা সতেজ ভাষণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে কবি স্বাধীনতার স্বরূপ খুঁজতে চেয়েছেন। উদ্দীপকের ভাবার্থে স্বাধীনতার জন্য সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের বিষয়টিও প্রতিফলিত হয়েছে। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায়ও মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত একাত্মতার বিষয় বর্ণিত হয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনে মুক্তিবাহিনীর স্বপ্ন চিত্রিত হয়েছে। বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, নাট্যকার, সংবাদপাঠকসহ সর্বস্তরের মানুষ যে যার অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। হানাদার বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করতে মুক্তিফৌজের গেরিলা আক্রমণ পরিচালিত হয়ে চতুর্দিক থেকে। তাই বলা যায়, সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত দিকটি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার পাশাপাশি উদ্দীপকেও উঠেছে।

ঘ. না, উদ্দীপকটি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার সমগ্র ভাব করে না।

পরাধীনতার শেকল থেকে বাংলার মানুষ এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধো মধ্য দিয়ে মুক্তি পেয়েছে। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির গর্ব।

‘একাত্তরের দিনগুলি’ জাহানারা ইমামের দিনপঞ্জির আকারে রচিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক রচনা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিন বর্বরতার চিত্র, মানুষের আর্তনাদ, মৃত্যু, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি এ রচনা বর্ণিত হয়েছে। সেই সময়ে স্কুল-কলেজের অবস্থা, লেখিকার আত্মত্যাগ, মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ-বেদনা, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের ভূমিকা ইত্যাদি আলোচ্য স্মৃতিচারণমূলক রচনায় উপস্থাপিত হয়েছে উদ্দীপকের চরণগুলোতে স্বাধীনতার স্বরূপ বিশ্লেষিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে স্বাধীনতার স্বপ্নে বাঙালির মহত্ত্বের চিত্র প্রতীকায়িত হয়েছে। উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে সারচিত্র আর ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় দিন পাঠানো আকারে নির্দিষ্ট চিত্র। এদিক থেকেও উদ্দীপকটি সমগ্র রচনার ভাবনা ধারণ করছে না।

উদ্দীপকে স্বাধীনতার স্বরূপ উপস্থাপিত হয়েছে যা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। উদ্দীপকে প্রতিফলিত বিষয় ছাড়াও ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন অবস্থা ও প্রসঙ্গ উপস্থাপিত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার সমগ্র ভাব ধারণ করে না।

৪. কোভিড-১৯-এর কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শামসি তার লেখাপড়া নিয়ে খুব চিন্তিত। কিন্তু যখন সরকার বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে শ্রেণিভিত্তিক ক্লাস প্রচার শুরু করে তখন শামসি সেই ক্লাস দেখেই পড়ালেখা করে। অপরদিকে এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ায় বহু লোক কর্মহীন হয়ে পড়ে। তারা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হয়।

ক. কত তারিখে ৫৫ জন বুদ্ধিজীবীর নামে বিবৃতি ছাপা হয়?
খ. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন কেন?
গ. উদ্দীপকের শামসি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার মানুষের গৃহত্যাগ এবং উদ্দীপকের মানুষের শহর ত্যাগের কারণ ভিন্ন বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ১৯৭১ সালের ১৭ই মে ৫৫ জন বুদ্ধিজীবীর নামে বিবৃতি ছাপা হয়।

খ. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।

‘একাত্তরের দিনগুলি’ শহিদ জননী জাহানারা ইমামের স্মৃতিচারণমূলক রচনা। এখানে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের ছদ্মনামে অনুষ্ঠান পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। সেখানে শিল্পী-কলাকুশলীদের ছদ্মনাম ব্যবহারের বিষয়টি লক্ষ করা যায়। পাকিস্তানি হানাদার এবং তাদের দোসররা যাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের চিনতে না পারে সেজন্য তারা ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।

গ. উদ্দীপকের শামসি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার জামী চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাত থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলার নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষের ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে। অন্যদিকে স্কুল-কলেজ খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন শুরু করে। দেশের যুদ্ধাবস্থার মধ্যে শিক্ষার্থীরা স্কুলে না গিয়ে ঘরে বসেই শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে।

উদ্দীপকে বৈশ্বিক মহামারীর কারণে শিক্ষা কার্যক্রমের ধারা। পরিবর্তন এবং তাতে শিক্ষার্থীদের সাড়াদানের বিষয়টি তুলে ধর হয়েছে। এখানে শামসি কোভিড ১৯-এর কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় তার লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। পরে সরকার যখন বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে শ্রেণিভিত্তিক ক্লাস প্রচার করে তখন সে সেই সুযোগ গ্রহণ করে এবং নিজের লেখাপড়ার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠে।

তারা এই বিকল্প পন্থায় শিক্ষালাভের তথা লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার জামী চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ কারণ জামিও যুদ্ধকালীন স্কুলে না গিয়ে তার দু-তিনজন বন্ধু মিলে একসঙ্গে বসে আলোচনা করে বাড়িতেই পড়াশোনা করার কথা ভাবে। সেই সঙ্গে মা, বাবা এবং বড় ভাই রুমীর কাছে স্কুলের পড়া চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জামী। এভাবে উদ্দীপকের শাময় চরিত্রটি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার জামী চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার মানুষের গৃহত্যাগ এবং উদ্দীপকের মানুষের শহর ত্যাগের কারণ ভিন্ন- মন্তব্যটি যথার্থ।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন এ দেশের মানুষকে তাদের নাই অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখে। ১৯৭১ সালে তারা নির্মম হত্যাকাণ্ড চালিয়ে এদেশের মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে মুছে দিতে চায়। কিন্তু তারা তা পারেনি। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অবশেষে দেশকে স্বাধীন করে।

উদ্দীপকে বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর ফলে জনজী নেতিবাচক প্রভাবের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। কোভিড-১৯ কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ার ফলে কর্মহীন মানুষজন শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হয়। উদ্দীপকের মানুষের এই শহর ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সঙ্গে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় প্রতিফলিত মানুষের গৃহত্যাগে মিল নেই। কারণ তখন মানুষ কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফিরে যায়নি। তখন আত্মরক্ষার জন্য মানুষ পালিয়ে বেড়িয়েছে। কারণ পাকিস্তানি হানাদ বাহিনী প্রথমে শহরে আক্রমণ করে নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু করেছিল।

‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় লেখিকা ১৯৭১ সালের মুক্তি চলাকালীন কিছু ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন। এতে পাকিস্ত মিলিটারির গুলিতে এ দেশের নিরীহ মানুষজনের নির্মম মৃত্যুর দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। তখন শহরের এখানে সেখানে মানুষের লাশ পড়ে থাকত। গুলিতে মরা মানুষের লাশ নদীতে ভেসে যেত। লাশের গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠত। এই বিভীষিকাময় সময়ে মানুষ গৃহত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয়ে আত্মরক্ষার জন্য ছুটে বেড়িয়েছে। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার মানুষের এই ছুটে বেড়ানো আর উদ্দীপকের শহর ত্যাগ করে মানুষের গ্রামে চলে যাওয়ার বিষয়টি তাই ভিন্ন। এসব দিনে বিচারে তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

আরো পড়োপ্রবাস বন্ধু গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়োমমতাদি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৫. তোমার ছেলে আসল ফিরে
হাজার ছেলে হয়ে
আর কেঁদো না মা; কেননা
মা তো কাঁদে না,
মার চোখে নেই অশ্রু, কেবল
অনলজ্বালা, দু চোখে তার
শত্রুহননের আহ্বান।

ক. আলটিমেটাম শব্দের অর্থ কী?
খ. জামী স্কুলে যাবে না কেন?
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে— উপস্থাপন কর।
ঘ. উদ্দীপকের ছেলে ও ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার রুমীর মতো তরুণদের অদম্য চেতনাই আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. আলটিমেটাম শব্দের অর্থ চূড়ান্ত সময় নির্ধারণ।

খ. দেশে যুদ্ধাবস্থা, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ এবং জোর করে স্কুল খোলা রাখার কারণে পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামী স্কুলে যাবে না।

যুদ্ধের কারণে দেশের কোনো কিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে না। পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সরকার যুদ্ধের মাঝেও ভুল খোলা রাখার হুকুম জারি করে। দশম শ্রেণির ছাত্র জামী, তার মা লেখিকা, বাবা শরীফ এবং বড় ভাই রুমী চারজনে বসে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, স্কুল খুললেও জামী স্কুলে যাবে না। কারণ দেশজুড়ে তখন অস্থির পরিবেশ, যুদ্ধ চলছে। দেশবাসীর ওপর হানাদার বাহিনী নির্মম অত্যাচার করছে। এই অবস্থায় কোনো ছাত্রের উচিত নয় বই-খাতা বগলে স্কুলে যাওয়া। মূলত এসব কারণে স্কুল খুললেও জামী স্কুলে যাবে না।

গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার মুক্তিবাহিনীর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ চেতনার দিকটি ফুটে উঠেছে।

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির অহংকার। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ দেশের সাধারণ মানুষের ওপর নির্মম দমন-পীড়ন চালাতে থাকে। তাদের সেই অন্যায় শাসন-শোষণের প্রতিবাদে এ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ায়। তারা জীবন বাজি রেখে শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে অবশেষে স্বাধীনতা অর্জন করে।

উদ্দীপকের কবিতাংশে বলা হয়েছে, বাংলার মানুষের অধিকার আদায় করতে জীবন উৎসর্গকারী ছেলে সংগ্রামী চেতনা হয়ে, বাংলার অন্য সব দামাল ছেলে হয়ে ফিরে আসে। মায়ের সেই ছেলেটি মাকে তাই কাঁদতে মানা করে, মাকে প্রতিশোধের আগুন জ্বালাতে বলে। মায়ের চোখে তাই অশ্রু নেই, তার চোখে প্রতিশোধস্পৃহা। তার ছেলে আজ হাজার ছেলের চেতনা হয়ে শত্রুনিধনের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত। উদ্দীপকের এই সংগ্রামী চেতনা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার মুক্তিবাহিনীর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ চেতনার দিকটিকে নির্দেশ করেছে। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় লেখিকা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন।

এতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিহত করেছেন। এদেশের শিল্পী, কলাকুশলীরা নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা মূলত তাদের পূর্বসূরিদের আত্মত্যাগের চেতনাকে বুকে ধারণ করে শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেন। উদ্দীপকেও অনুরূপভাবে চেতনা হয়ে মায়ের এক ছেলে হাজার ছেলে হয়ে ফিরে এসেছে। সেই যুদ্ধে লেখিকার আদরের সন্তান রুমী হারিয়ে যায়। এরূপ সন্তান হারা মার্কে সান্ত্বনা দিতে উদ্দীপকের ছেলে মায়ের শোক শক্তিতে পরিণত করার চেষ্টায় রত।

ঘ. “উদ্দীপকের ছেলে ও ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার রুমীর মতো তরুণদের অদম্য চেতনাই আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।” মন্তব্যটি যথার্থ।

অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশেই স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল। তাদের সেই স্বপ্ন বাঙালি সফল হতে দেয়নি। বাঙালিরা তাদের অতীতের সংগ্রা চেতনাকে বুকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে শত্রুকে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

উদ্দীপকের কবিতাংশের ছেলে সংগ্রামী চেতনার প্রতীক। সে নিজে সংগ্রামী চেতনা হাজার ছেলের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে। তাই তার ছেলের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে শত্রুহননের জন্য সোচ্চার। উদ্দীপকের ছেলের সেই সংগ্রামী চেতনার আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে যেন

‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার লেখিকার ছেলে রুমীর মধ্যে। রুমী এখানে একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। রুমী উদ্দীপকের মায়ের ছেলের চেতনা বহনকারী হাজার ছেলের অন্যতম একজন। তার মতো তরুণদের ঐক্যবদ্ধ জাগরণ এবং পূর্বসূরিদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে চলার ফলেই এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।

‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার লেখিকার বড় ছেলে রুমী দেশমাতৃকার চরম দুর্যোগে প্রাণ বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। ঢাকাকে শত্রুমুক্ত করতে রুমীর মতো হাজারো তরুণ শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় শত্রুনিধনের একপর্যায়ে রুমী পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে ধরা পড়ে এবং আত্মক্ষার জন্য সুযোগ না নিয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে। এই রুমীর মতো তরুণরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, যেমন করে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে উদ্দীপকে মায়ের ছেলেটি। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।