(জীবন ও জীবিকা) ৬ষ্ঠ: কুকিং – সমাধান

কুকিং হচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর জীবন ও জীবিকা বই এর ৭ম অধ্যায়। কুকিং অধ্যায়টির পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

কুকিং – সমাধান

অ্যাক্টিভিটি ১: এসো ভেবে দেখি
সম্ভাব্য উপকরণ:
চুলা, চাল, কাপ, ঢাকনাসহ হাড়ি, ধরনি, চামচ, খুন্তি ইত্যাদি।

নির্দেশনা: ভাত রান্না শেখার পর এবার একটু গভীরভাবে চিন্তা করো। পাঠ্যবইয়ে কিছু প্রশ্ন দেওয়া আছে। ভেবে চিন্তে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। এবার তোমার উত্তরের সাথে নমুনা উত্তরগুলো মিলিয়ে নাও।

প্রশ্ন-ক. চাল ৩ বার ধোয়ার পরও কি আরও ধোয়ার প্রয়োজন ছিল?
নমুনা উত্তর:
চাল ৩ বার ধোয়ার পর যদি পরিষ্কার হয়ে যায়, আর ধোয়ার প্রয়োজন নেই। আমি চাল ৩ বার ধোয়ার পর দেখলাম পানি ঘোলাটে। তাই আরও ২ বার চাল ধুয়ে ছিলাম।

প্রশ্ন-খ. ভাতের মাড় পড়ে কি চুলা নিভে গিয়েছিল?
নমুনা উত্তর:
না, ভাতের মাড় পড়ার আগেই চুলা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। চুলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে মাড় পড়ার আগেই বুঝেছিলাম। তাই মাড় পড়ে চুলা নিভে যায়নি।

প্রশ্ন-গ. রান্নার পর ভাত কি বেশি নরম বা শক্ত হয়েছে?
নমুনা উত্তর:
রান্নার পর ভাত একটু শক্ত ছিলো। এর কারণ হতে পারে চালে পানি কম দেওয়া হয়েছিল। অথবা চুলার আঁচ বেশি থাকায় পানি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে গিয়েছিল। তাই ভাত শক্ত হয়েছে।

প্রশ্ন-ঘ. ভাত রান্না করতে পেরে তোমার কেমন লাগছে?
নমুনা উত্তর:
প্রথমবারের মতো ভাত রান্না করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। আগে কখনও ভাত রান্না করিনি। তাই কৌতূহলের পাশাপাশি ভয়ও করছিল। কিন্তু মা পাশে থাকায় এবং সতর্ক থেকে রান্না করার ফলে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি।

প্রশ্ন-ঙ. ভাত রান্নার সময় আরও কী কী সতর্কতা আমাদের মেনে চলা প্রয়োজন?
নমুনা উত্তর:
ভাতের চাল ভালোভাবে ধুতে হবে। যেন পানি ঘোলা না থাকে। চুলা জ্বালানোর সময় চুলার খুব কাছে যাব না। ভাতের হাড়ি ধরার সময় এবং খুন্তি দিয়ে নাড়ার সময় হাতে গ্লাভস ব্যবহার করব। ভাতের চাল ফুটেছে কি না তা দেখার জন্য খুন্তি দিয়ে ২/১ টা ভাত হাতে নিয়ে দেখতে হবে। যদি শক্ত থেকে যায়, আরেকটু পানি দিয়ে চাল পুরোপুরি ফুটার অপেক্ষা করতে হবে। পানি শুকিয়ে ভাত যেন হাড়িতে লেগে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখব।

অ্যাক্টিভিটি ২: কী শিখলাম
নির্দেশনা:
তোমার পাঠ্যবইয়ে দেওয়া ভাত রান্নার ধাপগুলো পড়ো। ভাত রান্নার সময় কী কী শিখলে তা ভেবে দেখো। এরপর পাঠ্যবইয়ে দেওয়া কী শিখলাম ছকটি পূরণ করো। নিচে নমুনা উত্তর দেওয়া হয়েছে। তোমার উত্তরের সাথে মিলিয়ে নাও।

CamScanner 07 03 2023 10.50 1

অ্যাক্টিভিটি ৩: এসো নিজে নতুনভাবে বানাই
নির্দেশনা:
বাবা-মাকে জানাও যে তুমি বাসমতি চালের ভাত রান্না করতে চাও। তাদের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী বাসমতি চাল সংগ্রহ করো। এরপর তোমার পাঠ্যবইয়ের ভাত রান্নার ধাপগুলো ভালোভাবে পড়ো। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বাবা-মায়ের কাছ থেকে জেনে নাও। এরপর সহজে ও নিরাপদে বাসমতি চালের ভাত রান্না করো। তোমার রান্নার পদ্ধতির সাথে নমুনা উত্তরটি মিলিয়ে নাও।

নমুনা উত্তর:
বাসমতি চাল দিয়ে ভাত রান্না
উপকরণ ও পরিমাণ:

  • ২ কাপ বাসমতি চাল
  • ৬ কাপ পানি

তৈরি প্রণালী:
ধাপ ১
চাল পরিমাপ করা

  • ২ কাপ বাসমতি চাল পরিমাপ করে নিই।
  • চাল থেকে পাথর, কাকর, ধান বেছে পরিষ্কার করে নিই (যদি থাকে)।
  • সতর্কতা
    — ১ চাল মাপার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন চাল পাত্রের বাইরে পড়ে না যায়।

ধাপ ২
চাল ধোয়া

  • বেছে নেওয়া চাল একটি পরিষ্কার পাত্রে ঢালি ।
  • পরিষ্কার পানি দিয়ে ২/৩ বার ধুয়ে নিই।
  • ধোয়া চালে ৬ কাপ পরিমাণ পানি দেই।
  • সতর্কতা
    — প্রতিবার চাল ধুয়ে পানি ফেলার সময় সতর্ক থাকতে হবে। পানির সাথে চাল যেন না পড়ে যায়।
    — চাল ধোয়ার সময় লক্ষ রাখব পরনের জামা-কাপড় যেন ভিজে না যায়।

ধাপ ৩
চুলা জ্বালানো

  • চুলা সাবধানে জ্বালাই।
  • ঢাকনা দিয়ে ঢেকে চুলার আঁচ বাড়িয়ে দেই।
  • কাছে দাঁড়িয়ে ৫/৬ মিনিট অপেক্ষা করি।
  • পানি ফুটলে ঢাকনা সরিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে মাঝামাঝি করে দিই।
  • চামচ বা খুন্তি দিয়ে ভাত নেড়ে দিই।
  • সতর্কতা
    — ফুটে উঠার আগ পর্যন্ত চুলার কাছে থাকতে হবে। নয়তো পানি ফেনাসহ ফুলে উঠে পড়ে চুলা নিভে যেতে পারে।
    — খুন্তি দিয়ে নাড়ার সময় হাত নিরাপদ দূরত্বে রাখব।
    — ভাতের হাড়ি তাপরোধী কিছু যেমন— কাপড়/ধরনি দিয়ে ধরে নিব, নয়তো নাড়া লেগে হাড়ি পড়ে যেতে পারে।
    — সম্ভব হলে হাতে কিচেন গ্লাভস পড়ে নিব।

ধাপ ৪
ভাত রান্না

  • ভাতের পানি একটু কমে এলে চুলার আঁচ একদম কমিয়ে নিব।
  • খুন্তি দিয়ে নেড়ে ২/১টি ভাত হাতে নিয়ে দেখবো চাল ফুটেছে কি না।
  • পানি শুকিয়ে এলে কিছুক্ষণ ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখব।
  • পুরোপুরি পানি টেনে এলে চুলা বন্ধ করে দিই।
  • একটি সুন্দর পাত্রে ঢেলে পরিবারের জন্য পরিবেশন করি। ভাতের উপর ধনেপাতা দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো যায়।
  • সতর্কতা
    — পানি শেষ হয়ে গেলে সাথে সাথে চুলা বন্ধ করে দিই। নয়তো হাড়ির নিচে পোড়া লেগে যেতে পারে।

অ্যাক্টিভিটি ৪: স্বমূল্যায়ন
তোমরা ভাত রান্না করার সময় কয়েকটি অবস্থার ছবি তুলবে অথবা নিচের বক্সে এঁকে রাখবে। সেগুলো শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী একদিন ক্লাসে এনে দেখাবে। যদি ছবি প্রিন্ট করার সুযোগ পাও, তাহলে একটি সাদা কাগজে প্রিন্ট দিয়ে কেটে কেটে এখানে লাগিয়ে দাও।
নির্দেশনা: ভাত রান্নার সময় ছবি তুলে রাখো। চালের পরিমাপ নেওয়া, চাল ধোয়া, পরিমাণমতো পানি নেওয়া ও সবশেষে রান্না করা ভাতের ছবি তুলো। অভিভাবককে দেখাও, সম্ভব হলে ছবি প্রিন্ট করে নাও। এরপর ছকের নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে দাও। তোমার কাজটি নমুনা উত্তরের সাথে মিলিয়ে নাও।

নমুনা উত্তর:

CamScanner 07 03 2023 10.50 2

নমুনা উত্তর:
অভিভাবকের মতামত
রান্না ভালো হয়েছে। খুব সতর্কতার সাথে রান্না করেছে। পাঠক্রমের মাধ্যমে রান্না শিখছে বলে আমরা সন্তুষ্ট। যদিও ভাত একটু শক্ত ছিলো, কিন্তু পরে সেটা ঠিক করে রান্না করতে পেরেছে। আমরা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাশেই ছিলাম।

কাজটি করতে গিয়ে আমার অনুভূতি
(ভালো লাগা, মন্দ লাগা, কাজটি করতে গিয়ে আঘাত পাওয়া কিংবা কোনো বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং নতুন কী শিখেছো তা এখানে লেখো) আগে কখনও ভাত রান্না করিনি। তাই রান্না নিয়ে খুব আগ্রহ ছিলো। রান্না করার পর খুব ভালো লেগেছে। সতর্কতার সাথে রান্না করেছিলাম বলে আঘাত পাইনি, দুর্ঘটনা ঘটেনি। ভাত রান্না হয়েছে কি না তা যাচাই করতে ২/১ টি ভাত টিপ দিয়ে দেখতে হবে। শক্ত থেকে গেলে আরেকটু পানি দিয়ে জ্বাল করতে হবে।

অ্যাক্টিভিটি ৫: এসো ভেবে দেখি
সম্ভাব্য উপকরণ:
চুলা, ধরনি, চামচ, খুন্তি, বটি বা চাকু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, টমেটো, লবণ, ধনেপাতা, তেল, কড়াই ইত্যাদি।
নির্দেশনা: ডিম ভাজা শেষ করার পর এবার একটু গভীরভাবে চিন্তা করো। পাঠ্যবইয়ে কিছু প্রশ্ন দেওয়া আছে। ভেবে-চিন্তে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করো। নিচে প্রশ্নগুলোর নমুনা উত্তর দেওয়া হয়েছে। তোমার উত্তরগুলোর সাথে নমুনা উত্তর মিলিয়ে নাও।

প্রশ্ন-১. ডিম ভাজার জন্য কী কী তেল ব্যবহার করা যাবে?
নমুনা উত্তর:
ডিম ভাজার জন্য সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, সূর্যমুখীর তেল, অলিভ অয়েল ও ভেজিটেবল অয়েল ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া, ঘি বা মাখন দিয়েও ডিম ভাজা যায়। তবে সব ধরনের অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করা যায় না। কেবল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ বা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। ডিম ভাজার জন্য সবচেয়ে উপযোগী তেল হলো ভেজিটেবল অয়েল বা সবজির তেল।

প্রশ্ন-২. ডিম ভাজা কি নাস্তা হিসেবে খাওয়া যাবে?
নমুনা উত্তর:
ডিম ভাজা ভাত, রুটি বা পরোটার সাথে খাওয়া যায়। আবার শুধু ডিম ভাজাও নাস্তা হিসেবে খাওয়া যাবে।

প্রশ্ন-৩. ডিম ভাঙ্গার সময় কী রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে?
নমুনা উত্তর:
ডিম ভাঙ্গার সময় যেসব দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—
১. ডিম ফাটানোর সময় ভালোভাবে না ধরলে হাত থেকে পড়ে যেতে পারে।
২. ডিমের মধ্যে খোসার টুকরো থেকে যেতে পারে।

প্রশ্ন-৪. পেঁয়াজ কাটার সময় কেমন লেগেছিল?
নমুনা উত্তর:
পেঁয়াজ কাটার সময় চোখ জ্বালা করছিল। চোখে পানি এসে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। তবে এটা ভেবেও ভালো লাগছিল যে আমি পেঁয়াজ কাটা শিখতে পারছি।

প্রশ্ন-৫. ডিম ভাজার সময় আরও কী কী সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন?
নমুনা উত্তর:
ডিম ভাজার ধাপ অনুসরণের সময় আমরা জেনেছি কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তাছাড়া আরও কিছু সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন। যেমন—
১. লবণ যাতে কম-বেশি না হয়। লবণ কম হলে খেতে ভালো লাগবে না। আর বেশি হলে নোনতা স্বাদের জন্য খাওয়া যাবে না।
২. খেয়াল রাখতে হবে ডিম ভাজায় যেন অতিরিক্ত ঝাল না হয়।
৩. চুলার আঁচ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে যাতে ডিম ভাজা পুড়ে না যায়।

প্রশ্ন-৬. ডিম তেলে ছাড়ার সময় তেল ছিটার হাত থেকে বাঁচার উপায় কী?
নমুনা উত্তর:
ডিম তেলে ছাড়ার সময় তেল ছিটার হাত থেকে বাঁচার উপায়—
১. নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ডিম তেলে ছাড়তে হবে।
২. সম্ভব হলে হাতে কিচেন গ্লাভস পরে নিতে হবে।
৩. খেয়াল রাখতে হবে তেলে যেন কোনোভাবেই পানি না পড়ে।

অ্যাক্টিভিটি ৬: কী শিখলাম
নির্দেশনা:
ডিম ভাজা করার সময় কী কী শিখলে তা ভাবো। পাঠ্যবইয়ে দেওয়া কী শিখলাম ছকটি পূরণ করো। নিচে ছক পূরণের নমুনা উত্তর দেওয়া হলো। ছকটি পূরণ করার পর নমুনা উত্তরের সাথে মিলিয়ে নাও।

CamScanner 07 03 2023 16.36

অ্যাক্টিভিটি ৭: এসো নিজে নতুনভাবে বানাই
সম্ভাব্য উপকরণ:
চুলা; ধরনি, চামচ, খুন্তি, বটি বা চাকু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, টমেটো, লবণ, ধনেপাতা, তেল, কড়াই ইত্যাদি।
নির্দেশনা: আরও অনেকভাবে ডিম ভাজা যায়। ডিমের সাথে টমেটো, পেঁয়াজ কলি, ধনেপাতা ইত্যাদি যোগ করে। অথবা, চামচ/ফয়েল দিয়ে বিভিন্ন আকার তৈরি করে। নতুনভাবে ডিম ভাজার জন্য পরিবারের বড়দের, শিক্ষক অথবা ইন্টারনেট থেকে আইডিয়া নিতে পারো। এবার একটু ভিন্নভাবে একটি ডিম ভাজার চেষ্টা করো। নিচে বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে ডিম ভাজার একটি নমুনা দেওয়া হলো। তোমার নতুন ডিম ভাজির সাথে নমুনা উত্তরটি মিলিয়ে নাও।

নমুনা উত্তর:
টমেটো দিয়ে মজাদার ডিম ভাজা
উপকরণ ও পরিমাণ

CamScanner 07 03 2023 10.50 3

তৈরি প্রণালি
ধাপ ১

  • কড়াই, খুন্তি, চামচ, বাটি, ছুরি বা বটি পরিষ্কার করে ধুয়ে নাও।

সতর্কতা
— বটি বা ছুরি সাবধানে নাড়াচাড়া করবে।
— খেয়াল রাখবে হাত যাতে কেটে না যায়।
— ধোয়ার সময় লক্ষ রাখবে জামা-কাপড় যেন ভিজে না যায়।

ধাপ ২

  • একটি মাঝারি আকারের পেঁয়াজ নাও।
  • প্রথমে পেঁয়াজের সামনের ও পেছনের অংশ কেটে নাও।
  • এবার পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে নাও।
  • দুটি কাঁচামরিচ ও একটি মাঝারি আকারের টমেটো নিয়ে বোটা কেটে নাও।
  • 8 / ৫ টা ধনেপাতা নিয়ে গোড়ার অংশ ফেলে দাও।
  • এখন পেঁয়াজ, টমেটো, ধনেপাতা আর কাঁচামরিচ পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নাও।

সতর্কতা
— পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো, ধনেপাতা ইত্যাদি কাটার সময় বটি বা ছুরি সাবধানে ব্যবহার করো।
— ধোয়ার সময় খেয়াল রাখো যাতে জামা-কাপড় ভিজে না যায়।

ধাপ ৩

  • প্রথমে পেঁয়াজটিকে দুইভাগ করে নাও।
  • বটি দিয়ে কাটলে একভাগ পেঁয়াজ বটির মাথায় গেঁথে নাও। এতে পেঁয়াজ কাটার সময় চোখে ঝাঁজ লাগবে না।
  • এরপর পুরো পেঁয়াজ কুচি করে কেটে নাও।
  • এবার কাঁচামরিচ কুচি করে কেটে নাও। বাটির চেয়ে ছুরিতে মরিচ কাটা সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ।
  • এখন পেঁয়াজ, মরিচের মতো টমেটো ও ধনেপাতা কুচি করে নাও।

সতর্কতা
— পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো, ধনেপাতা ইত্যাদি কাটার সময় বটি বা ছুরি সাবধানে ব্যবহার করো।
— পেঁয়াজের ঝাঁজের কারণে চোখে পানি এসে ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। তাই চোখে পানি এলে চোখ মুছে নাও।
— মরিচ কাটা শেষ হলে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নাও। না হলে হাত যেখানে লাগবে সেখানেই জ্বালা করতে পারে।

ধাপ ৪

  • সাবধানে বাটির কোণায় বা শক্ত কোথাও ঠেস দিয়ে ডিম দুটি ফেটিয়ে নাও।

সতর্কতা
— ডিমগুলো ভালোভাবে ধরবে যাতে ফাটানোর সময় পড়ে না যায়।
— খেয়াল রাখবে কোনোভাবেই যেন ডিমের খোসা বাটিতে না পড়ে।

ধাপ ৫

  • এবার ডিমে ২ চিমটি লবণ যোগ করো।
  • এরপর একটি চামচ বা বিটার দিয়ে ভালোভাবে ডিম, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ কুচি, টমেটো কুচি, ধনেপাতা কুচি ও লবণ মিশিয়ে নাও।

সতর্কতা
— আলতোভাবে মেশাবে। বেশি জোরে নাড়লে বাটিসহ উল্টে পড়ে যেতে পারে।

ধাপ ৬

  • এবার খুব সাবধানে চুলা জ্বালাও। নিজে না পারলে অন্য কারো সাহায্য নাও।
  • একটি কড়াই চুলায় দাও।
  • এক টেবিল চামচ তেল কড়াইতে দিয়ে দাও।
  • কড়াই ও তেল গরম হলে ডিমের মিশ্রণটি সাবধানে ঢেলে দাও।

সতর্কতা
— আগুন থেকে খুব সাবধানে থাকবে।
— ডিমের মিশ্রণ ঢালার সময় হাত নিরাপদ দূরত্বে রাখো। কারণ, ঢালার সময় গরম তেল ছিটে আসতে পারে। তাই সম্ভব হলে হাতে কিচেন গ্লাভস পরে নাও।

ধাপ ৭

  • ডিম ফুলে উঠলে খুন্তি দিয়ে উল্টে দাও।
  • সামান্য বাদামী রং-এর হলে ডিম চুলা থেকে নামিয়ে প্লেটে রাখো।

সতর্কতা
— ডিম ভাজার সময় আগুন থেকে সাবধানে থাকবে।
— খুন্তি দিয়ে উল্টানোর সময় কড়াইয়ের হাতল মোটা কাপড় বা ধরনি দিয়ে ধরে নিবে। তা না হলে হাতে তাপ লাগতে পারে এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কড়াই উল্টে যেতে পারে।

রান্না শেষে করণীয়
— ডিম ভাজা কাজের জন্য ব্যবহৃত সবকিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।

অ্যক্টিভিটি ৮: স্বমূল্যায়ন
নির্দেশনা:
ডিম ভাজি করার সময় কয়েকটি অবস্থার ছবি তুলে রাখো। ছবি তোলা সম্ভব না হলে এঁকে রাখো। যদি সম্ভব হয় ছবিগুলো প্রিন্ট করে বক্সে লাগিয়ে রাখো। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী একদিন ক্লাসে এনে দেখাও। নিচে কয়েকটি নমুনা ছবি দেওয়া হলো। তোমার ছবিগুলোর সাথে নমুনা ছবি মিলিয়ে নাও।

নমুনা উত্তর:

CamScanner 07 03 2023 10.50 4

নমুনা উত্তর:
অভিভাবকের মতামত
তুমি প্রথমবারের মতো ডিম ভাজার সাহস করেছ। তোমার সাহসিকতায় আমি খুবই খুশি হয়েছি। ডিম ভাজাটি খেতে খুব ভালো লগেছে। পরবর্তীতে ডিম ভাজার সময় আলু, টমেটো, পেঁয়াজের কলি বা ধনেপাতা ইত্যাদি যুক্ত করতে পারো। এতে ডিম ভাজার স্বাদ আরও বাড়বে।

কাজটি করতে গিয়ে আমার অনুভূতি
(ভালো লাগা, মন্দ লাগা, কাজটি করতে গিয়ে আঘাত পাওয়া কিংবা কোনো বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং নতুন কী শিখেছো তা এখানে লেখো)
জীবন ও জীবিকা বইয়ের ডিম ভাজার ধাপগুলো অনুসরণ করে প্রথমবার ডিম ভাজি করেছি। আমার ভাবতেই ভালো লাগছে যে আমি এখন ডিম ভাজতে পারি। তাছাড়া, পেঁয়াজ কাটা, মরিচ কাটা, ডিম ফাটানো শিখেছি।

আমি এখন জানি কীভাবে সাবধানে ছুরি চালাতে হয়। কীভাবে পরিষ্কার করে রান্নার সরঞ্জাম ধুয়ে নিতে হয়। গরম তেলের ছিটা থেকে বাঁচার উপায়ও শিখেছি। তবে এটি আমার জন্য সহজ কাজ ছিল না। পেঁয়াজ কাটার সময় চোখ জ্বালা করছিল। মরিচ কাটার পর হাত জ্বালা করছিল। তাছাড়া ছুরি চালানো, ডিম ফাটানো ও ডিম তেলে ঢালার সময় ভয়ে ছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত সুন্দরভাবে একটি ডিম ভাজতে পারায় আমি খুবই আনন্দিত।

অ্যাক্টিভিটি ৯: এসো ভেবে দেখি
সম্ভাব উপকরণ:
আলু, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, লবণ, সরিষার তেল, ছুরি বা বটি, কড়াই ইত্যাদি।

নির্দেশনা: আলু ভর্তা তৈরি শেখার পর এবার একটু চিন্তা করো। পাঠ্যবইয়ে দেওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর সম্পর্কে ভাবো। প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করো। এবার তোমার উত্তরের সাথে নমুনা উত্তর মিলিয়ে নাও।

প্রশ্ন-১: এ পদ্ধতি ব্যবহার করে অন্য কোনো সবজি দিয়ে কি ভর্তা বানানো যাবে?
নমুনা উত্তর:
এ পদ্ধতি ব্যবহার করে অন্য সবজি দিয়েও ভর্তা বানানো যাবে। যেমন: বেগুন ভর্তা, শিম ভর্তা, কুমড়া ভর্তা, কাঁচকলা ভর্তা প্রভৃতি।

প্রশ্ন-২: আলুর আকৃতি বড় হলে সিদ্ধ করার সময় কী করা যেতে পারে?
নমুনা উত্তর:
আলুর আকৃতি বড় হলে আলুকে কয়েক টুকরা করে কেটে সিদ্ধ করা যেতে পারে। এতে আলু তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়ে যাবে।

প্রশ্ন-৩: এই কাজের বিশেষ সাবধানতাগুলো কী কী?
নমুনা উত্তর:
এ কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতাগুলো হলো-

  • বটি বা ছুরি সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হবে।
  • আগুন ব্যবহারে সাবধান হতে হবে।
  • আলু সিদ্ধ হলো কিনা তা দেখতে চামচ বা খুন্তি ব্যবহার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই হাত দিয়ে পরখ করা যাবে না।
  • পেঁয়াজ ও মরিচ কাটার সময় বটি বা ছুরি সাবধানে ব্যবহার করতে হবে।
  • বেশি গরম অবস্থায় আলুর খোসা ছাড়ানো যাবে না।
  • মরিচের কারণে হাত জ্বলতে পারে। তাই ভর্তা তৈরি শেষ হবার পরেই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।

অ্যাক্টিভিটি ১০: কী শিখলাম
নির্দেশনা:
আলু ভর্তা তৈরি করে কী কী শিখতে পারলে তা নিয়ে ভাবো। পাঠ্যবইয়ে দেওয়া কী শিখলাম ছকটি পূরণ করো। নিচে নমুনা উত্তর হিসেবে ছকটি পূরণ করে দেয়া হলো। তোমার উত্তরের সাথে মিলিয়ে নিও।

CamScanner 07 03 2023 10.50 5 2

অ্যাক্টিভিটি ১১: এসো নিজে নতুনভাবে বানাই
নির্দেশনা:
আলুর সাথে মিশিয়ে অথবা অন্য সবজি দিয়ে কীভাবে ভর্তা বানানো যায় তা মা-বাবার কাছ থেকে জেনে নাও। তাদের সহায়তা নিয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সবজি সংগ্রহ করো। এরপর তোমার পাঠ্যবইয়ের আলু ভর্তা তৈরির ধাপগুলো ভালোভাবে পড়ে নাও। কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে আম্মুর কাছ থেকে জেনে নাও। এরপর নিজে আলুর সাথে অন্যান্য উপকরণ ও সবজি মিশিয়ে ভর্তা তৈরি করো। নিচে আলুর সাথে অন্য সিদ্ধ সবজি মিশিয়ে ভর্তা বানানোর একটি নমুনা প্রক্রিয়া দেওয়া হলো। তোমার ভর্তা তৈরির সাথে নমুনা উত্তরটি মিলিয়ে নাও।

নমুনা উত্তর:
আলু-শিম ভর্তা
উপকরণ ও পরিমাণ

CamScanner 07 03 2023 10.50 6

তৈরি প্রণালি:
ধাপ ১

  • প্রথমে বটি, ছুরি, বাটি পরিষ্কার করে ধুয়ে নিই।
  • আলু ও শিমগুলো পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিই।
  • আলুগুলো বড় সাইজের হলে বটি বা ছুরি দিয়ে টুকরা করে নিতে হবে। এতে দ্রুত সিদ্ধ হয়ে যাবে।

সতর্কতা
— বটি বা ছুরি সাবধানে নাড়াচাড়া করবো যাতে হাত কেটে না যায়।
— ধোয়ার সময় পানিতে যেন জামাকাপড় ভিজে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখব।

ধাপ ২

  • একটি পাত্রে কিছু পানি নিয়ে আলুগুলো রাখি। পানির লেভেল যেন আলুগুলোর দুই-তিন ইঞ্চি উপরে থাকে।
  • চুলায় আগুন জ্বালিয়ে আলু সিদ্ধ করি। আলু সিদ্ধ হতে ২০ মিনিটের মতো সময় লাগবে।
  • আলু সিদ্ধ হয়ে গেলে অল্প পানি নিয়ে শিমগুলোও আলাদাভাবে সিদ্ধ করে নিই। আলু ও শিমগুলো সিদ্ধ হলো কিনা তা চামচ বা খুন্তির সাহায্যে দেখে নিই।

সতর্কতা
— আগুন ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করব।
— খুন্তি দিয়ে পরখ করার সময় কাপড় বা ধরনি দিয়ে পাত্রটি ধরে রাখব। যেন পাত্রটি চাপ লেগে পড়ে না যায়।
— প্রয়োজনে কিচেন গ্লাভস ব্যবহার করব।

ধাপ ৩

  • আলু ও শিম সিদ্ধ করার সময়ে পেঁয়াজ ও ধনেপাতা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিই।
  • এবার ছুরি বা বটি দিয়ে পেয়াজ ও ধনে পাতা কুচি কুচি করে কেটে নেই।
  • একটি আলাদা চুলায় কড়াইয়ে হালকা তেল নিয়ে শুকনা মরিচগুলো ভেজে নিই।

সতর্কতা
— বটি বা ছুরি দিয়ে সাবধানে পেঁয়াজ ও ধনেপাতা কুচি কুচি করব। খেয়াল রাখব যেন হাত কেটে না যায়।
— পেঁয়াজ কাটার সময়ে পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখে পানি আসলে চোখ মুছে নিব।

ধাপ ৪

  • আলু ও শিম সিদ্ধ হয়ে গেলে ঠাণ্ডা হবার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করি।
  • আলু ঠাণ্ডা হলে খোসা ছাড়িয়ে নেই।
  • এবার আলু ও শিমগুলো হাত দিয়ে চেপে ভর্তা করি।

সতর্কতা
— গরম অবস্থায় আলু ও শিম ধরা যাবে না। আলু ঠাণ্ডা হলে খোসা ছাড়িয়ে নিই।

ধাপ ৫

  • এবার একটি পাত্রে পেঁয়াজ ও ধনে পাতা কুচি, শুকনা মরিচ এবং স্বাদ অনুযায়ী লবন মিশিয়ে নিই।
  • এর সাথে আলু, শিম এবং ১ চা চামচ সরিষায় তেল নিয়ে একত্রে মিশিয়ে মেখে নিই।
  • এভাবেই তৈরি করে ফেললাম সুস্বাদু আলু ভর্তা

সতর্কতা
— ভর্তা বানানো শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিই।
— শুকনো মরিচ গুড়া করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন বাতাসে উড়ে চোখে না যায়।

আরো পড়োআমার জীবন আমার লক্ষ্য
আরো পড়োদশে মিলে করি কাজ

অ্যাক্টিভিটি ১২: স্বমূল্যায়ন
তোমরা আলু ভর্তা করার সময় কয়েকটি অবস্থার ছবি তুলবে অথবা নিচের বক্সে এঁকে রাখবে। সেগুলো শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী একদিন ক্লাসে এনে দেখাবে। যদি ছবি প্রিন্ট করার সুযোগ পাও, তাহলে প্রিন্ট দিয়ে কেটে এখানে লাগিয়ে দাও।
নির্দেশনা: আলু ভর্তা করার সময়ে কয়েকটি অবস্থার ছবি তুলে রাখো। পেঁয়াজ-মরিচ কাটা, আলুর খোসা ছাড়ানো, ভর্তা করা ও প্লেটে পরিবেশন করার ছবি তোলো। অভিভাবককে দেখাও, সম্ভব হলে প্রিন্ট করে নাও। এরপর ছকের নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে দাও। তোমার কাজটি নমুনা উত্তরের সাথে মিলিয়ে নাও।

নমুনা উত্তর:

CamScanner 07 03 2023 10.50 7 1

নমুনা উত্তর:
অভিভাবকের মতামত
তুমি প্রথমবারের মত আলু ভর্তা করেছ। এটা তোমার কাছে ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। সে হিসেবে তুমি যথেষ্ট ভালো করেছ। খেতে মোটামুটি সুস্বাদু ছিল। সব উপকরণের পরিমাণও ঠিকঠাক ছিল। তবে তুমি আলু ভর্তায় কাঁচা মরিচ এবং ঘি ব্যবহার করতে পারতে। একইভাবে তুমি অন্য সবজি দিয়েও ভর্তা তৈরি করে দেখতে পারো। তাহলে আলু ভর্তার স্বাদ আরোও ভালো হতো।

কাজটি করতে গিয়ে আমার অনুভূতি
(ভালো লাগা, মন্দ লাগা, কাজটি করতে গিয়ে আঘাত পাওয়া কিংবা কোনো বাধার সম্মুখীন হওয়া এবং নতুন কী শিখেছো তা এখানে লেখো)
আমি আলু ভর্তা তৈরি করা অনেক উপভোগ করেছি। কাজটি আমার কাছে নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। তারপরেও আমি বেশ ভালোভাবেই আলু ভর্তা করতে পেরেছি। অনেক কাজ নতুন হওয়ার কারণে আমি আলু ভর্তা করতে গিয়ে কিছু সমস্যায় পড়েছি।

যেমন- পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। ভর্তা করার পর মরিচের কারণে হাত জ্বলছিল। এ কাজটি করার মাধ্যমে আমি আলু ভর্তা করার কৌশল, ছুরি, বটি ইত্যাদি ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করার বিষয়গুলো শিখতে পেরেছি।

Leave a Comment