(বাংলা) ৬ষ্ঠ: বুঝে পড়ি লিখতে শিখি (৪র্থ পরিচ্ছেদ: বিশ্লেষণমূলক লেখা) – সমাধান

বুঝে পড়ি লিখতে শিখি হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা বই এর ৫ম অধ্যায়। বুঝে পড়ি লিখতে শিখি অধ্যায়ের ৪র্থ পরিচ্ছেদ বিশ্লেষণমূলক লেখা এর অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

‘কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ রচনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
ক. লেখক সম্পর্কিত তথ্য :
আবদুল্লাহ আল-মুতী ১ জানুয়ারি ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞান লেখক। বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখার জন্য তিনি ইউনেস্কো কলিঙ্গ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। তাঁর প্রখ্যাত কয়েকটি বইয়ের নাম হলো, ‘এসো, বিজ্ঞানের রাজ্যে’, ‘আবিষ্কারের নেশায়’, ‘রহস্যের শেষ নেই’ ইত্যাদি। তিনি ৩০ নভেম্বর ১৯৯৮ সালে পরলোক গমন করেন।
খ. বিশ্লেষণমূলক লেখাটির সারাংশ : লেখাটিতে অপরিকল্পিতভাবে অধিকমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আমাদের উপকারী কীটপতঙ্গ আশঙ্কাজনক হারে মারা যাচ্ছে সে কথা বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়ে কীটপতঙ্গ দমন করার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার যে আসলে আমাদের উপকারের বদলে অপকার বেশি করছে সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।
গ. নামকরণ : বিশ্লেষণমূলক লেখাটির মূল বিষয়বস্তু আমাদের চারপাশে থাকা কীটপতঙ্গ। সেদিক বিবেচনায় বলা যায়, বিশ্লেষণমূলক লেখাটির নামকরণ ‘কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ সার্থক।
ঘ. বিশ্লেষণমূলক লেখাটির ভাষা : বিশ্লেষণমূলক এই লেখাটি সহজবোধ্য প্রমিত ভাষায় লেখা হয়েছে।

বিশ্লেষণমূলক লেখা
কোনো ব্যক্তি, বিষয় কিংবা প্রতিষ্ঠান নিয়ে যখন সবিস্তার আলোচনা করা হয়, তখন তাকে বিশ্লেষণমূলক লেখা বলে । এধরনের লেখায় ব্যাখ্যা করে বিষয়কে উপস্থাপন করার প্রয়াস থাকে।

বিশ্লেষণমূলক লেখার বৈশিষ্ট্য
১. এ ধরনের লেখায় যেকোনো ধরনের বর্ণনানির্ভর, উপাত্তনির্ভর বা ছক-সারণি ছবির তথ্য পর্যবেক্ষণ করে তথ্যগুলো যে ধারণা প্রকাশ করছে তা সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়।
২. সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশ্লেষণ করে এক বা একাধিক সিদ্ধান্তে বা অনুমানে উপনীত হওয়া যায়।
৩. বিশ্লেষণমূলক লেখায় ব্যক্তিগত মতামত দেওয়ার সুযোগ কম থাকে।
৪. তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণমূলক লেখার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

বিশ্লেষণমূলক লেখা রচনার উপায়
বিশ্লেষণমূলক লেখা বর্ণনানির্ভর। তবে নিরেট বর্ণনার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয় কিংবা বক্তব্যের তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ের প্রয়োজনে বিশ্লেষণ করতে হয়। উপাত্তনির্ভর তথ্যপূর্ণ লেখা বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না; বরং যুক্তি-তর্ক কিংবা তথ্য-প্রমাণের আলোকে নির্মোহভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এধরনের লেখা রচনার সময় বিভিন্ন তথ্যের মধ্যকার সম্পর্ক, তুলনা, সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য প্রকাশ করা যায়। তবে একই লেখার বিশ্লেষণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

বিশ্লেষণমূলক লেখার তথ্য-উপাত্ত
এ ধরনের লেখা বিশ্লেষণের জন্য তথ্য-উপাত্তের সন্নিবেশ একান্ত প্রয়োজন। যেহেতু তথ্য-উপাত্তের আলোকে সিদ্ধান্ত কিংবা অনুমানে উপনীত হওয়া যায়, সেহেতু তথ্য-উপাত্ত নির্বাচনে সচেতন থাকতে হবে। নির্ভুল তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণমূলক লেখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষণমূলক লেখার ধরন
যেকোনো ধরনের লেখা বিশ্লেষণমূলক হতে পারে। অর্থাৎ বিশ্লেষণের ভেতর দিয়ে সিদ্ধান্ত বা অনুমানে উপনীত হওয়া যায়। তবে মতামতধর্মী যেকোনো লেখা, পাঠক-প্রতিক্রিয়া, খেলার ওপর মতামত, সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় লেখা, ছক-সারণি-ছবি সম্পর্কে মতামত ইত্যাদি নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা লেখা যায়।

তথ্য ও উপাত্ত
তথ্য হলো কোনো বিষয়ের প্রকৃত অবস্থা বা সুনির্দিষ্ট জ্ঞাতব্য বিষয়। আর উপাত্ত হলো তথ্য তৈরিতে যেসব উপাদান ব্যবহৃত হয় সেগুলো।

ছক
ছক হলো পরিকল্পিত কাঠামো বা আদল। কোনো বিষয়ের বর্ণনার জন্য রেখা টেনে চৌকো খোপে বিভক্ত করাকেও ছক বলে। ছকের মধ্যে বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত তুলে ধরা যায়।

সারণি
তথ্য, উপাত্ত প্রভৃতি তুলে ধরে বর্ণিত তালিকাকে সারণি বলে।

৪র্থ পরিচ্ছেদ : বিশ্লেষণমূলক লেখা

পড়ে কী বুঝলাম
১. ‘কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ রচনাটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ক. এই রচনাটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা?
খ. লেখাটির মধ্যে কী কী বিশ্লেষণ আছে?
গ. বিবরণমূলক লেখার সঙ্গে এই লেখাটির কী কী মিল-অমিল আছে?
ঘ. তথ্যমূলক লেখার সঙ্গে এই লেখাটির কী কী মিল-অমিল আছে?
ঙ. এই লেখা থেকে নতুন কী কী জানতে পারলে?

নমুনা উত্তর :
ক. ‘কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ রচনাটি কীটনাশক ব্যবহারের সুফল ও কুফল নিয়ে লেখা।

খ. কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ রচনাটিতে কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে বিশ্লেষণ রয়েছে। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কীটপতঙ্গের সঙ্গে পাখি ও মাছের মৃত্যুর পাশাপাশি পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতির বিষয়টির বিশ্লেষণ আছে।

গ. বিবরণমূলক লেখায় নানারকম তথ্যের সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে। ‘কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ রচনাটিতে তথ্যের সমাবেশ রয়েছে। এক্ষেত্রে মিল পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া এই লেখায় বিশ্লেষণ থাকলেও বিবরণমূলক লেখায় বিশ্লেষণ থাকে না। এ ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে।

ঘ. তথ্যমূলক রচনার মতোই ‘কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ রচনাতেও তথ্য ও বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু তথ্যমূলক রচনার চেয়ে বিশ্লেষণমূলক রচনায় বিশ্লেষণ বেশি থাকে। ফলে তথ্য ও বিষয়ের বর্ণনায় মিল থাকলেও বিশ্লেষণের তারতম্যে তথ্যমূলক রচনার সঙ্গে কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ রচনার অমিল রয়েছে।

ঙ. কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ রচনা থেকে নতুন অনেক বিষয় জানতে পারলাম। কীটপতঙ্গ যে শুধু ক্ষতি করে তা নয়, এগুলো উদ্ভিদ ও মানুষের নানা উপকারেও আসে। আবার ঢালাওভাবে কীটনাশকের ব্যবহারে পরিবেশ ও জীবনের ভারসাম্য নষ্টও হতে পারে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারের পরিবর্তে অন্যভাবে কীটপতঙ্গ নিধন করা সম্ভব।

আরো পড়ো →২য় পরিচ্ছেদ : বিবরণমূলক লেখা
আরো পড়ো →৩য় পরিচ্ছেদ : তথ্যমূলক লেখা

বলি ও লিখি
২. ‘কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ রচনায় লেখক যা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

নমুনা উত্তর : ‘কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ রচনায় লেখক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। আমরা যে পরিবেশে বসবাস করি, তাতে নানারকম কীটপতঙ্গও বসবাস করে। এসব কীটপতঙ্গ ধ্বংস করার জন্য কীটনাশক ব্যবহার করলে তা দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এ বিষয়টি জানতে পারার পর প্রাকৃতিক উপায় কীটপতঙ্গ দমনের প্রতি জোর দিয়েছেন। এই উপায়ের মধ্যে রয়েছে আলোর ফাঁদ পাতা, বিভিন্ন কীটপতঙ্গের ডিম কুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলা । মূলত কীটপতঙ্গ নির্বিচার নিধন করা অনুচিত এই বিষয়ে প্রবন্ধে লেখক সিদ্ধান্তে এসেছেন।

৩. নিচের ছকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তথ্যমূলক বাক্য রচনা করো এবং সেই বাক্য দিয়ে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো।

IMG 20230504 213729

নমুনা উত্তর :
বাক্য :

১. ছকে ৮টি দেশের ২০১০ এবং ২০১৫ সালের বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে।
২. ২০১০ সালে ভারতে ১৭০৬টি বাঘ ছিল, যা ৮টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
৩. ২০১০ সালে বাঘের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়।
৪. ২০১০ সালে ভিয়েতনামে বাঘ ছিল ২০টি যা সর্বনিম্ন।
৫. ২০১৫ সালে ভারতে ২২২৬টি বাঘ ছিল যা ৮টি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
৬. ২০১৫ সালে বাঘের সংখ্যা বিবেচনায় ২য় অবস্থানে হলো নেপাল।
৭. ২০১০ সালে কম্বোডিয়া বাঘশূন্য হয়ে পড়ে।
৮. ৮টির মধ্যে মিয়ানমার হলো একমাত্র দেশ যেখানে দুটি জরিপেই বাঘের সংখ্যা অপরিবর্তিত।
৯. ৫ বছরের ব্যবধানে করা ২য় জরিপে শুধু ৩টি দেশে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেগুলো হলো: ভুটান, ভারত ও নেপাল।
১০. ৫ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৪ ভাগের একভাগে নেমে এসেছে।

অনুচ্ছেদ :

বিভিন্ন দেশের বাঘবিষয়ক তথ্য

ছকে ৮টি দেশের ২০১০ এবং ২০১৫ সালের বাঘের পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। ২০১০ সালে সবচেয়ে বেশি বাঘ ছিল ভারতে এবং সংখ্যা ১৭০৬। বাঘের সংখ্যা বিবেচনায় ২০১০ সালে ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ২০১০ সালে সবচেয়ে কম বাঘ ছিল ভিয়েতনামে যার সংখ্যা মাত্র ২০। ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি বাঘ ছিল ভারতে এবং সংখ্যা ২২২৬। বাঘের সংখ্যা বিবেচনায় ২০১৫ সালে দেশগুলোর মধ্যে ২য় অবস্থানে ছিল নেপাল। ২০১০ সালে কম্বোডিয়া একেবারেই বাঘশূন্য হয়ে যায়। ৮টি দেশের মধ্যে মিয়ানমার হলো একমাত্র দেশ যেখানে দুটি জরিপেই বাঘের সংখ্যা অপরিবর্তিত। ৫ বছর ব্যবধানে করা ২য় জরিপে শুধু ৩টি দেশে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেগুলো হলো : ভুটান, ভারত ও নেপাল। ৫ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৪ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।

Leave a Comment