(বাংলা)পঞ্চম: মাটির নিচে যে শহর গল্পের প্রশ্ন উত্তর

মাটির নিচে যে শহর হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বই এর গল্প। মাটির নিচে যে শহর গল্পটির অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

মাটির নিচে যে শহর গল্পের প্রশ্ন উত্তর

এক নজরে মাটির নিচে যে শহর গদ্যের মূলকথাটি জেনে নিই—
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ময়নামতি, মহাস্থানগড় ও পাহাড়পুর। এগুলো সবই মাটির উপরে। কিন্তু এদেশে মাটির নিচে রয়েছে এক প্রাচীন নগর-সভ্যতা। এর নাম উয়ারী-বটেশ্বর। এটি ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নরসিংদীর বেলাবো ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত। ভূপ্রকৃতির বড় রকমের পরিবর্তনের কারণে এই সুপ্রাচীন নগর-জনপদ এক সময় মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। উয়ারী-বটেশ্বর আসলে পাশাপাশি দুটি গ্রাম। এই দুই গ্রামে প্রায়ই বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান পাওয়া যেত। ১৯৩৩ সালে উয়ারী গ্রামের শ্রমিকরা মাটি খনন করার সময় একটা পাত্রে জমানো কিছু মুদ্রা পায়। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ পাঠান সেখান থেকে ২০-৩০টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। এগুলো ছিল বঙ্গদেশের এবং ভারতের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা। তিনি এবং তাঁর ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠান উয়ারী-বটেশ্বরের প্রচুর প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো জাদুঘরে জমা দেন। ২০০০ সালে এখানে খনন কাজ শুরু হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই স্থানটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো। দুর্গ, প্রাচীর, ইটের স্থাপত্য, মুদ্রা, গহনা, ধাতব বস্তু প্রভৃতি যত প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে তা থেকে সহজেই বলা যায় এখানকার মানুষ যথেষ্ট সভ্য ছিল। এই সভ্যতা প্রাচীনকালে ‘সোনাগড়া’ নামে পরিচিত ছিল।

সতর্কতার সাথে মাটির নিচে যে শহর গদ্য থেকে প্রাপ্ত নিচের শব্দগুলোর সঠিক বানান জেনে নিই—
প্রত্নতাত্ত্বিক, মহাস্থানগড়, বরেন্দ্র, মৃত্তিকা, খ্রিষ্টপূর্ব, ব্রহ্মপুত্র, সোনারগাঁ, ভূমিকম্প, ভূপ্রকৃতি, বিস্তীর্ণ, উয়ারী-বটেশ্বর, বঙ্গদেশ, প্রাচীনতম, রৌপ্যমুদ্রা, লৌহপিণ্ড, অভিভূত, ভাণ্ডার, দুর্গ, স্থাপত্য, বিশেষজ্ঞ, বাণিজ্য, সমৃদ্ধিশালী, আবিষ্কৃত।

১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
প্রত্নতাত্ত্বিক, উপত্যকা, জনপদ, প্রাচীনতম, অভিভূত, নিদর্শন, খ্রিষ্টপূর্ব, ঐতিহাসিক
উত্তর :
প্রত্নতাত্ত্বিক – প্রত্ন শব্দের অর্থ অতি পুরনো বা প্রাচীন। এ সম্পর্কিত যে তত্ত্ব তাকে বলা হয় প্রত্নতত্ত্ব। তবে প্রাচীনকালের জিনিসপত্র, মুদ্রা, অট্টালিকা ইত্যাদি বিচার করে এবং ইতিহাস খুঁজে যা বের করা হয় বা যেভাবে করা হয় তাকে বলে প্রত্নতাত্ত্বিক।
উপত্যকা – দুই পাহাড় বা পর্বতের মাঝখানের সমতল ভূমি বা নিচু ভূমি অথবা পাহাড়-পর্বতের পাশের ভূমি।
জনপদ – যেখানে অনেক মানুষ একসাথে বাস করে। লোকালয়, শহর।
প্রাচীনতম – প্রাচীন হলো পুরনো বা বহুকাল আগের কিছু। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হলে তম যোগ করা হয়।
অভিভূত – ভাবাবিষ্ট বা আচ্ছন্ন হয়ে পড়া।
নিদর্শন – প্রমাণ, চিহ্ন বা উদাহরণ।
খ্রিষ্টপূর্ব – যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পূর্বের সময় বোঝাতে বলা হয় খ্রিষ্টপূর্ব।
ঐতিহাসিক – যাঁরা ইতিহাস লেখেন বা ভালো জানেন। ইতিহাসে স্থানলাভের যোগ্য বা ইতিহাসভিত্তিক হলেও তাকে ঐতিহাসিক বলা হয়।

২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
ঐতিহাসিক, উপত্যকা, অভিভূত, নিদর্শন, প্রাচীনতম
ক. পাহাড়পুর আমাদের দেশে অতি …… একটি বিহার।
খ. ক্রমে ক্রমে অনেক আশ্চর্য ……. পাওয়া যাচ্ছে উয়ারী-বটেশ্বরে।
গ. উয়ারী-বটেশ্বর বাংলাদেশের ……. নিদর্শন।
ঘ. পাহাড় ও পর্বতের মাঝে সমতল ভূমিকে বলে …….।
ঙ. আমি জাদুঘর দেখে ……. হয়ে গেলাম।
উত্তর :
ক. পাহাড়পুর আমাদের দেশে অতি প্রাচীনতম একটি বিহার।
খ. ক্রমে ক্রমে অনেক আশ্চর্য নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে উয়ারী-বটেশ্বরে।
গ. উয়ারী-বটেশ্বর বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন।
ঘ. পাহাড় ও পর্বতের মাঝে সমতল ভূমিকে বলে উপত্যকা।
ঙ. আমি জাদুঘর দেখে অভিভূত হয়ে গেলাম।

৩. প্রশ্নগুলোর উত্তর মুখে বলি ও লিখি।
প্রশ্ন ক. প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বলতে কী বোঝ? বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর :
‘প্রত্ন’ শব্দের অর্থ হলো পুরনো বা প্রাচীন। ‘প্রত্নতত্ত্ব’ বলতে মূলত পুরনো স্থাপত্য ও শিল্পকর্ম, মূর্তি বা ভাস্কর্য, অলংকার, প্রাচীন আমলের মুদ্রা, পুরনো মূল্যবান আসবাবপত্র ইত্যাদি বোঝায়। আর এসব প্রত্নবস্তু যে স্থানে পাওয়া গেছে সেই স্থানকে বলা হয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।
বাংলাদেশে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। কুমিল্লার ময়মনামতি, বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর, নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ময়নামতি : কুমিল্লায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। বর্তমানে ময়মনামতি অঞ্চলে যে ধ্বংসস্তূপ দেখা যায় তা প্রকৃতপক্ষে একটি নগরী ও বৌদ্ধবিহারের অবশিষ্টাংশ। ময়নামতি প্রত্নস্থলের কিছু উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হলো কোটিলা মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, ৰূপবান মুড়া, শালবন বিহার।
মহাস্থানগড় : পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গেছে।
পাহাড়পুর : এটি সোমপুর বিহার নামেও পরিচিত। বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার। পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব এই বিহার তৈরি করেছিলেন। পাহাড়পুরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার বলা যেতে পারে।
উয়ারী-বটেশ্বর : নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি মাটির নিচে অবস্থিত একটি দুর্গনগরী। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মাটির নিচে থাকা এই স্থানটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো।

প্রশ্ন খ. উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কীভাবে মানুষের নজরে এলো?
উত্তর :
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ পাঠান এবং তাঁর ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠানের মাধ্যমে উয়ারী-বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মানুষের নজরে আসে। ১৯৩৩ সালে শ্রমিকরা মাটি খনন করার সময় পাত্রে জমানো কিছু মুদ্রা পায়। হানিফ পাঠান সেখান থেকে ২০-৩০টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন এবং এ বিষয়ে তাঁর ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠানকে সচেতন করে তোলেন। হাবিবুল্লাহ পাঠান পরবর্তীতে এখান থেকে দুটি লোহার পিন্ড এবং আরও একটি মুদ্রাভান্ডার পান। ১৯৭৪-৭৫ সালের পর তিনি এখান থেকে প্রচুর প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো জাদুঘরে জমা দেন। এভাবে উয়ারী-বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্পর্কে মানুষ জানতে পারল এবং এ স্থানটি মানুষের নজরে এলো।

প্রশ্ন গ. উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে অবস্থিত? এই এলাকাটির প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে পরিণত হওয়ার পিছনে কী কারণ তা লেখ।
উত্তর :
উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি বাংলাদেশের নরসিংদীতে অবস্থিত। এটি ঢাকা থেকে, ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নরসিংদীর বেলাবো ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত।
এই এলাকাটির বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে একসময় সুসভ্য মানুষের বসবাস ছিল। ছিল নগর-সভ্যতা। কিন্তু ভূপ্রকৃতির বড় রকমের পরিবর্তনের কারণে এই এলাকাটি মাটিচাপা পড়ে যায়। এর ফলে এটি প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে পরিণত হয়।

প্রশ্ন ঘ. ব্রহ্মপুত্র নদ আগে কোথা দিয়ে প্রবাহিত হতো আর এখন কোথায়?
উত্তর :
১৭৭০ সাল পর্যন্ত পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ময়মনসিংহ পেরিয়ে নরসিংদী জেলার বেলাবোর দক্ষিণ দিক থেকে প্রাচীন সোনার নগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ছিল। বর্তমানে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ নরসিংদী দিয়ে প্রবাহিত হয়।

প্রশ্ন ঙ. কোন কোন নিদর্শন থেকে উয়ারী-বটেশ্বরের সময়কাল জানা যায়?
উত্তর :
২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে উয়ারী-বটেশ্বরে খনন কাজ শুরু হয়। খনন করে পাওয়া যায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ-নগর। আরও পাওয়া যায় ইটের স্থাপত্য, বন্দর, রাস্তা, গলি, পোড়ামাটির ফলক, মূল্যবান পাথর, পাথরের বাটখারা, কাচের পুঁতি, মুদ্রাভাণ্ডার। মুদ্রাগুলো ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাপ্ত প্রত্ননিদর্শনগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম। এ থেকে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মাটির নিচে থাকা এ স্থানটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো।

প্রশ্ন চ. উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ যা ধারণা করেছেন তা বর্ণনা কর।
উত্তর :
প্রাপ্ত নিদর্শনগুলো থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছেন উয়ারী-বটেশ্বর প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো। সে সময় শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে সুসভ্য মানুষের বসবাস ছিল। ছিল নগর-সভ্যতা। পূর্ব-দক্ষিণ দিক দিয়ে, ভৈরবের মেঘনা হয়ে এখানকার ব্যবসায়-বাণিজ্য সুদূর জনপদ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। ঐতিহাসিকদের ধারণা, ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়-বাণিজ্য চলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সুদূর রোমান পর্যন্ত ‘উয়ারী-বটেশ্বর’ রাজ্যের যোগাযোগ ছিল।

৪. বিশেষভাবে লক্ষ করি।
ছাপাঙ্কিত— ছাপ হলো দাগ বা চিহ্ন দেওয়া। কোনো কিছুর ওপর ছাপ দিয়ে অঙ্কন করা। বাংলাদেশের মুদ্রার ওপর শাপলা ফুল ছাপাঙ্কিত আছে।
এখানে দুটি শব্দ, ছাপ + অঙ্কিত মিলে হয়েছে ছাপাঙ্কিত। এই রকম দুই শব্দের মিলন হলে তাকে বলে সন্ধি। যেমন, নীল + আকাশ = নীলাকাশ।

আরো পড়ো → ঘাসফুল কবিতার প্রশ্ন উত্তর
আরো পড়ো অবাক জলপান নাটিকাটির প্রশ্ন উত্তর

৫. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. উয়ারী-বটেশ্বরের প্রচুর প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করে জাদুঘরে কে জমা দেন?
১. হাসিবুল্লাহ পাঠান
২. হাফিজুল্লাহ পাঠান
৩. হাবিবুল্লাহ পাঠান
৪. শরিফুল্লাহ পাঠান
খ. একটি বৌদ্ধবিহারের সন্ধান পাওয়া গেছে—
১. ভাষানটেকে
২. জানখঁরটেকে
৩. টেকেরহাটে
৪. টঙ্গীরটেকে
গ. কোন নদীপাড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছিল সুসভ্য মানুষজনের বসবাস?
১. বুড়িগঙ্গাঁ
২. ব্ৰহ্মপুত্র
৩. শীতলক্ষ্যা
৪. মেঘনা
ঘ. ব্রহ্মপুত্র নদ বয়ে গেছে কোন অঞ্চলের পাশ দিয়ে?
১. মধুপুর
২. ময়নামতি
৩. পাহাড়পুর
৪. নরসিংদী
ঙ. এই সভ্যতা প্রাচীনকালে কী নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত ছিল?
১. রূপাগড়া
২. মনগড়া
৩. সোনাগড়া
৪. সোনাঝুরি

৬. কর্ম-অনুশীলন।
বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে রচনা লিখি।
উত্তর : বাংলাদেশের যেকোনো একটি ঐতিহাসিক স্থান সম্পর্কে রচনা লিখো।

Leave a Comment