(বাংলা) SSC: মানুষ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

মানুষ হচ্ছে মাধ্যমিক অর্থাৎ নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বই এর কাজী নজরুল ইসলাম এর কবিতা। মানুষ কবিতা থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

মানুষ কবিতার সৃজনশীল

১. “এই যে মায়ের অনাদরে ক্লিষ্ট শিশুগুলি,

পরনে নেই ছেঁড়া কানি, সারা গায়ে ধূলি।
সারাদিনের অনাহারে শুষ্ক বদনখানি
খিদের জ্বালায় ক্ষুণ্ণ, তাতে জ্বরের ধুকধুকানি।
অযতনে বাছাদের হায়, গা গিয়েছে ফেটে,
খুদ-ঘাঁটা তাও জোটে নাকো সারাটা দিন খেটে।
এদের ফেলে ওগো ধনী, ওগো দেশের রাজা,
কেমন করে রোচে মুখে মন্ডা-মিঠাই খাজা?”

ক. ‘আজারি’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘সহসা বন্ধ হলো মন্দির’- কেন?
গ. উদ্দীপকের ধনী ও দেশের রাজার আচরণে ‘মানুষ’ কবিতার কোন চরিত্রের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়? বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. “উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানুষ’ কবিতার সম্পূর্ণভাব ধারণ করে না”- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘আজারি’ শব্দের অর্থ রুগ্‌ণ, ব্যথিত।

খ. জীর্ণ বস্ত্রধারী শীর্ণদেহী সাত দিনের অনাহারী ভুখারি পান্থকে দেখে সহসা মন্দির বন্ধ হলো।
ক্ষুধার্ত পান্থ মন্দিরের প্রসাদ খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্ত করার প্রত্যাশায় পূজারিকে মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পূজারি ভেবেছিলেন এ আহ্বান হয়তো কোনো দেবতার। তিনি হয়তো আজ দেবতার বর পেয়ে রাজা-টাজা হয়ে যাবেন। কিন্তু দরজা খুলে যখন তিনি জীর্ণবস্ত্র, শীর্ণ-দেহ পথিককে দেখলেন এবং জানতে পারলেন যে পথিক আজ সাত দিন ধরে কিছু খাননি, তখন হঠাৎ তিনি মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দিলেন। পূজারির স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় এবং স্বার্থহানির আশঙ্কায় সহসা মন্দির বন্ধ হলো।

গ. উদ্দীপকের ধনী ও দেশের রাজার আচরণে ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা ও পুরোহিতের চরিত্রের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

মসজিদ, মন্দির ইত্যাদি ধর্মীয় উপাসনালয়। এখানে মানুষ সৃষ্টিকর্তার কাছে ইহকালের কল্যাণ ও পরকালের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করে। এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সব মানুষের সমান অধিকার স্বীকৃত। কিন্তু একশ্রেণির স্বার্থান্ধ মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়ে মসজিদ, মন্দির প্রভৃতি ধর্মীয় উপাসনালয়কে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। মানুষ ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কাব্য- কবিতায় এসব স্বার্থান্ধ মানুষের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

উদ্দীপকে অসহায় নিরন্ন মানুষের প্রতি ধনিকশ্রেণি ও দেশের রাজার নির্দয় নিষ্ঠুরতার পরিচয় বিধৃত হয়েছে। ধনিক শ্রেণি ও দেশের রাজা দারিদ্র্যক্লিষ্ট শিশুদের মানবেতর জীবনের প্রতি উদাসীন। এসব শিশুর পরনে কাপড় নেই, পেটে ভাত নেই। অযত্ন-অবহেলায় তারা অমানুষিক কষ্ট ভোগ করে। অথচ ধনিকশ্রেণি ও দেশের রাজা তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা ভাবে না। অসহায় শিশুদের কথা ভুলে তারা কীভাবে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার খায়, এটাই প্রশ্ন। তাদের এরূপ নিষ্ঠুরতা ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা-পুরুতের মধ্যেও দেখা যায়।

উক্ত কবিতায় উল্লিখিত মোল্লা-পুরুতও নিরন্ন মানুষের প্রতি নির্দয় আচরণ করে। সাত দিনের অভুক্ত পথিকও মন্দিরের পুরোহিতের খাবার চেয়ে পায় না। পুরোহিত তাকে দেখে হঠাৎ মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে মসজিদের মোল্লা সাহেবও অঢেল গোস্ত-রুটি থাকা সত্ত্বেও সাত দিনের উপবাসী মুসাফিরকে নামাজ না পড়ার অজুহাতে তাড়িয়ে দিয়ে মসজিদে তালা লাগায়। এতে বোঝা যায়, ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা ও পুরোহিতের এরূপ নির্দয় আচরণের দিকটি উদ্দীপকের ধনী ও দেশের রাজার আচরণে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানুষ‘ কবিতার সম্পূর্ণভাব ধারণ করে না, কেননা উদ্দীপকে উক্ত কবিতার একটি দিক ফুটে উঠলেও অন্যসব বিষয়ের প্রতিফলন নেই।

কাজী নজরুল ইসলাম সাম্যবাদী আদর্শে বিশ্বাসী কবি। তিনি সব শ্রেণিবৈষম্যের ঊর্ধ্বে মানুষকে মানুষের মর্যাদায় দেখতে চেয়েছেন। তার দৃষ্টিতে মানুষের স্থান সব সৃষ্টির ঊর্ধ্বে এবং জগতে মানুষই সবচেয়ে মহীয়ান। তাই তাঁর কাব্য-কবিতায় ক্ষুধার্ত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার বাণী উচ্চারিত হয়েছে।

উদ্দীপকের কবিতাংশে অনাদর-অবহেলায় বঞ্চিত শিশুদের মানবেতর জীবনের দুর্ভোগের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। শিশুগুলো অনাদরে ক্লিষ্ট, তাদের পরনে ছেঁড়া বস্ত্র, গায়ে ধূলিময়লা। সারাদিন না খেয়ে তাদের বদন শুকিয়ে গেছে। অযত্নে ফেটে গেছে তাদের শরীর। সারাদিন খেটেও তাদের ভাগ্যে খুদ-ঘাঁটাও জোটে না। অথচ ধনিকশ্রেণি ও দেশের রাজার সেদিকে কোনো নজর নেই। তারা পরম সুখে মুখরোচক খাবার খেয়ে দিনযাপন করছে। ‘মানুষ’ কবিতায়ও নিরন্ন মানুষের প্রতি স্বার্থান্ধ মোল্লা-পুরোহিতের অমানবিক আচরণের পরিচয় পাওয়া যায়। তবে উক্ত কবিতায় এদিকটি ছাড়াও সাম্যবাদী চেতনার আলোকে কবির প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে, যার প্রতিফলন উদ্দীপকের কবিতাংশে নেই। মসজিদ-মন্দিরে সব শ্রেণির মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সংগ্রামী ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভজনালয়ের তালা ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়ে তাতে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, “উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘মানুষ’ কবিতার সম্পূর্ণভাব ধারণ করে না” মন্তব্যটি যথার্থ।

২. সাবিনা ও শাহিনা দুই বোন। রমজান মাসে একজন ভূখারি এসে কিছু খাবার চাইলে সাবিনা বলল: তুমি যদি রোযা থাক তবে অপেক্ষা করে ইফতার করে যাও, আর রোজা না থাকলে এখনি চলে যাও। শাহিনা বলল : তুমি ক্ষুধার্ত হলে অপেক্ষা কর, পেট পুরে খেয়ে যাও।

ক. মানুষ কবিতায় উল্লিখিত কীসের সব দ্বার খোলা রবে?
খ. ‘মানুষ’ কবিতায় ‘স্বার্থের জয়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের প্রথম উক্তিটি ‘মানুষ’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় উক্তিটি পাঠ্য কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মানুষ কবিতায় উল্লিখিত খোদার ঘরের সব দ্বার খোলা রবে।

খ. ‘স্বার্থের জয়’ বলতে ধর্মের মুখোশধারীদের পার্থিব জয়ের কথা বলা হয়েছে।
ধর্মের উপাসনালয় মসজিদ-মন্দিরে অনেক সময় মোল্লা-পুরোহিতরা তাদের প্রভাব বিস্তার করে। মানুষের দানের টাকা-পয়সা, শিরনি, গোশত-রুটি, মিষ্টি-প্রসাদ তারা নিঃস্ব-গরিবদের মাঝে বিতরণ না করে নিজেরা ভোগ করে। ক্ষুধার্ত পথিক মসজিদ-মন্দিরে গিয়ে কিছু চাইলে মোল্লা-পুরোহিতরা ঘৃণাভরে তাড়িয়ে দেয়। কবি দেখিয়েছেন, ধর্মের নামে ভণ্ডের দল ভজনালয়ের মিনারে চড়ে নিজেদের স্বার্থের জয়গান গায়।

গ. উদ্দীপকের প্রথম উক্তিটি ‘মানুষ’ কবিতার সাথে কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ।

একজন ভূখারি মোল্লা সাহেবকে কিছু খাবার দিতে বলেছিল আর মোল্লা সাহেবের কাছেও ছিল অঢেল গোস্ত-রুটি। মোল্লা সাহেব নিজে আনন্দিত হলেও ভুখারিকে খাদ্য না দিয়ে বলল, বেটা তুই নামাজ পড়িস? ভুখারি বলল, না বাবা! আমি নামাজ পড়ি না। মোল্লা তাকে তাচ্ছিল্যভাবে বলল, তাহলে সোজা পথে বেরিয়ে যাও। ভুখারি চলে গেল এবং মনে মনে বলল, আশিটা বছর কেটে গেল কোনো দিন তোমায় ডাকিনি প্রভু, তবুও তুমি তো আমার ক্ষুধার অন্ন বন্ধ করনি।

উদ্দীপকে দেখা যায়, সাবিনার কাছে ভুখারি কিছু খাবার চাইলে সে রমজান মাস বিধায় ভুখারিকে বলল, তুমি যদি রোজা থাক তাহলে অপেক্ষা কর ইফতারের সময় হলে খেয়ে যেও। আর রোজা না থাকলে সোজা চলে যাও। এখানে পাঠ্য কবিতার সাথে এদিক থেকে সাদৃশ্য আছে যে, খাদ্য থাকা সত্ত্বেও সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। ক্ষুধায় অন্ন দেওয়া হয়নি। ক্ষুধার্ত ব্যক্তি রোজা না থাকলেও তাকে অন্ন দেওয়া থেকে বিরত থাকা ধর্মীয় বিধান নয়। কারণ সে মুসাফির, অসুস্থ বা অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকের দ্বিতীয় উক্তিটি পাঠ্য কবিতার আলোকে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

পাঠ্য কবিতা ‘মানুষ’-এ দেখা যায়, মোল্লা সাহেব ইবাদতের স্থান মসজিদে থেকে এবং নিজে একজন ধার্মিক হয়েও ক্ষুধার্তকে অন্ন না দিয়ে মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দেয়। মোল্লা সাহেবের কাছে অঢেল গোস্ত রুটি থাকার পরও তিনি সাত দিনের অনাহারে থাকা ভুখারিকে খাবার না দিয়ে অমানবিক কাজ করেছিলেন, যা মানবতাবাদ ও নৈতিকতার দিক থেকে গ্রহণযোগ্য নয়।

উদ্দীপকের দ্বিতীয় উক্তির আলোকে দেখা যায়, শাহিনা ক্ষুধার্তকে বলে, তুমি ক্ষুধার্ত হলে অপেক্ষা কর এবং পেট পুরে খেয়ে যাও। এখানে নৈতিকতাবোধ, মানবতাবোধ ও শরিয়ত সবই সমুন্নত রাখা হয়েছে। ভুখারি ক্ষুধার্ত, তার ক্ষুধার অন্ন তাকে দিতে হবে। রোজার দিন হলেও হয়তো ভুখারি মুসাফির, অসুস্থ বা অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী তাই তাকে না খাইয়ে সরাসরি তাড়িয়ে দেওয়া নৈতিকতাসম্পন্ন নয় বলে শাহিনা তাকে খেতে দিয়েছে। আর ‘মানুষ’ কবিতায় ক্ষুধার্তকে তাড়িয়ে দিয়ে মানবতাবোধকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উদ্দীপক ও পাঠ্য কবিতার মাঝে বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের দ্বিতীয় উক্তি পাঠ্য কবিতা ‘মানুষ’-এর মূল বিষয়ের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

৩. রূপনগর গ্রামে কয়েকজন তরুণ মিলে গ্রামের অসহায়-গরিবদের সাহায্য-সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে একটি দরিদ্র তহবিল গঠন করে। তারপর গ্রামের যত দরিদ্র অসহায় নিরীহ মানুষ। ছিল সবাইকে তারা অর্থ দিয়ে, খাদ্য দিয়ে, শ্রম দিয়ে সাহায্য- সহযোগিতা করতে শুরু করে। হঠাৎ এক ঝড়ের রাতে এক অনাহারী বৃদ্ধ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে তহবিল গঠনকারীদের কাছে এসে তার অভাবের কথা বলে। লোকটির কথা শুনে এবং তার অবস্থা দেখে। তহবিল গঠনকারী প্রত্যেকটি তরুণের চোখেই পানি এসে পড়ে। তারা সবাই ঐ মানুষটিকে যথাযথ সাহায্যদানে সর্বাত্মক চেষ্টা করে।

ক. অঢেল গোস্ত-রুটি বেঁচে যাওয়ায় কে হেসে কুটি কুটি হয়?
খ. মোল্লা সাহেব মুসাফিরকে দেখে কী রকম আচরণ করল?
গ. উদ্দীপকে অনাহারী ব্যক্তির সাথে ‘মানুষ’ কবিতার মুসাফিরের জীবনের অমিল দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপকের তরুণদের কর্মকাণ্ড যেন ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা- পুরোহিতদের সম্পূর্ণ বিপরীত”- বক্তব্যটির পক্ষে তোমার যুক্তি উপস্থাপন কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. অঢেল গোস্ত-রুটি বেঁচে যাওয়ায় মোল্লা সাহেব হেসে কুটি কুটি হয়।

খ. মুসাফির খাবার চাইলে মোল্লা সাহেব নামাজের দোহাই দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দিল।

মুসাফির সাত দিন অভুক্ত থাকার পর মসজিদে পৌঁছে খাবার চাইলে মোল্লা সাহেব মুসাফিরকে গো-ভাগাড়ে গিয়ে মরতে বলে এবং নামাজ পড়ে কি না তা জানতে চায়। মুসাফির উত্তরে ‘না’ বললে মোল্লা সাহেব তাকে গালি দিয়ে বের করে দেয় এবং মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়।

গ. অভুক্ত অবস্থায় অন্যের কাছে অন্ন ও সহানুভূতি বা সহমর্মিতা পাওয়া না পাওয়ার দিক দিয়ে উদ্দীপকের অনাহারী ব্যক্তির সাথে ‘মানুষ’ কবিতার মুসাফিরের অমিল রয়েছে।

পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ রয়েছে, যাদের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অসহায় অনাহারীকে অন্ন দান না করে নিজেরা আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করে থাকে। আবার এমন অনেক অসামর্থ্যবান মানুষও রয়েছে যারা নিজেরা ঠিকমতো খেতে-পরতে না পারলেও দরিদ্র, অসহায়দের সাহায্যের কথা ভাবে এবং নিরন্নকে অন্ন, পথিককে ঠাঁই দান করে থাকে। এমন বিপরীত চিত্র দেখা যায়, উদ্দীপক ও ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা-পুরোহিতের ঘটনায়।

‘মানুষ’ কবিতায় সাত দিনের অনাহারে থাকা একজন মুসাফির ক্ষুধায় অতিষ্ঠ হয়ে প্রথমে মন্দিরে পূজারির কাছে, পরে মসজিদে এক মোল্লার কাছে গিয়ে তার ক্ষুধার জ্বালার কথা বর্ণনা করে। কিন্তু উভয় স্থানেই মুসাফির অন্ন না পেয়ে লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার শিকার হয়। কিন্তু উদ্দীপকের অনাহারী ব্যক্তির ঘটনায় এর ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। সে ক’দিন অনাহারী থেকে যখন রূপনগর গ্রামের দরিদ্র তহবিল গঠনকারী তরুণদের কাছে গিয়ে তার ক্ষুধার যন্ত্রণার কথা বলে, সাথে সাথে তরুণরা তার অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করে। সেই সাথে তার যত্নাদি ও সমাদরের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, যা ‘মানুষ’ কবিতার মুসাফিরের ঘটনায় দেখা যায়নি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের অনাহারী ব্যক্তির সাথে ‘মানুষ’ কবিতায় মুসাফিরের জীবনে অন্ন ও সহানুভূতি না পাওয়ার দিক দিয়ে অমিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের তরুণদের কর্মকাণ্ড যে ‘মানুষ’ কবিতায় মোল্লা- পুরোহিতদের সম্পূর্ণ বিপরীত- বক্তব্যটির সাথে আমি একমত।

প্রকৃত মানুষ তারা যারা মানুষকে মানুষ হিসেবে যথার্থ মূল্যায়ন করে। কেননা চোখ, কান, নাক, হাত, পা-বিশিষ্ট মানুষের খোলসে আবৃত এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা মোল্লা-পুরোহিত হয়েও অসহায়কে অন্ন দান না করে মসজিদ-মন্দিরের দ্বারে তালা মারে, আবার অনেক সামর্থ্যহীন তরুণ বা যুবক ও সাধারণ মানুষ রয়েছে যারা নিজেরা কষ্ট করে হলেও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দরিদ্র-অসহায়কে সাহায্য সহযোগিতা এবং অনাহারীকে অন্নদানের চেষ্টা করে থাকে।

‘মানুষ’ কবিতায় দেখা যায়, সাত দিনের অনাহারে থাকা একজন মুসাফির জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে রূপনগর গ্রামের দরিদ্র তহবিল গঠনকারী তরুণ যুবকদের কাছে গিয়ে তার ক্ষুধার জ্বালার কথা বলে। সঙ্গে সঙ্গে তরুণরা তার ক্ষুধা মেটানোর ব্যবস্থা করে, যার ছিটেফোঁটাও ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা- পুরোহিতদের চরিত্রে দেখা যায়নি।

‘মানুষ’ কবিতায় কবি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের জয়গান গেয়েছেন। উদ্দীপকের কতিপয় যুবকের কর্মপ্রচেষ্টায় আমরা সেই জয়গানের বাস্তবরূপ দেখতে পাই। উদ্দীপকের তরুণদের মানসিকতা ও কর্মপ্রচেষ্টা ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা-পুরোহিতদের চরিত্রের বিপরীত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের তরুণদের কর্মকাণ্ড ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা-পুরোহিতদের সম্পূর্ণ বিপরীত।

৪. জনাব আহমেদ সাহেব একজন মানবতাবাদী মানুষ। তিনি দরিদ্রজনকে ভালোবাসেন এবং তাদের অধিকারের কথা বলেন। তিনি নিজের সাধ্যমতো দান করেন। ধর্মের জন্য নয় তিনি মানবতার কারণেই বিপদগ্রস্তকে সাহায্য সহযোগিতা করেন।

ক. ‘মানুষ’ কবিতায় ‘পুরুত’ শব্দের দ্বারা কার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে?
খ. ভুখারি ফিরে যাওয়ার সময় কী বলেছিলেন? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের আহমেদ সাহেবের সাথে কবিতার মোল্লা পুরুতের বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে ‘মানুষ’ কবিতার মূলভাব ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘মানুষ’ কবিতায় পুরুত শব্দের দ্বারা পূজা-অর্চনা পরিচালনার মুখ্য ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

খ. ভুখারি ফিরে যাওয়ার সময় বলেছিল, প্রভুকে না ডেকেই সে দীর্ঘ আশিটি বছর পার করেছে, কিন্তু এ কারণে প্রভু তার খাদ্য বন্ধ করে দেননি।
ভুখারি খাবার না পেয়ে ফিরে যাওয়ার সময় অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সাথে আক্ষেপ করে বলেছে যে, প্রভুকে না ডেকেই সে আশিটি বছর পার করে দিয়েছে; অথচ প্রভু তার খাদ্য বন্ধ করে দেননি। আর সামান্য মোল্লার নিকট খাবার চাইতে গেলে খাবার না দিয়ে নামাজের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে, তাকে গালমন্দ করেছে, গো-ভাগাড়ে গিয়ে মরতে বলেছে। সাত দিনের অনাহারী ভুখারিকে খাদ্য না দেওয়া মোল্লার চরম অন্যায় ও অধর্ম হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের আহমেদ সাহেবের সাথে কবিতার মোল্লা পুরুতের বিশাল বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

উদ্দীপকের আহমেদ সাহেব সাম্যবাদী চেতনার একজন মানবতাবাদী আর ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা পুরুত অমানবিক ও হৃদয়হীন পাষণ্ড ব্যক্তি। যখন ধর্মকে পুঁজি করে কেউ নিজ স্বার্থকে বড় করে দেখে তখন সে ধর্ম ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও ব্যক্তিস্বার্থ সংশ্লিষ্ট।

উদ্দীপকের আহমেদ সাহেব ধর্মের খাতিরে নয়, নিজের মানবিক ‘সত্তার নিকট দায়বদ্ধতার খাতিরেই দরিদ্রজনকে ভালোবাসেন এবং সাধ্যমতো দান করেন। কিন্তু ‘মানুষ’ কবিতার মোল্লা পুরুত ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত। তারপরও ক্ষুধার্ত ভূখারিকে সামান্য খাদ্য দেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। ধর্মের সুমহান বাণীকে বা শিক্ষাকে তারা অস্বীকার করেছেন। কারণ মানুষ ও মানবতাকে পদদলিত করে বা অবজ্ঞা করে ধর্ম হয় না; বরং এটি ধর্মের বাণীও নয়। এদিক থেকে উদ্দীপকের আহমদ সাহেবের সাথে কবিতার মোল্লা- পুরুতের বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. আলোচ্য উদ্দীপকে আহমেদ সাহেব একজন সাম্য ও মানবতাবাদী চেতনার অধিকারী। এটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘মানুষ’ কবিতার মূলভাবকে ইঙ্গিত করেছে।

কবি নজরুলের মানবতা ধর্ম, দর্শনকে আশ্রয় করেই গড়ে উঠেছে ‘মানুষ’ কবিতা। কবি এখানে মানবতার গান গেয়েছেন। আর উদ্দীপকের আহমেদ সাহেবের কার্যক্রমেও মানবতার দিকটি ফুটে উঠেছে শুধু মানবতাবাদকে কেন্দ্র করে।

উদ্দীপকের আহমেদ সাহেব মানবধর্মে ও হৃদয় ধর্মেই ছিলেন বলীয়ান। তিনি মানবধর্মের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই অসহায় বিপদগ্রস্তকে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। তিনি তার সাধ্যমতো দান করেন। কিন্তু ‘মানুষ’ কবিতায় মোল্লা-পুরুত ধর্মের শিক্ষা পদদলিত করেছে। একজন অসুস্থ জীর্ণ পোশাকধারী সাত দিনের অনাহারী ভুখারিকে তারা সামান্য খাদ্য থেকে বঞ্চিত করেছে, যদিও তাদের নিকট পর্যান্ত খাদ্য ছিল। মানবতার খাতিরে তো নয়ই; বরং অসহায়ত্বের খাতিরেও তাকে খাদ্য দেওয়া হয়নি। তারা উপাসনার স্থানকে ভোজনালয় করে তুলেছে। ধর্মকে কেন্দ্র করেই একদল মানুষ স্বার্থ অন্বেষণে ব্যস্ত রয়েছে। যা বড় ধরনের অন্যায় ও পাপ। সমাজে এসব মানুষের মুখোশ খুলে দিতে কবি সাম্য ও মানবতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।

পরিশেষে বলা যায়, ‘মানুষ’ কবিতায় কবি সাম্য, ন্যায়বিচার ও সুষম বণ্টনের রীতিনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক।

আরো পড়োকপোতাক্ষ নদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৫. খোদা বলিবেন, ‘হে আদম সন্তান,

আমি চেয়েছিনু ক্ষুধায় অন্ন, তুমি কর নাই দান।’
মানুষ বলিবে, ‘তুমি জগতের প্রভু,
আমরা তোমাকে কেমনে খাওয়াব, সে কাজ কি হয় কভু?’
বলিবেন খোদা, ‘ক্ষুধিত বান্দা গিয়েছিল তব দ্বারে,
মোর কাছে তুমি ফিরে পেতে তাহা যদি খাওয়াইতে তারে।’

ক. পথিক কী বলে পূজারীকে ডাক দিল?
খ. ‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’ এ কথা বলার কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘মানুষ’ কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের চরণগুলো ‘মানুষ’ কবিতায় সামগ্রিক ভাবকে ধারণ করে কি? যুক্তিসহ প্রমাণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. পথিক ‘দ্বার খোলো বাবা, খাইনি তো সাত দিন’ বলে পূজারীকে ডাক দিল।

খ. পুরোহিত মন্দিরের দরজা বন্ধ করে ফেলায় ক্ষুধার্ত পান্থ এ কথা বলেছে।
ক্ষুধার্ত পান্থ সাত দিন ধরে উপোস। খাবারের আশায় সে মন্দিরে। যায়। সে মন্দিরের পুরোহিতকে ডেকে দরজা খুলতে বলে। পুরোহিত দরজা খুলে জীর্ণ বস্ত্র এবং শীর্ণ গাত্রের ক্ষুধার্তকে দেখে আবার দরজা বন্ধ করে দেয়। তখন সে ফিরে যায় এবং বলে, এ মন্দির পূজারির; এটি পুরোহিত তথা দেবতার নয়। অর্থাৎ মন্দির উপাসকের; মন্দিরের রক্ষকের নয়।

গ. উদ্দীপকের ক্ষুধার্তকে উপেক্ষার দিকটির সাথে ‘মানুষ’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।

আমাদের সমাজে ধনী-দরিদ্র দু’শ্রেণির মানুষের বসবাস রয়েছে। ধনীদের উচিত গরিবদের সাহায্য-সহায়তা করা। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এর গুরুত্ব অত্যধিক। কিন্তু ধনিক শ্রেণি, মোল্লা-পুরোহিত অনেকেই গরিবদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে। গরিরদের এতটুকু সহায়তা করতেও তাদের মন গলে না।

উদ্দীপকে প্রতীকীভাবে বর্ণিত হয়েছে, হাশরের দিন আল্লাহতায়ালা আদম সন্তানদের ডেকে বলবেন, আমি ক্ষুধায় অন্ন চেয়েছি তুমি আমাকে অন্ন দান করনি। মানুষ বলবে, তুমি জগতের প্রভু, আমরা তোমায় কীভাবে খাওয়াবো? আল্লাহ বলবেন, আমার ক্ষুধার্ত বান্দা তোমার দরজায় গিয়েছিল, তুমি যদি তাকে খাওয়াতে তবে আজ তা আমার কাছে পেতে। তখন মানুষ বাকরুদ্ধ হবে এবং আল্লাহর দয়া থেকে বঞ্চিত হবে। তেমনিভাবে ‘মানুষ’ কবিতায় আমরা দেখতে পাই, এক ক্ষুধার্ত পথিক মন্দির-মসজিদের দরজায় গিয়ে চিৎকার করে বলে, ওহে পূজারি, ওহে মোল্লা সাহেব। আমি সাত দিনের ভুখা, আমাকে কিছু খাবার দাও। কিন্তু প্রচুর খাবার থাকার পরও কেউ তাকে খাবার দেয়নি। সে ক্ষুধার্ত অসহায় অবস্থায় ফিরে গেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সাথে ‘মানুষ’ কবিতার সুন্দর সাদৃশ্য ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকের চরণগুলো ‘মানুষ’ কবিতার সামগ্রিক ভাবকে ধারণ করে না।

আমাদের সমাজে অনেক দরিদ্র নিরন্ন, অসহায় আঁতুর মানুষ দেখা যায়। তারা সবসময় ধনীদের সাহায্যপ্রার্থী। কিন্তু খুব কমসংখ্যক ধনীই দরিদ্রের সাহায্যে এগিয়ে আসে। সমাজে ধনী-দরিদ্রের এ বৈষম্য বাস্তবিকই মর্মান্তিক। এ বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা ভাঙতে চেয়েছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

উদ্দীপকে প্রতীকীভাবে ফুটে উঠেছে, হাশরের ময়দানে আল্লাহতায়ালা আদম সন্তানদের ডেকে বলবেন, আমি ক্ষুধার্ত অবস্থায় তোমার কাছে অন্ন চেয়েছি কিন্তু তুমি আমাকে অন্ন দাওনি। মানুষ বলবে, আজ তুমি জগতের প্রভু, আমরা তোমাকে কীভাবে খাওয়াবো? আল্লাহ বলবেন, আমার ক্ষুধার্ত বান্দা তোমার কাছে অন্ন চেয়েছিল, কতায় কিন্তু তুমি তাকে অন্ন দাওনি। যদি দিতে তাহলে তা আজ আমার কাছে পুরস্কার হিসেবে পেতে। শুধু ক্ষুধার্তকে অম্ল না দেওয়ার চিত্রটি যাক উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে। এখানে কোনো ক্ষোভ বা প্রতিবাদ প্রকাশ পায়নি। বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা ভাঙারও কোনো ইঙ্গিত নেই।

অন্যদিকে ‘মানুষ’ কবিতায় আমরা দেখতে পাই, সাত দিনের ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে খাবার না দেওয়ায় সে পূজারি ও মোল্লাকে তিরস্কার করেছে। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানিয়েছে আশিটি বছর তুমি আমাকে অন্ন দিয়েছ, আজ মোল্লা-পুরোহিত আমায় অন্ন দিতে নারাজ; অথচ এ মন্দির-মসজিদের মালিক মোল্লা-পুরোহিত নয়, কিন্তু তারাই আজ এতে তালা লাগায়। কবি কাজী নজরুল ইসলাম এখানে প্রতিবাদী কণ্ঠে বলেন, ভজনালয় আর খোদার ঘরে কে তালা লাগায়? হাতুড়ি, শাবল দিয়ে সব ভেঙে ফেলতে হবে। বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থার উচ্ছেদ করে সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। উদ্দীপকে এ ধরনের কোনো চেতনার ইঙ্গিত না থাকায় বলা যায়, উদ্দীপকের চরণগুলো ‘মানুষ’ কবিতার সমগ্রভাবকে ধারণ করে না।

Leave a Comment