(সমাজকর্ম-১ম) এইচএসসি:- সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হচ্ছে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী অর্থাৎ এইচএসসি’র সমাজকর্ম ১ম পত্রের দ্বিতীয় অধ্যায়। সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এর সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : ববির দাদু তৎকালীন ইংল্যান্ডের একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সেখানে তার প্রতিবেশী মি. মিন্টন ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তৎকালীন ইংল্যান্ডেও অনেক মানুষই মি. মিল্টনের মতো জীবনধারণ করতেন। তবে শেষ পর্যন্ত তারা ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। দেশের সরকার একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে এ আইনের অধীনে দরিদ্র ভিক্ষুকদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেছিলেন।

ক. উদ্দীপকে কোন আইনের কথা বলা হয়েছে?
খ. উক্ত আইনের দু’টি বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
গ. মি. মিল্টনের মত ছদ্মবেশী ভিক্ষুকদের জন্য উক্ত আইনের ব্যবস্থাগুলো কী কী?
ঘ. বাংলাদেশে ভিক্ষাবৃত্তি রোধে উক্ত আইনের প্রয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই কর।

১ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. উদ্দীপকে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের কথা বলা হয়েছে।

খ. উদ্দীপকে নির্দেশিত ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন দরিদ্রদের দায়ি গ্রহণে সরকারি দায়িত্বশীলতার প্রবর্তক।
ইংল্যান্ডের দরিদ্র ও ভবঘুরে সমস্যা নিরসনে দরিদ্র আইন ১৬০১ প্রণীত হয়। এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। প্রথমত, সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনসম্পন্ন দরিদ্রদের ভিক্ষা প্রাপ্তির অযোগ্য ঘোষণা করা হয় এবং তাদের দায়িত্ব গ্রহণে আত্মীয়-স্বজনদের বাধ্য করা হয়। দ্বিতীয়ত, সক্ষম ভিক্ষুকদের সংশোধনের জন্য সংশোধনাগার এবং কাজ করানোর জন্য শ্রমাগার এর ব্যবস্থা করা হয়।

গ. ববির দাদুর দেখা ভিক্ষুকদের জন্য ইংল্যান্ডের ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি প্রযোজ্য।
প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ড বিভিন্ন ধরনের আর্থ-সামাজিক সমস্যা ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল। ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত এসব সমস্যা মোকাবিলায় গৃহীত সরকারি কার্যক্রমের বেশির ভাগ ছিল শান্তি ও দমনমূলক। তাই দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং দরিদ্রদের সঠিক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি প্রণয়ন করা হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায় ইংল্যান্ডের বাসিন্দা মি. মিল্টন এবং তার মতো অনেক মানুষই ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। এ অবস্থা মোকাবিলায় ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি কার্যকরী করা হয়। কারণ উত্ত আইনে প্রকৃত ভিক্ষুকদের চিহ্নিত করে তাদের সাহায্যদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। পাশাপাশি কর্মক্ষম ভিক্ষুকদের সংশোধনাগারে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। এ আইনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ডের ইতিহাসে দরিদ্র ও ভবঘুরেদের দায়িত্ব সরকারিভাবে গ্রহণ করা হয়। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে দরিদ্রদের তিনভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা— সক্ষম দরিদ্র, অক্ষম দরিদ্র ও নির্ভরশীল শিশু শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী তাদের কাজ ও সাহায্য দেওয়া হয়। পারিবারিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম ব্যক্তিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের বিধান এ আইনে রাখা হয়।
এ আইন অনুযায়ী দরিদ্রদের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের সাহায্য করবে। দরিদ্রদের সচ্ছল কোনো আত্মীয়-স্বজন না থাকলে তাদের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করতো। সক্ষম দরিদ্রদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা হতো। এ আইনে ভিক্ষাবৃত্তির মনোভাব কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। সচ্ছল জনগণের ওপর দরিদ্রদের সাহায্যের জন্য বিভিন্ন করারোপের ব্যবস্থা করা হয়।

ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য মোকাবিলায় এ ধরনের আইন অর্থাৎ ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি অত্যন্ত কার্যকরী হবে।
প্রাক-শিল্প যুগে ইংল্যান্ডে দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিল। এ সময় সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনের চেষ্টা করেও আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। অবশেষে পূর্বের বিভিন্ন আইনের অভিজ্ঞতার আলোকে ১৬০১ সালের দারিদ্র্য আইনটি প্রণীত হয় যা দারিদ্র্য নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
উদ্দীপকে ইংল্যান্ডে মি. মিল্টন এবং তার মতো অনেক মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযাপন করত। কিন্তু ইংল্যান্ডের সরকার একটি আইন করে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করে এবং ভিক্ষুকদের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এ আইনটি হলো ১৬০১ সালের দরিদ্র্য আইন। আমাদের দেশেও দারিদ্র্য দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। এ সমস্যা সমাধানে ১৬০১ সালের পরিদ্র আইন প্রয়োগ করা যায়। এ আইন অনুযায়ী পরিদ্রদের চিহ্নিত করা হতো। প্রকৃত দরিদ্রদের যথাযথভাবে সাহায্য করার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদক্ষেপ। আমাদের দেশের দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য এ বিধান প্রয়োগ করা যায়। দরিদ্র আইনে দারিদ্র্যাবস্থা ও ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে সরকারের দায়িত্ব নিশ্চিত করা হয়। আমাদের দেশের সরকারও দারিদ্র্য বিমোচনে এ ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন অনুযায়ী আমাদের দেশেও দরিদ্রদের শ্রেণিবিভাগ করে সাহায্যদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে অক্ষম দরিদ্ররা সাহায্য পাবে। আর ছদ্মবেশী সক্ষম দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে। আমাদের দেশের সরকার দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য তাদের সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনদের বাধ্য করতে পারে। যেসব দরিদ্রদের সচ্চল আত্মীয়-স্বজন থাকবে না তাদের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া আমাদের দেশের সরকারকে আইনের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ কর্মসূচি আমাদের দেশের ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে সহায়ক হবে।
সার্বিক আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, আমাদের দেশের দারিদ্র্যাবস্থা ও ভিক্ষাবৃত্তি দূর করার জন্য ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এর সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত ইউরোপে বিশেষত ইংল্যান্ডে কলকারখানা ও উৎপাদন ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। এই পরিবর্তন সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। শিল্পায়ন, শহরায়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, উদ্ভাবন প্রভৃতি হচ্ছে এই পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ফল। বৈশ্বিক প্রয়োজন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার এর ব্যাপ্তি বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে অদক্ষ শ্রমিক বেকার, রোগ জীবাণু পরিবেশ দূষণ, পারিবারিক দূরত্ব তৈরিসহ নানা সমস্যাও সৃষ্টি করে।

ক. বিপ্লব শব্দের অর্থ কী?
খ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আমূল পরিবর্তন মানব জীবনে কী কী সুফল বয়ে আনে?
গ. উদ্দীপকে যে বিপ্লবের কথা বলা হয়েছে উহার নেতিবাচক দিকগুলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ইংল্যান্ডের আমূল পরিবর্তন কীভাবে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে? উদ্দীপকের আলোকে আলোচনা কর।

২ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বিপ্লব শব্দের অর্থ মৌল বা সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন।

খ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আমূল পরিবর্তনটি হলো শিল্প বিপ্লব। শিল্প বিপ্লব মানব জীবনে নানা ধরনের সুফল বয়ে আনে। শিল্পবিপ্লবের ফলে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, উৎপাদনের নিত্যনতুন কৌশল এবং যন্ত্রের উদ্ভাবন ঘটে। এর ফলে শিল্পায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। আর শিল্পায়নকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে শহরায়ণ প্রক্রিয়া। বৃহৎ আকৃতির কল কারখানা স্থাপিত হওয়ার কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে যা মানবজীবনের জন্য আশীর্বাদ।

গ. উদ্দীপকে শিল্প বিপ্লবের কথা বলা হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাবও লক্ষণীয়।
যেসব প্রচেষ্টা ও পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে শিল্প যুগের সূচনা হয় তাদের সমষ্টিকেই শিল্প বিপ্লব বলে। এ বিপ্লবের ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক ক্ষেত্রেও এ পরিবর্তন ও প্রভাব লক্ষ করা যায়। শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে ক্ষুদ্র শিল্পের পরিবর্তে যান্ত্রিক শিল্পের উদ্ভাবনের কারণে সমাজে বেকারত্বের সৃষ্টি হয়। শিল্প কারখানাগুলোতে ব্যাপক পেশাগত দুর্ঘটনা ও সংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাবের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। শিল্প বিপ্লব পুঁজিবাদের জন্ম দিয়েছে। ফলে শ্রমিক শোষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প বিপ্লবের ফলে যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার গড়ে উঠছে। যার কারণে পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যরা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এছাড়া পরিবারের স্বামী-স্ত্রী উভয়ে চাকরি করায় সন্তানদের সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ ব্যাহত হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই উপার্জন করায় অধিকার ও মর্যাদার দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে। যার কারণে তালাক, পৃথক বসবাস এমনকি আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। শিল্প কারখানার বর্জ্য পদার্থ, ধোঁয়া মারাত্মক পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি করছে।
উদ্দীপকে অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপের কলকারখানা ও উৎপাদন ক্ষেত্রের আমূল পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। এই পরিবর্তন সমাজ জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। উদ্দীপকের বিষয়টি শিল্প বিপ্লবকেই নির্দেশ করে। কারণ শিল্প বিপ্লবই অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে উৎপাদনসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল। এ বিপ্লবের নেতিবাচক প্রভাব বিশ্বে নানা সমস্যার জন্ম দিয়েছে।

ঘ. শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে ইংল্যান্ডের আমূল পরিবর্তন ইতিবাচকভাবে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
১৭৮০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে একটি সুদূরপ্রসারী ও দীর্ঘসময়ব্যাপী সামাজিক বিপ্লব বিশ্বের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন আনে। এর ফলে বদলে গেছে পৃথিবীর বাহ্যিক চেহারা, মৌল কাঠামোতে এসেছে পরিবর্তন, মানুষের জীবনাচরণ ও জীবনযাপন রীতিতে এসেছে বিরাট এক ভিন্নতা। একমাত্র নবপ্রস্তরযুগীয় সামাজিক পরিবর্তন ছাড়া ইতিহাসে বিবৃত এই সময়ের পরিবর্তনই সবচেয়ে গুরুত্ববহ। ইতিহাস ও অর্থনীতির ভাষায় এই বিপ্লবকেই বলা হয় শিল্প বিপ্লব। এই বিপ্লবের শুরু হয়েছিল ইল্যান্ডে, যা এ দেশের সামগ্রিক পরিবর্তন সাধন করেছিল। আর ইংল্যান্ডের এই আমূল পরিবর্তন বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে প্রভাবিত করে।
উদ্দীপকে বর্ণিত ইউরোপ বিশেষত ইংল্যান্ডে কলকারখানা ও উৎপাদন ক্ষেত্রে শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। এই পরিবর্তনই সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব, শহরায়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রের ব্যাপক উন্নয়ন বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে আকর্ষণ করে। এ বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ড অতি অল্প সময়ে বিশ্বে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। ফলে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোও ইংল্যান্ডকে অনুসরণ করে শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যায়। এভাবে বেলজিয়াম, সুইডেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়ায় শিল্প ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে। এছাড়া শিল্পক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো প্রভাবশালী হওয়ায় বিশ্বের অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রগুলোতে উপনিবেশ বিস্তার করে। এ দেশগুলোতেও ধীরে ধীরে শিল্প বিপ্লবের ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। ইংল্যান্ডের আমূল পরিবর্তন বিশ্বে একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। এতে শিল্পোন্নয়নের পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞান বিকাশ লাভ করে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, ইংল্যান্ডের আমূল পরিবর্তন সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রভাবে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এর সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : দরিদ্রদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উত্তোরণে বৃটেনের ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন একটি মাইলফলক। দরিদ্রদের শ্রেণীকরণ, পুনর্বাসন, সাহায্য, অসহায়দের দায়িত্ব গ্রহণসহ দারিদ্র্য নিরসনে এটি ছিল যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

ক. পণ্যদৈত্যসমূহ কী কী?
খ. উল্লিখিত আইনে পরিষদের শ্রেণিবিভাগ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনের বিশেষ বিশেষ দিকগুলো আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইন বাংলাদেশে একজন সমাজকর্মী কিভাবে প্রয়োগ করতে পারে? আলোচনা কর।

৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. পঞ্চ দৈত্যসমূহ হলো- অভাব, রোগ-ব্যাধি, মলিনতা, অলসতা ও অজ্ঞতা।

খ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনটি হচ্ছে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন, যাতে দরিদ্রদের তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়।
১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে দরিদ্রদের সক্ষম, অক্ষম দরিদ্র এবং নির্ভরশীল শিশু এ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। সবল বা কর্মক্ষম ভিক্ষুকদের সক্ষম দরিদ্র বলা হতো। রুম, বৃদ্ধ, পঙ্গু, বধির, অন্ধ এবং সন্তানাদিসহ বিধবা যার কাজ করতে সক্ষম নয় তারাই অক্ষম দরিদ্রের পর্যায়ভুক্ত ছিল। আর নির্ভরশীল শিশুর অন্তর্ভুক্ত ছিল এতিম, পরিত্যক্ত ও অক্ষম পিতা-মাতার সন্তানরা।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আইনটি ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের বিশেষ কিছু দিক বা ধাপ বিদ্যমান।
প্রাকশিল্প যুগে ইংল্যন্ডে দারিদ্রতা ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছিল। তাই দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং দরিদ্রদের সঠিক পুনর্বাসনের লক্ষ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে ১৬০১ সালে দরিদ্র আইনটি প্রণয়ন করা হয়। আইন অনুযায়ী দরিদ্র ব্যক্তির ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণে সক্ষম আত্মীয়-স্বজন থাকলে তাকে সাহায্যদানের তালিকাভুক্ত করা হতো না। প্যারিসের জন্মগত বাসিন্দা অথবা কমপক্ষে তিন বছর ধরে বসবাসরত দরিদ্রদেরই শুধুমাত্র সাহায্য করা হতো। সাহায্যদানের সুবিধার্থে দরিদ্রদের সক্ষম, অক্ষম এবং নির্ভরশীল শিশু এ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। সক্ষম ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। তাদের সংশোধনাগারে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। অক্ষম দরিদ্রদের দরিদ্রাগারে রেখে তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করানো হতো। নির্ভরশীল শিশুদের বিনা খরচে দত্তক অথবা কম খরচে লালন-পালনের জন্য দেওয়া হতো।
উদ্দীপকে দরিদ্রদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উত্তরণে ব্রিটেনের ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের উল্লেখ করা হয়েছে। পরিদ্রদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তাদের যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে আইনটি অত্যন্ত কার্যকরী ছিল।

ঘ. বাংলাদেশের দরিদ্রদের চিহ্নিতকরণ ও শ্রেণিকরণের মাধ্যমে সমাজকর্মী ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি প্রয়োগ করতে পারেন।
শিল্প যুগের পূর্বে ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য নিরসনে সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু এ সকল আইন দারিদ্র্য নিরসনে আশানুরূপ সাফল্য পায়নি। অবশেষে পূর্বের বিভিন্ন আইনের অভিজ্ঞতার আলোকে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি প্রণীত হয় যা দারিদ্র্য নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
উদ্দীপকে ইংল্যান্ডের দারিদ্র্য নিরসনে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনের ভূমিকা উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের দেশে দারিদ্র্য দিন দিন চরম আকার ধারণ করছে। এ সমস্যা সমাধানে একজন সমাজকর্মী ১৬০১ সালের দরিদ্র আইন প্রয়োগ করতে পারেন। এ আইন অনুযায়ী দরিদ্রদের চিহ্নিত করা হতো। প্রকৃত দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি পদক্ষেপ। আমাদের দেশের দরিদ্রদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে সমাজকর্মী প্রকৃত দরিদ্রদের চিহ্নিত করতে পারেন। এ আইনে দরিদ্রদের শ্রেণিবিভাগ করে সাহায্যদান করা হয়। আমাদের দেশের দরিদ্রদের সাহায্য করার ক্ষেত্রেও একজন সমাজকর্মী এ পদ্ধতিটির আশ্রয় নিতে পারেন। এর ফলে অক্ষম দরিদ্ররা সাহায্য পাবে। আর যারা সক্ষম দরিদ্র সমাজকর্মী তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন। আইনের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করার জন্যও তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায়, আমাদের দেশের দরিদ্রাবস্থা ও ভিক্ষাবৃত্তি দূর করার জন্য একজন সমাজকর্মী তার জ্ঞান ও কৌশল অবলম্বনে ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি প্রয়োগ করতে পারেন।

সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এর সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : জনাব রাকিব উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি লক্ষ করেন, এ দেশটিতে স্থায়ী নাগরিকের ক্ষেত্রে একটি শিশু জন্মদানের পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশেষ ভাতা প্রদান করা হয়। আবার বার্ধক্যে কিংবা মৃত্যুতেও সামাজিক বীমার আওতায় বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেওয়া হয়।

ক. প্যারিশ কী?
খ. কোন আইনে সক্ষম দরিদ্রদের চিহ্নিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. জনাব রাকিবের উল্লেখিত রাষ্ট্রে গৃহীত নিরাপত্তা কর্মসূচীর সুপারিশগুলো বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আইনগত ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করো।

৪ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. প্যারিশ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের প্রশাসনিক বিভাগের অন্তর্গত স্থানীয় প্রশাসনভিত্তিক কাউন্টি অঞ্চল।

খ. ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনে সক্ষম দরিদ্রদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৬০১ সালের দরিদ্র আইনটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য দরিদ্র ও ভবঘুরেদের ৩ শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। যথা: সক্ষম, অক্ষম ও নির্ভরশীল বালক-বালিকা। সবল ও কর্মক্ষম ভিক্ষুকদের সক্ষম দরিদ্র বা Sturdy beggers বলা হতো। এদের ভিক্ষাদান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। সক্ষম পরিষদের শ্রমাগারে অথবা সংশোধনাগারে কাজ করতে বাধ্য করা হতো। যেসব সক্ষম দরিদ্র শ্রমাগারে বা সংশোধনাগারে কাজ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করত, তাদের কারাগারে পাঠিয়ে শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা হতো।

গ. জনাব রাকিবের উল্লেখিত রাষ্ট্র অর্থাৎ ইংল্যান্ডে গৃহীত নিরাপত্তা কর্মসূচির সুপারিশ হলো বিভারিজ রিপোর্ট।
সমাজে যে সকল প্রতিবন্ধকতা সামাজিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ সেগুলো দূরীভূত করে সুস্থ সমাজব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য বিভারিজ রিপোর্টে ৫টি সুপারিশ পেশ করা হয়। প্রথমত, একটি একীভূত, ব্যাপক এবং পর্যাপ্ত সামাজিক বিমা কর্মসূচি প্রবর্তন করা। দ্বিতীয়ত, সামাজিক বিমা সুবিধা বহির্ভূত জনগণের জন্য জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা। তৃতীয়ত; প্রথম শিশুর পরবর্তী প্রতিটি শিশুর জন্য সাপ্তাহিক শিশু ভাতার ব্যবস্থা করা। চতুর্থত, সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে ব্যাপক স্বাস্থ্য ও পুনবার্সন কর্মসূচি গ্রহণ করা। পঞ্চমত, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় ব্যাপক বেকারত্ব রোধকল্পে সরকারি কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে পূর্ণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
উদ্দীপকে ইংল্যান্ডে প্রতিটি শিশু জন্মদানের পর প্রতিটি স্থায়ী জনগণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশেষ ভাতা প্রদান করা হয়। আবার বার্ধক্য বা মৃত্যুতেও সামাজিক বিমার আওতায় বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেওয়া হয়।

ঘ. উদ্দীপকের আলোকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আইনগত ৫টি মৌলিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে যে সব সামাজিক আইন প্রণীত হয় সেগুলো হলো ৫টি। এ পাচটি আইন বাস্তবায়নে ৫টি মৌলিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৫ সালের পারিবারিক ভাতা চালু হয়। প্রতিটি ব্যক্তির যাদের ২টি সন্তান আছে তাদেরকে ১৬ বছর পর্যন্ত নির্দিষ্ট হারে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৪৮ সালের জাতীয় সাহায্য অনুযায়ী সরকারি সাহায্য ব্যবস্থা চালু হয় যাতে ২ ধরনের সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ১৯৪৬ সালের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা আইন অনুযায়ী তিনটি শাখার মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে স্বাস্থ্য সেবা কর্মসূচি পরিচালনা করা শুরু হয়। ১৯৪৬ সালের দুর্ঘটনা আইন অনুযায়ী শিল্প দুর্ঘটনা বীমা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ বিমার আওতায় কর্মরত অবস্থায় কোনো শ্রমিক আহত হলে বা পেশাগত রোগে আক্রান্ত হলে দুর্ঘটনা ও রোগের প্রকৃতি অনুযায়ী অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান করা হতো।
উদ্দীপকে ইংল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিকের ক্ষেত্রে উপরে উল্লিখিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আইনগত ব্যবস্থাসমূহ চালু আছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বিভারিজ রিপোর্ট সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে পথ প্রদর্শন করে, সেই পথ ধরেই পরবর্তী কালে সমাজকল্যাণ কার্যক্রম | বৃদ্ধির মাধ্যমে ইংল্যান্ড পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত হয়।

সমাজকর্ম পেশার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এর সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : জনাব মনসুর আলম তার এলাকায় জনগণের ভোটে সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার সমস্যা সমাধানের জন্য ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে কমিটির সুপারিশ ও সমস্যায় সমাধানের জন্য তিনি দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা, বেকার ও অক্ষমদের জন্য মাসিক ভাতা, শিক্ষা ভাতাসহ বেশ কিছু সুবিধা দেওয়ার জন্য আরো কিছু সংসদ সদস্যকে সাথে নিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে। এর ফলে পরবর্তীতে জাতীয় বীমা আইন, খাদ্য আইনসহ কয়েকটি সামাজিক নিরাপত্তামূলক আইন প্রণীত হয়।

ক. প্যারিশ কী?
খ. বিভারিজ রিপোর্টের সুপারিশ লিখ।
গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে ইংল্যান্ডের কোন আইনের মিল রয়েছে? এর সুপারিশ লিখ।
ঘ. উত্ত আইনকে কিভাবে মনসুর আলম বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন ব্যাখ্যা কর।

৫ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. প্যারিশ হলো ইংল্যান্ডের স্থানীয় প্রশাসনভিত্তিক কাউন্টি অঞ্চল।

খ. বিভারিজ রিপোর্ট হলো ১৯৪২ সালে স্যার উইলিয়াম বিভারিজ প্রণীত ইংল্যান্ডের সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক একটি রিপোর্ট। ১৯৪২ সালে প্রণীত বিভারিজ রিপোর্টে মানব সমাজের অগ্রগতিতে বাধাদানকারী অন্তরায় গুলো দেখানো হয়েছে। অভাব, রোগ, অজ্ঞতা, মলিনতা ও অলসতাকে প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পাঁচটি সুপারিশ পেশ করা হয়েছিল।

গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশনের মিল রয়েছে।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইংল্যান্ডে ভয়াবহ বেকারত্ব দেখা দিলে তা থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি তহবিল গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এরকম পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি আইনগুলোর সংস্কার এবং বেকার সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হন। ফলে ১৯০৫ সালে লর্ড অর্জ হ্যামিল্টনকে সভাপতি করে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিশন গঠিত হয়। এ দরিদ্র আইন কমিশন সুপারিশমালা পেশ করে।
উদ্দীপকে উল্লেখিত জনাব মনসুর নির্বাচিত সাংসদ, যিনি এলাকার সমস্যা সমাধানে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। এ কমিটি কয়েকটি সুপারিশ করে। অনুরূপভাবে, ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশন কয়েকটি সুপারিশ করে। ১৮৩৪ সালের দরিদ্র আইন ইউনিয়ন এবং অভিভাবক বোর্ডের পরিবর্তে কাউন্টি কাউন্সিল গঠনের সুপারিশ করা হয়। শাস্তিমূলক সাহায্য কর্মসূচির পরিবর্তে মানবিক ও কল্যাণমূলক সাহায্য কর্মসূচি প্রবর্তন করার সুপারিশ করা হয়। মিশ্র দরিদ্রাগার বিলোপ এবং পেনশন, দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা, বেকার ভাতা ও কর্মসংস্থান কার্যক্রম, সরকারী বীমা কর্মসূচি প্রভৃতি সুবিধা প্রবর্তন করার জন্য সুপারিশ করা হয়। উদ্দীপকেও বিনামূল্যে চিকিৎসা, বেকার ও অক্ষমদের মাসিক ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ কারণে উদ্দীপকের ঘটনার সাথে ইংল্যান্ডের ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশন সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশনের সাদৃশ্যরূপ প্রয়োগের মাধ্যমে মনসুর আলম উক্ত আইনকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইংল্যান্ডে ভয়াবহ বেকার সমস্যা শুরু হয়েছিল, তা সমাধানের জন্য লিবারেল পার্টি দরিদ্র আইন কমিশন ১৯০৫ গঠন করেন। উত্ত কিমশন কিছু সুপারিশমালা পেশ করে। শাস্তিমূলক দরিদ্র আইনের পরিবর্তে কাউন্টি কাউন্সিল গঠন, কল্যাণমুখী সাহায্য কর্মসূচি গ্রহণ, মিশ্র দরিদ্রাগার বিলোপ, বীমা কর্মসূচির প্রবর্তন প্রভৃতি সুপারিশ গৃহিত হলে ইংল্যান্ডে সমাজ কল্যাণ ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। ফলস্বরূপ ১৯০৬ সালের খাদ্য আইন, ১৯০৭ সালের শিক্ষা আইন, ১৯০৯ সালের শিক্ষা বিনিয়োগ প্রভৃতি ব্যাপক সামাজিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। উদ্দীপকে দেখা যায়, জনাব মনসুর আলম সাংসদ নির্বাচিত হয়ে কমিশন গঠন করে দরিদ্রদের জন্য কল্যাণমূলক সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানায়। ফলে সরকার কর্তৃক জাতীয় বীমা আইন, খাদ্য আইনসহ কয়েকটি আইন প্রণীত হয়। ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইন কমিশন যেমন দরিদ্রদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করো তেমনি জনাব মনসুর আলম এরকম বিভিন্ন সুপারিশ সরকারের কাছে তুলে ধরেন। যা বাংলাদেশের মত উন্নয়শীল দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে।
উপরের আলোচনায় বলা যায়, ১৯০৫ সালের দরিদ্র আইনের সাদৃশ্যরূপ আইন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment