(সমাজকর্ম-১ম) এইচএসসি: সমাজকর্মের মূল্যবোধ ও নীতিমালা’র সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সমাজকর্মের মূল্যবোধ ও নীতিমালা হচ্ছে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী অর্থাৎ এইচএসসি’র সমাজকর্ম ১ম পত্রের তৃতীয় অধ্যায়। সমাজকর্মের মূল্যবোধ ও নীতিমালা অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সমাজকর্মের মূল্যবোধ ও নীতিমালা’র সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : অনন্যা রহমান একজন সমাজকর্মী। স্বামী পরিত্যক্তা দুঃস্থ নারীদের উন্নয়নে তিনি কাজ করেন। তার অন্যতম সেবা গ্রহণকারী স্বামী পরিত্যক্তা আসমা বেগম। আসমা বেগম তার দাম্পত্য জীবনের অনেক গোপন কথা অনন্যা রহমানকে বলেন। অনন্য রহমান বিষয়টি গোপন রাখেন। আসমা বেগম নিজের চেষ্টায় একটি হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলেছেন। এ কাজটি অনন্যা রহমান অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখেন।

ক. বৃত্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
খ. আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার বলতে কী বোঝায়?
গ. আসমা বেগমের সাথে কাজ করতে অনন্যা রহমান কী কী মূল্যবোধের পরিচয় দিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. একজন সমাজকর্মী হিসেবে অনন্যা রহমানের আর কী মূল্যবোধ থাকা উচিত?

১ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বৃত্তির ইংরেজি প্রতিশব্দ— Occupation.

খ. আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার বলতে ব্যক্তির স্বকীয়তা বজায় রেখে যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে আত্মোন্নয়নের সুযোগকে বোঝায়। আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার সমাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ একটি মূল্যবোধ। ব্যক্তির পছন্দ, চাহিদা, সামর্থ্য এবং ক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ অধিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ অধিকার ব্যক্তির আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনকে অর্থবহ করে তোলে।

গ. উদ্দীপকে উপস্থাপিত সমাজকর্ম মূল্যবোধসমূহ হলো- ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা।
প্রতিটি পেশার অনুশীলনে কতিপয় মূল্যবোধ অনুসৃত হয়ে থাকে। সমাজকর্ম পেশার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু মূল্যবোধ অনুসৃত হয়, যা সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সাফল্য আনে। সমাজকর্মী অনন্যা রহমান এসব মূল্যবোধ অনুসরণের ফলে আসমার সমস্যা সমাধানে সফল হয়েছেন। সমাজকর্মী অনন্যা রহমান আসমার সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রথমেই সাহায্যার্থী হিসেবে তাকে মর্যাদাবান চিন্তা করেছেন এবং আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছেন। এটি ব্যক্তির মর্যাদা ও মূল্যের স্বীকৃতি মূল্যবোধ নামে পরিচিতি।
ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি প্রদান করা হলে তার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় এবং তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে। তাই সাহায্যকারী ও সক্ষমকারী প্রক্রিয়া হিসেবে সমাজকর্ম এ মূল্যবোধটি অনুসরণ করে। এছাড়া আসমা বেগমের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপরও অনন্যা রহমান গুরুত্ব প্রদান করেছে। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ব্যক্তিকে তার স্বকীয়তা ও যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। ব্যক্তিকে আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে হবে এ মূল্যবোধের অনুসরণ আবশ্যক।
তাই বলা যায়, উল্লিখিত মূল্যবোধ অনুসরণের মাধ্যমেই সমাজকর্মী অনন্যা রহমান আসমা বেগমের সমস্যা সমাধানে সক্ষম ও সফল হয়েছেন

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মূল্যবোধ ছাড়াও একজন সমাজকর্মী হিসেবে অনন্যা রহমানের আরো কিছু মূল্যবোধ থাকা উচিত।
সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী পেশা। সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধান ও উন্নয়নে সাহায্য করাই এর কাজ সমাজকর্ম অনুশীলনের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেশ-কাল নিরপেক্ষতা ভেদে এর কিছু স্বতন্ত্র মূল্যবোধ গড়ে উঠেছে।
সমাজকর্মী অনন্যা রহমান আসমা বেগমের সমস্যা সমাধানে ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা- এই তিনটি মূল্যবোধ পরিপূর্ণভাবে অনুশীলন করেছেন। শুধু এ তিনটিই সমাজকর্মের মূল্যবোধ নয়। সমাজকর্মের আরও অনেক মূল্যবোধ রয়েছে। যেগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া সাফল্য লাভ করে। এসব মূল্যবোধের মধ্যে রয়েছে- সকলকে সমান সুযোগ দান। অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সর্ব শ্রেণির মানুষকে সাহায্য গ্রহণের সমান সুযোগ প্রদান করা। তাছাড়া সাহায্যাথীকে স্বনির্ভর করে তোলার মানসিকতা নিয়ে সমাজকর্মী সাহায্য করবেন। ব্যক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তাকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলাই হবে সমাজকর্মীর প্রধান কাজ।
সমাজকর্মের অন্য একটি মূল্যবোধ হচ্ছে সম্পদের সদ্ব্যবহার করা, অর্থাৎ সাহায্যাথীর বাহ্যিক ও অন্তর্নিহিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সমাজকর্মী সর্বদাই সাহায্যার্থীকে গোপনীয়তা রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। তাহলে সাহায্যাথী তার সব ধরনের তথ্য প্রকাশ করতে ভরসা পাবেন। সমাজকর্মী সাহায্যাথীর মধ্যে সামাজিক দায়িত্ব সৃষ্টি করে কাজ করবেন। পারস্পরিক দায়িত্ববোধ সমাজের উদ্দেশ্য অর্জনকে সফল করে তোলে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা সমাজকর্মের অপর একটি মূল্যবোধ। এটি না থাকলে সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়ে। সর্বোপরি একজন সমাজকর্মী তার জ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সাহায্যার্থীকে সেবা প্রদান করবেন এবং তিনি সমাজের প্রতি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবেন।
পরিশেষে বলা যায়, একজন সমাজকর্মী হিসেবে অনন্যা রহমানের উপরে আলোচিত মূল্যবোধগুলো তা উচিত।

সমাজকর্মের মূল্যবোধ ও নীতিমালা’র সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : জনাব ফরিদ একজন প্রবেশন কর্মকর্তা। তার তত্ত্বাবধানে দশজন কিশোর অপরাধীকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। ঐ সকল কিশোর অপরাধীদের মধ্যে বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত রয়েছে। কিন্তু প্রবেশন অফিসার অন্যান্য কিশোরদের তুলনায় উচ্চবিত্ত কিশোরদের প্রতি বেশি যত্নশীল এবং তাদের সাথে তিনি বেশি যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেন। ফলে অন্যান্য কিশোর অপরাধীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

ক. বৃত্তি কী?
খ. সম্পদের সদ্ব্যবহার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে জনাব ফরিদ সমাজকর্মের কোন মূল্যবোধ লঙ্ঘন করেছেন? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. পেশাগত মূল্যবোধ লঙ্ঘন একজন পেশাজীবীর কর্মক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

২ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. জীবন ধারণের জন্য পরিচালিত যে কোনো রকমের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই বৃত্তি।

খ. মানুষের কল্যাণের জন্য সম্পদের সর্বোচ্চ এবং যথাযথ ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে সম্পদের সদ্ব্যবহার বলা হয়।
সম্পদ সীমিত। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। ফলে সম্পদকে বহুবিধ ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে। সকল বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে সম্পদের সদ্ব্যবহার হয়ে থাকে।

গ. উদ্দীপকে জনাব ফরিদ সমাজকর্মের সমান সুযোগের অধিকার প্রদান মূল্যবোধটি লঙ্ঘন করেছেন।
যে মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে সমাজকর্ম পেশা গড়ে উঠেছে, তাই সমাজকর্ম মূল্যবোধ। ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, সবার জন্য সমান সুযোগ, সম্পদের সদ্ব্যবহার প্রভৃতি মূল্যবোধের উপর সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে সমাজকর্মের অন্যতম দার্শনিক ভিত্তি হচ্ছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্তর নির্বিশেষে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। এ মূল্যবোধের আলোকে সমাজকর্ম প্রতিটি মানুষের স্বার্থ এবং সুযোগকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মও সমান সুযোগের অধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জনাব ফরিদ একজন প্রবেশন কর্মকর্তা হিসেবে বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির দশজন কিশোর অপরাধীকে মুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু শুধু উচ্চবিত্ত কিশোরদের প্রতি যত্নশীল এবং আন্তরিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নয়, বরং সমাজের সর্বস্তরের সব শ্রেণির মানুষের জন্য সমঅধিকার । সম দৃষ্টি প্রদান এবং বৈষম্য ও ভেদাভেদ মুক্ত সমাজ গঠন করতে সমাজকর্মের সমান সুযোগের অধিকার প্রদান মূল্যবোধটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু উদ্দীপকের জনাব ফরিদ সাহেবের উচ্চবিত্ত কিশোরদেরকে বেশি গুরুত্ব ও অধিক সুযোগ প্রদান বৈষম্য ও ভেদাভেদের জন্ম দিয়েছে। এ কারণে জনাব ফরিদের কাজটি সমাজকর্মের সবার জন্য সমান সুযোগ ও অধিকার প্রদান মূল্যবোধটির লঙ্ঘন।

ঘ. উদ্দীপকে সমাজকর্ম মূল্যবোধকে নির্দেশ করা হয়েছে। যার লঙ্ঘন একজন পেশাজীবীর কর্মক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রতিটি পেশার পেশাগত অনুশীলনে বেশ কিছু মূল্যবোধ অনুসরণ করা হয়। যেগুলোর লঙ্ঘন সে পেশার প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ প্রভৃতি ভেঙ্গে নেতিবাচকতা তৈরি করে। সমান সুযোগের অধিকার প্রদান সমাজকর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপূণ্য মূল্যবোধ। যখন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি, স্তর নির্বিশেষে সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা যায়, তখন একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সমাজকর্ম পেশাকে সকলে একটি গণতান্ত্রিক সাহায্য প্রক্রিয়া হিসাবে মনে করে। কিন্তু এই মূল্যবোধের ব্যত্যয় সমাজকর্মীর কাজের প্রতি সাধারণের আস্থাশীলতা নষ্ট করে।
উদ্দীপকে উল্লেখিত জনাব ফরিদ প্রবেশন কর্মকর্তা হিসাবে মুক্তি দেওয়া বিতহীন, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত কিশোর অপরাধীদের মধ্যে কেবল উচ্চবিত্তদেরকে অধিক সুযোগ প্রদান করেন। ফলস্বরূপ অন্যান্য কিশোর অপরাধীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। সমাজকর্মের মূল্যবোধের লঙ্ঘন সমাজকর্মীর কাজ ও কাজের ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে। আর সমান সুযোগ না পেলে ব্যক্তির অন্তর্নিহিত ক্ষমতার বিকাশ হয় না। ফলে সামাজিক উন্নয়ন ত্বরানিত হয় না। মানুষ সমাজকর্ম সেবা গ্রহণ করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক উন্নয়নে সক্ষমতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। একজন সমাজকর্মী তার প্রয়োগ ক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে মানুষের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া কঠিন হয় এবং ব্যক্তির আস্থাশীলতা নষ্ট হয়। প্রত্যেক পেশার জন্যই মূল্যবোধ চর্চা অপরিহার্য। এই মূল্যবোধ লঙ্ঘনের কারণে উদ্দীপকের অন্যান্য কিশোর অপরাধীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয়।
উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, পেশাগত মূল্যবোধের পান পেশাজীবীর কাজের মানুষের ইতিবাচকতা নষ্ট করে, যা তার কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি করে থাকে।

সমাজকর্মের মূল্যবোধ ও নীতিমালা’র সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : তানিয়া ও ফারজানা ঢাকা মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাস করে। ফারজানা একটি হাসপাতালে রোগী দেখেন, তানিয়া কাজ করেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে।

ক. COS-এর পূর্ণরূপ কী?
খ. ফারজানার কাজের ধরন কীরূপ?
গ. তানিয়ার কালের সামাজিক স্বীকৃতি নেই কেন?
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে তানিয়া ও ফারজানার জীবিকার্জনের উপায়ের মধ্যে ৩টি বৈসাদৃশ্য লিখ।

৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. COS এর পূর্ণরূপ হলো Charity Organization Society.

খ. ফারজানার কাজ পেশার অন্তর্ভুক্ত।
ফারজানা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। অর্থাৎ তিনি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে রোগী দেখেন। তার এ কাজের সামাজিক স্বীকৃতি রয়েছে এবং এটি জনকল্যাণমূলক। এছাড়া হাসপাতালে কাজ করতে গিয়ে তাকে সুনির্দিষ্ট কিছু মূল্যবোধ অনুসরণ করতে হয়। কাজের বিনিময়ে তিনি অর্থ উপার্জন করেন। তার কাজের এ সকল বৈশিষ্ট্য পেশার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই ফারজানার কাজকে পেশা বলা যায়।

গ. তানিয়ার কাজটি পেশার অন্তর্ভুক্ত নয়। এ কারণে তার কাজের সামাজিক স্বীকৃতি নেই।
জীবিকা নির্বাহের জন্য যেকোনো কাজকেই বৃত্তি বলা হয়। এর জন্য তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না।
উদ্দীপকে তানিয়া জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে বেছে নেন। এ কাজের জন্য তাকে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়নি। কাজের ক্ষেত্রে তাকে কোনো সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদণ্ড মেনে চলতে হয় না। তানিয়া স্বাধীনভাবে তার কাজ পরিচালনা করতে পারেন। এক্ষেত্রে তাকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। তার কাজটি জনকল্যাণমূলক নয়। এটি শুধুমাত্র তার জীবিকা নির্বাহের উপায়। তানিয়ার কাজের এসকল বৈশিষ্ট্য বৃত্তির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বৃত্তিমূলক কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না। জীবিকা নির্বাহের যেকোনো উপায়কে বৃত্তি হিসবে গ্রহণ করা যায়। তানিয়ার কাজটি বৃত্তিমূলক। এ কারণে তার কাজের ক্ষেত্রে কোন সামাজিক স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না।

ঘ. ফারজানা ও তানিয়ার জীবিকা অর্জনের উপায় দুটি যথাক্রমে পেশা ও বৃত্তি নামে পরিচিতি।
অনেকেই বৃত্তি ও পেশাকে প্রায় একই অর্থে ব্যবহার করেন। কিন্তু সমাজকর্মে বৃত্তি বলতে জীবনধারণের জন্য যেকোনো ধরনের অর্থনৈতিক কাজকে বোঝায়। অন্যদিকে, পেশার মূল দিক হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জন। প্রতিটি পেশারই কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা পেশাকে বৃত্তি থেকে আলাদা করে।
একজন ডাক্তার হওয়ার জন্য ফারজানাকে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়েছে। এ ছাড়াও তাকে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণও নিতে হয়েছে। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য তানিয়াকে বিশেষ প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়নি। ফারজানার পেশার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদণ্ড রয়েছে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যেগুলো তাকে মেনে চলতে হয়। কিন্তু তানিয়ার ব্যবসার ক্ষেত্রে এরূপ কোন মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদণ্ড মেনে চলতে হয় না। ফারজানার কাজের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যদিকে তানিয়া স্বাধীনভাবে তার কাজ করেন।
আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, ফারজানা ও তানিয়ার কাজের মাধ্যমে পেশা ও বৃত্তির পার্থক্যগুলো সুস্পষ্ট হয়।

সমাজকর্মের মূল্যবোধ ও নীতিমালা’র সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : হাসনাত কামাল ছেলে-মেয়েদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েই বড় করেছেন। পড়াশোনা, জীবন সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত তিনি তাদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি অনায়েসে ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি দেন। সকলকে সমান সুযোগ দানের মাধ্যমে পিতা হিসাবে বৈষম্যহীন পরিবার তথা সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন হাসনাত কামাল।

ক. মূল্যবোধ কোন ধরনের প্রত্যয়?
খ. সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে হাসনাত কামালের সহজাত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি সমাজকর্মের মূল্যবোধগুলোর কোন দিক প্রকাশ করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. সকলকে সমান সুযোগ দানের মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। —উদ্দীপকের আলোকে মূল্যায়ন করো।

৪ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মূল্যবোধ একটি আপেক্ষিক প্রত্যয়।

খ. যেসব মূল্যবোধ অধিক সুনির্দিষ্ট এবং স্বল্পকালীন লক্ষ্য নির্দেশ করে, সেগুলোই সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ (Proximate values)। Encyclopedia of Social Work (1995) গ্রন্থের ব্যাখ্যানুযায়ী, ‘Proximate values are more specific and suggest short term goals’, সেবাগ্রহীতার স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যকর গৃহায়নের অধিকার সংশ্লিষ্ট নীতি, মানসিক চিকিৎসাধীন রোগীর বিশেষ ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ না করার অধিকার প্রভৃতি এ জাতীয় মূল্যবোধ।

গ. উদ্দীপকে হাসনাত কামালের দেওয়া ব্যক্তির সহজাত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি সমাজকর্মের সাধারণ মূল্যবোধের একটি দিক প্রকাশ করছে।
ব্যক্তির সহজাত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি সমাজকর্মের সাধারণ মূল্যবোধগুলোর একটি অন্যতম দিক। সমাজকর্ম জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পৃথক সত্তা ও মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। সমাজকর্মে বিশ্বাস করা হয়, সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিই বিশেষ মর্যাদা ও মূল্যের অধিকারী। ব্যক্তির মর্যাদা ও পৃথক সত্তার স্বীকৃতি দান ছাড়া যেমন মানুষের কল্যাণ আনয়ন সম্ভব নয়, তেমনি সমাজের কল্যাণসাধনও সম্ভব নয়। এ জন্য সমাজকর্মে সাহায্যাথীকে তার অন্তর্নিহিত মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি দানের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। উদ্দীপকেও এ দিকটির চর্চা লক্ষ করা যায়।
হাসনাত কামাল তার সন্তানদের সিদ্ধান্তের মর্যাদা দিয়েছেন। ব্যক্তির মর্যাদার স্বীকৃতি সাহায্যাথীর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। এতে ব্যক্তি সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সক্রিয় সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা লাভ করে এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এছাড়া এর ফলে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং স্বাবলম্বন অর্জনের স্পৃহা জাগ্রত হয়।

ঘ. সকলকে সমান সুযোগ দানের মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব- উদ্দীপকের এ বক্তব্যটি সঠিক ও যথার্থ।
সমাজকর্মে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সকল মানুষকে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার দান করা হয়। এতে সকল মানুষকে সমদৃষ্টিকোণ হতে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ ব্যক্তি বা শ্রেণিকে গুরুত্ব না দিয়ে সবার প্রতি সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়, যাতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনোরূপ বৈষম্য সৃষ্টি না হয়।
সমাজকর্মের লক্ষ্য হলো সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ সৃষ্টি না করে। সকল মানুষের কল্যাণ আনয়নে সাহায্য করা। এজন্যে সমাজকর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বিশেষ কোনো শ্রেণিকে উপেক্ষা করে অন্য শ্রেণিকে গুরুত্ব দিতে পারে না। সর্বস্তরের মানুষ যাতে নিজ নিজ ক্ষমতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী প্রাপ্ত সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধায় সমঅধিকার ভোগ করতে পারে তার প্রতি সমাজকর্মে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এতে সকল স্তরের মানুষ সুপ্ত প্রতিভা ও ক্ষমতা বিকাশে সমান সুযোগ লাভ করে এবং প্রত্যেকের সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুযায়ী নিজ নিজ ভাগ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। প্রাপ্ত সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রে সকলের সমান সুযোগ দানের নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে মানুষের অন্তর্নিহিত সত্তার বিকাশ ঘটানো যায়।
উপরের আলোচনার মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে বলা যায়, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার জন্য সকলকে সমান সুযোগ দান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সকলকে সমান সুযোগ দানের মাধ্যমেই বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

সমাজকর্মের মূল্যবোধ ও নীতিমালা’র সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : রায়হান মল্লিক পেশায় একজন উকিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওকালতি পাস করে উকিল হওয়ার জন্য জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেছে। এখন সে ওকালতি শাস্ত্রের প্রয়োগ সম্পর্কিত বাস্তব ও উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের জন্য খ্যাতিমান উকিলের নিকট থেকে শিক্ষালাভ করছে। তার ইচ্ছা পেশার মধ্যে দিয়ে সে জনসেবা করবে।

ক. পেশার আভিধানিক অর্থ কী?
খ. পেশাবৃত্তি থেকে কীভাবে আলাদা উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
গ. রায়হান মল্লিকের ইচ্ছাকে সমাজকর্ম পেশার বৈশিষ্ট্যের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
ঘ. রায়হান মল্লিকের ইচ্ছার মধ্য দিয়ে সমাজকর্ম পেশার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়- কথাটি সমাজকর্ম পেশার বৈশিষ্ট্যের আলোকে বিশ্লেষণ করো।।

৫ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. পেশার আভিধানিক অর্থ হলো জীবিকা বা জীবনধারণের বিশেষ উপায়।

খ. পেশা ও বৃত্তির মধ্যে উদ্দেশ্যগত পার্থক্য না থাকলেও কার্যক্রমগত যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। পেশা হচ্ছে জীবনধারণের একটি উপায় যেখানে দক্ষতা ও প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। যেমন- ডাক্তারের দক্ষতার প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে বৃত্তি জীবনধারণের উপায় হলেও এজন্য কোনো দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। যেমন- কৃষিকাজ। অর্থাৎ পেশা ও বৃত্তির মধ্যে পার্থক্য হলো পেশার ক্ষেত্রে জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়, কিন্তু বৃত্তির ক্ষেত্রে এগুলোর প্রয়োজন হয় না।

গ. রায়হান মল্লিকের ইচ্ছা সমাজকর্ম পেশার জনকল্যাণমুখিতা বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে।
পেশাকে অবশ্যই জনকল্যাণমুখী হতে হয়। কেননা জনকল্যাণ বিরোধী কোনো কাজ পেশার মর্যাদা অর্জন করতে পারে না। সাজকর্মও একটি জনকল্যাণমুখী পেশা। সমাজকর্ম পেশা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সর্বাধিক কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পৃথিবীতে যতগুলো পেশা আছে তার মধ্যে সমাজকর্ম সবচেয়ে জনকল্যাণমুখী।
রায়হান মল্লিক পেশায় একজন উকিল। উকিল হওয়ার জন্য তাকে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়েছে। এর পাশাপাশি খ্যাতিমান উকিলদের অধীনে থেকে সে এ বিষয়ে অনুশীলন করে দক্ষতা অর্জন করেছে। তার ইচ্ছা পেশার মধ্য দিয়ে সে জনসেবা করবে। সে তার পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োগ করে মানুষকে আইনি সহায়তা প্রদান করবে। এর ফলে সমাজের অসহায় অবহেলিত, দরিদ্র ও নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা হবে। সমাজকর্ম পেশা ও জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করে। তাই বলা যায়, রায়হান মল্লিকের ইচ্ছা সমাজকর্মের জনসেবা বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. রায়হান মল্লিকের ইচ্ছার মধ্য দিয়ে সমাজকর্ম পেশার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় বক্তব্যটি আমি সমর্থন করি।
সমাজকর্ম মানবকল্যাণকে কেন্দ্র করে পরিচালিত একটি সাহায্যকারী পেশা। পেশাটি সমাজের সামগ্রিক ও সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে। উদ্দীপকে রায়হান মল্লিক তার পেশার সাহায্যে মানুষের কল্যাপ করতে চান। সমাজকর্ম পেশাও মানব কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করে। তার মনোভাবে সমাজকর্ম পেশার গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। সমাজকর্ম পেশায় নিয়োজিত সমাজকর্মীরা সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিত ও শোষিত শ্রেণির অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে। সমাজকর্ম পেশা জনগণের আত্মনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা করে। কারণ সমাজকর্ম বিশ্বাস করে ব্যক্তিকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সমাজের অপরিকল্পিত পরিবর্তন সমাজ জীবনে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করে। সমাজকর্ম ব্যক্তিকে সমাজে সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তা করে। সমাজকর্ম অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মানবিক এবং পরিবেশগত সকল দিকের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজের পরিকল্পিত ও বাঞ্ছিত উন্নয়নে সমাজকর্ম পেশার গুরুত্ব অপরিসীম।

Leave a Comment