(বাংলা) SSC: সাহিত্যের রূপ ও রীতি প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সাহিত্যের রূপ ও রীতি হচ্ছে মাধ্যমিক অর্থাৎ নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বই এর হায়াৎ মামুদ এর প্রবন্ধ। সাহিত্যের রূপ ও রীতি প্রবন্ধ থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সাহিত্যের রূপ ও রীতি প্রবন্ধের সৃজনশীল

১. বিদ্যুৎকে মানুষ লোহার তার দিয়া বাঁধিয়াছে। কিন্তু কে জানিত মানুষ শব্দকে নিঃশব্দের মধ্যে বাঁধিতে পারিবে। কে জানিত সংগীতকে, হৃদয়ের আশাকে, জাগ্রত আম্মার আনন্দ ধ্বনিকে আকাশের দৈববাণীকে সে কাগজে মুড়িয়ে রাখিবে। কে জানিত মানুষ অতীতকে বর্তমানে বন্দী করিবে। অতলস্পর্শ কালসমুদ্রের উপর কেবল এক- একখানি বই দিয়া সাঁকো বাঁধিয়া দিবে। লাইব্রেরির মধ্যে আমরা সহস্র পথের চৌমাথার উপরে দাঁড়াইয়া আছি।

ক. বিশ্বসাহিত্যের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন রূপ কোনটি?
খ. সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার মধ্যে উপন্যাস অন্যতম কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের কোন শাখার বৈশিষ্ট্য বহন করে, ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের খণ্ডাংশ মাত্র, পূর্ণ চিত্র নয়- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বিশ্বসাহিত্যের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন রূপ নাটক।

খ. পাঠক সমাজে উপন্যাস সর্বাধিক বহুল পঠিত ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে বিধায় সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার মধ্যে উপন্যাস অন্যতম।

উপন্যাসে কোনো একটি কাহিনি বর্ণিত হয়ে থাকে এবং কাহিনিটি পদ্যে লিখিত হয়। উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য হলো প্লট। ঐ প্লট বা আখ্যানভাগ গড়ে ওঠে গল্প ও তার ভিতরে উপস্থিত বিভিন্ন চরিত্রের সমন্বয়ে। পাঠক সমাজে উপন্যাসই সর্বাধিক পঠিত সাহিত্য মাধ্যম। উপন্যাস জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তাই সাহিত্যের শাখা-প্রশাখার মধ্যে উপন্যাস অন্যতম।

গ. উদ্দীপকটি ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের অন্যতম শাখা ‘প্রবন্ধ’ শাখার বৈশিষ্ট্য বহন করে।

সাহিত্যে মানবজীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা প্রতিফলিত হয়। সাহিত্যের নানা শাখা-প্রশাখা বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, মানুষের জীবনধারণ, ইতিহাস, ঐতিহ্যের সমন্বয়ে সেগুলো গড়ে উঠেছে। সময়ের পরিবর্তন ধারায় সাহিত্য ও তার শাখা-প্রশাখায় তা ধারণ করে, জগতের কল্যাণ সাধন করছে।

উদ্দীপকে লাইব্রেরির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্যের প্রবন্ধ শাখার রূপবৈশিষ্ট্য এখানে প্রতিফলিত হয়েছে। এই বিষয়টি আলোচ্য ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের প্রবন্ধ শাখার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। প্রবন্ধ হচ্ছে গদ্যে লিখিত রচনা। যার উদ্দেশ্য পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণাকে পরিতৃপ্ত করা। এ জাতীয় নানা অজ্ঞাত তথ্য এ সাহিত্য পাঠের মাধ্যে জানতে পারে। এর মূল উদ্দেশ্য পাঠককে নানা তথ্য ও বিষয় সম্পর্কে অবগত করানো। উদ্দীপকে মানুষের নানা অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের আশ্রয় বই এবং বইয়ের আশ্রয় লাইব্রেরির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। বিষয়টি বর্ণনার প্রসঙ্গটি গদ্যে লিখিত। এর মাধ্যমে পাঠকও কিছু তথ্যের সঙ্গে পরিচয় লাভ করেছে। বাংলা ভাষায় রচিত এ সাহিত্য মাধ্যমটি বিশাল ও গুণগত মানে অতি উত্তম।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের খণ্ডাংশ মাত্র, পূর্ণ চিত্র নয়- মন্তব্যটি যথার্থ।

সাহিত্যে মানুষের সামগ্রিক জীবন প্রতিফলিত হয়। সাহিত্যে মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-ভালোবাসা, বিষাদ- বিদ্রোহ, যুদ্ধবিগ্রহ, জয়-পরাজয়, বীরত্ব-ভীরুতা সবকিছুই স্থান লাভ করে। এ যেন সমুদ্র, সব ধরনের জলধারা বেয়ে জলের শেষ আশ্রয়।

উদ্দীপকটি গদ্যে লিখিত এবং একটি বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। সাহিত্যের রূপরীতির বৈশিষ্ট্যানুসারে এটি প্রবন্ধ সাহিত্যের নমুনা। ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের অন্যতম সাহিত্য মাধ্যম প্রবন্ধের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘প্রবন্ধ’ সাহিত্য মাধ্যমটি আলোচ্য প্রবন্ধের একটি শাখা মাত্র। এটি ছাড়া এখানে কবিতা, নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এসব বিষয় বা শাখার বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়নি।

‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে লেখক কবিতা, গীতিকবিতা, মহাকাব্য, নাটক, নাটকের শ্রেণিবিভাগ, নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে একটি বিষয় উদ্দীপকে তুলে ধরা হয়েছে, যা প্রবন্ধ সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য বহন করে। এ কারণেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

২. সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় শাখা রয়েছে। যা আধুনিক কালের সৃষ্টি। এটি রচিত হয় গদ্য ভাষায়। এর প্রধান উপজীব্য হলো প্লট। এতে জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলে দেওয়া হয়।

ক. বাংলা সাহিত্যে গীতিকবিতার আদি নিদর্শন কী?
খ. মন্ময় প্রবন্ধ বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের বক্তব্যে ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ রচনার সাহিত্যের কোনো শাখার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে বর্ণিত দিকটিই সাহিত্যের একমাত্র দিক নয়, বরং এর শাখা-প্রশাখা আরও বিস্তৃত।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বাংলা সাহিত্যে গীতিকবিতার আদি নিদর্শন হচ্ছে বৈষ্ণব কবিতাবলি।

খ. মন্ময় প্রবন্ধ হচ্ছে সেই প্রবন্ধ যে প্রবন্ধে লেখকের মেধাশক্তি অপেক্ষা ব্যক্তিহৃদয়ই প্রধান হয়ে ওঠে।

‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে লেখক সাহিত্যের বিভিন্ন রূপ ও রীতির সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেছেন। এ প্রবন্ধে তিনি প্রবন্ধ সাহিত্য সম্পর্কেও আলোকপাত করেছেন। প্রবন্ধ হচ্ছে গদ্যে লিখিত এমন রচনা যার উদ্দেশ্য পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণাকে পরিতৃপ্ত করা। প্রবন্ধ সাহিত্যের দুটি শ্রেণিবিভাগের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে মন্ময় (Subjective) প্রবন্ধ। এ ধরনের প্রবন্ধের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে লেখকের মেধাশক্তি অপেক্ষা ব্যক্তিহৃদয় মুখ্য হয়ে ওঠে। অনেকে এ ধরনের প্রবন্ধকে ব্যক্তিগত প্রবন্ধও বলে থাকেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অধিকাংশ প্রবন্ধই এই পর্যায়ের। তার ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ বইটির সব রচনাই মন্ময় প্রবন্ধের পর্যায়ভুক্ত। এই প্রবন্ধের ভাষা গুরুগম্ভীর বা ততটা সিরিয়াস নয়, বরং সহজ-সরল।

গ. উদ্দীপকের বক্তব্যে ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ রচনার সাহিত্যের উপন্যাস শাখার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

সাহিত্যে মানবজীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না, প্রতিফলিত হয়। সাহিত্যের প্রতিটি শাখাই গড়ে উঠেছে মানবমন এবং জীবনাচরণকে কেন্দ্র করে। আর এভাবেই গড়ে ওঠে সাহিত্যের বিশাল সম্ভার।

উদ্দীপকের বর্ণনায় সাহিত্যের উপন্যাস শাখার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে— সাহিত্যের জনপ্রিয় একটি শাখা, যা আধুনিককালের সৃষ্টি এবং এটি গদ্য ভাষায় রচিত। এটির প্রধান উপজীব্য প্লট। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এখানে বলে দেওয়া থাকে। ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধেও উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে প্রাবন্ধিক বলেছেন— উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য প্লট। ঐ প্লট বা আখ্যানভাগ গল্প হয়ে ওঠে তার ভিতরে উপস্থিত বিভিন্ন চরিত্রের সমন্বয়ে। এটির কাহিনি গদ্যে লিখিত হয়। সেটি অপেক্ষাকৃত আধুনিককালের সৃষ্টি। প্রবন্ধে বর্ণিত উপন্যাসের এই বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে উদ্দীপকের বর্ণনার সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. “উদ্দীপকে বর্ণিত দিকটিই সাহিত্যের একমাত্র দিক নয়, বরং এর শাখা-প্রশাখা আরও বিস্তৃত।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

সাহিত্যে মানবজীবনের সামগ্রিক জীবন প্রতিফলিত হয়। তাই সময়ের সঙ্গে সাহিত্যের শাখা-প্রশাখারও বিস্তৃতি ঘটে। যুগে যুগে সাহিত্যিকরা মানবজীবনের উপযোগী করে সাহিত্য সৃষ্টি করেন। ফলে সাহিত্য হয়ে ওঠে মানবজীবন ও সভ্যতার দর্পণ।

উদ্দীপকের বর্ণনায় উপন্যাসের বৈশিষ্ট্যকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে সাহিত্যের জনপ্রিয় এই শাখাটি অপেক্ষাকৃত আধুনিককালের সৃষ্টি এবং এতে জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলা থাকে। ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধেও উপন্যাস সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তবে এটির পাশাপাশি সাহিত্যের অন্যান্য শাখারও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যেমন— কবিতা, নাটক, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি। আবার প্রতিটির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা রয়েছে। প্রবন্ধে এসবের সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাওয়া যায়।

‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বিচিত্র সাহিত্যরীতির পরিচয় দান করেছেন। কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি নিয়ে সাহিত্যের যে জগৎ তার প্রতিটির বৈশিষ্ট্য ও ধর্ম এখানে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলোর শাখা-প্রশাখার কথাও বলা হয়েছে। সাহিত্যরীতির এই সার্বিক পরিচয় উদ্দীপকে অনুপস্থিত। এখানে শুধু একটি শাখার বৈশিষ্ট্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

৩. মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না—
অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না—
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।

ক. মহাকাব্য কোন কাহিনি অবলম্বনে রচিত হয়?
খ. ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’- কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ. উদ্দীপকে বাংলা কবিতার কোন ধারার কবিতার বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশে কি ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি‘ প্রবন্ধে আলোচিত বাংলা কবিতার বিশেষ ধারার প্রতিফলন ঘটেছে? তোমার মতের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মহাকাব্য যুদ্ধ-বিগ্রহের কাহিনি অবলম্বনে রচিত হয়।

খ. ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’- কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ কথাতেই লুকিয়ে আছে ছোটগল্পের মূল তত্ত্বটি।

ছোটগল্প কখনই কাহিনির ভেতরের ঘটনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলে দেয় না। যেমনটা ঘটে উপন্যাসের ক্ষেত্রে। সাহিত্যের যত শাখা আছে সেগুলোর মধ্যে ছোটগল্পই সর্বকনিষ্ঠ। ছোটগল্পে মানবজীবে ছোট ছোট কথা-ব্যথা-হাসি-কান্না-বিরহ-মিলনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এবং গল্পের শেষে গল্পকার একটা রেশ রেখে দেন, যা পাঠকমনে তীব্র আকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয়।

গ. উদ্দীপকে বাংলা গীতিকবিতার একটি বিশেষ ধারার বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে।

সাহিত্যে মানবজীবনের সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনা প্রতিফলিত হয়। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সেগুে মানবজীবনের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। সময় পরিবর্তনের ধারায় সাহিত্য তার আপন মহিমায় মানুষের জীবন সম্পর্কিত নানা ঘটনাকে অঙ্গীভূত করে আত্মপ্রকাশ করেছে। কবিতা সাহিত্যের অন্যতম একটি শাখা। গীতিকবিতা তার মধ্যে অন্যতম।

উদ্দীপকটি বাংলা গীতিকবিতার অন্যতম একটি ভাবকে বহন করে। গীতিকবিতার এই বিশেষ ধারা বাংলা কাব্যে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও পল্লিকবি জসিমউদ্দীন সংযোজন করেন। উদ্দীপকে কবি একজন মহা বিদ্রোহী। তাঁর বিদ্রোহ অধিকারবঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জন্য। তিনি সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ, সামন্তবাদ মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে।

কবিতায় কবি শাসক-শোষকদের অত্যাচারী ও উৎপীড়ক বলে চিহ্নিত করে বলেছেন, মানুষের ওপর তাদের খড়গ-কৃপাণের ব্যবহার বন্ধ করলে তবেই তিনি শান্ত হবেন। গীতিকবিতার ধরন অনুসারে আমরা যে শ্রেণিভেদ দেখতে পাই উক্ত কবিতার ভাব থেকে ভিন্ন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বাংলা গীতিকবিতার একটি বিশেষ ধারার বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করেছে।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে আলোচিত বাংলা কবিতার বিশেষ ধারার প্রতিফলন ঘটেছে বলে আমি মনে করি।

বাংলা কবিতায় ‘গীতিকবিতা’ একটি বিশেষ শ্রেণির কবিতা গীতিকবিতায় কবির ভাবোচ্ছ্বাসের পরিস্ফুটনই একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে। গীতিকবিতার বিশেষ কিছু ধারায় কবির উদ্দীপ্ত কণ্ঠস্বর ও দিপ্ত ভাবের দেখা মেলে। এতে গীতিকবিতার সাধারণ বিভাজনসমূহকে পাশে রেখে বিশেষ ভাবের প্রতিফলন হয়ে থাকে।

উদ্দীপকে কবিতায় কবির মধ্যে একটি বিদ্রোহী সত্তার প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়েছে। উদ্দীপকের কবিতায় কবি একজন সংগ্রামী রণক্লান্ত যোদ্ধা। তিনি শাসক-শোষক ও অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। তাঁর এই বিদ্রোহ ততদিন বন্ধ হবে না যতদিন শোষিত নির্যাতিত, বঞ্চিত-উৎপীড়িতের কান্না বন্ধ না হবে। অত্যাচারীর অত্যাচার বন্ধ করেই তিনি শান্ত হবেন।

এমন বিপ্লবী কণ্ঠস্বরের মধ্যে যে উদ্দীপ্ত ও দৃপ্ত ভাবের দেখা মেলে তা গীতিকবিতার ভক্তিমূলক, প্রেম বা স্বদেশপ্রীতি, প্রকৃতি বিষয়ক দর্শন চিন্তাশ্রয়ী ভাব বিভাজনে শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত নয়। যা গীতিকবিতার একটি বিশেষ ধারার ইঙ্গিত। কারণ, এ কবিতায় যে উদ্দীপ্ত কণ্ঠস্বর ও দৃপ্ত ভাবের পরিস্ফুটন ঘটেছে তা ইতঃপূর্বে বাংলা কবিতায় দেখা যায়নি। এ জাতীয় কবিতা আগে কেউ কখনো রচনা করেননি এবং এর অনুসারীও কেউ নেই।

উদ্দীপকের কবিতাটি যদিও গীতিকবিতা তবুও গীতিকবিতার বিভাজনের যেসব শ্রেণি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত হয় না। এতে বোঝা যায় যে, ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে আলোচিত বাংলা কবিতার বিশেষ ধারার প্রতিফলন উদ্দীপকের কবিতায় ঘটেছে।

৪. জীবনে ঘটে যাওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দ-বেদনা নিয়ে সাহিত্যের এক একটি বিশেষ শাখা গড়ে ওঠে। যেখানে স্থান নেই অনাবশ্যক ভাষা চরিত্র কিংবা ঘটনার থাকে না কোনো তত্ত্ব বা উপদেশ। যেখানে ধরা পড়ে জীবনের খণ্ডিত রূপ।

ক. সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ কোনটি?
খ. ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’ কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের কোন শাখাটির বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে? বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত শাখাটি ছাড়াও বাংলা সাহিত্যে আরও সমৃদ্ধ কিছু দিক আছে- ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে- সৃজনশীলতা।

খ. ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’- কথাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই কথাতেই সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা ছোটগল্পের মূল তত্ত্বটি লুকিয়ে আছে।

‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে লেখক সাহিত্যের প্রধান প্রধান শাখার সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেছেন। ছোটগল্পের প্রকৃতি সম্পর্কে প্রামাণ্য ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা উদ্ধৃত করেছেন। সেখানে প্রশ্নোক্ত বাক্যটি রয়েছে। এই বাক্যে ছোটগল্পের মূল তত্ত্বটি প্রতিফলিত হয়েছে। ছোটগল্পের বিস্তৃতি অনেক ছোট হয় বলে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না। তত্ত্ব ও উপদেশ বাদ রেখে এর কাহিনি আবর্তিত হয়।

কারণ ছোটগল্প কখনই কাহিনির ভেতরের ঘটনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলে দেয় না। যেমনটা উপন্যাসের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। ছোটগল্পে মানবজীবনের ছোট ছোট কথা-ব্যথা-হাসি- কান্না-বিরহ-মিলনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থাকে। ছোটগল্পের শেষটায় একটা অতৃপ্তির রেশ থাকে যা পাঠকমনে তীব্র আকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয়। ছোটগল্পের এই ধরনের সমাপ্তিতে মনে হয় কথাটি বা গল্পটি যেন শেষ। হয়েও শেষ হলো না। এই ধরনের বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের ছোটগল্প শাখাটির বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

সাহিত্যে মানুষের সামগ্রিক জীবন প্রতিফলিত হয়। সাহিত্য মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, প্রেম-ভালোবাসা, বিষাদ-বিরহ। যুদ্ধবিগ্রহ, জয়-পরাজয়, বীরত্ব-ভীরুতা সবকিছুই ধারণ করে। মানবজীবনের দৃঢ় সত্য উন্মোচন করাই সাহিত্যের কাজ।

উদ্দীপকে সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখার মৌলিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দ-বেদনা নিয়ে গড়ে ওঠা সাহিত্যের কথা বলা হয়েছে। এতে অনাবশ্যক চরিত্র, ভাষা বিস্তার এবং ঘটনার ঘনঘটা থাকে না। তাতে জীবনের পূর্ণ অংশ নয়। খণ্ডিত অংশই মুখ্য হয়ে ওঠে। উদ্দীপকের এসব বৈশিষ্ট্য ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে আলোচিত সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে। ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে গিয়ে লেখক রবীন্দ্রনাথের কবিতা উদ্ধৃত করে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি ছোটগল্পের সহজ-সরল ভাষা, ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথার কথা বলেছেন।

তিনি জীবনসাগরের অজস্র ঢেউয়ের মধ্যে দু-একটি অশ্রুবিন্দুর সঙ্গে ছোটগল্পের তুলনা করেছেন। তাতে কোনো তত্ত্ব-উপদেশ থাকবে না। শেষ হলেও মনে অতৃপ্তি রয়ে যাবে। উদ্দীপকে ছোটগল্পের সেই ক্ষুদ্রায়তন ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দ-বেদনার বৈশিষ্ট্যে প্রতিফলন ঘটেছে। এভাবে উদ্দীপকের বৈশিষ্ট্য ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের ছোটগল্প শাখাটির বৈশিষ্ট্যে ফুটে উঠেছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত শাখাটি ছাড়াও বাংলা সাহিত্যে আরও সমৃদ্ধ কিছু দিক আছে- ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের আলোকে তা বিশ্লেষণ করা যায়।

সাহিত্য মানুষের সামগ্রিক জীবনকে নির্দেশ করে। এই কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা বিস্তার লাভ করে। যুগে যুগে মানুষ সময়ের উপযোগী করে সাহিত্যের রূপের পরিবর্তন ও নতুন রূপের সৃষ্টি করেছে।

উদ্দীপকে ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের একটি শাখা ছোটগল্পের। বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এ শাখাটি ছাড়াও এই প্রবন্ধে লেখক সাহিত্যের আরও কয়েকটি শাখা বর্ণনা করেছেন। সেগুলোর মধ্যে কবিতা, নাটক, উপন্যাস ও প্রবন্ধ উল্লেখযোগ্য। ছন্দোবদ্ধ ভাষায়, অর্থাৎ পদ্যে যা লিখিত হয় তাকেই ‘কবিতা’ বলা হয়। কবিতার প্রধান দুটি রূপভেদ হলো মহাকাব্য ও গীতিকবিতা মহাকাব্যের মূল লক্ষ্য গল্প বলা, তবে সেটি গদ্যে না লিখে পদ্যে লিখতে হয়।

এটির বাইরে সংক্ষিপ্ত আকারের কবিতা গীতিকবিতা হিসেবে পরিচিত। নাটক বিশ্বসাহিত্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। নাটক প্রধানত দৃশ্যকাব্য। উপন্যাসে কোনো একটি কাহিনি বর্ণিত থাকে এবং কাহিনিটি গদ্যে লিখিত হয়। এতে গ্রন্থকারের ব্যক্তিগত জীবনদর্শন এ জীবনানুভূতি কোনো বাস্তব কাহিনি অবলম্বনে প্রকাশ পায়। সাহিত্যের এই শাখাটি বহুল পঠিত এবং জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে লেখক সাহিত্যের অন্য একটি দিক ‘প্রবন্ধ’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রবন্ধ হচ্ছে গদ্যে লিখিত এমন রচনা যার উদ্দেশ্য পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণাকে পরিতৃপ্ত করা। এই ধরনের রচনায় তথ্যের প্রাধান্য থাকে। তবে তথ্যবহুল হলেই তাকে প্রবন্ধ বলা যাবে না, যদি-না তাতে লেখকের সৃজনীশক্তির পরিচয় থাকে কারণ সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ সৃজনশীলতা। উদ্দীপকে সাহিত্যের যে শাখার বর্ণনা করা হয়েছে তাতে এই ধরনের সাহিত্যের দিক প্রতিফলিত হয়নি। এর কারণ তা থেকে সাহিত্যের এসব দিক ভিটা ভিন্ন বৈশিষ্ট্য-সমৃদ্ধ।

আরো পড়োমমতাদি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়োএকাত্তরের দিনগুলি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৫. জীবনে ঘটে যাওয়া ক্ষুদ্র আনন্দ-বেদনা নিয়ে সাহিত্যের এক-একটি বিশেষ শাখা গড়ে ওঠে। যেখানে স্থান নেই অনাবশ্যক ভাষা, চরিত্র কিংবা ঘটনার। থাকে না কোনো তত্ত্ব বা উপদেশ। যেখানে ধরা পড়ে জীবনের খণ্ডিত রূপ। যার শুরু ও শেষ হয় হঠাৎ করেই।

ক. বাংলা সাহিত্যে গীতিকবিতার আদি নিদর্শন কী?
খ. ট্র্যাজেডি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকটি ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ রচনায় উল্লিখিত সাহিত্যের কোন ধারাকে সমর্থন করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘যেখানে ধরা পড়ে জীবনের খণ্ডিত রূপ’- উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের আলোকে আলোচনা কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বাংলা সাহিত্যে গীতিকবিতার আদি নিদর্শন হলো বৈষ্ণব কবিতাবলি।

খ. ট্র্যাজেডি বলতে বিয়োগান্ত নাটককে বোঝায়।
কাহিনির বিষয়বস্তু ও পরিণতির দিক থেকে বিচার করলে নাটককে যে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় সেগুলোর একটি হলো ট্র্যাজেডি বা বিয়োগান্ত নাটক। ট্র্যাজেডির ভেতরে দুটি অংশ ক্রিয়াশীল থাকে : প্লট, চরিত্রসৃষ্টি, সংলাপ, চিন্তা বা জীবনদর্শনের পরিস্ফুটন, মঞ্চায়ন, সমস্ত কিছুর সমন্বয়ে সুরসংগতি। গ্রিক দার্শনিক ও সাহিত্যবেরা অ্যারিস্টালে বলেছেন— ‘রঙ্গমঞ্চে নায়ক বা নায়িকার জীবনকাহিনির দৃশ্যপর নির উপস্থাপনের মাধ্যমে যে নাটক দর্শকের হৃদয়ের ভয় ও করুণা প্রশমিত দৃশ্যপরম্পরা করে তার মনে করুণ রসের আনন্দ সৃষ্টি করে, তাই হলো ট্র্যাজেডি।

গ. উদ্দীপকের ভাব ঘটনা ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের সাহিত্যের ছোটপর ধারাকে সমর্থন করে।

সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মধ্যে ছোটগল্প অন্যতম। ছোটগল্প হলো গল্প, তবে আকারে ছোট এবং বাহুল্যবর্জিত। জীবনের খণ্ড অংশের চিত্র এখানে উপস্থাপিত হয়। বাংলা সাহিত্যের এ শাখাটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

উদ্দীপকে সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখার মৌলিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে। এখানে জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দ-বেদনা নিয়ে, গড়ে ওঠা সাহিত্যের কথা বলা হয়েছে। এতে অনাবশ্যক চরিত্র, ভাষা বিস্তার এবং ঘটনার ঘনঘটা থাকে না। তাতে জীবনের পূর্ণ অংশ নয়, খণ্ডিত অংশই মুখ্য হয়ে ওঠে। উদ্দীপকের এসব বৈশিষ্ট্য ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে আলোচিত সাহিত্যের একটি বিশেষ শাখা ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে। ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে লেখক রবীন্দ্রনাথের কবিতা উদ্ধৃত করে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি ছোটগল্পের সহজ-সরল ভাষা, ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথার কথা বলেছেন।

তিনি জীবনসাগরের অজস্র ঢেউয়ের মধ্যে দু-একটি অশ্রুবিন্দুর সঙ্গে ছোটগল্পের তুলনা করেছেন। তাতে কোনো তত্ত্ব- উপদেশ থাকবে না। শেষ হলেও মনে অতৃপ্তি রয়ে যাবে। উদ্দীপকেও ছোটগল্পের সেই ক্ষুদ্রায়তন ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দ-বেদনার বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটেছে। এভাবে উদ্দীপকের বৈশিষ্ট্য ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধের ছোটগল্প শাখাটির বৈশিষ্ট্যে ফুটে উঠেছে।

ঘ. ‘যেখানে ধরা পড়ে জীবনের খণ্ডিত রূপ’ – ছোটগল্প সম্পর্কে আলোচ্য কথাটি বলা হয়েছে।

উপন্যাস এবং ছোটগল্পের মৌলিক পার্থক্য এগুলোর আকৃতিতে। উপন্যাসে জীবনের বিস্তৃত বর্ণনা তুলে ধরা হয়। কিন্তু ছোটগল্পে থাকে জীবনের খণ্ডাংশ বা বিশেষ কোনো ঘটনার বর্ণনা। জীবনের কোনো একটি বিশেষ মুহূর্তই ছোটগল্পের উপজীব্য।

উদ্দীপকে ছোটগল্পের এই বিশেষ দিকটির কথাই বলা হয়েছে। ‘সাহিত্যের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে লেখক সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার আলোচনা করতে গিয়ে ছোটগল্পের কথাও বলেছেন। আকারে ছোট বলে এখানে বহু ঘটনার সমাবেশ বা বহু পাত্র-পাত্রীর ভিড় সম্ভবপর নয়। জীবনের খণ্ডাংশের শৈল্পিক রূপায়ণই ছোটগল্পকে সার্থকতা দান করে। ছোটগল্পের পরিধি ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে ঘটনার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিশ্লেষণ এখানে সম্ভব নয়। জীবনের কোনো একটি বিশেষ মুহূর্ত কোনো বিশেষ পরিবেশের মধ্যে কেমনভাবে লেখকের কাছে প্রত্যক্ষ হয়েছে তারই রূপায়ণ হলো ছোটগল্প।

অর্থাৎ ছোটগল্পে উপন্যাসের মতোই কোনো না কোনো কাহিনির বর্ণনা থাকে, তবে পার্থক্য হলো। কাহিনির ব্যপ্তি বা কাহিনির পরিধি। উপন্যাসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাহিনি থাকলেও ছোটগল্পে থাকে কাহিনির খণ্ডাংশ। হঠাৎ করে গল্পের শুরু এবং অতৃপ্তি রেখে গল্পের সমাপ্তিই ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য। এই খণ্ডাংশ চিত্রণে থাকে কিছু বাধ্যবাধকতা। বর্ণনার বাহুল্য বর্জিত কাহিনি বিন্যাস খুবই সহজ সরল হতে হয়। অযাচিত ঘটনা এখাে থাকে না এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনাও অপ্রয়োজনীয়।

উপরের আলোচনা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, ছোট জীবনের সমগ্র বর্ণনা নয়। কোনো বিশেষ ঘটনাই ছোটগলে বিষয়বস্তু। তাই বলা হয়েছে, জীবনের খণ্ডিত রূপই ছোটগল্পে পড়ে।