(বাংলা) SSC: আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

আম-আঁটির ভেঁপু হচ্ছে মাধ্যমিক অর্থাৎ নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র বই এর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর গল্প। আম-আঁটির ভেঁপু গল্প থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের সৃজনশীল

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায় প্রকৃতি কেবল প্রকৃতিরূপেই আবির্ভূত হয়নি, বরং প্রকৃতি ও মানবজীবন একীভূত হয়ে অভিনব রসমূর্তি ধারণ করেছে। প্রকৃতির লতাপাতা, ঘাস, পোকামাকড় সবকিছুই গুরুত্বের সঙ্গে স্ব স্ব ভাবে তাঁর রচনায় স্থান পেয়েছে। তাঁর রচনায় নির মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনচিত্র ও সমকালের আর্থসামাজিক বাস্তবতা সমভাবে উন্মোচিত হয়েছে।

ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোন উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্র-পুরস্কারে ভূষিত হন?
খ. সম্মুখ দুয়ার দিয়ে দুর্গার বাড়িতে ঢোকার সাহস হলো না কেন?
গ. উদ্দীপকের বক্তব্য ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ রচনার ক্ষেত্রে কতখানি সত্য? আলোচনা করো।
ঘ. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্প এবং উদ্দীপকের আলোকে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্মের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করো।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘ইছামতি’ উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্র-পুরস্কারে ভূষিত হন।

খ. মায়ের শাসনের ভয়ে দুর্গার সম্মুখ দুয়ার দিয়ে বাড়িতে ঢোকার সাহস হলো না।
দুর্গার আনন্দ খেলাধুলা ও প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে। যদিও দুর্গার বয়সের মেয়েরা বাড়ির বাইরে না গিয়ে বরং মায়ের কাজে সহযোগিতা করে। কিন্তু দুর্গা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে সকাল থেকেই বাড়ির বাইরে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছে। এ কারণেই দুপুরে সে মায়ের সামনে দিয়ে ঘরে প্রবেশের সাহস পায়নি।

গ. উদ্দীপকের বক্তব্য ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ রচনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে সত্য।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ রচনাটিতে আমরা দেখি অপু ও দুর্গা প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতির মাঝেই তাদের সার্বক্ষণিক বিচরণ। প্রকৃতি থেকে তাদের সত্তাকে আলাদা করা যায় না। তাছাড়া প্রকৃতির অনুপুঙ্খ বর্ণনাও আমরা পাই এই লেখাটিতে। অন্যদিকে এমন প্রকৃতির কোলে বসবাসকারী হরিহর পরিবারের নিম্নমধ্যবিত্ত জীবনও দারুণভাবে উন্মোচিত হয়েছে এখানে। জীবিকা অর্জনে হরিহরের সংগ্রাম বড়োই কঠিন।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, প্রকৃতির লতা-পাতা, ঘাস, পোকামাকড় সবকিছুই গুরুত্বের সঙ্গে বিভূতিভূষণের কথাসাহিত্যে স্থান পেয়েছে। তাঁর রচনায় প্রকৃতি ও মানবজীবন একীভূত হয়ে অভিনব রসমূর্তি লাভ করেছে এর সঙ্গে নিম্ন মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনচিত্র অঙ্কনেও বিভূতিভূষণ পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। ‘আম-আঁটির ভেপু’ রচনাটি তাঁর উৎকৃষ্ট প্রমাণ । আর তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বক্তব্য ‘আম-আঁটির ভেঁপু” গল্পের ক্ষেত্রে সর্বাংশে সত্য।

ঘ. ‘আম-আঁটির ভেঁপু” গল্প ও উল্লিখিত উদ্দীপকে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাসাহিত্যের প্রধান চারিত্র্যলক্ষণ প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবনচিত্র উন্মোচনের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
“আম-আঁটির ভেঁপু” গল্পটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুবিখ্যাত ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের অন্তর্গত। এই রচনায় অপু ও দুর্গা যেন প্রকৃতিরই সন্তান। প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। লেখক প্রকৃতির যে বর্ণনা এ গল্পে দিয়েছেন তাতে প্রকৃতিও যেন প্রাণ পেয়েছে। উদ্দীপকেও লেখকের আলোচ্য বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে।
গল্পটিতে সর্বজয়া হরিহরের নিশ্চিন্দিপুরের যে সংসারজীবন তা নিঃসন্দেহে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ধারক। পৌরহিত্য করে হরিহরের সংসার চলে। দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্য দিয়ে সংসার চলে হরিহর-সর্বজয়া অপু-দুর্গাদের। তবুও তারা জীবনবিমুখ নয়। আর উদ্দীপকেও বলা হয়েছে, বিভূতিভূষণের রচনায় নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙালির জীবনচিত্র ও সমকালের আর্থসামাজিক বাস্তবতা উন্মোচিত হয়েছে সার্থকভাবে।
উল্লিখিত উদ্দীপক ও আম-আঁটির ভেঁপু’ সম্পর্কিত উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে লেখক বিভূতিভূষণ একদিকে প্রকৃতির বর্ণনা ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বিষয়টি দেখিয়েছেন। অন্যদিকে সমকালের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় তিনি হরিহরদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্তদের জীবনচিত্র অঙ্কন করেছেন। আর এগুলোই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্মের মূল বৈশিষ্ট্য।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : ১ম অংশ: হে সূর্য তুমি তো জানো,
আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!
সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে
এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে
কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই।

২য় অংশ: আমারে চেনো না? আমি যে কানাই!
ছোকানু আমার বোন।
তোমার সঙ্গে বেড়াবো আমরা।
মেঘনা, পদ্মা, শোন!

ক. ‘কালমেঘ’ কী?
খ. হরিহর সদগোপদের প্রস্তাবে তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হলো না কেন?
গ. উদ্দীপকের ১ম অংশে আম-আঁটির ভেঁপু” গল্পের যে ভাবটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উক্ত প্রতিফলিত ভাবটি উদ্দীপকের ২য় অংশের সাথে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সাদৃশ্যপূর্ণ ভাবকে স্পর্শ করতে পারেনি” — মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিচার করো।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘আম-আঁটির ভেঁপু‘ গল্পে বর্ণিত ‘কালমেঘ’ হচ্ছে যকৃতের রোগে উপকারী এক প্রকার তিক্ত স্বাদের গাছ।

খ. আত্মসম্মানবোধের কারণে সদৃগোপদের প্রস্তাবে হরিহর তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হয়নি। নিজে জাতে ব্রাহ্মণ হওয়ায় নিচু জাতের লোকটির কাছে সম্মান বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। তাই লোকটির প্রস্তাবে হরিহর তৎক্ষণাৎ রাজি হয়নি।
“আম-আঁটির ভেঁপু” গল্পের অপু-দুর্গার পিতা হরিহর দশঘরায় তাগাদার জন্য গিয়ে যে লোকটির সাক্ষাৎ পান সেই লোকটি হরিহরকে তার বাড়িতে মন্ত্র দিতে। অনুরোধ করেন। কিন্তু হরিহর ভেবেছিলেন তৎক্ষণাৎ রাজি হলে সদগোপ জাতের লোকটি তার সম্পর্কে নিম্ন ধারণা পোষণ করতে পারেন। তাছাড়া তিনি নিজে জাতে ব্রাহ্মণ হওয়ায় নিচু জাতের লোকটির কাছে সম্মান বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। তাই লোকটির প্রস্তাবে হরিহর তৎক্ষণাৎ রাজি হয়নি।

গ. উদ্দীপকের ১ম অংশে আম-আঁটির ভেঁপু” গল্পের অপু-দুর্গাদের পরিবারের দরিদ্রতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে দরিদ্র পরিবারের জীবনচিত্র নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে। হরিহরের পরিবারে দরিদ্রতা যেন নিত্যদিনের সাথি। তাদের জীবনে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। গল্পে সর্বজয়াকে আমরা ধারদেনা করে চলতে দেখি। তারপরও তারা ভালো জীবনের প্রত্যাশায় নিজেদের চেষ্টা অব্যাহত রাখে।
উদ্দীপকের ১ম অংশে দরিদ্র মানুষের কষ্টের কথা বলা হয়েছে। শীতের রাতে তাদের সইতে হয় সীমাহীন কষ্ট। তাই শীত থেকে বাঁচতে সূর্যের কাছে তারা অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছে। কেননা, সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে সামান্য কাপড় দিয়ে অনেক কষ্টে তাদের রাত কাটাতে হয়। উদ্দীপকের এরূপ দরিদ্রতার দিকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পেও পরিলক্ষিত হয়। অপু-দুর্গার জীবনযাপন ও হরিহর-সর্বজয়ার সংসার চালানোর চিত্রে উদ্দীপকের ১ম অংশে বর্ণিত দরিদ্রতার দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে ভাই-বোনের আনন্দপূর্ণ শৈশবে দারিদ্র্য কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি, যা প্রশ্নোক্ত মন্ত্রব্যটিকে যথার্থ করে তুলেছে।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে গ্রামীণ জীবনে অপু-দুর্গার আনন্দময় জীবনের প্রকাশ ঘটেছে। অপু ও দুর্গা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কিন্তু তাদের শৈশবের দারিদ্র্যের সেই কষ্ট গল্পটিতে প্রধান হয়ে ওঠেনি; বরং দুই ভাই-বোনের দুরন্তপনা, গ্রামীণ ফলফলাদি খাওয়ার আনন্দ ও বিচিত্র বিষয় নিয়ে তাদের কৌতূহল আমাদের চিরায়ত শৈশবকে মনে করিয়ে দেয়। গল্পটিতে বর্ণিত অপু-দুর্গার শৈশবের দুরন্তপনা গল্পটির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকেও ছাপিয়ে গিয়েছে।
উদ্দীপকের ২য় অংশে আমরা ভাই-বোনের দুরন্তপনার কথা জানতে পারি। যেখানে ভাই তার বোনকে নিয়ে প্রকৃতির মাঝে হারাতে চায়। পদ্মা, মেঘনা নদীতে বেড়াতে চায়। কানাই নিজের দুরন্তপনার সঙ্গী হিসেবে তার বোন ছোকানুকেও সাথে নিতে চায়। তাদের নৌকা করে নদীতে বেড়ানোর আকাঙ্ক্ষার দিকটি আমাদের শৈশবের আনন্দময় মুহূর্তকেই মনে করিয়ে দেয়। ঠিক একই ধরনের ঘটনা আমরা লক্ষ করি আলোচ্য গল্পের অপু-দুর্গার মাঝে।
উদ্দীপকের ২য় অংশে ভাই-বোনের দুরন্তপনার যে চিত্র দেখা যায়, তা ‘আম-আঁটির ভেঁপু” গল্পেরও মূল বিষয় গল্পটিতে এই বিষয় ছাড়াও সংসারের অভাব-অনটনের নানা চিত্র ফুটে উঠেছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে অপু-দুর্গার মাঝে ফুটে ওঠা চিরায়ত শৈশবের দিকটি। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

পড়ুন → তৈলচিত্রের ভূত গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
পড়ুন → পড়ে পাওয়া গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : উপল ও নিধি ভাইবোন। নিধি বড়ো, উপল ছোটো। তাদের দু’জনের বয়সের পার্থক্য পাঁচ। বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় তারা খেলছিল। তাদের মা উঠানে বসে তরকারি কাটছিলেন। তিনি ঘরে ঢুকতেই উপল ও নিধি ছুটে গেল টকটকে লাল জামরুল কুড়াতে। মা দেখে তাদের শাসন করছিলেন। মা রান্নাঘরে যেতেই তারা বাইরে বেরিয়ে গেল। মা রান্না করে, কাপড় কেচে গোসল করতে গেলেন। দ্বিপ্রহর হলেও নিধি ও উপল ফিরে আসেনি।

ক. ‘পিঁজরাপোলের আসামি’ কী?
খ. ‘তখনি কী রাজি হতে আছে’ -ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের উপল ও নিধির সাথে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের যোগসূত্র ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের মা সর্বজয়া চরিত্রকে পুরোপুরি ধারণ করেনি”— মূল্যায়ন করো।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘পিঁজরাপোলের আসামি’ হলো খাঁচায় পড়ে থাকা অবহেলিত আসামি।

খ. দশঘরার এক ব্যক্তি হরিহরকে জমিজমা দিয়ে তাদের গ্রামে বাস করার প্রস্তাব করলে কেন সে তখনি রাজি হয়ে যায়নি স্ত্রীর এমন প্রশ্নের জবাবে হরিহর সর্বজয়াকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের হরিহর দরিদ্র ব্রাহ্মণ। রায়বাড়ির গোমস্তাগিরির কাজ ও এবাড়ি সেবাড়ি পুজো অর্চনা করে সংসার চলত হরিহরের। হরিহরের কাছে সদগোপ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি পরিবারসহ মন্ত্র নেওয়ার প্রস্তাব করে। এর ফলে জমিজমা পাওয়ার বিষয়টি হরিহরের কাছে মন্দ বলে মনে হয়নি। কিন্তু প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলে হরিহরের পারিবারিক দুরবস্থা সম্পর্কে সে আঁচ করতে পারবে, এ কারণে সে মিথ্যে ভান দেখিয়ে একটু সময় নিয়েছে। এ বিষয়টি বোঝাতেই হরিহর প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে।

গ. উদ্দীপকের উপল ও নিধির সাথে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের দুর্গা ও অপুর চিরায়ত শৈশবের যোগসূত্র রয়েছে।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের অপু ও দুর্গা যেন প্রকৃতির কোলে লালিত দুই শিশু। সংসারের দারিদ্র্য তাদের আনন্দ প্রকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। দুর্গতি সারাদিন বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো, বন থেকে নানা ধরনের ফলমূল, খেলার সামগ্রী সংগ্রহ এবং ছোটো ভাই অপুর সাথে তা ভাগাভাগি করে নেওয়ার মূল আমাদের চিরায়ত শৈশবকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
উদ্দীপকের দৃশ্যও আমাদের চিরায়ত শৈশবের স্মৃতির ডালা খুলে দেয়। উপল ও নিধি দুই ভাই-বোন। তাদের দুজনের মধ্যে অনেক ভাব। প্রকৃতির মাঝে তারা খেলাধুলা করে। খোলা উঠানে খেলা করা, জামরুল কুড়ানো, দ্বিপ্রহরে মাঠে মাঠে ছুটে বেড়ানো— সবকিছুই আমাদের শৈশবের স্মৃষ্টি ফিরিয়ে আনে সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের উপল ও নিধির সাথে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের দুর্গা ও অপুর চিরায়ত শৈশবের যোগসূত্র রয়েছে।

ঘ. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের সর্বজয়া চরিত্রে সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, সংসারের দারিদ্র্য, সন্তানদের শাসন করাসহ নানা বিষয় পরিলক্ষিত হলেও উদ্দীপকের মা চরিত্রে কেবল সন্তানদের শাসন করা ও সাংসারিক দায়িত্ব পালনের বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
আম-আঁটির ভেঁপু গল্পে সর্বজয়া দরিদ্র ব্রাহ্মণ হরিহরের স্ত্রী। হরিহরের অভাবের সংসারে কষ্ট করে কোনোমতে তার দিন চলে। ধারের টাকা ফেরত দিতে পারে না বলে পাওনাদাররা বাড়িতে হানা দেয়, কথা শোনায়। তবুও হাল ছাড়ে না সর্বজয়া, সন্তানদের মুখ চেয়ে কঠিন হাতে সংসারের হাল ধরে।
উদ্দীপকের মা চরিত্রের মধ্যে আমরা বাঙালির চিরায়ত মাতৃরূপ প্রত্যক্ষ করি। গভীর স্নেহে তিনি সন্তানদের আগলিয়ে রাখেন। সংসারের প্রাত্যহিক কাজকর্ম সম্পন্ন করেন। সন্তানদের জন্য রান্নাবান্না করেন। প্রয়োজনে সন্তানদের শাসন করেন। আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের সর্বজয়ার সাংসারিক দারিদ্র্যের বিষয়টি উদ্দীপকের মায়ের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না।
আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের সর্বজয়া এবং উদ্দীপকের মা চরিত্রের মধ্যে শাশ্বত গ্রাম্যমায়ের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। সর্বজয়া শত অভাবের মধ্যেও সন্তান দুটিকে আগলে রেখেছেন, তাদের মুখে অন্ন তুলে দিতে তৎপর হয়েছেন। উদ্দীপকের মা চরিত্রটির মধ্যেও সন্তান বাৎসল্যের দিকটি পরিলক্ষিত হয়। গল্পের সর্বজয়া চরিত্রে সন্তানের প্রতি স্নেহ-মমতা, সংসারের দারিদ্র্যসহ নানা বিষয় পরিলক্ষিত হলেও উদ্দীপকের মা চরিত্রে এর আংশিক বিষয় পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : বুদ্ধদেব বসুর ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতায় কানাই ও ছোকানু নামে দুই ভাইবোনের পরিচয় পাওয়া যায়। এখানে কানাই তার ছোট বোন ছোকানুর প্রতি অত্যন্ত দায়িত্বশীল আচরণ করে। নৌকা ভ্রমণে গিয়ে সে সবসময় ছোকানুকে চোখে চোখে রাখে। এছাড়া ছোকানু ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলে সে মাঝিকে অনুরোধ করে তার প্রতি খেয়াল রাখার জন্য ।

ক. দুর্গা আঁচলের খুঁট খুলে কী বের করল?
খ. অপু ও দুর্গার আম খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটল কেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের সম্পৃক্ততা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কানাই ও দুর্গাকে কি পরস্পরের প্রতিবিম্ব বলা যায়? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. দুর্গা আঁচলের খুঁট খুলে কতকগুলো শুকনো রড়া ফলের বিচি বের করল।

খ. মা ক্ষার কেচে ঘাট থেকে চলে আসায় অপু ও দুর্গার আম খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটল।
পটলিদের বাগান থেকে আম এনে খুব সাবধানে খাচ্ছিল অপু ও দুর্গা। মায়ের বাড়িতে ঢোকার ওপর তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল। তারপরও মনের আনন্দেই চলছিল তাদের আম খাওয়া কিন্তু হঠাৎ করেই মা বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করতে থাকেন। ফলে অপু ও দুর্গার আম খাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।

গ. ছোটদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করার বিষয়ে উদ্দীপকের কানাই, আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের দুর্গা একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
গল্পে আমরা লক্ষ করি, দুর্গা তার ভাই অপুকে অত্যধিক স্নেহ করে। ভাইকে ছাড়া সে কোনোকিছুই খায় না। তারা উভয়েই মাকে খুব ভয় পায়। মায়ের কাছে আম খাওয়ার কথা বলে ফেলায় দুর্গার কাছে অপু বকুনি খায়। কিন্তু তারপরও ভাইয়ের প্রতি তার স্নেহশীল আচরণের কোনো পরিবর্তন হয় না।
উদ্দীপকে কানাই তার বোনের প্রতি স্নেহশীল ও দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করেছে। বোনকে সে সবসময় চোখে চোখে রেখেছে। এছাড়া নৌকাভ্রমণের সময় মাঝিকে অনুরোধ করেছে বোনকে দেখে রাখার জন্য । কানাইয়ের এ আচরণের সঙ্গে গল্পের দুর্গার আচরণ সম্পূর্ণ না মিললেও সহোদরের প্রতি স্নেহ প্রদর্শনের দিক থেকে তারা একসূত্রে বাঁধা। এদিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে গল্পটি সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

ঘ. ছোট ভাই-বোনের প্রতি দায়িত্বশীল ও স্নেহশীল আচরণ বিবেচনায় কানাই ও দুর্গাকে একে অপরের প্রতিবিম্ব বলা যায়।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে দুর্গা তার ছোট ভাই অপুকে নির্বুদ্ধিতার জন্য বারবার বকুনি দিয়েছে। কিন্তু তারপরও ভাইয়ের প্রতি তার স্নেহের কোনো ঘাটতি হয়নি। শুকনো রড়া ফলের বিচিগুলো কুড়িয়ে সে ভাইয়ের জন্য আলাদা করে রেখেছে। এতে ভাইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকে কানাই নামের এক কিশোরের কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকটিতে তাকে বোনের প্রতি স্নেহশীল আচরণ করতে দেখা যায়। বোনকে সে সবসময় চোখে চোখে রেখেছে। বোনের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ থেকেই সে মাঝিকে অনুরোধ করেছে মাঝি যেন তার ছোটবোনটিকে দেখে রাখে।
আম-আঁটির ভেঁপু গল্প এবং উদ্দীপকে কানাই ও দুর্গা দুজনেই ছোট ভাইবোনের প্রতি দায়িত্বশীল ও স্নেহশীল আচরণ করেছে। দুর্গা ভাইয়ের প্রতি ক্ষেত্র বিশেষে একটু রূঢ় আচরণ করলেও কানাইয়ের মধ্যে সেরকম কোনো বিষয় দেখা যায় না। তবে তারা উভয়েই ছোট ভাইবোনের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করেছে। এদিক থেকে বিচার করলে কানাই ও দুর্গা একইরূপ মানসিকতার অধিকারী। তাই তাদেরকে পরস্পরের প্রতিবিম্ব বলা যায়।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : আমি থেকে
তালপাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি।
বাঁশি কই আগের মতো বাজে না।
মন আমার তেমন কেন সাজে না

ক. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে দুর্গার বয়স কত?
খ. দশঘরার লোকটির অনুরোধে হরিহর তৎক্ষণাৎ সেখানে যেতে রাজি হলো না কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের যে দিকের ইঙ্গিত করেছে তা ব্যাখ্যা করো?
ঘ. “উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পের একটি দিক উঠে এলেও গ্রামীণ দরিদ্র পারিবারিক জীবনের দুর্দশার চিত্র অনুপস্থিত।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে দুর্গার বয়স দশ-এগারো বছর

খ. দশঘরার লোকটির অনুরোধে হরিহর তৎক্ষণাৎ সেখানে যেতে রাজি হলো না তার আত্মসম্মানবোধের কারণে।
হরিহর দশঘরায় তাগাদার জন্য গিয়ে যে লোকটির সাক্ষাৎ পায় সেই লোকটি হরিকে তার বাড়িতে মন্তর দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু হরিহর ভেবেছিল তৎক্ষনাৎ রাজি হলে সদগোপ জাতের লোকটি তার সম্পর্কে নিম্ন ধারণা পোষণ করতে পারে। তাছাড়া সে নিজে জাতে ব্রাহ্মণ হওয়ায় নীচু জাতের লোকটির কাছে সম্মান বজায় রাখতে চেয়েছিল। তাই লোকটির প্রস্তাবে হরিহর তৎক্ষণাৎ রাজি হলো না। উত্তরের সারবস্তু: দশঘরার লোকটির অনুরোধে হরিহর তৎক্ষণাৎ সেখানে যেতে রাজি হলো না তার আত্মসম্মানবোধের কারণে।

গ. উদ্দীপকটি আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের চিরায়ত শৈশবের দিকের ইঙ্গিত করেছে।
আম-আঁটির ভেঁপু গল্পটি গ্রামীণ জীবনে প্রকৃতিঘনিষ্ঠ দুই ভাই-বোনের আনন্দিত জীবনের আখ্যান নিয়ে রচিত হয়েছে। অপু ও দুর্গা হতদরিদ্র দুই শিশু। কিন্তু তাদের শৈশবে দারিদ্র্যের সেই কষ্ট প্রধান হয়ে ওঠেনি। অধিকন্তু গ্রামীণ ফলফলাদি আহারের আনন্দ এবং বিচিত্র বিষয় নিয়ে তাদের বিস্ময় ও কৌতূহল যেন চিরায়ত শৈশবকেই স্মরণ করিয়ে দেয়।
উদ্দীপকের কবি বাজার থেকে তালপাতার একটি বাঁশি কিনেছেন। এই বাঁশি বাজিয়ে এখন আর আগের মতো আনন্দ তিনি পান না। তাই তার মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে হয়তো ছেলেবেলা অনেক দূরে ফেলে এসেছেন। আলোচ্য গল্পেও অপু-দুর্গা নামের দুই ভাইবোনের মধ্য দিয়ে গল্পকার চিরায়ত শৈশবের চিত্র উত্থাপন করেছেন। সার্বিক বিচারে তাই উদ্দীপকটি আলোচ্য গল্পেও ফুটে ওঠা চিরায়ত শৈশবকেই ইঙ্গিত করে।

ঘ. উদ্দীপকে আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের চিরায়ত শৈশবের দিকটি উঠে এলেও গ্রামীণ দরিদ্র পারিবারিক জীবনের দুর্দশার চিত্র অনুপস্থিত।
আম-আঁটির ভেঁপু গল্পটিতে মানুষের চিরায়ত শৈশব প্রকাশের পাশাপাশি গ্রামীণ দরিদ্র পারিবারিক জীবনের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গল্পটির একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে অপু-দুর্গার প্রকৃতিঘনিষ্ঠতা। আনন্দের ছোট ছোট উৎসে তাদের কাছে দারিদ্র্যের কষ্টও হার মেনেছে। এছাড়া এই গল্পে পল্লিমায়ের শাশ্বত রূপটি ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকে কেবল চিরায়ত শৈশবের স্মৃতি কল্পনা করা হয়েছে। উদ্দীপকের কবি শৈশবে বাজার থেকে তালপাতার বাঁশি কিনে বাজিয়ে আনন্দ পেতেন। কিন্তু বড় হওয়ার পর যখন সেই বাঁশি আবার কিনলেন তখন তার উপলব্ধি হলো শৈশবের সেই উচ্ছ্বাস ও আনন্দ যেন নেই। ছেলেবেলার সেই শিশুসুলভ আবেগ যেন হারিয়ে গিয়েছে।
উদ্দীপক ও গল্পের আলোচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু” গল্পের কেবল চিরায়ত শৈশবের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এ গল্পের পারিবারিক দরিদ্র জীবনের চিত্র সেখানে উঠে আসেনি। পল্লিমায়ের শাশ্বত রূপও এখানে পাওয়া যায় না। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকে ‘আম-আঁটির ভেঁপু গল্পের একটি দিক উঠে এলেও গ্রামীণ দরিদ্র পারিবারিক জীবনের দুর্দশার চিত্র অনুপস্থিত”- মন্তব্যটি যথার্থ।

Leave a Comment