(বাংলা) ৬ষ্ঠ: বুঝে পড়ি লিখতে শিখি (১ম পরিচ্ছেদ: প্রায়োগিক লেখা) – সমাধান

বুঝে পড়ি লিখতে শিখি হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা বই এর ৫ম অধ্যায়। বুঝে পড়ি লিখতে শিখি অধ্যায়ের ১ম পরিচ্ছেদ প্রায়োগিক লেখা এর অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১ম পরিচ্ছেদ : প্রায়োগিক লেখা

‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
ক. উৎস সম্পর্কিত তথ্য : ‘একাত্তরের দিনগুলি’ শিরোনামের বই থেকে লেখাটি সংকলিত হয়েছে।

খ. লেখক সম্পর্কিত তথ্য : জাহানারা ইমাম ১৯২৯ সালের ৩ মে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুত্র রুমী গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এবং শহিদ হয়েছিলেন। এ জন্য তিনি ‘শহিদ জননী’ নামে পরিচিত। তাঁর সমগ্র রচনায় প্রগতিশীল চিন্তা, মানবতাবাদ, মুক্তবুদ্ধি, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত জীবনবোধ, দেশপ্রেম এবং মুক্তিযুদ্ধ প্রাধান্য পেয়েছে। তাঁর জনপ্রিয় কিছু সাহিত্যকর্ম— ‘গজকচ্ছপ’, ‘সাতটি তারার ঝিকিমিকি’, ‘একাত্তরের দিনগুলি’, ‘ক্যান্সারের সাথে বসবাস’ ইত্যাদি। সাহিত্যক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ‘স্বাধীনতা পদক’সহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

গ. সারসংক্ষেপ : ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় ১৯ মার্চ লেখিকা তাঁর পুত্র রুমীর সাহসিকতার সঙ্গে গাড়ির কাচে বাংলা অক্ষরে লেখা অভিনব স্টিকার লাগানোর কথা বলেছেন। স্টিকারের পরিকল্পনা ও ডিজাইন করেছেন ‘পটুয়া’ কামরুল হাসান। কয়েক দিন আগে শাপলা ফুলকে সংগ্রামী বাংলার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করে তিনি ‘বাংলার পটুয়া সমাজ’ নামে একটি সমিতি গঠন করেন। ২২ মার্চ লেখিকা দেশব্যাপী দ্রুত প্রবহমান ঘটনাবলির উত্তেজনায় আগের দিনের সকলের কর্মব্যস্ততাকে তুলে ধরেছেন। পরের দিন ২৩ মার্চ ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন করা নিয়ে সারা দেশে যে প্রচণ্ড আলোড়ন-উদ্দীপনা, তা বর্ণনা করেছেন। ২৩ মার্চ ‘প্রতিরোধ দিবসে’ সকলে মিলে কালো পতাকার পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন পতাকা উড়িয়েছেন। শহরের সব জায়গায় নতুন পতাকা উড়ানোর কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে সকলের মধ্যে যে আনন্দ, উত্তেজনা, প্রত্যাশা, ভয় বিরাজ করছিল, তার বর্ণনা করেছেন। শহিদ মিনারের সিঁড়ির ধাপে কামরুল হাসানের আঁকা কিছু দুর্দান্ত পোস্টার সেঁটে রাখার কথা বলেছেন।

ঘ. নামকরণ : সংকলিত অংশের নামকরণে মূল গ্রন্থের শিরোনামটিই রক্ষিত হয়েছে। স্মৃতিচারণামূলক এ রচনার বিষয়বস্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন উত্তাল দিনগুলির বর্ণনা। বিষয়বস্তু বিবেচনায় প্রবন্ধটির নামকরণ যথার্থ।

ঙ. ভাষা : বিবরণমূলক এ রচনাটি সাবলীল ভঙ্গিতে প্রমিত ভাষায় রচনা করা হয়েছে।

রোজনামচা
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে নানারকম ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার কোনো কোনোটি আমরা লিখে রাখি। প্রতিদিনের ঘটা এই ঘটনা লিখে রাখাকে ‘রোজনামচা’ বলে। রোজনামচায় কোনো ব্যক্তির প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া বিশেষ কিছু ঘটনাই লিখিত থাকে। প্রাত্যহিক জীবনের ঘটনা লিখিত হয় বলে রোজনামচাকে দিনলিপিও বলা হয়। লিপি অর্থ চিঠি কিন্তু দিনলিপি সেই অর্থে চিঠি নয়। দিনলিপি আসলে ব্যক্তির ফেলে আসা দিনের হিসাবের মাপকাঠি, নিজেকে পেছন ফিরে অবলোকনের দর্পণ। ব্যক্তি সেখানে নিজের সঙ্গে দেশ-কাল, সমাজ-পরিবেশ, আচার-সংস্কৃতি, সংগতি-অসংগতি, উন্নতি-অবনতি, কল্যাণ-অকল্যাণও দেখার সুযোগ পায়।
স্মৃতিকাতর মানুষ একসময় রোজনামচার পাতায় চোখ রেখে অতীতকে তুলে আনতে পারে নিজের সামনে। রোজনামচা একটি সৃজনশীল বিবরণী। রোজনামচা হচ্ছে জীবনের আয়না। এটি একজন শিক্ষিত ও রুচিশীল মানুষের ভালো অভ্যাস। ব্যক্তিজীবনে রোজনামচার প্রয়োজন। অনেক। এর মাধ্যমে মানুষ তার জীবনের নানা ঘটনাপ্রবাহ সংক্ষিপ্তাকারে সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। এর দ্বারা অতীতের তথ্যকে ভবিষ্যতের যেকোনো কাজে ব্যবহার করা যায়। রোজনামচা ব্যক্তিজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা কখনো কখনো প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে পারে। রোজনামচা লেখার কিছু কৌশল বা পদ্ধতি রয়েছে— রোজনামচায় তারিখ ও সময়ের উল্লেখ থাকতে হবে, প্রতিটি লেখা সুস্পষ্ট হস্তাক্ষরে লেখা বাঞ্ছনীয়, বর্ণনা সংক্ষিপ্ত হওয়া ভালো, এটি নাম পুরুষে লেখা ভালো ইত্যাদি।

রোজনামচা লেখার ক্ষেত্রে করণীয়

  • সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বা প্রতিদিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা।
  • রোজনামচা লেখার সময় তারিখ, বার ও সময় উল্লেখ করা।
  • মূলবিষয়টি সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপস্থাপন করা।
  • একই কথার পুনরাবৃত্তি না করে লেখার সাবলীলতা বজায় রাখা।
  • রোজনামচাতে ব্যক্তিগত উপলব্ধির প্রকাশ করা।
  • একটি দিনের রোজনামচা লেখার ক্ষেত্রে ঘটনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
  • চলমান কোনো ঘটনার ইতিহাস বর্ণনা করা।
  • সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনা না করে নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে লেখা।

পড়ে কী বুঝলাম
১. ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনাটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

ক. এটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে?
খ. লেখাটি কোন সময়ের ও কয়দিনের ঘটনা?
গ. লেখক কী কী কাজের উল্লেখ করেছেন?
ঘ. লেখার তিন অংশের শুরুতে তারিখ দেওয়া কেন?
ঙ. এই লেখা থেকে নতুন কী কী জানতে পারলে?

নমুনা উত্তর :

ক. ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনাটি মুক্তিযুদ্ধের পূর্বকালীন উত্তেজনা, আন্দোলন ও আতঙ্কের বিষয় নিয়ে লেখা।

খ. ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনাটি ১৯৭১ সালের ঘটনা। এতে তিন দিনের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

গ. লেখক নাশতা বানানো, স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন পতাকা ওড়ানো, শহিদ মিনারে গিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ ইত্যাদি কাজের উল্লেখ করেছেন।

ঘ. রোজনামচা বা দিনপঞ্জিমূলক লেখায় শুরুতে তারিখ দেওয়া হয়। ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনাটিও এ-জাতীয় লেখা। লেখাটিতে তিনদিনের ঘটনা রয়েছে। তাই তিনটি অংশের শুরুতে তারিখ দেওয়া হয়েছে।

ঙ. ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনা থেকে নতুন অনেক কিছু জানতে পারলাম। এতে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে সকল শ্রেণি-পেশা ও সকল মানুষের আবেগ-উত্তেজনা, রুমীর আবেগ ও সাহস ইত্যাদি জানতে পারলাম। এছাড়া ২৩ মার্চ যে প্রতিরোধ দিবস এবং শাপলা ফুল যে সংগ্রামী বাংলার প্রতীক তা-ও এখান থেকে জানতে পারলাম।

আরো পড়ো →অর্থ বুঝে বাক্য লিখি (১ম পরিচ্ছেদ: শব্দের শ্রেণি)
আরো পড়ো →অর্থ বুঝে বাক্য লিখি (২য় পরিচ্ছেদ: শব্দের অর্থ)

বলি ও লিখি
২. ‘একাত্তরের দিনগুলি’ রচনায় লেখক যা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

নমুনা উত্তর :
রোজনামচাটি জাহানারা ইমাম রচিত ‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থের অংশবিশেষ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বের উত্তেজনা, প্রত্যাশা, আতঙ্ক ও আন্দোলনের বিষয় নিয়ে এটি লেখা হয়েছে। মাত্র তিন দিনের এই লেখায় মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগমুহূর্তে দেশব্যাপী জনমনে যে আতঙ্কের পাশাপাশি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা, আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল, তা ফুটে উঠেছে। দেশজুড়ে ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন এবং শাপলা ফুলকে সংগ্রামী বাংলার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। এরই সঙ্গে সব জায়গায় কালো পতাকার পাশাপাশি স্বাধীন বাংলার নতুন পতাকা ওড়ানোর কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের আবেগ, উত্তেজনা ও সাহসিকতার পরিচয় ফুটে উঠেছে। ছোট্ট ছেলে রুমীর সাহসিকতার সঙ্গে বাংলায় লেখা স্টিকার গাড়ির কাচে লাগানো কথা বলা হয়েছে। সকলের মধ্যেই ছিল স্বাধীনতার প্রত্যাশা।

Leave a Comment