ভাব-সম্প্রসারণ: ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়;
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়;
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।

ভাব-সম্প্রসারণ: অগ্ন তৃপ্ত মানুষের মন প্রেম ও সৌন্দর্যের মধুর কাব্যসুধায় সিক্ত হয় কিন্তু যে মানুষের ক্ষুধায় অন্ন জোটে না, জঠরাগ্নি যার নিবৃত্ত হয়নি, বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু যার জীবনে অস্বীকৃত, সুন্দর তার কাছে কোনো তাৎপর্যই বহন করে না। জীবনে ক্ষুধাই যখন সর্বাপেক্ষা প্রবল হয়ে দেখা দেয়, মানুষের জীবন থেকে প্রেম ও সৌন্দর্যের সূক্ষ্মতার বোধগুলো বিশুষ্ক পণ্যের মতোই তখন ঝরে পড়ে।

পড়ুন → অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।

সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষকে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়ের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়েছে। এ সংগ্রামে যখন সে জয়ী হয়েছে তখনই তার মন প্রয়োজনের সীমাকে ডিঙিয়ে প্রকৃতির মধ্যে রূপ, রং, রসের সন্ধান করেছে। এভাবেই পূর্ণিমার চাঁদ তার কাছে প্রতিভাত হয়েছে প্রেম ও সৌন্দর্যের আধাররূপে। যুগ যুগ ধরে চিত্রে, সাহিত্যে, সংগীতে এ অপরূপকে মানুষ কত রূপেই না প্রত্যক্ষ করেছে। সুদূরের সৌন্দর্যকে সে সীমার স্বপ্নে বাঁধতে চেয়েছে। কিন্তু জীবনের জৈব প্রয়োজনকে অস্বীকার করার কোনো পথ নেই। শুধু বেঁচে থাকার জন্য অন্ন সংগ্রহের তাড়নায় যে জীবন পর্যুদস্ত, তার কাছে পূর্ণিমার চাঁদ কোনো সুন্দরের স্বপ্নকে বহন করে আনে না। নিয়ে আসে শুধু একটি বহু কাঙ্ক্ষিত ঝলসানো রুটির স্বপ্ন। পরিবেশই মানুষের জীবন ও মনকে গড়ে তোলে। বর্তমানে ধনতান্ত্রিক সভ্যতার অর্থনৈতিক সংকট বিপুলসংখ্যক মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নিয়েছে ক্ষুধার অন্ন। জনজীবনে নেমে এসেছে দারিদ্র্যের অভিশাপ। সুকঠিন জীবনসংগ্রামে জর্জরিত মানুষ স্বাভাবিক কারণেই সুন্দরকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ক্ষুধার অন্নই তার কাছে সর্বাপেক্ষা সত্য হয়ে দেখা দেয়। প্রেম ও সুন্দরের স্বপ্ন মন্দির, কাব্যকূজন তখন তার কাছে নিরর্থক মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পৃথিবী গদ্যের মতোই নীরস ও কঠিন, কাব্যের ললিতবাণী তার কাছে শুধু ব্যর্থ পরিহাস মাত্র।

ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে কোনো সৌন্দর্যই প্রতিভাত হয় না। সৌন্দর্য হলো প্রয়োজনের আনন্দ। ক্ষুধা নিবারণ জীবমাত্রেই প্রথম প্রয়োজন। সেই প্রয়োজন যখন অসম্ভব হয়ে ওঠে, তখন কাব্যের শব্দ-ছন্দ-অলংকারের বৈভব অবাস্তব ও অলীক বলে মনে হয়।

4 thoughts on “ভাব-সম্প্রসারণ: ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়;<br>পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।”

Leave a Comment