অনুচ্ছেদ: বিশ্ববিদ্যালয়

অনুচ্ছেদ: বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুন এখান থেকে. উচ্চশিক্ষা দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে। জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জনে নাগরিকের জ্ঞান ও দক্ষতায় উচ্চশিক্ষার বিকল্প যে কিছু নেই সেটা তর্কাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত। দেশে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাস্তরের প্রতিটি ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা। সেটা হতে পারে দেশে কিংবা বিদেশে। আর এই উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হলো বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় উচ্চশিক্ষা লাভের একমাত্র ক্ষেত্র ছিল আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত ৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের ৫০ বছরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মোট ৫০টি। ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৯২’ পাশ হওয়ার পর দেশে বেসরকারি উদ্যোগে উচ্চ শিক্ষাবিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়। বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৮টি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩টি। ক্রমশ তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় একটি দেশের দর্শন। কারণ, এখানে মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করা হয়।

অনুচ্ছেদ: বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যতটা জ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা হওয়ার কথা ছিল তার তুলনায় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র-রাজনীতি, মাদক, গ্রুপিং, র‍্যাগিং ইত্যাদি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা খুব একটা প্রায়োগিক নয়। কর্মজীবনেও এসব শিক্ষা ফলপ্রসূ হয় না। তাছাড়া বর্তমানে বিজ্ঞান ও কারিগরি প্রযুক্তির বিশ্বে বাস্তব, কর্মমুখী ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজন । এর জন্য প্রয়োজন গবেষণাগারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ ও তদারকির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা হতে হবে উৎপাদনমুখী, বাজার চাহিদা ও প্রযুক্তিমুখী। এজন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন কাঠামো ও মান নিয়ন্ত্রণ যথাযথভাবে করতে হবে।

পড়ুন → আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
পড়ুন → বৈশাখী মেলা

বিশ্ববিদ্যালয় | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে উৎসাহিত করা, এবং সমাজের জন্য দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। প্রতিটি নাগরিকের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের অধিকার রয়েছে। উচ্চশিক্ষার জন্য কেউ দেশের বাইরে পড়তে যায় আবার কেউ বাংলাদেশেই পড়াশোনা করে । প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে ভালো মানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করা। কারন উচ্চশিক্ষা অর্জনের কারনে শিক্ষার্থীরা তাদের লক্ষ্য অর্জনে কয়েক ধাপ এগিয়ে যায়। একজন শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় তখন সেই শিক্ষার্থীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গুনাবলী বিকশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পায়। তাদের ক্যারিয়ার অর্জনের জন্য সময় উপযোগী বিভিন্ন ধরনের সময় উপযোগী শিক্ষা প্রদান করা হয়, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজ করর সুযোগ পায়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিডারশীপ অর্জনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের হিসাবে, বাংলাদেশে মোট ১৬১টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি সরকারি এবং ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। উপমহাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হলো  আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। নবম শতাব্দীতে মিশরে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ইসলামী বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২০ সালে ভারতীয় বিধানসভায় গৃহীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইনবলে ১৯২১ সালের ১ জুলাই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত এবং বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদান করে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হয় এবং  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও  বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কোনো ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি হতে পারে। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের দর্শন বলে। কারন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা মুক্তভাবে জ্ঞান চর্চা করতে পারে। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তভাবে জ্ঞান চর্চা করার সুযোগ নেই। তার চেয়ে বেশি দেখা যায় ছাত্র রাজনীতি,  র‍্যাগিং, গ্রুপিং ইত্যাদি। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষা অতটা  প্রায়োগিক নয়। যার ফলে কর্ম জীবনে এসব শিক্ষা তেমন কাজে লাগেনা। আর এ কারনেই আমাদের দেশের ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশোনা শেষ করে বেকার থাকে। তাদের কাঙ্খিত চাকরি খুজে পায়না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা হতে হয় উৎপাদনমুখী, বাজার চাহিদা ও প্রযুক্তিমুখী। তবে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন তাদের শিক্ষা পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটিয়েছে যার কারনে সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে অনেক ভালো ভালো পদে চাকরির সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের নাম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচিতি পাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য

বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের এক উজ্জ্বল প্রদীপ, যেখানে শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে মানুষের বুদ্ধি, দক্ষতা ও জ্ঞানকে পরিপূর্ণতা দেওয়া হয়। ৯ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত মরক্কোর আল-কারাওয়াইন বিশ্ববিদ্যালয়কেই পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ্য করা হয়। ভারতের ইতিহাসে কয়েকটি স্থান রয়েছে যেগুলো জ্ঞান ও শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে অমর হয়ে আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিহার রাজ্যের রাজগিরে অবস্থিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। ৫ম থেকে ১৩শ শতাব্দী পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নালন্দা সেই সময়ে বৌদ্ধ দর্শন, শিল্প ও সংস্কৃতির একটি উজ্জ্বল কেন্দ্র ছিল। বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দেশের উচ্চশিক্ষায় অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষা কাঠামো একটি সুসংগঠিত বাস্তুতন্ত্রের সাথে তুলনা করা যায়, যা একাধিক অনুষদ নিয়ে গঠিত। প্রতিটি অনুষদ নির্দিষ্ট বিষয়ের গভীর গবেষণা ও শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট ডিগ্রির বাবস্থা থাকে। অভিজ্ঞ প্রফেসর, অধ্যাপক ও লেকচারাররা তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা ছাত্রদের মাঝে বিলিয়ে দেন, যা শিক্ষা ও মানসিক বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তবে, শুধুমাত্র কোর্সের মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জন হয় না। তাই গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য অংশ হিসাবে কাজ করে। এর পাশাপাশি পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রজেক্টের মাধ্যমে ছাত্রদের শিক্ষাগত অগ্রগতি নিরীক্ষা করা হয়। অধিকন্তু, ছাত্র সমাজ এই শিক্ষা বাস্তুতন্ত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ছাত্ররা পরস্পরের সাথে মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে জ্ঞান আদানপ্রদান করে এবং শিক্ষাগত অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। বাংলাদেশে মোট ১৬১টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫৩টি সরকারি এবং ১০৮টি বেসরকারি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) উল্লেখযোগ্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। কোনো দেশের উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অপরিসীম। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যেমন কেমব্রিজ ও হার্ভার্ড, জ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইতিহাসে আমরা দেখেছি কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। ব্রিটিশ শাসন ও পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ বর্তমানে একটি গুরুতর সমস্যা মোকাবেলা করছে- ব্রেইন ড্রেন। উচ্চ শিক্ষার অপ্রতুল সুযোগ, অপ্রতুল অর্থায়ন এবং কম বেতনের কারণে দেশের অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে, বিশেষ করে উত্তর আমেরিকা ও কানাডায়। দুর্ভাগ্যক্রমে, তাদের অনেকেই আর ফিরে আসে না, যা দেশের বিকাশে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ সরকার জিডিপির মাত্র ২.৯% শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করে। এই হার প্রথম বিশ্বের অধিকাংশ দেশের তুলনায় অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র ৫.৪%, সিঙ্গাপুর ৪.২% এবং জাপান ৩.৬% শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করে। এই কম বাজেট বরাদ্দের ফলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও, বর্তমানে রাজনীতির অতিপ্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। আমাদের অবশ্যই এমন পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে যেখানে জ্ঞানের মুক্ত প্রবাহ নিশ্চিত হবে এবং ছাত্ররা নির্ভয়ে শিক্ষা ও গবেষণায় মনোযোগ দিতে পারবে। সুতরাং, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞানের আলোকবর্তা হিসেবে আরও উজ্জ্বল করে তুলতে হবে। ছাত্রদের জন্য মুক্ত চিন্তা ও সৃষ্টিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করে, রাজনীতির ব্যাধিমুক্ত করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জ্ঞান ও শিক্ষার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে। 

7 comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *