অর্থনীতি পরিচয় হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণী অর্থাৎ এসএসসি’র অর্থনীতি বই এর প্রথম অধ্যায়। অর্থনীতি পরিচয় অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
অর্থনীতি পরিচয় অধ্যায়ের সৃজনশীল
সৃজনশীল প্রশ্ন ১. জনাব আবুল হোসেন একজন দরিদ্র কৃষক। তার নিজের কোনো জমি নেই। তিনি অন্যের জমিতে চাষাবাদ করেন। যৌথ পরিবারে বসবাস করায় পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি। আয় স্বল্প হওয়ার কারণে বড় পরিবার চালাতে তার অনেক সমস্যা হয়। পরিবারের প্রত্যেকের চাহিদাও আলাদা। তারপরও আবুল হোসেন সবার চাহিদা পূরণের চেষ্টা করেন।
ক. ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কী?
খ. অর্থনীতিতে কেন সরকারি হস্তক্ষেপ প্ৰয়োজন?
গ. জনাব আবুল হোসেন তার সীমিত সম্পদ ছাড়াও আর যে কারণে সমস্যায় পড়েছেন তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. জনাব আবুল হোসেন অর্থনীতির কোন ধারণাকে কাজে লাগিয়ে তার এ সমস্যা দূর করতে পারবে বলে তুমি মনে কর? আলোচনা কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
ক. যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানগুলো ব্যঞ্জি মালিকানাধীন এবং প্রধানত বেসরকারি উদ্যোগে, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বয়ংক্রিয় দামব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলে।
খ. বাজার ব্যবস্থা সাধারণত নানা ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত চাহিদা ও সরবরাহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। বাজার ব্যবস্থা নির্দিষ্ট একজনের বদলে বহুজনের সম্মিলিত অদৃশ্য হাতের ইশারায় চলে। কিন্তু সবসময় ব্যাপারটি সঠিকভাবে হয় না। নানা কারণে অদৃশ্য হাত সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়ে।
গ. উদ্দীপকে জনাব আবুল হোসেন তার সীমিত সম্পদ ছাড়াও অসীম অভাবের কারণে সমস্যায় পড়েছেন।
মানুষ যা চায় তার সবকিছু পায় না। মানুষের এ না পাওয়া-চাওয়ার নাম অভাব। মানুষের জীবনে অভাবের শেষ নেই। ধরা যাক, রাহাত একজন শিক্ষার্থী। রাহাতের কাছে এক হাজার টাকা আছে। তার শার্ট, প্যান্ট এবং ভালো জুতা দরকার। এভাবে দেখা যাবে তার অনেক কিছু দরকার। কিন্তু তার আছে মাত্র এক হাজার টাকা। তার প্রয়োজনের তুলনায় এ টাকার পরিমাণ অনেক কম। অর্থনীতিতে এটিকে ‘সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা’ বা সীমিত সম্পদ বলে। দুষ্প্রাপ্যতার জন্য মানুষ গুরুত্ব অনুযায়ী পছন্দ বা নির্বাচন করে। পছন্দ করার প্রয়োজন না হলে অর্থনীতি বিষয়েরও প্রয়োজন থাকত না। অর্থনীতি শেখায় কীভাবে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে।
উদ্দীপকে জনাব আবুল হোসেনের পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি। পরিবারের সবার চাহিদাও আলাদা। এই আলাদা চাহিদা থাকার কারণে অভাবও অসীম। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকের জনাব আবুল হোসেন তার সীমিত সম্পদ ছাড়াও আরও অসীম অভাবে সমস্যায় পড়েছেন।
ঘ. জনাব আবুল হোসেন অর্থনীতির সুযোগ ব্যয় ধারণাকে কাজে লাগিয়ে তার এই সমস্যা দূর করতে পারবে বলে আমি মনে করি।
অর্থনীতিতে বহুল ব্যবহৃত একটি ধারণা ‘সুযোগ ব্যয়’। ধরা যাক রহিম একজন শিক্ষার্থী। রহিম কি প্রতিদিন সব কাজ করতে পারবে? যেমন— রহিম একই সঙ্গে অর্থনীতি পরীক্ষা এবং মাঠে ক্রিকেট খেলা দেখতে পারবে না। রহিম যদি একটি কাজ করতে চায় তবে অবশ্যই তার পক্ষে ঐ সময়ে অন্য কাজটি করা সম্ভব হবে না। আরও একটি উদাহরণ দেওয়া যাক, মনে করি রাসেলের এক বিঘা জমি আছে। এ জমিতে ধান চাষ করলে বিশ কুইন্টাল ধান উৎপাদন করা যায়। ঐ জমিতে ধান চাষ না করে যদি পাট চাষ করতে চায় তবে দশ কুইন্টাল পাট উৎপাদন করা যেত। এক্ষেত্রে বিশ কুইন্টাল ধানের সযোগ ব্যয় হলো দশ কুইন্টাল পাট। সংক্ষেপে বলা যায়, কোনো একটি জিনিস পাওয়ার জন্য অন্যটিকে ত্যাগ করতে হয়- এই ত্যাগকৃত পরিমাণই হলো অন্য দ্রব্যটির ‘সুযোগ ব্যয়’। সাধারণত নানারকম সুযোগ ব্যয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সুযোগ বায়টিকেই অর্থনীতিতে সুযোগ ব্যয় হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
আর এ সুযোগ ব্যয় ধারণাকে কাজে লাগিয়ে আবুল হোসেন তার এ সমস্যা দূর করতে পারবে বলে আমি মনে করি।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২. আকাশ নবম শ্রেণির একজন ছাত্র। সে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। গত মাসে তার বাবা তাকে অতিরিক্ত ১০০০ টাকা পাঠিয়েছে বই কেনার জন্য। কিন্তু আকাশের বই ছাড়া আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করা প্রয়োজন। যা ১০০০ টাকায় সম্ভব নয়। ফলে তাকে ভাবতে হয় কোন দ্রব্যটি সে আগে ক্রয় করবে।
ক. মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে?
খ. সুযোগ ব্যয় বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে আকাশ কেন তার প্রয়োজনীয় সবকিছু একত্রে কিনতে পারছে না? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কোন দ্রব্যটি আগে ক্রয় করবে আকাশের এ ভাবনা কি যুক্তিযুক্ত? উদ্দীপকের আলোকে মতামত দাও।
২নং প্রশ্নের উত্তর
ক. দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যস্তর বেড়ে যাওয়ার অবস্থাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।
খ. কোনো একটি জিনিস পাওয়ার জন্য অন্য একটি জিনিসকে ত্যাগ করতে হয়। এই ত্যাগকৃত পরিমাণই হলো অন্য দ্রব্যটির সুযোগ ব্যয়। কারণ মানুষের অভাব অসীম। কিন্তু সেই অসীম অভাব পূরণের সম্পদ সীমিত। এ সীমিত সম্পদ হতে মানুষকে নির্বাচন করতে হয়। এ থেকে সুযোগ ব্যয়ের সৃষ্টি।
গ. উদ্দীপকের আকাশের সমস্যা মূলত সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা। তাই সে সবকিছু একত্রে কিনতে পারছে না।
অর্থনীতিতে ‘দুষ্প্রাপ্যতা’ বলতে সম্পদের স্বল্পতা বা অপ্রাচুর্যকে বোঝায়। মানুষের অভাব অসীম। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ অগণিত সমস্যার মুখোমুখি হয়; কিন্তু এসব সমস্যা নিরসনের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় সম্পদ সীমিত। তাই দুষ্প্রাপ্যতা হলো অভাব পূরণের প্রয়োজনীয় উপকরণের সীমাবদ্ধতা। এই তা উদ্দীপকের ছাত্র আকাশকে তার বাবা ১,০০০ টাকা পাঠিয়েছে। এ অর্থ দ্বারা তাকে বই ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তু ক্রয় করতে হবে। কিন্তু ১,০০০ টাকায় এতকিছু কেনা সম্ভব না। কারণ সীমিত সম্পদ এবং এর দ্বারা সব অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, আকাশকে তার প্রয়োজনীয় বস্তুসমূহ ক্রয় করার ক্ষেত্রে দুষ্প্রাপ্যতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ঘ. উদ্দীপকে আকাশের কোন দ্রব্যটি আগে ক্রয় করবে তা অর্থনীতির নির্বাচন ধারণার সাথে সম্পৃক্ত। তাই তার এ ভাবনা যুক্তিযুক্ত।
অর্থনীতিতে নির্বাচন বলতে সীমিত সম্পদ দ্বারা কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ অভাব আগে পূরণ করা হবে তা নির্ধারণ করা বা চিহ্নিত করাকে বোঝায়। মানবজীবনের অন্যতম মৌলিক সমস্যা হলো পছন্দ বা নির্বাচন। মানুষের অসীম অভাব ও সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা থেকেই নির্বাচনজনিত সমস্যার উদ্ভব। অভাবের মতো সম্পদও অসীম হলে নির্বাচনজনিত সমস্যা দেখা দিত না।
উদ্দীপকে বর্ণিত আকাশের ক্ষেত্রে তার বই ও অন্য দ্রব্যসমূহের মধ্যে নির্বাচনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার সম্পদ সীমিত অর্থাৎ ১,০০০ টাকা এবং এর দ্বারা তাকে সব অভাব পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে, যা সম্ভব নয়। তাই তাকে নির্বাচনজনিত সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। আকাশকে তার সীমিত সম্পদ ১,০০০ টাকা এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে অধিকতর প্রয়োজনীয় অভাবগুলো আগে পূরণ করা যায়। তার যদি বই বেশি দরকারি হয়, তাহলে বই ক্রয় করতে হবে। যদি অন্যান্য দ্রব্য বই হতে বেশি দরকারি হয় তাহলে সেসব দ্রব্য আগে কিনতে হবে। এভাবে সে সর্বাধিক তৃপ্তি পেতে পারে। তাই বলা যায়, “কোন দ্রব্যটি সে আগে ক্রয় করবে”- আকাশের এ ভাবনা সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩. আদনান শাকিন নবম শ্রেণির একজন ছাত্র। সে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করে। গত মাসে তার বাবা তাকে অতিরিক্ত ১,০০০ টাকা পাঠিয়েছে বই কেনার জন্য। কিন্তু আদনানের বই ছাড়া আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করা প্রয়োজন, যা ১,০০০ টাকায় সম্ভব নয়। ফলে তাকে ভাবতে হয়, “কোন দ্রব্যটি সে আগে ব্রুয় করবে।”
ক. অর্থনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Economics’ কোন ভাষার শব্দ থেকে এসেছে?
খ. অ্যাডাম স্মিথের অর্থনীতির সংজ্ঞাটির দুর্বলতা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে আদনান শাকিনের সমস্যা অনুসারে সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “কোন দ্রব্যটি সে আগে ক্রয় করবে” আদনান শাকিনের এ ভাবনা কি যুক্তিযুক্ত? উদ্দীপকের আলোকে মতামত দাও।
৩নং প্রশ্নের উত্তর
ক. অর্থনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Economics গ্রিক শব্দ Oikonomin থেকে এসেছে।
খ. অ্যাডাম স্মিথের অর্থনীতির সংজ্ঞাটির কিছু দুর্বলতা রয়েছে।
অ্যাডাম স্মিথের প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞা হলো, “অর্থনীতি এমন একটি বিজ্ঞান, যা জাতিসমূহের সম্পদের ধরন ও কারণ অনুসন্ধান করে।” অ্যাডাম স্মিথের মতে, সম্পদকে কেন্দ্র করে অর্থনীতি গড়ে ওঠে । তাই সম্পদ আহরণই মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলির মূল উদ্দেশ্য। তাঁ সংজ্ঞার দুর্বলতা হলো- অর্থনীতি মানুষের অসীম অভাবকে কীভাে সীমিত সম্পদ দিয়ে মেটায় এ সংজ্ঞায় তার উল্লেখ নেই। এছাড়া তাঁর সংজ্ঞায় শুধু দ্রব্যের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে; কিন্তু সেবা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
গ. উদ্দীপকের আদনান শাকিনের সমস্যা মূলত সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা থেকে উদ্ভব হয়েছে। তাই তার সমস্যা অনুসারে সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা ব্যাখ্যা করা যায়।
অর্থনীতিতে ‘দুষ্প্রাপ্যতা’ বলতে সম্পদের স্বল্পতা বা অপ্রাচুর্যকে বোঝায়। মানুষের অভাব অসীম। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ অগণিত সমস্যার মুখোমুখি হয়; কিন্তু এসব সমস্যা নিরসনের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় সম্পদ সীমিত। তাই দুষ্প্রাপ্যতা হলো অভাব পূরণের প্রয়োজনীয় উপকরণের সীমাবদ্ধতা।
উদ্দীপকের ছাত্র আদনান শাকিনকে তার বাবা ১,০০০ টাকা পাঠিয়েছে। এ অর্থ দ্বারা তাকে বই ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বস্তু ব্রুয় করতে হবে। কিন্তু ১,০০০ টাকায় এতকিছু কেনা সম্ভব না। কারণ সীমিত সম্পদ এবং এর দ্বারা সব অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, আদনান শাকিনকে তার প্রয়োজনীয় বস্তুসমূহ ক্রয় করার ক্ষেত্রে দুষ্প্রাপ্যতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ঘ. উদ্দীপকে আপনান শার্কিন কোন দ্রব্যটি আগে ব্রুয় করবে তা অর্থনীতির নির্বাচন ধারণার সাথে সম্পৃক্ত। তাই তার এ ভাবনা যুক্তিযুক্ত।
অর্থনীতিতে নির্বাচন বলতে সীমিত সম্পদ দ্বারা কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ অভাব আগে পূরণ করা হবে তা নির্ধারণ করা বা চিহ্নিত করাকে বোঝায়। মানবজীবনের অন্যতম মৌলিক সমস্যা হলো পছন্দ বা নির্বাচন। মানুষের অসীম অভাব ও সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা থেকেই নির্বাচনজনিত সমস্যার উদ্ভব। অভাবের মতো সম্পদও অসীম হলে নির্বাচনজনিত সমস্যা দেখা দিত না।
উদ্দীপকে বর্ণিত আদনান শাকিনের ক্ষেত্রে তার বই ও অন্য দ্রব্যসমূহের মধ্যে নির্বাচনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তার সম্পদ সীমিত অর্থাৎ ১,০০০ টাকা এবং এর দ্বারা তাকে সব অভাব পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে, যা সম্ভব নয়। তাই তাকে নির্বাচনজনিত সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
আদনান শাকিনকে তার সীমিত সম্পদ ১,০০০ টাকা এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে অধিকতর প্রয়োজনীয় অভাবগুলো আগে পূরণ করা যায়। তার যদি বই বেশি দরকারি হয়, তাহলে বই ক্রয় করতে হবে। যদি অন্যান্য দ্রব্য বই হতে বেশি দরকারি হয় তাহলে সেসব দ্রব্য আগে কিনতে হবে। এভাবে সে সর্বাধিক তৃপ্তি পেতে পারে। তাই বলা যায়, “কোন দ্রব্যটি সে আগে ক্রয় করবে”- আপনান শাকিনের এ ভাবনা সম্পুর্ণ যুক্তিযুক্ত।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪. রবি মিয়া একজন বর্গাচাষি। তার পরিবারে ১০ জন সদস্য। এতবড় পরিবার চালাতে তার হিমশিম খেতে হয়। যদিও সংসারে নানা সমস্যা থাকলেও তিনি নিজ দক্ষতায় পরিবারের প্রত্যেকের সমস্যা বিভিন্ন উপায়ে সমাধান করেছেন।
ক. ‘Oikonomia’ শব্দের অর্থ কী?
খ. আমাদের দেশকে উন্নয়নশীল দেশ বলা হয় কেন?
গ. রবি মিয়াকে সীমিত সম্পদের জন্য কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রবি মিয়া কি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে তার সমস্যা দূর করতে পারে বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও।
৪নং প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘Oikonomia’ শব্দের অর্থ হলো গৃহস্থালির ব্যবস্থাপনা (Management of the Household)।
খ. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এদেশের সব বৈশিষ্ট্য উন্নয়নশীল দেশের সাথে মিলে যায়, তাই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ বলা হয়।
যেসব দেশের মাথাপিছু প্রকৃত আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম কিন্তু উন্নয়নের সূচকগুলোর ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে তাকে উন্নয়নশীল দেশ বলে। এসব দেশের মাথাপিছু আয় বর্ধনশীল এবং জীবনযাত্রার মান ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তাই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে রবি মিয়া সীমিত সম্পদের কারণে দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব এ দুটি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।
চাওয়া অনুযায়ী সবকিছু না পাওয়াই মানুষের মূল সমস্যা। যেকোনো দ্রব্য (যেমন : বই) বা সেবাসামগ্রী (চিকিৎসা সেবা) উৎপাদন করতে সম্পদ দরকার হয়। কিন্তু ‘সম্পদ সীমিত। সীমিত সম্পদ দিয়ে সীমিত দ্রব্য বা সেবা পাওয়া সম্ভব। সে জন্যই সীমিত সম্পদ দিয়ে মানুষের সব অভাব পূরণ হয় না। দুষ্প্রাপ্যতার কারণ এটাই। সম্পদ অসীম হলে দুষ্প্রাপ্যতার সৃষ্টি হতো না। আবার, সূর্যের আলো, বাতাস ইত্যাদি প্রকৃতি থেকে পাওয়া জিনিসগুলোর চাহিদা অনেক। কিন্তু এগুলো পেতে আমাদের তেমন কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না । তাই এসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে সাধারণত অভাব দেখা দেয় না। যেহেতু মানুষের অভাব অনেক এবং সম্পদ সীমিত, তাই সীমিত সম্পদ দিয়ে মানুষের সকল অভাব পূরণ হয় না। অর্থাৎ সীমিত সম্পদের কারণে অসীম অভাব দেখা দেয়।
উদ্দীপকে রবি মিয়া একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে তার সম্পদ সীমিত। আবার তার পরিবারের লোকসংখ্যা বেশি তাই তার অভাব অনেক। সুতরাং দেখা যায়, রবি মিয়া সীমিত সম্পদের কারণে দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব এ দুটি সমস্যার সম্মুখীন হয়।
ঘ. হ্যাঁ, রবি মিয়া সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে তার দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব সমস্যা দূর করতে পারে।
মানুষ যা চায় তার সবকিছু পায় না। মানুষের এই না পাওয়া চাওয়ার নাম অভাব। মানুষের জীবনে অভাবের শেষ নেই। ধরা যাক রাজু একজন শিক্ষার্থী। রাজুর কাছে এক হাজার টাকা আছে। তার শার্ট, প্যান্ট এবং ভালো জুতা দরকার। এভাবে দেখা যাবে রাজুর অনেক কিছু দরকার। কিন্তু তার আছে মাত্র এক হাজার টাকা। প্রয়োজনের তুলনায় এই টাকার পরিমাণ অনেক কম। অর্থনীতিতে এটাকে ‘সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা’ বলে। দুষ্প্রাপ্যতার জন্য মানুষ গুরুত্ব অনুযায়ী পছন্দ বা নির্বাচন করে। পছন্দ করার প্রয়োজন না হলে অর্থনীতি বিষয়েরও প্রয়োজন থাকত না। অর্থনীতি শেখায় কীভাবে সীমিতসম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে।
অর্থাৎ, সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে অতিপ্রয়োজনীয় অভাবগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করে রবি মিয়া তার সমস্যা দূর করতে পারে।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫. লিটন একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তার পরিবারের লোকসংখ্যাও বেশি। যে কারণে বিভিন্ন সময়ে অর্থকষ্টে নানা সমস্যা তাকে মোকাবিলা করতে হয়। সে প্রয়োজনের বা অভাবের গুরুত্ব বিবেচনা করে সমস্যাগুলোর সমাধান করে থাকে।
ক. অর্থনীতিবিদ এল. রবিন্সের অর্থনীতির সংজ্ঞাটি লেখ।
খ. অর্থনীতিতে প্রণোদনার গুরুত্ব বর্ণনা কর।
গ. লিটন সীমিত সম্পদের কারণে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে তা আলোচনা কর।
ঘ. লিটন কি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে তার সমস্যা দূর করতে পারে বলে তুমি মনে কর? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
৫নং প্রশ্নের উত্তর
ক. অর্থনীতিবিদ এল. রবিন্সের মতে, অর্থনীতি হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষের অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য দুষ্প্রাপ্য উপকরণসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনকারী কার্যাবলি / মানবীয় আচরণ আলোচনা করে।
খ. অর্থনীতিতে প্রণোদনার গুরুত্ব অপরিসীম।
অর্থনীতিতে প্রতিটি কাজের জন্য উৎসাহ বা প্রণোদনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো কাজে মানুষ প্রণোদনা পায় বলে কাজটি অধিকতর যত্নের সাথে করে। তখন কাজটি আরও ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। প্রণোদনা হলো একটি অতিরিক্ত প্রাপ্তি। আর এ অতিরিক্ত প্রাপ্তির জন্য মানুষ প্রণোদনায় সাড়া দেয়।
গ. উদ্দীপকে লিটন সীমিত সম্পদের কারণে দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব এ দুটি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে।
চাওয়া অনুযায়ী সবকিছু না পাওয়াই মানুষের মূল সমস্যা। যেকোনো দ্রব্য (যেমন : বই) বা সেবাসামগ্রী (চিকিৎসা সেবা) উৎপাদন করতে সম্পদ দরকার হয়। কিন্তু ‘সম্পদ সীমিত’। সীমিত সম্পদ দিয়ে সীমিত দ্রব্য বা সেবা পাওয়া সম্ভব। সেজন্যই সীমিত সম্পদ দিয়ে মানুষের সব অভাব পূরণ হয় না। দুষ্প্রাপ্যতার কারণ এটাই। সম্পদ অসীম হলে দুষ্প্রাপ্যতার সৃষ্টি হতো না। আবার, সূর্যের আলো, বাতাস ইত্যাদি প্রকৃতি থেকে পাওয়া জিনিসগুলোর চাহিদা অনেক। কিন্তু এগুলো পেতে আমাদের তেমন কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না। তাই এসব দ্রব্যের ক্ষেত্রে সাধারণত অভাব দেখা দেয় না। যেহেতু মানুষের অভাব অনেক এবং সম্পদ সীমিত, তাই সীমিত সম্পদ দিয়ে মানুষের সকল অভাব পূরণ হয় না। অর্থাৎ সীমিত সম্পদের কারণে অসীমের অভাব দেখা দেয়।
উদ্দীপকে লিটন একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে সম্পদ সীমিত। আবার তার পরিবারের লোকসংখ্যা বেশি তাই তার অভাব অনেক। সুতরাং দেখা যায়, লিটন সীমিত সম্পদের কারণে দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব এ দুটি সমস্যার সম্মুখীন হয়।
ঘ. হ্যাঁ, লিটন সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে তার দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব সমস্যা দূর করতে পারে।
মানুষ যা চায় তার সবকিছু পায় না। মানুষের এই না পাওয়া-চাওয়ার নাম অভাব। মানুষের জীবনে অভাবের শেষ নেই। ধরা যাক রাজু একজন শিক্ষার্থী। রাজুর কাছে এক হাজার টাকা আছে। তার শার্ট, প্যান্ট এবং ভালো জুতা দরকার। এভাবে দেখা যাবে রাজুর অনেক কিছু দরকার। কিন্তু তার আছে মাত্র এক হাজার টাকা। প্রয়োজনের তুলনায় এই টাকার পরিমাণ অনেক কম। অর্থনীতিতে এটাকে ‘সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা’ বলে। দুষ্প্রাপ্যতার জন্য মানুষ গুরুত্ব অনুযায়ী পছন্দ বা নির্বাচন করে। পছন্দ করার প্রয়োজন না হলে অর্থনীতি বিষয়েরও প্রয়োজন থাকত না। অর্থনীতি শেখায় কীভাবে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে।
সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে অতিপ্রয়োজনীয় অভাবগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করে লিটন তার সমস্যা দূর করতে পারে।