(বাংলা) ৮ম শ্রেণি: একুশের গান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

একুশের গান হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর আবদুল গাফফার চৌধুরী এর কবিতা। একুশের গান কবিতা থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

একুশের গান কবিতার সৃজনশীল

১. i. ‘ঝড়ের রাত্রে, বৈশাখী দিনে, বরষার দুর্দিনে
অভিযাত্রিক, নির্ভীক তারা পথ লয় ঠিক চিনে।
হয়তো বা ভুল, তবু ভয় নাই, তরুণের তাজা প্রাণ
পথ হারালেও হার মানে নাকো, করে চলে সন্ধান
অন্য পথের, মুক্ত পথের, সন্ধানী আলো জ্বলে
বিনিদ্র আঁখি তারকার সম, পথে পথে তারা চলে।’

ii. ‘ওরা কেড়ে নিতে চায় বুকের স্বপ্ন, মায়ের মুখের ভাষা
ঝরিয়ে রক্ত, ভাইয়ের প্রাণ, হৃদয়ের ভালোবাসা।
জেগে উঠো আজ সাহসী যৌবন, আনো নব উত্থান
দ্রোহের আগুনে পোড়াও ওদের, গাও বিজয় গান।’

ক. ‘একুশের গান’ কবিতাটি কোন শহিদের স্মরণে লেখা হয়েছে?
খ. ‘সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা’- চরণটি ব্যাখ্যা কর।
গ. দ্বিতীয় উদ্দীপকের আলোকে ‘একুশের গান‘ কবিতায় বর্ণিত ‘ওরা এদেশের নয়’- চরণটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রথম উদ্দীপকের যিনি অভিযাত্রিক তিনিই ‘একুশের গান’ কবিতার ভাষা-শহিদ- বিশ্লেষণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘একুশের গান’ কবিতাটি বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে লেখা হয়েছে।

খ. প্রশ্নোদ্ধৃত চরণটিতে পশু বলতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও তাদের অনুগত পেটোয়া বাহিনীকে বোঝানো হয়েছে।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে এদেশের ছাত্র-জনতা রাস্তায় নামলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের সাথে পশুর চেয়েও বর্বর আচরণ করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ছুঁড়ে নিষ্ঠুরভাবে তাদের হত্যা করে। তাই কবি পাকিস্তানি হানাদারদের পশু বলে সম্বোধন করেছেন।

দ্বিতীয় উদ্দীপকে ‘একুশের গান’ কবিতায় বর্ণিত ওরা এদেশের নয় চরণটির প্রতিফলন ঘটেছে।

‘একুশের গান’ কবিতায় কবি মহান একুশের স্মৃতি তুলে ধরে বলেছেন, মাতৃভাষার দাবীকে ভূলুন্ঠিত করার জন্য পাকিস্তানি শাসকদের অনুগত বাহিনী ভাষার দাবীতে আন্দোলনরত ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালায়। এতে অনেকে হতাহত হয়। এরা পাকিস্তানের উর্দু ভাষা এদেশের ওপর চাপিয়ে দিতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ওরা এদেশের নয়, শাসন-শোষণের জন্যই ওরা এদেশে অবস্থান করছে এবং কবি সে কথাটিই বলতে চেয়েছেন।

উদ্দীপকেও আমরা দেখি, ওরা বাঙালিদের সম্পদ, বাঙালিদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায়। ওরা মানুষের হৃদয়ের ভালোবাসা কেড়ে নিতে চায়। ওরা এদেশের নয় বলেই এদেশের মানুষের প্রতি ওদের কোনো ভালোবাসা নেই। এদেশের মানুষকে হত্যা করে, নির্যাতন চালিয়ে লুণ্ঠন করে ওরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়-যেমনটি করেছিল ব্রিটিশ শাসকরা; প্রায় দু’শ বছর তারা এদেশ শাসন-শোষণ করে।

ঘ. ‘একুশের গান’ কবিতার ভাষা শহিদরা নির্ভীকভাবে দেশ ও মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। মনোভাবের দিক থেকে তারা প্রথম উদ্দীপকের অভিযাত্রিকদের পর্যায়ভুক্ত।

সব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে সত্য ও ন্যায়ের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করা মানবতার ধর্ম। ‘একুশের গান’ কবিতায় দেশ ও জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ভাষা-শহিদরা হায়েনাদের বুলেটকে ভয় করেনি। উদ্দীপকের তরুণরাও নির্ভীক অভিযাত্রিক, কোনোকিছুকেই তারা পরোয়া করে না।

উদ্দীপকের অভিযাত্রিক দল চরম দুর্বিপাকের মধ্যেও সঠিক পথের অনুসন্ধান করে নেয়। ভুল করে পথ হারালেও তারা হার মানে না। মানুষকে মুক্ত প্রাণের সন্ধান দিতে তারা তারকার মতো জ্বলে পথ দেখায়। মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ তাদের পথ চলায় অনুপ্রেরণা জোগায়। তারা সভ্যতার অগ্রযাত্রা ও প্রগতির প্রতীক।

‘একুশের গান’ কবিতার শহিদরাও মুক্ত জীবনের অভিযাত্রী। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় তারা অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। হায়েনাদের নিষ্ঠুর নির্যাতনের তোয়াক্কা না করে তারা রাজপথে প্রতিবাদ মিছিলে নেমেছে। উদ্দীপকের অভিযাত্রিকদের মতো ‘একুশের গান’-কবিতার শহিদরাও অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই আমরা বলতে পারি, প্রথম উদ্দীপকের যিনি অভিযাত্রিক তিনিই ‘একুশের গান’ কবিতার ভাষা-শহিদ।

২. যাদের হারালাম তাঁরা আমাদের বিস্তৃত করে দিয়ে গেল দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত
কণা কণা করে ছড়িয়ে দিয়ে গেল দেশের প্রাণের দীপ্তির ভেতর।
মৃত্যুর অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে
আবুল বরকত, সালাম, রফিকউদ্দিন, জব্বার
কী আশ্চর্য, কী বিষণ্ণ নাম, একসার জ্বলন্ত নাম।

ক. একুশে ফেব্রুয়ারি কী দিয়ে গড়া?
খ. ‘শহিদ ভাইয়ের আত্মা ডাকে’- কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘একুশের গান’ কবিতার প্রতিফলিত দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ‘একুশের গান’ কবিতার সকল দিক ফুটে ওঠেনি’- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. একুশে ফেব্রুয়ারি ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু দিয়ে গড়া।

খ. শহিদ ভাইয়ের আত্মা ডাকে’ জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য।

তৎকালীন পাকিস্তানি জুলুমবাজ শাসকরা এদেশের মানুষকে শাসন- শোষণ ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। তারা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে চায়নি। এদেশের মানুষের প্রাণের দাবিকে রুখে দেওয়ার জন্য জালিম শাসকেরা ভাষা-আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে, প্রতিবাদী মানুষকে তারা কারাগরে বন্দি করে রাখে। তাই তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সময়ের দাবি। কবি যেন শুনতে পান, শাসকদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য শহিদ ভাইয়ের আত্মা ডাকছে।

গ. উদ্দীপকের কবিতাংশে ‘একুশের গান’ কবিতার ভাষা-শহিদদের অবদানের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলন আমাদের জাতীয় জাগরণের এক জ্বলন্ত অধ্যায়। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গ করে ভাষা-শহিদেরা জাতিকে দিয়ে যায় শোষকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রেরণা।

উদ্দীপকের কবিতাংশে ভাষা-শহিদদের স্মরণ করে দেশব্যাপী তাদের প্রতিবাদী চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শহিদেরা আজ আমাদের মাঝে বেঁচে নেই, কিন্তু তারাই আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত তথা সমগ্র দেশে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের দীপ্তি ছড়িয়ে গেছে। তারা গোটা জাতিকে করেছে জালিম শাসকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। আবুল বরকত, সালাম, রফিকউদ্দিন, জব্বার এই জ্বলন্ত নামগুলো যেমন বিস্ময় জাগানিয়া, তেমনি শোকের বিষণ্নতায় ভরা। তারা মৃত্যুর আঁধারে হারিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে জাতিকে প্রতিবাদী চেতনায় উদ্দীপ্ত করেছে।

‘একুশের গান’ কবিতায়ও মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে আত্মদানকারী শহিদদের অবদানের কথা স্মরণ করা হয়েছে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির ইতিহাসে এক রক্তঝরা দিন। এদিন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অনেককে হত্যা করা হয়। শহিদের রক্তে রাঙানো এদিনটিকে কবি কিছুতেই ভুলতে পারেন না। রক্তঝরা একুশ কবির স্মৃতিতে অমলিন। এ থেকে বোঝা যায়, ‘একুশের গান’ কবিতায় ভাষা শহিদদের যে অবদানকে স্বরণ করা হয়েছে, উদ্দীপকের কবিতাংশে তার প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকে ‘একুশের গান’ কবিতার বিষয়বস্তুর সকল দিক ফুটে ওঠেনি। কেননা, তাতে অত্যাচারী শাসকদের স্বরূপ, তাদের প্রতি ঘৃণ্য এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়নি।

বাঙালির জাতীয় জীবনের অনন্য তাৎপর্যময় দিন বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি। অন্যায় শাসন-শোষণ ও অধিকার হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার ক্ষেত্রে একুশ আমাদের প্রেরণার উৎস। একুশের চেতনা বাঙালিকে সংগ্রামী ও মুক্ত পথের সন্ধানী করেছে।

উদ্দীপকে বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনে শহিদদের অবদানের ব্যাপকতা ও বিস্তার সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। শহিদেরা আজ বেঁচে নেই, কিন্তু তারা তাদের অবিনাশী সংগ্রামী চেতনা কণা কণা করে ছড়িয়ে দিয়েছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত। ভাষা- শহিদ আবুল বরকত, সালাম, রফিকউদ্দিন, জব্বার এই দীপ্তিমান নামগুলো যেমন বিস্ময় তেমনি শোক-বিষণ্ণ। তারা আত্মদানের মধ্য দিয়ে জাতীয় জীবনে প্রতিবাদী চেতনার দীপ্তি ছড়িয়েছে।

উদ্দীপকে বর্ণিত ভাষা-শহিদদের এরূপ অবদানের দিকটি ‘একুশের গান’ কবিতায়ও রয়েছে। তবে উক্ত কবিতায় তৎকালীন শাসকদের অত্যাচারের স্বরূপ, তাদের প্রতি ঘৃণা এবং ভাষা-শহিদদের চেতনা ধারণ করে শোষকদের বিরুদ্ধে জাগ্রত প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে। কবি মনে করেন, জুলুমবাজদের শাসন-” শোষণ থেকে মুক্তির জন্য একুশের চেতনায় আবার জ্বলে ওঠা দরকার। তাই তাঁর দৃপ্ত উচ্চারণ, ‘দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালব ফেব্রুয়ারি।’ উদ্দীপকে আলোচ্য কবিতার এ দিকগুলোর কোনো প্রতিফলন লক্ষ করা যায় না।

কাজেই, উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে ‘একুশের গান’ কবিতার বিষয়বস্তুর সকল দিক ফুটে ওঠেনি’- মন্তব্যটি সঠিক ও যুক্তিসংগত।

৩. ওরা কেড়ে নিতে চায় বুকের স্বপ্ন, মায়ের মুখের ভাষা
ঝরিয়ে রক্ত, ভাইয়ের প্রাণ, হৃদয়ের ভালোবাসা জেগে উঠো আজ সাহসী যৌবন, আনো নব উত্থান
স্নেহের আগুনে পোড়াও ওদের গাও বিজয়ের গান।

ক. ‘একুশের গান’ কবিতায় উল্লিখিত কোথায় বীর ছেলে বীর নারী মারা যায়?
খ. ‘শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা’- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘একুশের গান’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করেনি।”- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘একুশের গান’ কবিতায় উল্লিখিত জালিমের কারাগারে বীর ছেলে বীর নারী মারা যায়।

খ. উদ্ধৃত চরণটিতে কৰি ভাষা অন্দোলনে শহিদদের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পৃথিবী কাঁপানো আন্দোলনে বাঙালিদের ঝ্যাপয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

১৯৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানি শাসকদের অনুগতদের গুলিতে অনেক ছাত্র-জনতা শহিদ হয়। শহিদদের মধ্যে অনেকেই ছিল শিশু। কবি তাই এ শিশুহত্যার বদলা নেওয়ার জন্য বাঙালি জাতিকে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পৃথিবী কাঁপিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গ. উদ্দীপকটিতে ‘একুশের গান’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক হলো, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী নীতি ও বাঙালি জাতির প্রতিরোধের স্বরূপ।

‘একুশের গান’ কবিতায় কবি পাকিস্তানি শাসকের অনুগত বাহিনীর জুলুমের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন। তারা বাঙালি জাতির ওপর, উর্দু ভাষা চাপিয়ে মাতৃভাষা বাংলা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। এজন্য আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর হত্যার তাণ্ডব চালিয়ে বাঙালি বীর সন্তানদের হত্যা করেছে। কিন্তু বাঙালি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাই কবি অত্যাচারী পাকিস্তানিদের পরিচয়ে বলেছেন যে, ওরা এদেশের নয় ওরা ভিন্নজাতি, শাসন-শোষণের জন্যই ওরা এদেশে অবস্থান করছে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, কবি কোনো এক জাতির বুকের স্বপ্ন ও মায়ের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চাওয়ার কথা বলেছেন, এজন্য তারা ঐ জাতির বুকের রক্ত ঝরিয়েছে, ভাইয়ের প্রাণ হরণ করেছে। কবি তাই তাদেরকে সাহসী যৌবনে হৃদয়ে ভালোবাসা জাগিয়ে নতুন উত্থানের ডাক দিয়ে স্নেহের আগুনে শত্রুদের পুড়িয়ে বিজয়ের গান গাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ‘একুশের গান’ কবিতায়ও কবি বাঙালির বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে একুশে ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন।

কবি এঁকেছেন একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহিদ হওয়া ছাত্র-জনতার অনেক শিশুহত্যার দৃশ্য। শিশু হত্যার বদলা নিতে পৃথিবী কাঁপানো আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন কবি। পাকিস্তানিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে কবি বলেছেন, ওরা এদেশের নয়। কেননা, এদেশের মা, ভাই-বোনরা ওদের প্রচুর ঘৃণা করে। অবশেষে কবি একুশে ফেব্রুয়ারির এ প্রতিরোধ থেকে শিক্ষা নিয়ে সকল অত্যাচারীর বিরুদ্ধে ক্রোধের আগুন জ্বালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকটিতে ‘একুশের গান’ কবিতার ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী নীতি ও বাঙালির প্রতিরোধের দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. “উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করেনি”-মন্তব্যটি যথার্থ।

একুশ আমাদের চেতনার বাতিঘর। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছে। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিয়ে পাকিস্তানি অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষাকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল। বাংলার ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের তোপে পরে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। ফলে তারা আজও বাঙালি জাতির নিকট ধিকৃত ও ঘৃণিত হয়ে আছে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, কবি তার বুকের স্বপ্ন এবং মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। এসব ধরে রাখতে কবি রক্ত ঝরিয়েছেন, ভাইয়ের প্রাণ হারিয়েছেন এবং ক্ষতবিক্ষত করেছেন হৃদয়ে জমে থাকা সব ভালোবাসা। তাই কবি বিজয়ের গান গেয়ে সাহসী যৌবন নিয়ে নতুন উত্থানের ডাক দিয়ে ওদের আগুনে পুড়িয়ে প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। ‘একুশের গান’ কবিতায় কবি পাকিস্তানিদের স্বৈরাচারের স্বরূপ তুলে ধরে বাংলার দামাল ছেলেদের প্রতিবাদের স্বরূপও তুলে ধরেছেন। কবি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে রফিক, সালাম, বরকত জব্বারসহ শহিদের ইতিহাস ফুটিয়ে তুলেছেন। যাদের ত্যাগ ভুলে যাওয়া অসম্ভব।

কবি বাঙালি জাতির প্রতিরোধকে নাগিন ও কালবোশেখিরূপে তুলে ধরেছেন। কবি শহিদদের মিছিলকে কল্পনা করেছেন প্রবাহিত স্বর্গীয় নদীর ধারায়। আর পাকিস্তানি বাহিনীকে কবি ক্ষ্যাপা বুনো, পশু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাদেরকে করেছেন অবাঞ্ছিত। অবশেষে কবি অগ্নিরূপে হাটে, মাঠে, খাটে এবং সর্বত্র শক্তি প্রয়োগ করে জালিমের কারাগার থেকে বীর-ছেলে ও বীর- নারীদের মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতার কেবল চেতনাগত দিকটি প্রকাশ করে। কিন্তু কবিতায় বর্ণিত একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাতাণ্ডব, এবং বাঙালিদের প্রতিরোধের ভূমিকা এবং পদ্ধতি ও স্বরূপকে তুলে ধরা হয়েছে যা উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়নি। তাই বলা যায় যে “উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করেনি”- মন্তব্যটি যথার্থ।

৪. মাগো, ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে।
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না
বলো, মা,
তাই কি হয়?
তাই তো আমার দেরি হচ্ছে।
তোমার জন্য
কথার ঝুরি নিয়ে
তবেই না বাড়ি ফিরব।

ক. ‘বসুন্ধরা’ শব্দটির অর্থ কী?
খ. ফেব্রুয়ারিকে কেন ‘ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু-গড়া’ বলা হয়েছে?
গ. ‘কথার ঝুরি নিয়ে/ তবেই না বাড়ি ফিরব’- উক্তিটি ‘একুশের গান’ কবিতার কোন চরণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতার সামগ্রিক ভাবনার প্রতিফলিত রূপ নয়- বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘বসুন্ধরা’ শব্দটির অর্থ পৃথিবী।

খ. ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে অনেক মা তাদের ছেলেদের হারিয়েছেন। তাই ফেব্রুয়ারিকে ‘ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু-গড়া’ বলা হয়েছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তানিদের গুলিতে এদেশের অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। সন্তানহারা মায়ের অশ্রু দিয়েই আজকের একুশে ফেব্রুয়ারি গঠিত হয়েছে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি মাতৃভাষার গর্ব।

গ. কথার ঝুড়ি নিয়ে তবেই না বাড়ি ফিরব- পঙ্ক্তিটি ‘একুশের গান’ কবিতার ‘জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাঁকে’-এ চরণটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

প্রশ্নে উল্লিখিত পঙ্ক্তিটি ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাহসী ছাত্র তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে। তারা যে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার লক্ষ্যে আন্দোলন করছে তার প্রতি এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

উল্লিখিত উক্তিটি ‘একুশের গান’ কবিতার ‘জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাঁকে’- এ চরণটির প্রতিরূপ। প্রতিবাদ প্রতিরোধের অতন্দ্র প্রহরী বাঙালিরা নিশ্চুপ নয়। নিজের অধিকার বাংলাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার আমরণ সংগ্রামে ব্রতী তারা। অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবে না। অবশেষে তারা নিয়ে এসেছে বিশ্বের মানচিত্রে একুশের গান। অহংকার দৃঢ়তায় তারা প্রতিষ্ঠিত করেছে বাংলা ভাষাকে।

ঘ. উদ্দীপকটি একুশের চেতনাকে অবলম্বন করে রচিত হলেও এটি ‘একুশের গান’ কবিতার সামগ্রিক ভাবকে ধারণ করে না।

একুশ আমাদের জাতীয় জীবনের এক উজ্জ্বল দিন। এটি আমাদের জাতীয় সংহতি, চেতনা ও সংগ্রামের প্রতীক। ‘একুশের গান’ কবিতাটি একুশে ফেব্রুয়ারিকে পটভূমি করে রচিত। এই কবিতায় দেশের শত্রুদের প্রতি ঘৃণা, ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশকে সর্বদা অক্রমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে উদ্দীপকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ছাত্র তার মায়ের নিকট আশার বাণী, আন্দোলনের লক্ষ্য এবং মায়ের প্রতি স্বভাবসুলভ আবদার প্রকাশ করে পত্র লিখেছে। এখানে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেওয়া এক সাহসী সন্তানের নিজ আবেগ প্রকাশ পেয়েছে।

উদ্দীপকে একজন আন্দোলনকারীর একক আবেগ, ইচ্ছা ও লক্ষ্য প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে ‘একুশের গান’ কবিতায় আন্দোলনের সামগ্রিক লক্ষ্য এবং জাতিগত অধিকার আদায়ের পথে কণ্টকাকীর্ণ পথের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাই উদ্দীপকটি ‘একুশের গান’ কবিতার সামগ্রিক ভাবনার প্রতিফলিত রূপ নয়।

আরো পড়োরুপাই কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়োমাগো ওরা বলে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৫. নানান দেশে নানান ভাষা
বিনে স্বদেশী ভাষা পুরে কী আশা?
কত নদী সরোবর কিবা ফল চাতকীর
ধারাজল বিনে কভু ঘুচে কী তৃষা?

ক. ‘অশ্রু-গড়া’ অর্থ কী?
খ. একুশে ফেব্রুয়ারি কেন ভোলার নয়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ভাবের সঙ্গে ‘একুশের গান’ কবিতার অমিল কোথায়? বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতার চেতনার ধারা একই সূত্রে গাঁথা- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘অশ্রু-গড়া’ অর্থ চোখের পানিতে নির্মিত।

খ. একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষার সংগ্রামী চেতনা ধারণ করে। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি ভোলার নয়।

মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার জন্য এদেশের ছাত্র- জনতা প্রাণ দিয়েছেন। এদের মধ্যে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর অন্যতম। তাঁদের আত্মত্যাগের স্মৃতি বহন করে আছে একুশে ফেব্রুয়ারি। তাই এ দিনটি কখনো ভোলার নয়।

গ. উদ্দীপকে মাতৃভাষার গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। আর ‘একুশের গান’ কবিতায় মাতৃভাষার মান রক্ষার্থে আত্মত্যাগের মহিমার কথা বলা হয়েছে। এদিক থেকে উভয়ের মধ্যে অমিল রয়েছে।

উদ্দীপকের কবি বলেছেন, পৃথিবীতে অনেক ভাষা রয়েছে। কিন্তু মাতৃভাষা ব্যতীত মনের ভাব পূর্ণভাবে প্রকাশ সম্ভব নয়। এখানে মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

‘একুশের গান’ কবিতায় দেখা যায়, মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এদেশের মানুষ সংগ্রাম করেছে। সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেকে পুলিশের গুলি খেয়ে শহিদ হয়েছে। মাতৃভাষার মান রক্ষার জন্য অনেকের আত্মবিসর্জনের কথা জাতি কখনো ভুলবে না।

ঘ. উদ্দীপক ও ‘একুশের গান’ কবিতার চেতনার ধারা একই সূত্রে গাঁথা- মন্তব্যটি যথার্থ।

উদ্দীপকে মাতৃভাষার অতুলনীয় মহিমার কথা বলা হয়েছে। পৃথিবীতে যত ভাষাই থাকুক না কেন, মাতৃভাষা ছাড়া মনের ভাব পরিপূর্ণ প্রকাশ পায় না। মাতৃভাষায় যত সহজে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়, অন্য ভাষায় তা কোনোদিন সম্ভব নয়।

‘একুশের গান’ কবিতায় দেখা যায়, মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ সংগ্রাম করেছে। শাসকগোষ্ঠী সংগ্রামী জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করেছে। কিন্তু সংগ্রামী মানুষ গুলি খেয়েও ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছে।

মাতা, মাতৃভাষা, মাতৃভূমি-এই তিনটি বস্তু মানুষের নিকট পরম শ্রদ্ধার বস্তু। তাই মাতৃভাষা মায়েরই তুল্য। মাতৃভাষায় মানুষ মনের ভাব আদান-প্রদান করে শান্তি পায়- যা অন্য ভাষায় সম্ভব নয়। উদ্দীপক ও কবিতায় মাতৃভাষার অপরিসীম গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। তাই উদ্ধৃত উক্তিটি যথার্থ।

Leave a Comment