(বাংলা) ৮ম শ্রেণি: মাগো ওরা বলে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

মাগো ওরা বলে হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ এর কবিতা। মাগো ওরা বলে কবিতা থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

মাগো ওরা বলে কবিতার সৃজনশীল

১. মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সময় ফয়সাল তার মাকে বলেছিল, “মা, দেশটা স্বাধীন করে আমি আবার তোমার কাছে ফিরে আসব।” দেশ স্বাধীন হলো, কিন্তু ফয়সালের আর মায়ের কাছে ফেরা হয় না। সে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়ে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। কিন্তু মায়ের মন তা মানতে চায় না। তাই ছেলের জন্য অশ্রুভেজা চোখে মায়ের অপেক্ষারও যেন কোনো শেষ হয় না।

ক. চিঠিটা কোথায় ছিল?
খ. খোকার দেরি হচ্ছে কেন?
গ. উদ্দীপকের ফয়সাল ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার খোকার সাথে যেভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকটি ‘মাগো ওরা বলে‘ কবিতার মূল ভাব ধারণ করে’- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. চিঠিটা খোকার পকেটে ছিল।

খ. মায়ের জন্য কথার ঝুরি নিয়ে আসবে বলে খোকার দেরি হচ্ছে।

শহরে প্রবাসী খোকা মায়ের চিঠি পেয়েছে, গাঁয়ে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু খোকা যায় কী করে। শাসকরা যে তখন খোকার মায়ের মুখের ভাষার মর্যাদা নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা যে তার মাতৃভাষা বাংলার অধিকার হরণ করতে চায়। খোকা তা নীরবে সহ্য করতে পারে না। সে মাতৃভাষার বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠীর হীন ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করবে। মায়ের মুখের ভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করে ‘কথার ঝুরি’ নিয়ে সে মায়ের কাছে যাবে। তাই খোকার দেরি হচ্ছে।

গ. দেশপ্রেম ও দেশের জন্য আত্মদানের দিক থেকে উদ্দীপকের ফয়সাল ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার খোকার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

মাতৃভূমি ও মাতৃভূমিকে ভালোবাসা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এ দুটি মানুষের পরম সম্পদ, যা মায়ের সাথে তুলনীয়। তাই মানুষ মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য যে-কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।

উদ্দীপকে ফয়সালের দেশপ্রেম ও দেশের জন্য আত্মদানের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। সে দেশের স্বাধীনতার জন্য মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যায়। যাওয়ার সময় মাকে বলে যায়, দেশ স্বাধীন করে সে আবার মায়ের কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তার আর ফিরে আসা হয় না। মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়ে সে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। বস্তুত দেশকে ভালোবেসে সে জীবন দিতেও কুণ্ঠিত হয়নি। অন্য দিকে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতায় দেখা যায়, খোকা তার মাতৃভাষাকে গভীর ভালোবাসে।

মা তাকে বাড়ি আসার জন্য চিঠি দিলেও সে মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা না করে বাড়ি আসতে চায়নি। সে মায়ের মুখের ভাষার অধিকার আদায় করে ‘কথার ঝুরি’ নিয়ে মায়ের কাছে যেতে চায়। কিন্তু মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে নিহত হওয়ায় তার আর মায়ের কাছে ফেরা হয় না। মাতৃভাষার জন্য খোকার এ আত্মত্যাগ তার দেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। তাই বলা যায়, দেশপ্রেম ও দেশের জন্য আত্মত্যাগের দিক থেকে উদ্দীপকের খোকা ও ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার খোকার সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকটি ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মূলভাব ধারণ করে। কেননা, উভয় ক্ষেত্রে দেশের জন্য সন্তানের আত্মত্যাগ ও মাতৃহৃদয়ের তীব্র বেদনার কথা বিবৃত হয়েছে।

মাতৃভাষা ও মাতৃভূমিকে ভালোবেসে মানুষ অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দেয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি অনেক বেশি সতেজ। একই সাথে মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির জন্য এদেশের মানুষ অকাতরে তাদের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে, যা সারা বিশ্বে একটি বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে।

উদ্দীপকে মুক্তিযুদ্ধে নিহত সন্তানের জন্য এক মমতাময়ী মায়ের গভীর মনোবেদনার প্রকাশ ঘটেছে। তাতে বর্ণিত হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সময় ফয়সাল তার মাকে বলেছিল, দেশ স্বাধীন করে সে আবার তাঁর কাছে ফিরে আসবে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হলেও ফয়সালের আর মায়ের কাছে ফিরে আসা হয়নি। সে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হয়ে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। কিন্তু মায়ের মন তা মানতে চায় না। তাই অশ্রুভেজা চোখে ছেলের জন্য মায়ের অপেক্ষারও যেন শেষ হয়না।

অপরদিকে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহিদ সন্তানের জন্য এক মায়ের তীব্র বেদনার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, শহরে প্রবাসী ছেলে মায়ের চিঠি পেয়েছে, গাঁয়ে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য। সেই চিঠি পকেটে নিয়েই রাজপথে পুলিশের গুলিতে সে নিহত হয়। কিন্তু মা ছেলের পছন্দের খাবার তৈরি করে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। ছেলে কোনোদিনও ফিরে আসবে না, অথচ মায়ের প্রতীক্ষারও শেষ হয় না। আলোচ্য কবিতার এই মূল বিষয়টির সুস্পষ্ট প্রতিফলন উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়।

তাই, উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, ‘প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকটি ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মূলভাব ধারণ করে’- মন্তব্যটি যথার্থ।

২. ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ের জন্য তুমুল আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু অকুতোভয় ছাত্রজনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে বের হয়। সে মিছিলে গুলি করে পাকিস্তানি পুলিশ। ফলে ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়। অকালে ঝরে যায় অনেক প্রাণ। অনেক মায়ের বুক খালি হয়।

ক. মায়ের চোখের কোন রোদ শকুনিদের পুড়িয়ে দেয়?
খ. খোকার পকেটের চিঠিটা ‘ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা’ ছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার সমগ্রভাব ধারণ করে কি? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মায়ের চোখের চৈত্রের রোদ শকুনিদের পুড়িয়ে দেয়।

খ. রাজপথে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে বলে খোকার পকেটের চিঠিটা ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা ছিল।

খোকা বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। মায়ের দেওয় চিঠিটা পকেটে নিয়ে সে মিছিলে অংশগ্রহণ করে। সেই মিছিলে গুলি চালায় পাকিস্তানি পুলিশ। গুলি লাগে খোকার পায়ে। গুলির আঘাতে তার পকেটের চিঠিটা ছিঁড়ে রক্তে ভিজে যায়। মায়ের খোকাও শহিদ হয়।

গ. উদ্দীপকে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হলো। রাষ্ট্রভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে খোকার আত্মদান ও মায়ের বুক খালি হওয়া।

মাতৃভাষা মায়ের মুখের বুলি। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা ও অধিকার হরণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা বুকের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে।

উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ের জন্য তুমুল আন্দোলন শুরু হলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু অকুতোভয় ছাত্রজনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে বের হয়। সেই মিছিলে পাকিস্তানি পুলিশ গুলি করে। ফলে ঢাকার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়। অকালে ঝরে যায় অনেক প্রাণ, অনেক মায়ের বুক খালি হয়।

অপরদিকে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতায় দেখা যায়, খোকা তার মাকে জানায় যে ওরা সবার কথা কেড়ে নিতে চায়, কিন্তু তা সে মানতে পারে না। মায়ের জন্য কথার ঝুরি নিয়ে তবে সে বাড়ি আসবে। কিন্তু মায়ের খোকাটির আর বাড়ি আসা হয় না। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সে আত্মদান করে। ফলে তার মায়ের বুক খালি হয়। এভাবে বোঝা যায় যে, উদ্দীপকটি উক্ত কবিতায় খোকার আত্মদান ও মায়ের বুক খালি হওয়ার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার সমগ্রভাব ধারণ করে না, কেননা তাতে উক্ত কবিতার মায়ের নানারকম খাবার তৈরি করে খোকার জন্য প্রতীক্ষার দিকটি প্রতিফলিত হয়নি।

বাংলা ভাষার মর্যাদার জন্য বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকেরা চেয়েছিল বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা না দিতে। কিন্তু তা নীরবে সহ্য না করে এদেশের ছাত্র-জনতা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল এবং অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল মাতৃভাষার জন্য।

উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সেই আন্দোলন দমনের চেষ্টা, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য এদেশের ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও অনেক মায়ের বুক খালি হওয়ার কথা। ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতায়ও মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে এক পল্লিমায়ের শহরে প্রবাসী ছেলের আত্মদানের বিষয় বর্ণিত হয়েছে। তবে উক্ত কবিতার মা তার ছেলের শহিদ হওয়ার খবর জানেন না। তিনি ছেলের জন্য নানারকম খাবার তৈরি করে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তাঁর ছেলে যে আর কোনো দিনও ফিরে আসবে না, তা তিনি ভাবতে পারেন না। তাই তাঁর প্রতীক্ষার যেন কোনো শেষ নেই। উদ্দীপকে উক্ত কবিতার এসব বেদনাময় বিষয় প্রতিফলিত হয়নি।

‘তাই, উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকটি ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার সমগ্রভাব ধারণ করে না।

৩. অপু ঢাকা শহরে লেখাপড়া করে। মায়ের সাথে তার অনেকদিন দেখা হয় না। তাই মা তাকে বাড়ি আসার জন্য চিঠি লিখেছেন। মায়ের চিঠি পেয়ে অপু ভেবেছিল পরীক্ষা শেষে বাড়ি যাবে, কিন্তু তার আর যাওয়া হয় না। যেদিন সে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়, সেদিন মায়ের চিঠিখানা তার পকেটেই ছিল।

ক. কীসের রোদে ভিটে ভরেছে?
খ. খোকার বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে কেন?
গ. উদ্দীপকের অপুর সাথে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার খোকার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মূলভাব ধারণ করে না।”- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. স্নেহের রোদে ভিটে ভরেছে।

খ. মায়ের জন্য কথার ঝুরি নিয়ে আসবে বলে খোকার বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে।

খোকা শহরে থাকে। মা তাকে চিঠি লিখেছেন বাড়ি যাওয়ার জন্য। কিন্তু খোকা এখনই যেতে পারছে না। কারণ, ওরা খোকার মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু খোকা তার মায়ের ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে দেবে না। তাই খোকার বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে। মায়ের জন্য কথার ঝুরি নিয়ে তবেই সে বাড়ি ফিরবে।

গ. উদ্দীপকের অপুর সাথে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার খোকার যেমন কিছু সাদৃশ্য আছে, তেমনি রয়েছে কিছু বৈসাদৃশ্য।

‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার খোকা মা ও মাতৃভূমির সুসন্তান। মাতৃভাষার প্রতি রয়েছে তার সুগভীর মমত্ববোধ। তাই মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য সে জীবন দিতে কুণ্ঠিত হয়নি।

উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, অপু ঢাকা শহরে লেখাপড়া করে। মা তাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য চিঠি লিখেছেন। অপু ভেবেছিল পরীক্ষা শেষে বাড়ি যাবে, কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ায় তার আর যাওয়া হয় না। দুর্ঘটনার দিন মায়ের চিঠিখানা তার পকেটেই ছিল। উদ্দীপকের অপুর সাথে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার খোকার সাদৃশ্য হলো শহরে থাকা, বাড়ি যাওয়ার জন্য মায়ের চিঠি পাওয়া, মৃত্যুর সময় সেই চিঠি পকেটে থাকা এবং উভয়ের আর বাড়ি না ফেরা।

আর বৈসাদৃশ্য হলো অপু চেয়েছিল পরীক্ষা শেষে বাড়ি যাবে এবং খোকা চেয়েছিল মায়ের জন্য কথার ঝুরি নিয়ে বাড়ি ফিরবে। আবার অপু নিহত হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায় আর খোকা শহিদ হয়েছে ভাষা আন্দোলনের সময় গুলি খেয়ে। উদ্দীপকের অপুর সাথে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার খোকার এসব ক্ষেত্রে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মূলভাব ধারণ করে না, কেননা তাতে উক্ত কবিতার ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গসহ নিহত সন্তানের জন্য মায়ের তীব্র বেদনা ও প্রতীক্ষার দিকটি প্রতিফলিত হয়নি।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়। মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ের জন্য এ আন্দোলন সংঘটিত হয়। বাংলাদেশের অনেক দামাল ছেলে এ আন্দোলনে শাহাদাৎবরণ করেন।

উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, অপু ঢাকা শহরে লেখাপড়া করে। মায়ের সাথে তার অনেকদিন দেখা হয় না বলে মা তাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য চিঠি লিখেছেন। অপু ভেবেছিল পরীক্ষার পরে বাড়ি যাবে, কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ায় তার আর বাড়ি ফেরা হয় না। নিহত হওয়ার দিন মায়ের চিঠিখানা তার পকেটেই ছিল। অপরদিকে, ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতায় এক পল্লিমায়ের সন্তানের ভাষা আন্দোলনে শহিদ হওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। মা তাঁর ছেলেটিকে বাড়ি যাওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। ছেলেটি মায়ের জন্য কথার ঝুরি নিয়ে বাড়ি যেতে চেয়েছিল, কিন্তু ভাষা আন্দোলনে সে শহিদ হয়। ফলে তার আর বাড়ি ফেরা হয় না। কিন্তু নানারকম খাবার তৈরি করে অধীর আগ্রহে মা তাঁর ছেলের জন্য অপেক্ষা করছেন। মায়ের প্রতীক্ষার যেন কোনো শেষ নেই।

বস্তুত ভাষা আন্দোলনে শহিদ ছেলের জন্য মায়ের তীব্র বেদনাবোধ এবং অধীর আগ্রহে ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকার দিকটি আলোচ্য কবিতার মূল বিষয়, যার কোনো প্রতিফলন উদ্দীপকে নেই। তাই উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, “উদ্দীপকটি ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মূলভাব ধারণ করে না।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

৪. বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান তপু চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। কয়েকদিন হলো তিনি বাড়ি যান না। মা পিঠা-পায়েস তৈরি করে তার বাড়ি আসার অপেক্ষায় প্রহর গুণতে থাকেন। এমনি সময় দেশে শুরু হলো ভাষা আন্দোলন। তপু সে আন্দোলনে যোগ দিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। সন্তানের লাশ দেখে মা শোকে স্তব্ধ হয়ে যান।

ক. ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতাটির প্রেক্ষাপট কী?
খ. ‘চিঠিটা তার পকেটে ছিল’- কেন?
গ. তপুর বাড়ি ফিরে না আসার কারণ ‘মাগো ওরা বলে’- কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের মা যে অর্থে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতাটির প্রেক্ষাপট ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন।

খ. মায়ের নিকট পাঠানোর জন্য চিঠিটি সে তার পকেটে রেখেছিল।

কয়েকদিন পরেই খোকার বাড়িতে যাওয়ার কথা। এজন্য সে তার মাকে চিঠি লিখে সেটি পকেটে রেখে দিয়েছিল। তার মা তার পথ চেয়ে বসে আছে। মা ছেলের জন্য হরেক রকম খাবার তৈরি করে রেখেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয়ে যাওয়ায় ছেলে আসতে পারেনি। পরে ছেলের লাশ বাড়িতে যায়। তখনো মায়ের কাছে লেখা চিঠিটি ছেলের পকেটে ছিল।

গ. উদ্দীপকের তপু মারা যাওয়ার কারণে বাড়ি আসতে পারেনি।

কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতাটি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহিদদের বিষয়ে লেখা। পুলিশের গুলিতে নিহত সন্তানের জন্য মায়ের মনের তীব্র বেদনার কথা এখানে ফুটে উঠেছে। শহরের ছেলে মায়ের চিঠি পেয়েছে গ্রামে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য। সেই চিঠি পকেটে নিয়েই রাজপথে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে পুত্র। অপরদিকে, মা ছেলের জন্য কত খাবার তৈরি করে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কিন্তু তার ছেলে আর কোনোদিনও ফিরে আসবে না।

আলোচ্য উদ্দীপকের ভাবেও এ কথাটিই বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান তপু চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। কয়েকদিন হলো তিনি বাড়ি যান না। মা পিঠা-পায়েস তৈরি করে তার বাড়ি আসার অপেক্ষায় প্রহর গুণতে থাকেন। এমন সময় দেশে শুরু হলো ভাষা আন্দোলন। তপু সে আন্দোলনে যোগ দিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। সন্তানের লাশ দেখে মা শোকে স্তব্ধ হয়ে যান।

ঘ. উদ্দীপকের মা শোক-স্তব্ধতার দিক থেকে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

উদ্দীপকের মা ও ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মা উভয়ই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তাদের প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। প্রিয় সন্তান হারিয়ে তারা শোকে স্তব্ধ। তাদের শোকের যেন শেষ নেই। কাঁদতে কাঁদতে তাদের চোখে পানি শুকিয়ে গেছে।

‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মা গ্রামে খোকার জন্য অপেক্ষা করছে। গ্রামে যাওয়ার জন্য সে তার মাকে চিঠিও দিয়েছে। সে তার প্রিয় সন্তানের জন্য নারকেলের চিড়ে, উড়কি ধানের মুড়ি ভেজে এবং আরও কত খাবার তৈরি করে অপেক্ষা করছে। কিন্তু খোকা যথাসময়ে এলো না, একসময় এলো খোকার লাশ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে নিহত খোকার লাশ দেখে খোকার মা শোকে স্তব্ধ। আলোচ্য উদ্দীপকের খোকার মায়ের ক্ষেত্রে একই অনুভূতির প্রতিফলন দেখা যায়।

উদ্দীপকে দেখা যায়, বিধবা মায়ের একমাত্র সন্তান তপু চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। কয়েকদিন হলো তিনি বাড়ি যান না। মা পিঠা-পায়েস তৈরি করে তার বাড়ি আসার অপেক্ষায় প্রহর গুণতে থাকে। এমনি সময় দেশে শুরু হলো ভাষা আন্দোলন। তপু সে আন্দোলনে যোগ দিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। সন্তানের লাশ দেখে মা শোকে স্তব্ধ হয়ে যান। অতএব বলা যায়, উদ্দীপকের মা শোক-স্তব্ধতার দিক থেকে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আরো পড়োআবার আসিব ফিরে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়ো → অপেক্ষা গল্পের প্রশ্ন উত্তর

৫. আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু-গড়া এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।

ক. ‘ব্যবচ্ছেদ’ শব্দের অর্থ কী?
খ. আর আমি/ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি- এ কথার তাৎপর্য কী?
গ. উদ্দীপকটির কোন দিক ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? লেখ।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মূলভাবের পরিপুরক- উক্তিটির সত্যতা নিরূপণ কর।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘ব্যবচ্ছেদ’ শব্দের অর্থ মৃতদেহ কাটাকাটি করে মৃত্যুর কারণ বের করার পদ্ধতি।

খ. মা ছেলের জন্য নানা রকম খাবার তৈরি করে অপেক্ষা করছে।

শহরে প্রবাসী ছেলে মায়ের চিঠি পেয়েছে, গাঁয়ে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য। মা ছেলের কাছে চিঠি লিখেছেন- তার কাছে আসবার জন্য। কিন্তু দিন যায়, সপ্তাহ যায় ছেলে আর ফিরে আসে না। মা তার ছেলের জন্য নানা রকম খাবার তৈরি করে বসে। থাকেন। প্রতীক্ষা যেন শেষ হতে চায় না। ওদিকে ছেলে ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। মিছিল করতে গেলে পুলিশের গুলিতে সে প্রাণ হারায়। মা এসব খবর জানেন না। ছেলের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করেন আর নানা প্রকার খাবার তৈরি করেন।

গ৷ উদ্দীপকটির ভাষা আন্দোলনে শহিদ হওয়ার দিকটি ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দিতে অস্বীকার করে। শুরু হয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার আন্দোলন। অবশেষে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মিছিলকারীর ওপর পুলিশ গুলি চালায়। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ আরো অনেকে শহিদ হন। তাদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠিত হয়। উদ্দীপকে তাদের কথাই বলা হয়েছে। তাদের স্মৃতি কখনো আমরা ভুলব না।

‘মাগো ওরা বলে’ কবিতায় দেখা যায়, খোকা ঢাকায় পড়াশোনা করে। মা তাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য চিঠি দেয়। খোকা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদার আসনে আসীন করবার জন্য অন্যদের সঙ্গে সেও মিছিলে যোগ দেয়। মিছিল চলাকালে পুলিশের গুলিতে সে নিহত হয়। তখনও তার পকেটে মায়ের চিঠিটি ছিল। রক্তে ভেজা সে চিঠি। উদ্দীপকেও ভাষা আন্দোলনে শহিদ ভাইদের স্মৃতিচারণ করা হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ভাষা আন্দোলনে শহিদ হওয়ার দিনটি কবিতার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতার মূল বিষয় ধারণ করেছে। শহিদদের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এখানে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, কবি একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনে শহিদদের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার কথা বলেছেন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির সেই শহিদ ভাইদের কথা বাঙালি জাতি কোনোদিন ভুলবে না। তাদের স্মৃতি চির অমর করে রাখার জন্য নির্মিত হয়েছে শহিদ মিনার। এ স্মৃতির মিনারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির জাতিসত্তা।

‘মাগো ওরা বলে’ কবিতায় দেখা যায়, খোকা ঢাকায় পড়াশোনা করে। মা তাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য চিঠি লিখেছেন। এমন সময় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছে। মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার জন্য খোকা মিছিলে যোগ দিয়েছে। অকস্মাৎ পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে শহিদ হয় খোকা। ওদিকে মা খোকার আগমন প্রতীক্ষায় অপেক্ষমাণ। খোকার জন্য হরেকরকম খাবার তৈরি করেছেন মা। কিন্তু খোকা আর ঘরে আসে না। মায়ের প্রতীক্ষারও শেষ হয় না। অবশেষে খোকা মায়ের কাছে ফিরে আসে জীবিত নয়- মৃত খোকা হিসেবে।

উদ্দীপকে ও ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতায় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ ভাইদের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকে ভাষা আন্দোলনে শহিদ ভাইদের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়েছে। জাতি কখনো তাদের কথা ভুলতে পারবে না, ভুলবে না। কবিতায় বর্ণিত খোকাও একই কারণে শহিদ হয়েছে। তার কথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব আমরা। তাই বলা যায়, উদ্দীপক ও কবিতার আঙ্গিক ভিন্ন হলেও মূল বিষয় একই। উভয়ক্ষেত্রেই ভাষা শহিদদের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে।

1 thought on “(বাংলা) ৮ম শ্রেণি: মাগো ওরা বলে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর”

Leave a Comment