(বাংলা) অষ্টম শ্রেণি: তৈলচিত্রের ভূত গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

তৈলচিত্রের ভূত হচ্ছে অষ্টম শ্রেণীর সাহিত্য কণিকা বই এর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর কিশোর-উপযোগী ছোটগল্প। তৈলচিত্রের ভূত গল্প থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সৃজনশীল প্রশ্ন ১ : এক বছরের শিশু আবিরের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অনেক আত্মীয়-স্বজনের সমাগম ঘটেছিল। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর তার শরীরে ছোট-বড় কয়েকটি ফোসকা দেখা দেয়। আবিরের দাদি সবাইকে বলেন, ‘নিশ্চয় আমার নাতির ওপর বদ নজর পড়েছে। তাই একজন কবিরাজ ডেকে তাকে ঝাড়ফুঁক করানো দরকার।’ আবিরের মা শাশুড়ির এমন কথায় আশ্বস্ত হতে পারলেন না।
তিনি শাশুড়িকে বললেন, ‘মা ঝাড়ফুকের ওপর নির্ভর করা যায় না। আবিরকে তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখাতে হবে।’
ক. মামা কখন শখ করে নিজের ছবিটা আঁকিয়ে ছিলেন?
খ. পরলোকগত যামার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তিতে নগেনের মন ভরে গেল কেন?
গ. উদ্দীপকের আবিরের দাদির মানসিকতা তৈলচিত্রের ভূত গল্পের যে দিকটিকে প্রতিফলিত করে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আবিরের মায়ের কথায় ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের শিক্ষণীয় দিকটির প্রতিফলন রয়েছে- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মামা মরবার আগে শখ করে নিজের ছবিটা আঁকিয়েছিলেন।

খ. মামা নিজের ছেলেদের মতোই তাকে ভালোবাসতেন জেনে পরলোকগত মামার প্রতি শ্রদ্ধাভক্তিতে নগেনের মন ভরে গেল।
নগেন তার বড়লোক মামার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল না। বাইরে মামাকে খুব শ্রদ্ধাভক্তি দেখালেও মনে মনে প্রায়ই তাকে যমের বাড়ি পাঠাত। কিন্তু মামার মৃত্যুর পর সে জানতে পারে, মামা তাকে প্রায় নিজের ছেলেদের সমান টাকাকড়ি দিয়ে গেছেন। মামার এরূপ উদারতা সে কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি। মামা বাইরে তার প্রতি যেমন ব্যবহারই করে থাকুন, তিনি যে তাকে নিজের ছেলেদের মতোই ভালোবাসতেন তা জানতে পেরে পরলোকগত মামার শ্রদ্ধাভক্তিতে নগেনের মন ওঠে।

গ. উদ্দীপকের আবিরের দাদির মানসিকতা তৈলচিত্রের ভূত গল্পের কুসংস্কারে বিশ্বাসের দিকটি প্রতিফলিত করে।
প্রাচীন ধ্যান-ধারণা ও কুসংস্কারে বিশ্বাসী মানুষ বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে জানে না। তারা অবাস্তব অশরীরী শক্তিকে মানুষের মঙ্গল-অমঙ্গলের নিয়ামক মনে করে। তবে আধুনিক সমাজের সচেতন মানুষ বিজ্ঞান চেতনার আলোকে এসব অবাস্তব শক্তিতে বিশ্বাস করে না।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, এক বছরের শিশু আবিরের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অনেক আত্মীয়-স্বজনের সমাগম ঘটেছিল। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর তাঁর শরীরে ছোট-বড় কয়েকটি ফোসকা দেখা দেওয়ায় আবিরের দাদি মনে করেন, নিশ্চয়ই কারো বদনজরের কারণে এগুলো হয়েছে। তাই তিনি কবিরাজ ডেকে ঝাড়ফুঁক করাতে বলেন। তাঁর এ ধরনের মানসিকতার মূলে রয়েছে অশরীরী শক্তির প্রতি বিশ্বাস। তিনি কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে আবিরকে ঝাড়ফুঁক করানোর পরামর্শ দেন। তাঁর এরূপ মানসিকতার বিষয়টি ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের সাথে মিলে যায়। সে বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা সবকিছু জানতে পারে। রাতের অন্ধকারে পরলোকগত মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করতে গিয়ে সে যখন ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় তখন তার এ বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। সে মনে করে, মামার জীবিতাবস্থায় তাঁকে আন্তরিকতাহীন শ্রদ্ধাভক্তি দেখানোর কারণে নিশ্চয়ই মামার প্রেতাত্মা তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে. দিয়েছে। এরূপ ভিত্তিহীন কাল্পনিক শক্তির প্রতি বিশ্বাসের ফলে সে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে। এ থেকে বোঝা যায়, আলোচ্য গল্পের নগেনের মধ্যে যে কুসংস্কার তথা অশরীরী শক্তির প্রতি বিশ্বাসের পরিচয় ফুটে উঠেছে, তার প্রতিফলন রয়েছে উদ্দীপকের আবিরের দাদির মানসিকতায়।

ঘ. উদ্দীপকের আবিরের মায়ের কথায় তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের শিক্ষণীয় দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে। কেননা, তিনি কুসংস্কারে বিশ্বাস না করে ছেলের বাস্তবভিত্তিক চিকিৎসার কথা ভেবেছেন।
বাস্তবতাকে সম্যক উপলব্ধি করতে না পারার কারণে মানুষ নান ধরনের অশরীরী শক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। বস্তুত এ ধরনের বিশ্বাস ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও অগ্রসারশূন্য। বিজ্ঞানসম্মত বিচার- বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষের এরূপ কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাস দূর করা সম্ভব।
উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে, আবিরের জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরে তার শরীরে কয়েকটি ছোটবড় ফোসকা দেখা দেয়। আবিরের দাদি মনে করেন, তার নাতির ওপর কারো বদনজর পড়েছে, তাই কবিরাজ ডেকে আবিরকে ঝাড়ফুঁক করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু আবিরের মা শাশুড়িকে বলেন, মা ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভর করা যায় না। আবিরকে তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখাতে হবে। তাঁর উক্ত কথায় তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের শিক্ষণীয় দিকটির প্রতিফলন রয়েছে। কেননা, উক্ত গল্পের লেখক দেখিয়েছেন, কুসংস্কারাচ্ছন্নতার কারণে মানুষ নানা অশরীরী শক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষকে যদি বিজ্ঞানচেতনা দিয়ে ঘটনা বিশ্লেষণে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে ঐসব বিশ্বাসের অ্যাসারশূন্যতা ধরা পড়ে। উক্ত পক্ষের নগেনের বিশ্বাস ছিল মৃত ব্যক্তির আত্মা ভূতে পরিণত হয়। তাই সে পরলোকগত মামার তৈলচিত্র প্রণাম করার সময় বৈদ্যুতিক শককে মামার প্রেতাত্মার কাজ মনে করেছে। কিন্তু পরাশর ডাক্তার সবকিছু বিজ্ঞানচেতনা দিে বোঝানোর পর তার ভূতে বিশ্বাস দূর হয়ে যায়। উদ্দীপকের আবিরের মায়ের কথায়ও অনুরূপ বিজ্ঞানচেতনার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। কারণ তিনি ‘বদনজর’ ও ঝাড়ফুককে গুরুত্ব না দিয়ে আবিরকে ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করেছেন।
কাজেই, উপর্যুক্ত আলোচনার ওপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, উদ্দীপকের আবিরের মায়ের কথায় তৈলচিত্রের ভূত গল্পের শিক্ষণীয় নিকটির প্রতিফলন রয়েছে- মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ : মাসুদ একদিন দুপুরে পেয়ারা খাওয়ার জন্য ঘরের পেছনের পেয়ারা গাছটায় ওঠে। কয়েকটা পেয়ারা পেড়ে নামার সময় সে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যায়। ফলে সে তার পায়ে সামান্য আঘাত পায়। তার ধারণা, নিশ্চয়ই তাকে ভূতে ফেলে দিয়েছে। এছাড়া সে পড়ে যাওয়ার অন্য কোনো কারণ খুঁজে পায় না। তাই ভূতের ভয়ে সে জড়সড় হয়ে পড়ে।
ক. ‘তৈলচিত্রের ভূত’ কোন জাতীয় রচনা?
খ. ‘তুমি একটি আঙ্ক গর্লভ নগেন।’ এরূপ উক্তির কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের মাসুদ ও তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের সাদৃশ্য নিরূপণ কর।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের মূল বিষয় উপস্থাপনে কতটুকু সহায়ক হয়েছে তা যুক্তিসহ আলোচনা কর।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘তৈলচিত্রের ভূত’ একটি কিশোর উপযোগী ছোটগল্প।

খ. বৈদ্যুতিক শককে নগেন ভূতের কাজ মনে করায় পরাশর ডাক্তার তাকে আস্ত গর্দভ বলেছিলেন।
নগেনের প্রয়াত মামার তৈলচিত্রটি রুপোর ফ্রেমে বাঁধানো ছিল। তাতে অদক্ষ হাতে লাগানো ছিল দুটি বৈদ্যুতিক বাল্ব। রাতে মেইন সুইচ খোলা থাকার কারণে রুপোর ফ্রেমে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতো। নগেন রাতে রুপোর ফ্রেমে স্পর্শ করামাত্র বৈদ্যুতিক শক পেত। সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের কারণে নগেন এ ঘটনাকে ভূতের কাজ বলে বিশ্বাস করেছিল। প্রকৃত কারণ না খুঁজে কুসংস্কারে বিশ্বাস করায় পরাশর ডাক্তার নগেনকে আস্ত গর্দভ বলেছিলেন।

গ. উদ্দীপকের মাসুদ ও তৈলচিত্রের ভূত গল্পের নগেনের সাদৃশ্য হলো তারা উভয়ে তাদের দুর্ঘটনার বিষয়টিকে ভূতের কাজ বলে মনে করেছে।
কুসংস্কারে বিশ্বাসের কারণে মানুষ নানা অশরীরী শক্তির প্রতি বিশ্বাস। করে। মানুষকে যদি বিজ্ঞানচেতনা দিয়ে ঘটনা-বিশ্লেষণে উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাহলে ঐসব বিশ্বাসের অন্তঃসারশূন্যতা ধরা পড়ে। ভূতে বিশ্বাস নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরাজমান কুসংস্কার যে ভিত্তিহীন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তৈলচিত্রের ভূত গল্পে তা তুলে ধরেছেন।
উদ্দীপকের মাসুদ একদিন দুপুরে পেয়ারা খাওয়ার জন্য ঘরের পেছনের পেয়ারা গাছটায় ওঠে। কয়েকটা পেয়ারা পেড়ে নামার সময় সে পা-পিছলে পড়ে যায়। ফলে সে সামান্য আঘাত পায়। তার ধারণা, নিশ্চয়ই তাকে ভূতে ফেলে দিয়েছে। গাছ থেকে পড়ে যাওয়ার অন্য কোনো কারণ সে খুঁজে পায় না। তাই ভূতের ভয়ে সে জড়সড় হয়ে পড়ে। প্রকৃত অর্থে গাছ পিচ্ছিল থাকার কারণেই যে সে পা পিছলে পড়েছে, তা সে উপলব্ধি করতে পারেনি। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যায়। সে তার মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করতে গিয়ে বিদ্যুতের শক খেয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায় এবং ঘটনাটিকে সে ভূতের কাজ বলে মনে করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মাসুদ ও তৈলচিত্রের ভূত গল্পের নগেন উভয়ে কুসংস্কারে বিশ্বাসী হওয়ার দিক থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের মূল বিষয় উপস্থাপনে সম্পূর্ণ সহায়ক হয়নি, কেননা এতে কুসংস্কারে বিশ্বাসের দিকটি থাকলেও কুসংস্কারের ভিত্তিহীনতা প্রমাণিত হয়নি।
সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার মানুষকে ভীতু ও দুর্বল করে রাখে। অথচ এসব কুসংস্কারের বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূর করা সম্ভব।
উদ্দীপকে দেখা যায়, মাসুদ একদিন দুপুরে পেয়ারা খাওয়ার জ গাছে ওঠে। কয়েকটি পেয়ারা পেড়ে নামার সময় সে পা পিছলে পড়ে যায়। এ ঘটনাকে সে ভূতের কাজ বলে মনে করে। তার ধারণা, নিশ্চয়ই ভূতে তাকে ফেলে দিয়েছে। বস্তুত মাসুদ তার পড়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ না খুঁজে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের মধ্যেও অনুরূপ কুসংস্কারে বিশ্বাসের দিকটি ফুটে উঠেছে। তবে উক্ত গল্পে কেবল কুসংস্কারের দিকটিই তুলে ধরা হয়নি, কুসংস্কারের ভিত্তিহীনতাও দেখানো হয়েছে। পরাশর ডাক্তার বিজ্ঞানচেতনা দ্বারা নগেনকে বুঝিয়েছেন যে, নগেনের ভূতের ধারণাটি ভিত্তিহীন। সে যে ব্যপারটিকে ভূতের কাজ মনে করেছে তা মূলত বিদ্যুতের শকের কারণে ঘটেছে। উদ্দীপকে কেবল মাসুদের ভূতে বিশ্বাসের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু গল্পে ভূতে বিশ্বাসের ভিত্তিহীনতা যুক্তি দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে।
উপর্যুক্ত আলোচনায় বোঝা যায় যে, উদ্দীপকটি ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের মূল বিষয় উপস্থাপনে পূর্ণ সহায়ক হয়নি।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ : বাবা মারা যাবার পর গৌতমের মামা গৌতমকে সোকান করে দেয়। একদিন সে মধ্যরাতে দোকান থেকে ফিরছিল। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই দেখে কে যেন তাকে পেছন থেকে টেনে ধরেছে। সে হাউমাউ করে ‘ভূত ভূত’ বলে চিৎকার করে ওঠে। বাড়ির লোকজন দৌঁড়ে এসে দেখে কাঁটার সাথে তার জামা আটকে গেছে। তার ভয় পাওয়া দেখে সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।
ক. নগেনের সাথে পরাশর ডাক্তারের প্রথম দেখা হয় কখন?
খ. পরাশর ডাক্তার নগেনকে ভর্তসনা করলেন কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. নগেনের মামার কোন দিকটি উদ্দীপকের গৌতমের মামার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের গৌতম কী ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের প্রতিনিধিত্ব করে। যুক্তি দেখাও।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মাস দুই আগে নগেনের মামার প্রাদ্ধের নিমন্ত্রণে গিয়ে নগেনের সাথে পরাশর ডাক্তারের প্রথম দেখা হয়।

খ. রুপার ফ্রেমে বাঁধানো তৈলচিত্রের সাথে দুটো ইলেকট্রিক বাল্ব সংযুক্ত ছিল- এ তথ্য না বলার কারণে পরাশর ডাক্তার নগেনকে গর্দভ বলে ভর্ৎসনা করেন।
তৈলচিত্রের ভূত গল্পে নগেন ধাক্কা খেয়ে তার প্রকৃত কারণ না খুঁজে অশরীরী কোনোকিছুর কল্পনা করে। কিন্তু প্রকৃত কারণ হলো, তৈলচিত্রের রূপার ফ্রেমের সাথে বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিল। দিনে মেইন সুইচ বন্ধ থাকার কারণে সে ধাক্কা খেত না। কিন্তু রুপার ফ্রম যেহেতু বিদ্যুৎ পরিবাহী, তাই রাতে বাতি জ্বালালে নগেন ইলেকট্রিক শক অর্থাৎ ধাক্কা খেত। প্রকৃত কারণ না খোঁজার কারণেই পরাশর ডাক্তার নগেনকে গর্দভ বলে ভর্ৎসনা করেন।

গ. নগেনের মামার উদারতার নিকটি উদ্দীপকের গৌতমের মামার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।
খেয়ালে-বেখেয়ালে মানবচরিত্রে অনেক দোষ-গুণ প্রকাশ পায়। নগেনের মাথা বড়লোক হলেও হাড়কিপটে ছিলেন। এজন্য নগেনকে মামা বাড়িতে অনাদরেও কাটাতে হয়। তবে মামা তাকে নিজ সন্তানের মতোই ভালোবাসেন। তাই নগেনের ভবিষ্যৎ ভেবে মোটা অঙ্কের টাকা উইল করেন। নগেন মামার জীবদ্দশায় তার প্রতি লৌকিক শ্রদ্ধাভক্তি দেখালেও মামার মৃত্যুর পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বাবা-মা না থাকায় অভিভাবক হিসেবে গৌতমের মামা গৌতমকে দোকান করে দেয়। তৈলচিত্রের ভূত গল্পেও দেখা যায়, নগেনের মামা বড়লোক হলেও হাড়কিপটে। এজন্য নগেন প্রকাশ্যে মামাকে শ্রদ্ধা করলেও মনে মনে প্রায়ই তাকে যমের বাড়ি পাঠাত। কিন্তু তার জন্য রেখে যাওয়া মোটা অঙ্কের টাকার উইল দেখে তার প্রতি মামার গভীর ভালোবাসা উপলব্ধি করে মামার ছবিতে প্রণাম জানাতে যায়। কিন্তু মামার ছবি ছোয়ামাত্র নগেন ধাক্কা খায়। এতে সে মনে করে যে, মামা তার ওপর রাগান্বিত। পরে পরাশর ডাক্তার তার ভুল ভাঙালে সে মামার উদারতা বুঝতে পারে, যা উদ্দীপকে গৌতমের মামার মধ্যেও প্রকাশিত হয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকের গৌতম তৈলচিত্রের ভূত গল্পের নগেনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।
ভূত-পেত্নীতে বিশ্বাস আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি কুসংস্কার, যা দীর্ঘকালব্যাপী সমাজে চলমান। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পেও নগেন মামার প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি জানাতে গিয়ে ইলেকট্রিক শককে ভূত মনে করেছে। উদ্দীপকের পিতৃহারা গৌতমকে মামা দোকান করে দেন। একদিন মধ্যরাতে দোকান শেষে বাড়ি ফেরার পথে তার জামায় কাঁটা আটকে যায়, যাকে সে ভূত মনে করে ভয়ে হাউমাউ করে চিৎকার করে ওঠে। তার ভয় পাওয়া দেখে বাড়ির লোকজন হাসাহাসি করে। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে নগেনের মামা একজন হাড়কিপটে বড়লোক। এতে নগেন তার প্রতি প্রকাশ্যে শ্রদ্ধা দেখালেও মনে মনে প্রায়ই তাকে যমের বাড়ি পাঠাত। মামার মৃত্যুর পর মোটা অঙ্কের টাকার উইল দেখে নগেনের মনে মামার প্রতি শ্রদ্ধা জাগে। এজন্য সে প্রণাম করতে মামার ছবির কাছে যায় এবং ছবি স্পর্শ করামাত্র ধাক্কা খায়। এতে সে মনে করে ছবিতে ভূত আছে। এখানে দেখা যায় গল্পের নগেন এবং উদ্দীপকের গৌতম উভয়েই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন।
উদ্দীপকে গৌতম কাঁটার সাথে জামা আটকানোকে পেছন থেকে কেউ টেনে ধরেছে মনে করে ভুত বলে হাউমাউ করে চিৎকার করে ওঠে।
আলোচ্য গল্পের নগেনও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হওয়ার কারণে ভয় পেয়েছে এবং একে ভূতের কাজ বলে মনে করেছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের গৌতম তৈলচিত্রের ভূত গল্পের নগেনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে।

পড়ুন → অতিথির স্মৃতি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
পড়ুন → ভাব ও কাজ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
পড়ুন → পড়ে পাওয়া গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪ : ওসমানের পুরানো বিশাল বাড়িটির কয়েকটি রুম দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হয়নি। চেয়ারগুলোতে ঘুণে ধরেছে। বাড়ির অনেক অব্যবহার্য জিনিসে রুমগুলো ঠাসা। রুমগুলো দেওয়ালে হরিণের শিংওয়ালা মাথা ঝুলানো আছে। ওসমানের বাড়িতে মেহমান আসলে আজ রাতে ওসমানকে এই ঘরের একপাশে খাট পরিষ্কার করে থাকতে দেওয়া হয়েছে। রাতে ওসমান শুনতে পায়, দেওয়ালের ভেতর থেকে কে যেন বলছে- ‘চোখ গেল’, ‘চোখ গেল’। এরপর ওসমান কাঁদতে কাঁদতে তার মামাকে ডেকে এনে ঘরের মধ্যে ঢুকলে তার মামা বলে, ‘দূর বোকা! ওটা একটা পাখির ডাক’।
ক. ‘ভর্ৎসনা’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘কিছু পয়সা বাঁচানোর জন্য বাপের ছবিতে ভূত এনে ছেড়েছে’- কথাটির অর্থ কী?
গ. ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের মামার বাড়ির কোন বৈশিষ্ট্যটি উদ্দীপকের বাড়িটির মধ্যে ফুটে উঠেছে তা বুঝিয়ে লেখ।
ঘ. “পরাশর ডাক্তার ও ওসমানের মামা আধুনিক মনন্ত” উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘ভর্ৎসনা’ শব্দের অর্থ তিরস্কার বা নিন্দা।

খ. কথাটির মধ্য দিয়ে পরাশর ডাক্তার নগেনের মামাতো ভাই পরেশের কৃপণতার কথা বুঝিয়েছেন।
ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে পয়সা দিবে না বলে পরেশ নিজেই ছবির ফ্রেমে দুটি আলো লাগিয়েছিল। দিনের বেলা মেইন সুইচ অফ করা থাকে বলে ছবি ছুঁলে কিছু হয় না, কিন্তু রাতে সুইচ অন থাকার কারণে রূপার ফ্রেমের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয় এবং তা স্পর্শ করামাত্র শক অনুভূত হয়। এভাবে পয়সা বাঁচানোর কৌশল হিসেবে পরেশ বাপের ছবিতে ভূত এনে ছেড়েছে।

গ. ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেনের মামার বাড়ির মামার তৈলচিত্র দেখে ভয় পাওয়ার বৈশিষ্ট্যটি উদ্দীপকের বাড়িটির মধ্যেও ফুটে উঠেছে।
ভূতে বিশ্বাস নিয়ে কুসংস্কার থাকার কারণে মানুষ নানা অশরীরী শক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে বিভ্রান্ত হয়। ‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে এ বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের ওসমানের চরিত্র এদিক দিয়ে নগেনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে নগেনের ধারণা হয় যে, তার মামার তৈলচিত্রে প্রেতাত্মা ভর করেছে। অন্যদিকে উদ্দীপকের ওসমানের ধারণা হয় যে, তার বিশাল বাড়ির একটি রুমে ভূত রয়েছে। এখানে মামার বাড়ি সম্পর্কে নগেনের ভিত্তিহীন বিশ্বাসের বিষয়টি উদ্দীপকের ওসমানের বাড়িটির মধ্যেও ফুটে উঠেছে।

ঘ. পরাশর ডাক্তার ও ওসমানের মামা উভয়ই আধুনিক মনস্ক। প্রতিটি মানুষেরই উচিত সমাজ থেকে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করতে এগিয়ে আসা।
‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের পরাশর ডাক্তার ও ওসমানের মামা কেউই ভূতে বিশ্বাস করেননি, কারণ তারা ছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক।
‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের নগেন পরাশর ডাক্তারকে তৈলচিত্রে প্রেতাত্মা ভর করার কথা বলে। কিন্তু পরাশর ডাক্তার ওসব বিশ্বাস। না করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে তা ভুল প্রমাণ করেন। এদিকে উদ্দীপকের ওসমানের মামা ভূত সম্পর্কে ওসমানের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেন। কারণ ওটা ছিল একটি পাখির ডাক।
পরিশেষে বলা যায় যে, পরাশর ডাক্তার ও ওসমানের মামা দুজনেই ছিলেন আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক। তারা সমাজে বিরাজমান কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসবিরোধী। বাস্তবিক অর্থে, ভূত-প্রেত বলে কিছুই নেই।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ : কৃষক গনি মিয়ার বড় ছেলে ফটিক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে কবিরাজের কাছ থেকে পানি পড়া এনে খাওয়ায় এবং তাবিজ দরজায় ঝুলিয়ে রাখে। বাড়ির সবাইকে সাবধান করে বলে ঘোড়া কোনো প্রাণী দেখলে যেন তাড়িয়ে দেয়। তার ধারণা ডেঙ্গুজ্বর খোঁড়া প্রাণীর রূপ ধরে বাড়িতে আসে। কিন্তু গনি মিয়ার অষ্টম শ্রেণিতে পড়া ছোট ছেলে রবিন বাবার ধারণা ভুল প্রমাণ করতে তার বিজ্ঞান বইয়ের ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার উদাহরণ দেয়।
ক. লাইব্রেরির দেয়ালে কয়টি তৈলচিত্র ছিল?
খ. “অশরীরী শক্তি কল্পনা করা ছাড়া এ সমস্তের আর কী মানে হয়?” উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের গনি মিয়ার ধারণাটি তৈলচিত্রের ভূত গল্পের যে দিকটি ফুটিয়ে তুলেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর রবিন পরাশর ডাক্তারের যথার্থ প্রতিনিধি? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. লাইব্রেরির দেয়ালে তিনটি তৈলচিত্র ছিল।

খ. আলোচ্য উক্তির মধ্য দিয়ে পরাশর ডাক্তারের মনে ক্ষণিকের জন্য উদয় হওয়া ভিন্নতর ভাবের কথা বলা হয়েছে।
ভূত বলে কিছু নেই বলে নগেনকে আশ্বস্ত করে সত্যিকার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পরাশর ডাক্তার রাত বারোটার দিকে নগেনের মামার বাড়ির লাইব্রেরিতে প্রবেশ করেন। ঘরের বাতাসে পুরান কাগজের একটা ভাপসা গন্ধ পাওয়া যায়। পরাশর ডাক্তারের মতো মানুষ বিশ্বাস করেন যত সব অদ্ভুত অথচ সত্য ভূতের গল্প শোনা যায় তার প্রত্যেকটির সাধারণ ও স্বাভাবিক কোনো ব্যাখ্যা আছেই। তবু এই ঘরে ঢুকে তিনি অস্বস্তি বোধ করেন। কারণ তৈলচিত্র স্পর্শ করলে নগেনের হাত সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা একবার নয়, অনেকবার ঘটেছে। এমনকি নগেনের জ্ঞান পর্যন্ত লোপ পেয়েছে। তাই ডাক্তারের মনে প্রশ্ন জাগে, অশরীরী শক্তি কল্পনা করা ছাড়া এ সমস্তের আর কী মানে হয়।

গ. উদ্দীপকের গনি মিয়ার ধারণাটি তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পের অন্ধ কুসংস্কারের দিকটি ফুটিয়ে তুলেছে।
তৈলচিত্রের ভূত গল্পে নগেনের ভূতে বিশ্বাস ছিল। মামার মৃত্যুর পর নগেন মামার তৈলচিত্রে প্রণাম করতে যায়। তৈলচিত্রে প্রণাম করতে গিয়ে নগেন ধাক্কা খায়। ধাক্কা খেয়ে তার মনে হয়েছে মামার প্রেতাত্মা তাকে ধাক্কা দিয়েছে।
উদ্দীপকের গনি মিয়ার বড় ছেলে ফটিক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। এজন্য গনি মিয়া কবিরাজের কাছ থেকে পানি পড়া এনে খাওয়ায় এবং দরজায় তাবিজ ঝুলিয়ে রাখে। তার ধারণা, খোঁড়া কোনো প্রাণী ডেঙ্গুজ্বরের কোনো রূপ নিয়ে বাড়িতে আসে। এ কারণে গনি মিয়া খোড়া প্রাণী সম্পর্কে বাড়ির সবাইকে সাবধান করে দেয়। গনি মিয়ার এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধারণাটি তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে ফুটে উঠেছে।

ঘ. রবিন পরাশর ডাক্তারের যথার্থ প্রতিনিধি বলে আমি মনে করি।
তৈলচিত্রের ভূত গল্পে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নগেন চরিত্রের মধ্য নিয়ে ভূত বিশ্বাসের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। গল্পে পরাশর ডাক্তার আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তিনি নগেনের বিশ্বাস ও কুসংস্কারকে ভিত্তিহীন অভিহিত করেন। মৃত ব্যক্তির আত্মা ভূতে পরিণত হয় এরূপ বিশ্বাস সমাজে প্রচলিত থাকায় নগেন বৈদ্যুতিক শককে ভূতের কাজ বলে সহজে বিশ্বাস করেছে। অন্যদিকে পরাশর ডাক্তার সবকিছু যুক্তি দিয়ে বিচার করে বলেন, তার কাছে বৈদ্যুতিক শকের বিষয়টি সহজেই ধরা পড়েছে।
উদ্দীপকের রবিন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা খোঁড়া প্রাণীকে ডেঙ্গুজ্বরের বাহক হিসেবে মনে করে। কিন্তু রবিন তার বাবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে বিজ্ঞান বইয়ের ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার উদাহরণ দেয়।
‘তৈলচিত্রের ভূত’ গল্পে পরাশর ডাক্তার ছিলেন বিজ্ঞানসম্মত আলোচনায় বিশ্বাসী। তিনি নগেনের ভূতে ধরা বিষয়টি যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে এটা ভূত নয়। অপরদিকে উদ্দীপকের রবিন বিজ্ঞানের বই দেখিয়ে প্রমাণ করেছে যে, ডেঙ্গুজ্বরের বাহক খোঁড়া কোনো প্রাণী নয়। ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশা। এসব কারণে আমি মনে করি রবিন পরাশর ডাক্তারের যথার্থ প্রতিনিধি।

Leave a Comment