(পৌরনীতি) SSC: সংবিধান অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সংবিধান হচ্ছে নবম-দশম শ্রেণী অর্থাৎ এসএসসি’র পৌরনীতি ও নাগরিকতা বই এর ৫ম অধ্যায়। সংবিধান অধ্যায় থেকে বাছাইকৃত সেরা ৫টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

সংবিধান অধ্যায়ের সৃজনশীল

১. ‘গ’ দেশের জনগণ সে দেশের স্বৈরাচারী শাসকের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন করে আসছিল। এ বছরের শুরুর দিকে তাদের আন্দোলন সফল হয়। নতুন শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে।

ক. বাংলাদেশের আইনসভা কত কক্ষবিশিষ্ট?
খ. “ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি হয়নি, গড়ে উঠেছে”- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
গ. ‘গ’ নামক দেশটিতে কোন পদ্ধতিতে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর, সংবিধান প্রণয়নের জন্য উক্ত পদ্ধতিই একমাত্র পদ্ধতি? মতের পক্ষে যুক্তি দাও।

১নং প্রশ্নের উত্তর

ক. বাংলাদেশের আইনসভা এক কক্ষবিশিষ্ট।

খ. সংবিধান তৈরি বলতে আলাপ-আলোচনা, অনুমোদনসহ.. বিভিন্নভাবে নীতিমালার মাধ্যমে আইন রচনা করাকে বোঝায় কিন্তু ব্রিটিশ সংবিধান ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে লোকাচার ও প্রথার ভিত্তিতে চূড়ান্ত ও বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। এ সংবিধান- কোনো গণপরিষদ কর্তৃক রচিত হয়নি। অতএব বলা যায়, ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি হয়নি বরং তা গড়ে উঠেছে।

গ. ‘গ’ নামক দেশটিতে সংবিধান প্রণয়নের চারটি পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম পদ্ধতি বিপ্লবের দ্বারা সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে।

শাসক যখন জনগণের স্বার্থ ও কল্যাণ নিহিত নয় এমন কাজ করে অর্থাৎ শাসক স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হয়, তখন বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসকের পরিবর্তন ঘটে। তখন নতুন শাসকগোষ্ঠী শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে। এভাবে বিপ্লবের দ্বারা বিভিন্ন দেশে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। উদ্দীপকে ‘গ’ দেশের জনগণ সে দেশের স্বৈরাচারী শাসকের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন করে আসছিল এবং এ বছরের শুরুর দিকে তাদের আন্দোলন সফল হয়। নতুন শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ও জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে, যা সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতির মধ্যে বিপ্লবের দ্বারা সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. সংবিধান প্রণয়নের জন্য উদ্দীপকে উল্লিখিত পদ্ধতি তথা বিপ্লবের দ্বারা সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতিই একমাত্র পদ্ধতি নয়। সংবিধান প্রণয়নের এ পদ্ধতি ছাড়াও অনুমোদন, আলাপ-আলোচনা ও ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমেও সংবিধান প্রণয়ন করা হয়।

জনগণকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে অতীতে প্রায় সব রাষ্ট্রেই স্বেচ্ছাচারী শাসক নিজের ইচ্ছানুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করত। এতে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিলে জনগণকে শান্ত করার জন্য এবং তাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জনগণের চাহিদাকে অনুমোদন দিয়ে সংবিধান প্রণয়ন করা হতো। সংবিধান প্রণয়নের আরও একটি বহুল পরিচিত পদ্ধতি হলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন।

এ পদ্ধতিতে সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত গণপরিষদের আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান রচিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গণপরিষদ কর্তৃক ১৯৭২ সালে প্রণীত হয়। এছাড়াও ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমেও সংবিধান প্রণয়ন করা যায়। এক্ষেত্রে সংবিধান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণয়ন করা হয় না, লোকাচার ও প্রথার ভিত্তিতে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে। সুতরাং বলা যায়, বিপ্লবের দ্বারাই শুধুমাত্র সংবিধান প্রণয়ন হয় না অনুমোদন, আলাপ-আলোচনা ও ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে সংবিধান প্রণীত হয়।

২. উচ্চ শিক্ষার জন্য ‘ক’ ইউরোপের একটি দেশে গমন করে। সে দেশের সংবিধান প্রথা, রীতিনীতি ও আচার-অনুষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে ‘ক’-এর দেশের সংবিধান মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর ভিত্তি করে রচিত। এদেশের রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সংবিধান রচিত হয়।

ক. অলিখিত সংবিধান কাকে বলে?
খ. সংবিধানকে রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. ‘ক’ যে দেশে গমন করেছে সে দেশের সংবিধান প্রতিষ্ঠায় কোন পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে? বর্ণনা কর।
ঘ. ‘ক’-এর দেশের সংবিধান প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি অন্য যেকোনো দেশের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি অপেক্ষা অধিকতর যুগোপযোগী- উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

২নং প্রশ্নের উত্তর

ক. যে সংবিধানের অধিকাংশ নিয়ম কোনো দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে না এবং যে সংবিধান চিরারচিত নিয়ম ও আচার অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে গড়ে উঠে তাকে অলিখিত সংবিধান বলে। যেমন- ব্রিটিনের সংবিধান অলিখিত।

খ. একটি দেশের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ কীভাবে গঠিত হবে, এদের গঠন ও ক্ষমতা কী হবে, জনগণ রাষ্ট্র প্রদত্ত কী কী অধিকার ভোগ করবে এবং জনগণ ও সরকারের সম্পর্ক কেমন হবে- এসব বিষয় সংবিধানে উল্লেখ থাকে। অর্থাৎ সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। আর তাই সংবিধানকে রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি বলা হয়।

গ. ‘ক’ যে দেশে গমন করেছে সে দেশের সংবিধান প্রতিষ্ঠায় ক্রমবিবর্তন পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।

উদ্দীপকের ‘ক’ উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউরোপের একটি দেশে গমন করে। সে দেশের সংবিধান প্রথা, রীতিনীতি ও আচার-অনুষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। পাঠ্যপুস্তক পাঠে আমরা জানি, সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূলভিত্তি। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধান প্রণীত হয়েছে। তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সংবিধান প্রণীত হয়েছে। উদ্দীপকে ‘ক’-এর গমনকৃত দেশে ক্রমবিবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। কেননা উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত দেশে প্রথা, রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে সংবিধান গড়ে উঠেছে। এটি বিবর্তনের মাধ্যমে সংবিধান গড়ে ওঠারই ইঙ্গিত দেয়।

এ ধরনের সংবিধান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণয়ন করা হয় না, ধীরে ধীরে পড়ে ওঠে। ইউরোপের একমাত্র দেশ ব্রিটেনের সংবিধান ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে লোকাচার ও প্রথার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রথা ও রীতিনীতি সামাজিক অনুশাসনে পরিণত হয়েছে এবং সেসব অনুশাসনই রাষ্ট্র কর্তৃক সমর্থিত হয়ে আইনে পরিণত হয়েছে এবং সংবিধানে স্থান পেয়েছে। এভাবে ক্রমবিবর্তনের ধারায় ধীরে ধীরে সংবিধান গড়ে ওঠার কারণে ব্রিটিশ সংবিধানকে গড়ে ওঠা সংবিধান বলা হয়, তৈরি করা নয়। অতএব বোঝা যাচ্ছে, উদ্দীপকে ‘ক’-এর গমনকৃত দেশটি হলো ইংল্যান্ড। আর এখানে ক্রমবিবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে সংবিধান গড়ে উঠেছে।

ঘ. ‘ক’-এর দেশের সংবিধান প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি অন্য যেকোনো দেশের সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতি অপেক্ষা অধিকতর যুগোপযোগী – উক্তিটির সাথে আমি একমত।

উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘ক’-এর দেশের অর্থাৎ বাংলাদেশের সংবিধান আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। যা সংবিধান প্রণয়নের অন্যান্য পদ্ধতি থেকে অনেকটাই আধুনিক ও যুগোপযোগী বলে আমি মনে করি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে সংগতি রেখে বিজ্ঞজনের কমিটি দ্বারা এদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ জন সুবিজ্ঞ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত হয় এ সংবিধান। যা সংবিধান প্রণয়নের অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় অধিক বাস্তবসম্মত ও কার্যকর। সংবিধান প্রণয়নের অন্যান্য পদ্ধতি হলো অনুমোদন, বিপ্লব ও ক্রমবিবর্তন।

অনুমোদনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, জনগণের সাময়িক ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টিকে ধামাচাপা দিতে বা তাদেরকে শান্ত করতে বিশেষ কিছু বিধানের স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধান রচিত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে জনঅসন্তোষ, ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে বা বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। আর ক্রমবিবর্তন ধারায় গড়ে ওঠা সংবিধান কখনোই যুগের সাথে তাল মেলাতে সক্ষম হয় না। বিপ্লবের দ্বারা যে সংবিধান তৈরি হয় সেটিও নানা অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে তৈরি হয়। তাই দেখা যায়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গড়ে ওঠা সংবিধানের ভিত্তি অনেকটাই মজবুত হয়। গণপরিষদের সদস্যদের দীর্ঘ আলোচনার পর জনমতের প্রতি খেয়াল রখে এ ধরনের সংবিধান প্রণীত হয়। কারণ গণপরিষদ তাদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে। তাই জনকল্যাণকে সামনে রেখে তারা সংবিধান প্রণয়নে ব্রতী হন। তাই প্রশ্নোক্ত উক্তিটির সপক্ষে আমি মতামত ব্যক্ত করি।

৩. ‘ক’ রাষ্ট্রের জনগণ সামাজিক রীতিনীতি সঠিকভাবে মেনে চলে। এজন্য সময়ের পরিবর্তনে ও রাষ্ট্রটির মূল দলিল রচিত হয় রীতিনীতির ভিত্তিতে ও অলিখিতভাবে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে সহজ-সরল ভাষায় ‘খ’ রাষ্ট্রের মূল দলিল রচিত হয়।

ক. কত সালে ইংল্যান্ডের রাজা ‘ম্যাগনাকার্টা’ অধিকার সনদ স্বাক্ষর করেন?
খ. বাংলাদেশকে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা হয় কেন?
গ. সংবিধান প্রণয়নের কোন পদ্ধতিতে ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধান রচিত হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘খ’ রাষ্ট্রের সংবিধানকে কি পুরাপুরি উত্তম সংবিধান বলা যায়? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন কর।

৩নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ১২১৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা ‘ম্যাগনাকার্টা’ অধিকার সনদ স্বাক্ষর করেন।

খ. সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ সরকার গঠন করে জনকল্যাণে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। জনগণ কর্তৃক সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান থাকার ফলে বাংলাদেশকে একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা হয়।

গ. সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতি হিসেবে ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানটি রচিত হয়েছে ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে।

সংবিধান প্রণয়নের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। কোনো রাষ্ট্রের সংবিধান যখন প্রচলিত রীতিনীতি, লোকাচার ও দীর্ঘদিন ধরে সমাজে প্রচলিত প্রথাগুলোর ভিত্তিতে রচিত হয় তখন উক্ত সংবিধানটি ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে প্রণয়ন করা হয়েছে বলে ধরা হয়। যেমন ব্রিটেনের সংবিধান। এক্ষেত্রে সংবিধান কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণয়ন করা হয় না। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। উদ্দীপকেও দেখা যায়, ‘ক’ রাষ্ট্রের জনগণ সামাজিক রীতিনীতি সঠিকভাবে মেনে চলে। এজন্য সময়ের পরিবর্তনেও রাষ্ট্রটির মূল দলিল রচিত হয় রীতিনীতির ভিত্তিতে ও অলিখিতভাবে, যা সংবিধান প্রণয়ন পদ্ধতির ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমকেই ইঙ্গিত করে। তাই বলা যায়, ‘ক’ রাষ্ট্রের সংবিধানটি ক্রমবিবর্তনের ফল।

ঘ. হ্যাঁ, ‘খ’ রাষ্ট্রের সংবিধানটি উত্তম সংবিধান। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের কোনো না কোনো সংবিধান রয়েছে। যে রাষ্ট্রের সংবিধান যত উন্নত, সে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা ততটা উত্তমভাবে পরিচালিত হয়।

উত্তম সংবিধানের কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ‘খ’ রাষ্ট্রের সংবিধানে বিদ্যমান। ‘খ’ রাষ্ট্রের সংবিধানে রাষ্ট্রের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো যেমন- সংবিধানের সুস্পষ্টতা, সংক্ষিপ্ততা, মৌলিক অধিকার, জনমতের প্রতিফলন, সুষম প্রকৃতির, সংশোধন পদ্ধতি জনকল্যাণকারী রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসহ সকল বিষয়ের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ সহজ-সরল ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। তাই ‘খ’ রাষ্ট্রের সংবিধানকে উত্তম সংবিধান বলা যায়।

৪. ‘ক’ নামক সামাজিক সংগঠনটি সামাজিক চিরাচরিত নিয়মকানুন অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং নিয়মগুলো কোথাও লিপিবন্ধ করা হয়নি। সংগঠনের মাঝে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করে। পক্ষান্তরে, ‘খ’ নামক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্কুল পরিচালনায় সুস্পষ্টভাবে লিখিত নিয়মকানুন মেনে স্কুল পরিচালনা করেন। যেকোনো নীতিমালা তৈরি বা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। মাঝে মাঝে লিখিত নিয়ম কানুনের ব্যাখ্যা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়।

ক. ১২১৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা জন যে অধিকার সনদ প্রণয়ন করেছিলেন তার নাম কী?
খ. সংবিধান প্রণয়ন প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. ‘ক’ সংগঠনটি পরিচালনার নিয়মাবলি কোন ধরনের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা আলোচনা কর।
ঘ. ‘ক’ ও ‘খ’ প্রতিষ্ঠান দুটির পরিচালনার নিয়মাবলির মধ্যে তুমি কোনটিকে উত্তম বলে মনে কর তার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন কর।

৪নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ১২১৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজা জন যে অধিকার সনদ প্রণয়ন করেছিলেন তার নাম ‘ম্যাগনাকার্টা’।

খ. রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হলো মানবজীবনের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধন করা। এ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য রাষ্ট্র কতকগুলো নিয়মের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আর সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নিয়মকানুনের সমষ্টি। যেকোনো দেশের সরকারব্যবস্থাই সংবিধান কর্তৃক নির্ধারিত হয়। সংবিধান নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্যের। সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাদান করে। জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিকীকরণে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করতে সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া জনগণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এবং স্বেচ্ছাচারী শাসক থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য সংবিধানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সুতরাং বলা যায়, এসব বিষয় বিবেচনা করে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়।

গ. ‘ক’ সংগঠনটি পরিচালনার নিয়মাবলি অলিখিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

অলিখিত সংবিধানের অধিকাংশ নিয়ম কোনো দলিলে লিপিবন্ধ থাকে না। এ ধরনের সংবিধান প্রথা ও রীতিনীতিভিত্তিক, চিরাচরিত নিয়ম ও আচার-অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে পড়ে ওঠে। অলিখিত সংবিধান সহজে পরিবর্তনীয়, তাই জরুরি প্রয়োজন মেটাতে অলিখিত সংবিধান অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অলিখিত সংবিধানে সাধারণত কোনো সমস্যার সমাধান প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করা হয়। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী অলিখিত সংবিধান পরিবর্তন হতে পারে বলে বিপ্লবের সম্ভাবনা কম থাকে।

অলিখিত সংবিধানের অধিক পরিবর্তনশীলতা আবার অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এখন যদি আমরা উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘ক’ নামক সামাজিক সংগঠনটির দিকে খেয়াল করি তাহলে দেখব যে, ‘ক’ নামক সামাজিক সংগঠনটি সামাজিক চিরাচরিত নিয়মকানুন অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং নিয়মগুলো কোথাও লিপিবদ্ধ করা হয়নি। সংগঠনের মাঝে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা নিষ্পত্তি করে, যা এটি অলিখিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়।

সুতরাং বলা যায়, ‘ক’ সংগঠনটি পরিচালনায় নিয়মাবলি অলিখিত সংবিধানের বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ঘ. ‘ক’ ও ‘খ’ প্রতিষ্ঠান দুটির পরিচালনার নিয়মাবলির মধ্যে অর্থাৎ লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের মধ্যে আমি ‘খ’ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নিয়ামাবলি অর্থাৎ লিখিত সংবিধানকে উত্তম বলে মনে করি।

উদ্দীপকে ‘ক’ ও ‘খ’ প্রতিষ্ঠান দুটি ভিন্ন নিয়মাবলির দ্বারা পরিচালিত হয়। ‘ক’ প্রতিষ্ঠান অলিখিত সংবিধানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। পক্ষান্তরে, ‘খ’ প্রতিষ্ঠান লিখিত সংবিধানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ‘অলিখিত সংবিধানের অধিকাংশ নিয়ম কোনো দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে না। এ ধরনের সংবিধান প্রথা ও রীতিনীতিভিত্তিক, চিরাচরিত নিয়ম ও আচার অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। এ ধরনের সংবিধানে। স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ রয়েছে। পক্ষান্তরে, লিখিত সংবিধানের অধিকাংশ বিষয় দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে। দলে স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ থাকে না। লিখিত সংবিধানকে উত্তম মনে করার কারণগুলো হলো-

১. লিখিত সংবিধান সুস্পষ্ট। এ সংবিধানের অধিকাংশ ধারা লিখিত থাকে বলে এটি জনগণের নিকট সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হয়। তাই এ ধরনের সংবিধানে কোনো সন্দেহ ও দ্বিধার অবকাশ থাকে না। পক্ষান্তরে, অলিখিত সংবিধানে অধিকাংশ নিয়ম কোনো দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে না। ফলে এখানে সন্দেহ ও দ্বিধার অবকাশ থাকে।

২. লিখিত সংবিধান স্থিতিশীল বিধায় শাসক তার ইচ্ছামতো এটি পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারে না। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে লিখিত সংবিধান স্থিতিশীল থাকে এবং শাসক ও জনগণ এটি মেনে চলতে বাধ্য হয়। পক্ষান্তরে, অলিখিত সংবিধান অস্থিতিশীল।

৩. এখানে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো লিপিবদ্ধ থাকে। ফলে কেউ কারও’ অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে সাহস পায় না। পক্ষান্তরে, অলিখিত সংবিধানে এটি অনুপস্থিত।

৪. সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা যায় বলে কোনো বিভাগ কারও প্রতি হস্তক্ষেপ করে না। পক্ষান্তরে, অলিখিত সংবিধানে এটি সহজসাধ্য নয়।

৫. লিখিত সংবিধানে শাসকের ক্ষমতা কী হবে, জনগণ কী কী অধিকার ভোগ করবে তার উল্লেখ থাকে। এর ফলে শাসক ও জনগণ নিজেদের ক্ষমতা ও অধিকার সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে। পক্ষান্তরে, অলিখিত সংবিধানে এটি অস্পষ্ট।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে বলা যায়, ‘খ’ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নিয়মাবলিই অর্থাৎ লিখিত সংবিধানই উত্তম।

আরো পড়োরাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
আরো পড়োনাগরিক ও নাগরিকতা অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৫. ‘X’ ও ‘Y’ দুজন দুই দেশের নাগরিক। ‘X’-এর দেশের সংবিধান সুষ্পষ্ট, স্থিতিশীল এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সন্নিবেশিত আছে। অপরদিকে, ‘Y’-এর দেশের সংবিধান অস্পষ্ট ও পরিবর্তনশীল।

ক. ম্যাগনাকার্টা কী?
খ. উত্তম সংবিধানের একটি বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ‘X’ ও ‘Y’ নাগরিকদ্বয়ের রাষ্ট্রের সংবিধানের পার্থক্য নির্দেশ কর।
ঘ. উল্লিখিত সংবিধান দুটির কোনটিকে তুমি উত্তম বলে মনে কর? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

৫নং প্রশ্নের উত্তর

ক. ইংল্যান্ডের রাজা জন কর্তৃক ১২১৫ সালে গৃহীত অধিকার সনদই হলো ম্যাগনাকার্টা।

খ. উত্তম সংবিধানের একটি বৈশিষ্ট্য হলো সুস্পষ্টতা। উত্তম সংবিধানে অধিকাংশ বিষয় লিখিত থাকে। এ সংবিধানের ভাষা সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল হয়। এ সংবিধান সকলের নিকট সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ‘X’ নাগরিকের দেশে লিখিত সংবিধান এবং ‘Y’ নাগরিকের দেশে অলিখিত সংবিধান বিদ্যমান। নিচে লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের মধ্যে তুলনামূলক পার্থক্য হলো-

১. লিখিত সংবিধান সুস্পষ্ট। এ সংবিধানের অধিকাংশ ধারা লিখিত থাকে বলে এটি জনগণের নিকট সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হয়। তাই এ ধরনের সংবিধানে কোনো সন্দেহ ও দ্বিধার অবকাশ থাকে না। পক্ষান্তরে, অলিখিত সংবিধানে অধিকাংশ নিয়ম কোনো দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে না। ফলে এখানে সন্দেহ ও দ্বিধার অবকাশ থাকে।

২. লিখিত সংবিধান জনপ্রতিনিধিবৃন্দ ও রাজনীতিবিদগণের দ্বারা প্রণীত। অপরদিকে, অলিখিত সংবিধান ঐতিহাসিক বিবর্তনের ফলস্বরূপ।

৩. লিখিত সংবিধানে শাসন পরিচালনার অধিকাংশ বিধান লিপিবদ্ধ তাকে। অপরদিকে, অলিখিত সংবিধানে অধিকাংশ বিষয় অলিখিত। ৪. লিখিত’ সংবিধান সহজে পরিবর্তনশীল নয় বলে বিপ্লবের সম্ভাবনা বেশি থাকে। অলিখিত সংবিধানের পরিবর্তন সহজসাধ্য তাই বিপ্লবের সম্ভবনা কম থাকে।

৫. লিখিত সংবিধানে সাধারণ আইন এবং সংবিধানিক আইনের মধ্যে পার্থক্য করা হয়। অপরদিকে, অলিখিত সংবিধানে এরূপ কোনো পার্থক্য করা হয় না।

৬. লিখিত সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন করতে হলে বিশেষ পদ্ধতি বা জটিল পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। অপরদিকে, অলিখিত সংবিধানের নিয়মকানুনগুলো পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে আইনসভা পরিবর্তন করতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংবিধান দুটির মধ্যে ‘X’ এর সংবিধান অর্থাৎ লিখিত সংবিধানকে আমি উত্তম সংবিধান বলে মনে করি। নিচে এ সম্পর্কে আমার যুক্তি প্রদর্শন করা হলো-

১. লিখিত সংবিধানের অধিকাংশ ধারা লিখিত থাকে বলে এটি জনগণের নিকট সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হয়। এ সংবিধানে সাধারণত সংশোধন পদ্ধতি উল্লেখ থাকে বিধায় খুব সহজে পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায় না।

২. লিখিত সংবিধান স্থিতিশীল বিধায় শাসক তার ইচ্ছামতো এটি পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারে না। তাই লিখিত সংবিধান যে কোনো পরিস্থিতিতে স্থিতিশীল থাকতে পারে। এ সংবিধানের সকল ধারা জনগণ ও শাসক মেনে চলতে বাধ্য হয়।

৩. লিখিত সংবিধানে শাসকের ক্ষমতা কী হবে, জনগণ কী কী অধিকার ভোগ করবে তার উল্লেখ থাকে। এর ফলে শাসক ও জনগণ নিজেদের ক্ষমতা ও অধিকার সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে।

৪. লিখিত সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার জন্য উপযোগী। এ সংবিধানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া হয়। সংবিধান লিখিত না হলে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থায় এরূপে ক্ষমতা বণ্টন সম্ভব হতো না। সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, লিখিত সংবিধান উত্তম সংবিধান।

Leave a Comment