একটি নিষিদ্ধ বইয়ের রিভিউ ‘প্রজাপতি’

বইয়ের নাম: প্রজাপতি
লেখক: সমরেশ বসু
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৯২
মুদ্রিত মূল্য: ২০০

• গল্পের প্লট : প্রজাপতি বই এর গল্পটি যাকে কেন্দ্র করে তার নাম সুখেন। ভালো নাম সুখেন্দু। পারিবারিক দিক বিশ্লেষণ করলে জানা যায় সুখেন্দু যে পরিবারে বেড়ে উঠেছে সেখান থেকে সে ভালোবাসা, স্নেহ তেমন কিছুই পায় নি। অনাদরে এবং অনেকটা একা বড়ো হওয়া সুখেন্দু বড়ো বেলায় হয়ে উঠেছে গুন্ডা কিংবা মস্তান। আসক্ত হয়েছে নেশায়। নারীর প্রতি সম্মান না থাকলেও সে নারীতে আসক্ত। সমাজের উপরের শ্রেণির লোকেরা তাকে ভয় পেয়ে সমীহও করে আবার ব্যবহারও করে।

সুখেন্দু মাস্তান হলেও সে দ্বিচারিতা পছন্দ করে না। মুখোশের আড়ালে খারাপ কাজের সমর্থন সে করতে পারে না। তাইতো তার দাদাদের সে খুব একটা পছন্দ করতো না। সুখেন্দুর দুই দাদাই দুটি বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলের বড়ো কর্তা। বড়ো দাদা সেবকের ভূমিকা পালন করে অথচ আড়ালে অবৈধ ব্যবসা এবং অবৈধ সম্পর্কের ছড়াছড়ি। অন্যদিকে মেঝদা দরিদ্রদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার এক অবতার। অথচ, প্রতিনিয়ত নিজের ঘরের কাজের লোকের শিশুকেই শোষণ করে চলেছে। দুই দাদাই যখন তাকে তাদের দলে ভিড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছিলো, সে সরে এসেছিলো ঘেন্নায়।

পড়ুন >> নিজের মেধাকে নিজের দেশে কাজে লাগালে দেশ হবে উন্নত -রিফাত

সুখেন এর সাথে আরেকটি যে কেন্দ্রীয় চরিত্র এই গল্প জুড়ে আছে তার নাম শিখা। শিখার সাথে সুখেনের পরিচয় কলেজের একটা অনশন থেকে। শিখার সংস্পর্শে এসে ভালোবাসার স্পর্শ পায় সুখেন। খিস্তি করা, নেশা করা, মস্তান সুখেনের মাঝেই এক অন্য সুখেনকে দেখতে পাই আমরা। দেখতে পাই সব ছাপিয়ে একটা ছাপোষা নিরিবিলি জীবনের স্বপ্ন দেখতে চাওয়া এক যুবককে।

সুখেন্দুর মাধ্যমে তৎকালীন সমাজের একটা নগ্নচিত্র এখানে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে নোংরামো তারই একটা খোলামেলা ছবি হলো এই বই। আজকে যদি আমরা আমাদের সমাজের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো সুখেন আমাদের অতি পরিচিত এক চরিত্র। তার চেয়েও পরিচিত কেশব ও পূর্ণেন্দুর মতো রাজনীতিক সেবকেরা। যারা কোনো অনুশোচনা ছাড়াই পাপের পাহাড়ের গন্ডি বাড়িয়ে চলছে। চ্যাটার্জি কাকুর মতো লোকেরা থাকে আমাদের আরো নিকটে হয়তো নিজেদের চেনা পরিসরের মাঝেই।

সুখেন্দু এখানে একজন রকবাজ চরিত্রের প্রতিনিধি। একজন মাস্তান একই সাথে সে নারী ও নেশায় আসক্ত। চরিত্রটিকে তাই বলিষ্ঠ করার জন্য এখানে অনেক বেশি স্ল্যং ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া গল্পটি রচিত হয়েছে সুখেন্দুর বয়ানে। তার ভাষা এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। নারী পুরুষের ভালোবাসার ক্ষেত্রে দৈহিক এবং মানসিক উভয় বিষয়ই উঠে এসেছে। এই কারণেই বইটি অশ্লীলতার দায়ে নিষিদ্ধ ছিলো ১৭ বছর।

সুখেন্দু, শিখা এবং এক উড়ন্ত প্রজাপতি এই দিয়েই শুরু হয়েছিলো উপন্যাসটি। শেষ বেলাতেও রয়ে গেছে এই তিনজনের উপস্থিতি। সুখেন কী পেরেছিলো ওই ছাপোষা মধ্যবিত্ত জীবনে ফিরতে? শিখা শেষ পর্যন্ত তার পাশে ছিলো কি? জানতে হলে বই পড়া ছাড়া বিকল্প নেই। তবে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে বেশ স্ল্যং এবং মিলনের খোলামেলা আলোচনা আছে এখানে। এবং পুরোটাই গল্পের প্রয়োজনে, চরিত্রদের চিত্রায়ন স্পষ্ট ও বলিষ্ঠ করার জন্য।

আমার কথা : প্রজাপতি বইটি অনেক আগে পড়েছিলাম এক বড় বোনের থেকে ধার নিয়ে আজ হঠাৎ ফেসবুকে একজনের বুকসেল্ফের ছবি দেখে প্রজাপতি বইটির কথা মনে পড়লো তাই ভাবলাম রিভিউ করি!

Leave a Comment